উপন্যাস        :         পদ্মমির 
লেখিকা         :          ইলমা বেহরোজ
গ্রন্থ                :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল      :          

লেখিকা ইলমা বেহরোজের “পদ্মমির” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হয়েছে।
Bangla Golpo পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ
পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ

১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ (পর্ব -১১ )


অপরাধ স্বীকার করার জন্য উদ্যত হতেই পদ্মজা রাগ দেখিয়ে ভেতরে চলে যায়। আমির হইহই করে উঠল, ‘ক্ষমা করুন রানী, ক্ষমা করুন। এই অধম ভুলে ভুলে ভুল করে ফেলেছে। ক্ষমা করুন।’

সে পিছু পিছু যায়। বাহিরে তখন বাতাসে পাতা দোল খাচ্ছে।

রফিক মাওলার বিস্ময় কাটছে না। ও অবাক হয়ে ভাবছে, এতজন লোক অনুসরণ করেও গত তিন দিনে কেউই পদ্মজাকে কেন দেখল না? ভার্সিটি, অফিস কোথাও নাকি যাচ্ছে না। দূর থেকে তার লোক তিন দিন পদ্ম নীড় থেকে আমিরকে গাড়ি করে বের হতে এবং ফিরতে দেখেছে। কিন্তু পদ্মজাকে কেউ দেখেনি। কী হচ্ছে ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করতে আমিরের বাড়ি থেকে দূরে অন্য একটি বাড়ির ছাদে গিয়ে অবস্থান নেয় রফিক। দূরবীন ধরে রেখেছে চোখে। কিছুক্ষণ পর স্যুট-কোট পরে একটা পুরুষ দেহ গ্যারেজে যায়। সেখান থেকে গাড়িতে উঠে, জানালা লাগিয়ে দেয়। গাড়ি বের হয়ে যায় চলে যায় অফিসের উদ্দেশ্যে। রফিকের সন্দেহ জাগে।দুপুরে আমিরের অফিসে যায় সে। গেইটে বিশেষ পাহারাদার ছিল। তারা রফিককে চিনতে পেরে ভেতরে ঢুকতে দিল না। রফিকের সন্দেহ বাড়ে।

কিছু তো একটা ঘটছে। কিন্তু সেটা কী? কী পরিকল্পনা করছে আমির হাওলাদার?

সে অফিসের সামনের এক ভবনে নিজের জন্য জায়গা দখল করে বসে। কিছুক্ষণ পর আমির বের হয়। পিছন থেকে মুখ না দেখা গেলেও শরীরটা একটু মোটা লাগছিল! আমিরের সঙ্গে রফিকের অনেকদিনের পরিচয়। ও আমিরকে ভালো করে চিনে।

আমিরের স্যুট-কোট পরা লোকটা যখন হেঁটে গাড়িতে উঠে তখন রফিক নিশ্চিত হয় এটা আমির নয়, অন্য কেউ! তার উচ্চতারই অন্য কেউ! আমির ওর বউকে নিয়ে কোথাও ঘাপটি মেরে আছে। অন্য কাউকে আমির সাজিয়ে গত তিনদিন একটা ভ্রমের মধ্যে রেখেছিল তার লোেকদের। রফিক তাৎক্ষণিক বেরিয়ে পড়ে। নতুন করে নতুন ছক সাজাতে হবে।

বাথরুমে দৌড়ে গিয়ে হড়হড় করে বমি করতে শুরু

করে পদ্মজা। কিছুদিন ধরেই ওর শরীরটা খুব একটা

ভালো না। মাথা ঘোরায়, বমি পায়। গতকাল বমি করেছিল। তখন আমির বাজারে ছিল। আজ আমির পাশে আছে। পদ্মজাকে বমি করতে দেখে আমির উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। পদ্মজা সহজে অসুস্থ হয় না। ও স্বাস্থ্য সচেতন নারী। আমির পদ্মজার পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। ভুবনকে ডাকে, ‘ভুবন, ভুবন – দৌড়ে গিয়ে বাজার থেকে ডাক্তার নিয়ে আয়।’

ভুবন দৌড় দিতেই নিচ্ছিল পদ্মজা আটকায়, ‘যেতে হবে না। সামান্য কারণে ডাক্তার ডাকার প্রয়োজন নেই। আমাকে একটু ধরুন, রুমে যাব। মাথা ঘুরাচ্ছে।’

আমির পদ্মজাকে কোলে করে রুমে নিয়ে বিছানায় সাবধানে রাখল। তোয়ালে ধুয়ে পানি নিংড়ে পদ্মজার ঠোঁটের চারপাশ মুছে বলল, ‘সারামুখ লাল হয়ে গেছে।’ তার চোখেমুখে আতঙ্ক। পুনরায় বলল, ‘কী সমস্যা হচ্ছে? আমাকে বলো, কী যন্ত্রণা হচ্ছে?’

‘মাথা ঘুরাচ্ছে শুধু। বমি পায় সবসময়, দূর্বল লাগে।’ ‘আমি যখন ছিলাম না খাবারে অনিয়ম হয়েছে এজন্যই এরকম হচ্ছে। দুপুরেও কম খেয়েছ, দূর্বল তো লাগবেই। তোমার বয়সী মেয়েরা গামলা ভরে ভাত খায়।’

‘ভাত ভালো লাগে না।’ উদাস গলায় বলল সে।

‘দুনিয়াতে তো খাবারের অভাব নেই। ভাত ছাড়াও কত কি আছে। তুমি বলো কী খেতে চাও, আমি এনে কত কি আছে। তুমি বলো কী খেতে চাও, আমি এনে দেবা শুধু পেট ভরে খাবে।’

পদ্মজা আনমনা হয়ে কী যেন ভাবছে, আমিরের কথা ওর কর্ণগোচর হয়নি। আমির ডাকল, ‘পদ্মজা?’

পদদ্মজা সচকিত হলো। ধাতস্থ হয়ে আমিরের হাত চেপে ধরে নিম্নস্বরে বলল, ‘গত মাসে ঋতুস্রাব হয়নি।’

পদ্মজা কি বলতে চাচ্ছে বুঝতে আমিরের সময় লাগল। তার অবিশ্বাস্য চাহনি দেখে পদ্মজা উঠে বসল, ‘মীরাক্কেল হতেই তো পারে তাই না?’

আমির ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। এটা কী করে সম্ভব! পদ্মজা কখনো মা হতে পারবে না। আমির কিছু বলল না। পদ্মজা পরক্ষণে ঠোঁট উল্টে বলল, ‘প্রেসার লো হতেও পারে। আরো দুই-তিনদিন দেখি।’

আমির কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে বুঝতে পারছে না। পদ্মজা

সন্তানের জন্য লুকিয়ে কাঁদে, পারিজাকে হারানোর দুঃখে

কাঁদে, পারিজার খুনিকে ধরতে না পারার কষ্টে কাঁদে; তার বয়সী প্রায় সব মেয়ের কোলেই নিজের সন্তান আছে, শুধু

পদ্মজার নেই। কেউ মা বলে ডাকে না। ডাক্তার বলেছে, কখনো ডাকবেও না।

আমির নিজের অজান্তেই মনে মনে চাচ্ছে, সত্যি যেন মীরাক্কেল ঘটে। পদ্মজা মাতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। নাকি সে পিতৃত্ব পেয়ে যাবে বলে সৃষ্টিকর্তা পদ্মজাকে মাতৃত্বের স্বাদ দ্বিতীয়বার দিচ্ছে না? সব সমস্যার মূলে গিয়ে নিজেকেই আসামি মনে হয় তার।

আমির মৃদু স্বরে বলল, ‘খাওয়াদাওয়া অনিয়মিত হয়েছে তোমার, এজন্যই দূর্বল হয়ে গেছো। পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।’

‘বেশি খেলে মুটিয়ে যাব।’

‘তাতে কী?’

‘তখন সুন্দর লাগবে?”

আমির না হেসে পারল না, ‘পারিজা যখন পেটে ছিল তুমিতো অনেক স্বাস্থ্যবান ছিলে। কত সুন্দর লাগত!’তখন সুন্দর লাগত বেশি নাকি এখন?’

আমির ভেবে বলল, ‘সবসময়, সবভাবে তুমি সুন্দর।’

দুপুর নাগাদ আমির বের হয় বাজারের উদ্দেশ্যে। ওর পরনে

লুঙ্গি, শার্ট। পদ্মজার জন্য কিছু ফলমূল কিনতে হবে।

বাজারে সবকিছু পাওয়া যায় না। নিরাপত্তার জন্য থাকা

একজনকে ডেকে কী কী আনতে হবে তার তালিকা দিয়ে

শহরের দিকে পাঠায়। নিজে বসে থাকে একটা হোটেলে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা ইলমা বেহরোজের ডাকনাম ইলমা। জন্ম ২০০৩ সালের ১৮ জুলাই। নেত্রকোনায় জন্ম হলেও তার বেড়ে ওঠা সিলেটে। ছোটোবেলা থেকেই গল্প/উপন্যাসের প্রতি ছিল তার ভীষণ ঝোঁক। ক্লাসের ফাঁকে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ার কারণে ̧গুরুজনদের তপ্তবাক্যও হজম করতে হয়েছে বহুবার। তবুও এই অভ্যাস কে কখনো বাদ দিতে পারেননি। সমাপ্ত গল্পকে নিজ কল্পনায় নতুনভাবে রূপ দেওয়া ছিল তার অন্যতম শখ। স্কুলের গন্ডি পেড়িয়ে একসময় তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার গল্পরাজ্যের সঙ্গে পরিচিত হোন। যেখানে সবাই নিজ চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করে নিজ লেখাকে আক্ষরিক রূপ দিয়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়। তাৎক্ষণিক নিজের কল্পনায় সাজানো গল্পগুলোকেও লিখিত রূপ দিতে শুরু করলেন তিনি। পাঠকদের থেকে আশানুরূপ সাড়া পেয়ে লেখালেখির যাত্রা অব্যাহত রাখার ইচ্ছে আরও বৃদ্ধি পায়। ফলসরূপ, রক্তে মিশে যাওয়া লেখালেখিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে পাঠকদের প্রতি ভালোবাসা থেকে বইয়ের পাতায় প্রকাশ করেছেন তাঁর প্রথম বই ‘মায়ামৃগ’। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের বইমেলায় বই আকারে প্রকাশ করেন তার আলোচিত উপন্যাস ‘আমি পদ্মজা’।

 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন