উপন্যাস       :         প্রেমাতাল
লেখিকা        :         মৌরি মরিয়ম
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা মৌরি মরিয়মের “প্রেমাতাল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম Ebook



১৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম (পর্ব - ১৭)

পুরাদস্তুর জঙ্গল যাকে বলে! কখনো বাঁশঝাড়, কখনো বিশাল বিশাল নাম না জানা গাছ, কখনো বিভিন্ন রকমের লতা, ছোট বড় পাহাড়! তার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে ঝিরিপথটি। হাটতে হাটতে তিতির খেয়াল করছিল দোলা সাফির সাথে ঝগড়া করছে। ঝগড়ার টপিক কোমড় সমান পানি সাফি ওকে হাটিয়ে পার করিয়েছে। আর মুগ্ধ তিতিরকে কোলে নিয়ে পার করলো! দোলা চাপা স্বরে বললেও শুনতে পাচ্ছিল তিতির। দোলা বলছিল,

-"বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু শেখ!"

সাফি বিরক্ত মুখে বলল,

-"প্রেমটা ওর সাথেই করতা।"

-"কি বললা তুমি?"

-"কি বলবো? তোমরা মেয়েরা এমন কেন? একজনকে একটা কিছু পেতে দেখলেই সেটা তোমাদেরও লাগবে! কিন্তু কেন?"

-"তুমি জানো আমি কত কষ্টে পানিটা পার হয়েছি?"

-"জানি। ইভেন তুমিও জানতা এরকম হতে পারে। জেনেই তো এসেছো। দোলা এখানে আমরা ঘুরতে এসেছি প্রেম করতে না। প্রেম ঘরের দরজা বন্ধ করেই করা যায়। তার জন্য জঙ্গলে আসতে হয়না।"

-"আবার প্রেম শুধু ঘরের দরজা বন্ধ করে না। জঙ্গলে এসেও করা যায়।"

-"উফ তুমি একটু চুপ করবা?"

-"কেন চুপ করবো? আমাকে কোলে নিলা না কেন তুমি?"

-"অদ্ভুত তো!"

-"অদ্ভুত না। বলো বলো?"

-"আমি কি ভাইয়ার মত স্ট্রং নাকি যে তোমাকে কোলে নিব? তোমাকে কোলে নিয়ে আমি হাটতে পারবো? প্রেম করার সময় দেখে নাও নাই কেন?"

-"কিহ? তুমি আমাকে মোটা বললা?"

-"কখন বললাম? আমি তো বললাম আমার কথা। তোমার ওজন ৫০ আমার ৬৩। কিভাবে কোলে করে হাটবো? তিতিরের বড়জোড় ৪৫/৪৬ হবে। সেখানে ভাইয়ার ৮০। ওর পক্ষে এটা ইজি ছিল। তোমার বেশি শখ লাগলে ওর কোলেই চড়ো গিয়ে।"

-"তুমি.. তুমি আমার সাথে কথাই বলবা না।"

-"আচ্ছা বলবোনা, যাও যাও.. হুহ।"

মুগ্ধ তিতিরের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল,

-"এইযে, তিতিরপাখি.. অন্যের ঝগড়া হা করে দেখতে হয়না।"

তিতির চমকে উঠে বলল,

-"না না, কই আমিতো অন্যের ঝগড়া দেখছিনা।"

-"আমি তো দেখলাম দোলা সাফি আবার লেগেছে। ওরা সারাদিন ঝগড়া করতে থাকে। এবার কি নিয়ে লাগলো?"

-"আমি অন্যের পারসোনাল কথা শুনিনা।"

মুগ্ধ হাসছিল। তিতির বলল,

-"হাসছেন যে?"

-"এমনি।"

একথা বলেই আবার হাসলো। তারপর প্রসঙ্গ পাল্টালো,

-"কেমন লাগছে এই বুনো সৌন্দর্য?"

-"ভালই। কিন্তু এত মানুষ না থাকলে একটু গা ছমছমে অনুভূতি হত।"

পথে আরো পাঁচবার জোকে ধরলো তিতিরকে। পঞ্চমবার মুগ্ধ তিতিরের ঘাড় থেকে জোক ছাড়াচ্ছে এমন সময় বলল,

-"আচ্ছা আপনি কি জোকেদের সাথেও ভাব করে গেছেন? আমাকে পাঁচবার ধরলো আর আপনাকে একবারও না। কি আজব!"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"তোমার ব্লাডগ্রুপ কি বি+?"

-"হ্যা, আপনি কি করে জানলেন?"

-"যাদের ব্লাডগ্রুপ বি+ তাদের জোকে ধরে বেশি। মশা কামড়ায় বেশি।"

-"ও। হ্যা আপনি ঠিকই বলেছেন যেখানে কাউকে মশা কামডায় না আমাকে সেখানেও মশা কামড়ায়।"

-"হুম।"

-"আপনার ব্লাডগ্রুপ কি? যে জোকে ধরে না?"

-"+... এত বনে বাদারে ঘুরে বেড়াই। কোথাও জোকে ধরেনা। একমাত্র হাম হাম ঝড়নায় যাওয়ার সময় ধরেছিল একবার। ওখানে যাওয়ার রাস্তায় একটা যায়গা পড়ে। পুরো জোকের আখড়া।"

-"ওখানে আমি গেলে তো বোধহয় আমি শেষ।"

-"আমিও সেটাই ভাবছি।"

হঠাৎ মুগ্ধ তিতিরের হাত ধরে থামালো,

-"এই দাড়াও দাড়াও..."

-"কি?"

তারপর মুগ্ধ ওর হাতের লাঠি দিয়ে গাছের ভেতর কিছু একটা দেখালো,

-"ওই দেখ।"

তিতির প্রায় লাফিয়ে উঠলো,

-"ওয়াও.. সাপ! বাট লাইট গ্রিন কালার! হাও কিউট। এত্ত সুন্দর সাপ আমি জীবনেও দেখিনি।"

-"ভয় লাগছে না?"

-"ভয় কিসের? আমি কি ওর কাছে যাচ্ছি না আমার কাছে আসছে? অযথা ভয় পাবো কেন?"

-"এক্সাক্টলি। এটাই অনেকে বোঝেনা। সাপ দেখলেই লাফালাফি শুরু করে দেয় ভয়ে।"

-"কিন্তু সাপের ক্ষতি না করলে

সাপ মানুষের ক্ষতি কক্ষনো করেনা।"

-"হুম, সেটাই।"

কিছুদূর যেতে না যেতেই সামনে দিয়ে একটা কুকুর আসছিল। একটু দ্রুতই হাটছিল কুকুরটা। কাছাকাছি আসতেই তিতির পেছনে দৌড়ে এসে ধাক্কা খেল মুগ্ধর সাথে। ওকে দৌড় দিতে দেখে কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে আসছিল। মুগ্ধ কুকুরটাকে তাড়িয়ে দিল। তারপর বলল,

-"জোকে নয়, সাপে নয়, ডাকাতে নয়, এমনকি পুরুষ মানুষেও নয়। বাঘিনী কিনা কাবু হলো কুকুরে?"

-"উফ আপনি মারাত্মক খারাপ লোক! সব মানুষেরই তো কোনো না কোনো ফোবিয়া থাকে। আমার আছে কুকুর ফোবিয়া। এটা নিয়ে এত মজা নেয়ার কিছু নেই।"

মুগ্ধ হাসছিল। তিতির বলল,

-"এত হাসছেন যে! নিজে মনে হয় কিছুকেই ভয় পান না?"

-"হুম পাইতো।"

-"কি ভয় পান?"

তিতিরের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

-"মেয়েমানুষ!"

বলেই হেসে দিল মুগ্ধ।

ঝিরিপথ ধরে প্রায় আড়াই ঘন্টা হাটার পর দূর থেকেই জলপ্রপাতের জলকেলির শব্দ শুনতে পেল ওরা। কিন্তু তখনও জলপ্রপাতটা দেখা যাচ্ছিল না। তিতির আনন্দে লাফিয়ে উঠলো,

-"এসে গেছি!"

মুগ্ধ জানালো,

-"না মাত্র তো পানির শব্দ এল। আসলে ওখানে এত জোড়ে জোড়ে পানি পড়ে যে দূর থেকেও শব্দ শোনা যায়।"

-"ও।"

তারপর আরো ১৫/২০ মিনিট হাটার পর দেখা মিলল নাফাখুম জলপ্রপাতের। তিতির দূর থেকে দেখতে পেয়েই দৌড়ে গেল জলপ্রপাতের কাছে। চোখে না দেখলে ভাবা যায় না কী ভয়ঙ্কর এর সৌন্দর্য! ৪০ ফিট প্রশস্ত এই জলপ্রপাত। যেমন এর রূপ তেমনই তার গর্জন। ভয়ঙ্কর স্রোতে পানি আছড়ে পড়ছে রেমাক্রি খালে। তবে খালটা এখানে তুলনামূলক সরু যার দুপাশে পাথরের পাহাড়। সেই পাহাড়ের উপরেই ওরা দাড়িয়ে আছে। বিশাল জায়গা জুড়ে কি বিচিত্র সেই পানি পড়ার আওয়াজ। কোথাও ঝরঝর, কোথাও গমগম, কোথাও কলকল। সামনে, পাশে, একটু দূরে, আরও দূরে শুধু উন্মত্ত স্রোতধারা। অজস্র স্রোতধারাগুলো মধ্যে যেন প্রতিযোগিতা লেগেছে কে কত জোরে, সবেগে আছড়ে পড়তে পারে। জলপ্রপাতটায় দুটো স্টেপের মত আছে। প্রথম স্টেপ থেকে ভয়ঙ্কর সেই স্রোতধারা গুলো সেকেন্ড স্টেপে গিয়েই ছড়িয়ে পড়ছে খালে। খালের পানিগুলোর রঙ সবুজ। কিনারে দাঁড়িয়েই পানির ছাট লাগছিল তিতিরের গায়ে। তিতির একটা কথাও বলছিল না। অবাক চোখে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছিল। মুগ্ধ এসে ওর পাশে দাঁড়ালো। অন্যরা দুএকজন ওদের মতই কোনো এক কিনারে দাড়িয়ে জলপ্রপাতের তেজস্বী সৌন্দর্য দেখছে। আর ম্যক্সিমামই ছবি তোলায় ব্যস্ত।

কিন্তু আধুনিকতার কোন ছোঁয়াই এখানে এখনো পৌঁছায়নি বলে নাফাখুমের ভার্জিনিটি পুরোপুরি অনুভব করা যায়। স্রষ্টার তুলির স্পর্শে যেন সবকিছুই এখানে বর্ণময়। ফুল, পাখি, প্রজাপতি প্রকৃতির সমস্ত রং যেন এরা উজাড় করে পেয়েছে। নাম না জানা মিষ্টি পাখির ডাক পাহাড় থেকে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

মুগ্ধ বলল,

-"এখানে কিছুক্ষন থাকলে এক অদ্ভুত মোহময় প্রাচীন অনুভূতির গন্ধ পাওয়া যায়। তুমি কি পাচ্ছো?"

-"হুম পাচ্ছি বোধহয়। আর আমি এতক্ষণ এটাই ভাবছিলাম কিন্তু ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কি অসাধারণ!"

-"হুম। বান্দরবানের প্রাকৃতিক রূপ উপভোগ করতে হলে অবশ্যই নাফাখুমে একবার আসা উচিৎ।"

-"সত্যি। আচ্চা এর নাম নাফাখুম কেন হল?"

-"এটা নিয়ে স্থানীয়দের বেশ কয়েকটি মিথ আছে। তার মধ্যে যেটা বহুল প্রচলিত সেটা বলি, ম্রোং ভাষায় খুম মানে জলপ্রপাত। আর নাফা হলো নথ! আই মিন নোসপিন। তো আগে এখানে অনেক বড় বড় মাছ পাওয়া যেত তাদের নাকে নথ পড়িয়ে রাখা হত। তাই এর নাম নাফাখুম।"

-"মাছ পাওয়া যেত মানে? এই খালে মাছ পাওয়া যেত?"

-"হ্যা তবে বেশি পাওয়া যেত গর্তে।"

-"গর্ত আবার কোথায়?"

-"এইযে বিশাল উন্মত্ত জলরাশি দেখতে পাচ্ছো এর নিচে ছোট ছোট গর্ত আছে যার মুখগুলো ম্যানহোলের সমান। কিন্তু অনেক গভীর, ৩০/৪০ ফিট পর্যন্ত। ওখানেই মাছ বেশি থাকতো।"

-"সেকী! তাহলে তো এখানে নামাটা খুবই রিস্কি। কখন কে ওইসব গর্তের মধ্যে ঢুকে যাবে কেউ কিছু করতেও পারবে না।"

-"ওই স্রোতের ওখানে গেলে গর্তে ঢোকার সময় পাবেনা। স্রোতই ভাসিয়ে খালে ফেলে কোথায় নিয়ে যাবে টেরও পাবেনা।"

-"ওহ।"

হঠাৎ সাফির গলা পাওয়া গেল,

-"ভাইয়া, এদিকে আয়। ওরা অনেকেই নামতে চাচ্ছে। আমার সাহস হচ্ছে না ওদের নামতে দিতে। তুই আগে নেমে দেখা কিভাবে নামতে হবে। তারপর যদি কেউ সাহস করে তো নামবে।"

মুগ্ধ সাফিকে বলল,

-"ওয়েট আসছি।"

তারপরর তিতিরকে বলল,

-"আপনি নামবেন নাকি?"

-"হুম।"

-"প্লিজ নামবেন না। এটা ভয়ঙ্কর রিস্কি যায়গা।"

-"আমার কিছু হবে না। আমি ওই খালে সাঁতারও কেটে আসতে পারবো। তাছাড়া আমার কাছে প্রটেকশন আছে। চলো চলো।"

তিতিরের বুক দুরুদুরু করছিল। কি করছে মুগ্ধ এটা। কেন করছে? সাফি থামাচ্ছে না কেন? এত রিস্ক নেয়ার কি দরকার? যায়গাটা তো সত্যিই অনেক ভয়ঙ্কর। মুগ্ধ ব্যাগ থেকে একটা বেল্টের মত কি বের করলো তার দুপাশে দড়ি বাধা। সেটাকে কোমরে আটকে নিল। জলপ্রপাতের দুপাশে কয়েকজন করে সেই দড়ি ধরে রাখলো। আর মুগ্ধ জলপ্রপাতের উপরের দিকটায় নামলো। সেখানে শুধু ছোট বড় পাথর আর জলপ্রপাতের স্রোতের পানির শুরু। তিতিরের মন চাইছে গিয়ে ওদের সাথে দড়িটা ধরতে। ওর মনে হচ্ছিল যদি দড়িটা না ধরে তাহলে মুগ্ধ সেফ থাকবে না। কিন্তু তিতিরের সব ভয় দূর হয়ে গেল যখন দেখলো মুগ্ধ তড়তড় করে এক পাথর থেকে আরেক পাথরে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামতে লাগলো। নিচের দিকে স্রোতের তেজও বেশি পানিও বেশি। আস্তে আস্তে মুগ্ধ সেকেন্ড স্টেপটায় চলে গেল। পুরো জলপ্রপাতের পানি ওখানটায় গিয়েই পড়ছে। তিতিরের এবার নিঃশ্বাস টাই আটকে গেল। মুগ্ধ দাঁড়িয়ে আছে আর স্রোতের ধাক্কায় বাঁকা হয়ে যাচ্ছিল। ভাগ্যিস যারা দড়ি ধরে ছিল তারা খুব শক্ত করে ধরে ছিল, আর মুগ্ধও পায়ের উপর সব জোড় দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর দড়িওয়ালাদের উদ্দেশ্য করে মুগ্ধ কিছু বলল। কিন্তু পানির শব্দে তিতির তা বুঝলো না। হঠাৎ দেখলো মুগ্ধ পায়ের ভয় ছেড়ে দিয়েছে। দড়িওয়ালা রা আরো শক্ত করে দড়ি ধরে আছে। মুগ্ধ তখন পানিতে ভাসছিল। আর কান্নায় ভাসছিল তিতিরের চোখদুটো। কেউ দেখলো না অবশ্য। সবার নজর তখন মুগ্ধর দিকে। একসময় এই দৃশ্যটাও তিতিরের চোখে সয়ে গেল। কান্না থামিয়ে চোখ মুছলো। এবার আর ভয় করছেনা। অনেকক্ষণ ওভাবে থাকার পর মুগ্ধ আবার পা ফেলল পাথরে। তারপর আস্তে আস্তে উঠে এল। উপড়ে উঠেই ব্যাগ থেকে পানি বের করলো এবং হাফ লিটারের পানির বোতল একটানে শেষ করলো। তারপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে হাপাতে লাগলো। একটা পা সোজা আরেকটা পা ভাজ করা ছিল। হাফ প্যান্ট পড়া মুগ্ধর ভেজা পায়ের হাটু পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। লোমগুলো ভিজে কেমন হালকা সবুজ একটা ভাব এনেছে। ওগুলো যেন ডাকছে তিতিরকে। ওর খুব ইচ্ছে করছিল পা গুলো ধরতে। কিন্তু মেয়েদের সব ইচ্ছে পূরণ হয়না। এমনকি বলাও যায়না।

কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থেকে উঠে বসলো মুগ্ধ। একজন এসে বলল,

-"ভাই বেশি খারাপ লাগছে?"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"আরে নাহ! ইট ওয়াজ স্পিচলেস! আমি জাস্ট একটু রেস্ট নিয়ে নিলাম। এটা আমার লাইফের সেকেন্ড টাইম। প্রথমবার যখন এসেছিলাম তখনও এরকমই করেছিলাম। তবে হ্যা পানির স্রোত অনেক শক্তিশালী।"

সাফি বলল,

-"নামার ইচ্ছে ছিল। বাট তুইই বাকা হয়ে যাচ্ছিলি। আমি তো দাঁড়িয়েই থাকতে পারবো না বোধহয়।"

দোলা সাফিকে বলল,

-"এই না তুমি নেমোনা। অতিরক্ত ভয়ঙ্কর ছিল ব্যাপারটা।"

দেখা গেল কেউই সেভাবে নামলো না। উপরের দিকে নেমে হাত ধরাধরি করে পা ভিজিয়ে হেটে চলে আসলো। মুগ্ধ একা হতেই তিতির ওর কাছে গিয়ে বলল,

-"আমাকে ওখানে নিয়ে যাবেন?"

-"তুমি যাবে?"

-"হ্যা। একা তো আর যেতে পারবো না। আপনি যদি নিয়ে যান তো যাব।"

-"সিওর?"

-"১০০% কিন্তু আপনি আবার নামলে আবার কষ্ট হবে।"

-"কিসের কষ্ট? আবার নামলে আবার ফিল করতে পারবো। খালি কনফার্ম করো সত্যিই যাবা কিনা।"

-"সত্যিই যাব।"

আবার একই ভাবে সব ব্যবস্থা হলো। এবার একই বেল্টের মধ্যে দুজন। সবাই তিতিরের সাহস দেখে রীতিমত অবাক। যদিও একই বেল্টের মধ্যে দুজন বাধা ছিল তবু তিতির জোকের মত আঁকড়ে ধরেছিল মুগ্ধকে। আস্তে আস্তে উপর থেকে নিচে নামার সময়েই তিতিরের পা ফেলতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু ভাল লাগছিল খুব বেশি। সেকেন্ড স্টেপে যেতেই তিতিরের পা ভেঙে আসছিল। স্রোতের এত জোড়! মুগ্ধ বলল,

-"ভরসা আছে তো আমার উপর?"

-"১০০% আছে।"

মুগ্ধ তিতিরের কোমড় জড়িয়ে ধরে তিতিরকে উঁচু করলো। এবার আর মুগ্ধ পাথর থেকে পা সরালো না। তিতির চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল। দু'পাশ থেকে উপর থেকে সব দিক থেকে স্রোতের পানি এসে পড়ছিল ওর গায়ে। তখন ভাসছিল জলপ্রপাতের উত্তল স্রোতধারায়। ভাসছিল প্রেমের জোয়ারেও। এখন আর কষ্ট হচ্ছে না। স্রোত তিতিরের পা এমনভাবে ভাসিয়ে নিয়েছে যে তিতিরের মনে হচ্ছিল সেই স্রোতের উপর শুয়ে আছে। বালিশটা ছিল মুগ্ধর শক্ত বুক! তখন পর্যন্ত ওটাই ছিল ওর জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় মুহূর্ত! হঠাৎ তিতির উপরের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল মুগ্ধ তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মুগ্ধর চোখে চোখ পড়তেই তিতির হাসলো, হাসলো মুগ্ধও।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌরি মরিয়ম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন