উপন্যাস       :         প্রেমাতাল
লেখিকা        :         মৌরি মরিয়ম
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা মৌরি মরিয়মের “প্রেমাতাল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম Ebook



২৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম (পর্ব - ২৫)

ভোরের আলো ফোটার আগেই ঘুম ভাঙলো মুগ্ধর। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল টেরই পায়নি। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। তিতির ওর বুকের মধ্যে ঘুমাচ্ছে। তিতিরের দিকে চোখ পড়তেই ওর রাতের পাগলামির কথা মনে পড়ে গেল। একা একাই হেসে ফেলল মুগ্ধ। আস্তে আস্তে আকাশটা সাদা হতে লাগলো। বাসে সামনে কয়েকজনের ঘুম ভেঙেছে। ওদের এভাবে কেউ দেখুক আর উল্টোপাল্টা কথা বলুক তা মুগ্ধ চায়না তাই তিতিরকে ঠেলে উঠালো। তিতির বিরক্ত হয়ে বলল,

-"কেন? উফফফফো! আমি উঠতে পারব না।"

-"এভাবে জড়াজড়ি করে ঘুমালে লোকে কি বলবে বলোতো?"

তিতির ঘুমের ঘোরেই বলল,

-"লোক নেই।"

-"আছে সারা বাস ভরতি লোক। উঠো না বাবা। বাসায় গিয়ে আবার ঘুমিও।"

তিতির উঠে গিয়ে নিজের সিটে মাথা রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর তিতিরকে আবার ডাকলো মুগ্ধ,

-"তিতিরপাখি, ওঠো.. তোমার শ্বশুরবাড়ি চলে এসেছি।"

তিতির ঘুমের ঘোরে মাথা উঁচু করে বলল,

-"কোথায়?"

-"ওইযে দেখো চিটাগাং গেট চলে এসেছি। আর কিছুক্ষণ পরই নামব। ততক্ষণে তুমি তোমার সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও, চোখেমুখে পানি লাগিয়ে ঘুম কাটাও।"

-"ধুর, লাগবেনা। চলোতো তাড়াতাড়ি বাসায় যাই।"

মুগ্ধ হেসে ফেলল। সারারাত ঘুমিয়েও ঘুম কাটেনা। কি অদ্ভুত!

বাস থেকে নেমে মুগ্ধ যখন সিএনজি ঠিক করছে, তিতির তখন বোতলের পানি দিয়ে মুখটা ধুয়ে নিল। সিএনজিতে উঠেই তিতির বলল,

-"এই আমার নার্ভাস লাগছে।"

-"কেন?"

-"প্রথমবার শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি! নার্ভাস লাগবে না?"

মুগ্ধ তিতিরের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,

-"যদি গিয়ে দেখো বাসায় কেউ নেই।"

-"মানে?"

-"মানে যদি গিয়ে দেখো, বাসায় কেউ নেই শুধু তুমি আর আমি?"

-"অপেক্ষা করবো। কেউ নেই তো কি হয়েছে? চলে আসবে।"

-"আর যদি না আসে?"

তিতির বিরক্ত হয়ে বলল,

-"রহস্য করবে না তো, অসহ্য। এমনিতেই নার্ভাস লাগছে তার উপর উনি আসছে ওনার রহস্যের ঝুলি নিয়ে।"

মুগ্ধ কিছু বলল না। একা একা হাসতে লাগলো। মুগ্ধর হাসি দেখে তিতিরের গা জ্বলে যাচ্ছিল।

সিএনজি কয়েকবার ডানে বায়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বামে মোড় নিয়ে যেখানে থামলো যায়গাটা শহরের বাইরে। তার ডানপাশে ছিল একটা চা বাগান। বামপাশে একটা রাস্তা উপরের দিকে উঠে গেছে। তিতির বলল,

-"যায়গাটা অসাধারণ।"

তিতির নিজের ব্যাগটা উঠাতে যাচ্ছিল। মুগ্ধ বলল,

-"আমাকে দাও।"

-"আমি পারব।"

-"যখন নিজের ব্যাগ টেনেছ তখন তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড ছিলে না। আমিও কিছু বলিনি। কিন্তু এখন তো আমি তোমাকে ব্যাগ টানতে দেব না। থার্ড, ফোরথ বাচ্চাদের টানার জন্য শক্তি সঞ্চয় কিরে রাখো।"

তিতির আর কিছু বলল না। এই পাগলের সাথে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। মুগ্ধ তেমন কিছুই আনেনি। ছোট্ট একটা ব্যাগ কাধে। তিতিরের ব্যাগটাও সেটার উপরে নিয়ে নিল। ওই রাস্তায় উঠতেই তিতির বলল,

-"এত উঁচু কেন রাস্তাটা? আর সিএনজিটা ছাড়লে কেন? কতদূর হাটতে হবে? হটছিই বা কেন? এদিক দিয়েই কি তোমার বাসায় যেতে হয়?"

-"এতগুলো প্রশ্ন?"

-"থাক বলতে হবে না।"

একথা বলেই তিতির আবার হাটা ধরলো। মুগ্ধ তিতিরের একটা হাত ধরে বলল,

-"আরে রাগ করছো কেন?"

তিতির থামছিল না। মুগ্ধ হঠাৎ তিতিরকে কোলে তুলে নিল। তিতিরের রাগ উধাও। তারপর হাটতে হাটতে মুগ্ধ বলল,

-"রাস্তাটা এত উঁচু কারন আমরা একটা টিলার উপর উঠছি।"

-"টিলা মানে জানি কি? টিলা, ঢিবি এগুলো আমি বুঝিনা।"

-"ঢিবি বলে সামান্য উঁচু যায়গাকে। টিলা বলে ছোট পাহড়কে। মাঝারি গুলো মেইনলি পাহাড়। আর নিলগিরি টাইপ উঁচুগুলোকে বলে পর্বত। তোমার দেখি বাংলা ভোকাবোলারিতে ব্যাপক সমস্যা! আমার বাচ্চাগুলোকে কি শিখাবে?"

তিতির একটা চিমটি দিল মুগ্ধকে। তারপর বলল,

-"তোমার বাচ্চাদের তুমি শিখাবে। আমার অত দায় পড়েনি।"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"কতকিছুর দায় যে পড়বে এখন কি বুঝবে সুন্দরী?"

তিতির বলল,

-"মানে?"

-"মানে কিছু না, আগে তোমার আগের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে নিই। সিএনজি ছেড়ে দিয়েছি কারন এখানকার সিএনজি বান্দরবানের মত তেলে চলে না। গ্যাসে চলে, যদিও প্রব্লেম হয়না তবু এটুকুর জন্য আমি রিস্ক নিতে চাইনা। বেশি হাটতে হবে না, আর সামান্য একটু। আর হ্যা, এদিক দিয়েই আমার বাসায় যেতে হবে। এই টিলার উপরেই আমার বাসা।"

-"সিরিয়াসলি? এত সুন্দর যায়গায় তোমার বাসা?"

-"তো? প্রকৃতিপ্রেম কি এমনি এমনি হয়েছে?"

-"ওয়াও। যায়গাটা অনেক সুন্দর।"

-"সুন্দরের দেখেছো কি? আগে উপরে উঠি?"

উপরে উঠে মুগ্ধ যেখানে তিতিরকে কোল থেকে নামালো তার সামনেই একটা গেট। গেটটা লাগানো। মুগ্ধ কাধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে বলল,

-"পাঁচ মিনিট ওয়েট করো।"

তারপর গেট বেয়ে তড়তড় করে উপরে উঠে ওপাশে চলে গেল। ভেতর থেকে লাগানো গেটটা খুলে বলল,

-"আসুন বেগাম। শ্বশুরবাড়িতে আপনাকে সুস্বাগতম!"

তিতির হেসে ব্যাগগুলো উঠাতে যাচ্ছিল। মুগ্ধ বলল,

-"অপরাধ মার্জনা করবেন বেগাম! ওগুলো আনার জন্য এই বান্দা এখনো জীবিত রয়েছে, আপনি আপনার স্বর্ণপদযুগল রেখে এই বাড়িটিকে ধন্য করুন।"

তিতির হাসিমুখে ভেতরে ঢুকলো। খুব এক্সাইটেড। মুগ্ধ বেড়িয়ে ব্যাগগুলো নিয়ে আসলো। তারপর বলল,

-"চলো।"

গেটের ভেতর লম্বা একটা রাস্তা। দুইপাশে অসংখ্য গাছ, সব চেনেও না তিতির। রাস্তাটা যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে ছোট্ট একটা দোতলা বাসা। বিল্ডিং এর কাছাকাছি দুটো গাছের মাঝে একটা হ্যামক ঝোলানো। অপজিটের একটা গাছের ডালে দড়িতে কাঠ বেধে একটা দোলনা বানানো হয়েছে। ছাদে একটা কবুতরের বাসাও দেখা যাচ্ছে। গেটের দুপাশের লাইট, বাউন্ডারি, হ্যামক, দোলনা, কবুতরের বাসা সব মিলিয়ে তিতির বুঝলো এসবই কোন সৌখিন মানুষের কাজ! কে হতে পারে? মা, বাবা, স্নিগ্ধ, পিউ নাকি মুগ্ধ? যেই হোক সবকিছু এত ভাল লাগলো যে ওর এখানেই স্থায়ী হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। মুগ্ধকে বলতে হবে তবে এখন না পরে। তিতির হাটতে হাটতে বলল,

-"এটা তোমাদের নিজেদের বাসা?"

-"হ্যা, দাদা বানিয়েছিল। সামনে যে চা বাগান টা দেখেছো ওখানে দাদা চাকরি করতো। তখনই এই টিলাটা কিনে বাসা বানায়। প্রথমে এটা কাঠের ঘর ছিল। আস্তে আস্তে বিল্ডিং হয়েছে বাট আই মিস দ্যাট উডেন হাউজ।"

-"কিন্তু তুমি যে বলেছিলে তোমাদের বাড়ি চিটাগাং না। বাবা চাকরীর জন্য থাকে?"

-"হ্যা, আমাদের বাড়ি তো কুমিল্লা। দাদা এখানে চাকরী করতো, বাসা বানিয়েছে। আস্তে আস্তে সবাই চলে এসেছে তা বলে তো আমরা চিটাগাং এর হয়ে গেলাম না। তাই না?"

-"ও। দাদা এখন কোথায় থাকে?"

-"দাদা-দাদী কেউই বেঁচে নেই এখন।"

-"সরি।"

-"হুম এসো। আর শোনো মাকে পা ধরে সালাম করতে আপত্তি নেই তো? মানে জানি কারো পা ধরে সালাম করতে নেই কিন্তু মা খুব খুশি হবে।"

-"না না আপত্তি কিসের? আমি করবো।"

মুগ্ধ বেল বাজালো। তিতিরের প্রচন্ড নার্ভাস লাগছিল। একটা ১৩/১৪ বছরের ছেলে বেড়িয়ে এল। বলল,

-"কাকে চাই?"

মুগ্ধ বলল,

-"মেহতাব চৌধুরী আছেন?"

-"না, উনি একটা অপারেশনে গেছেন। কোন মেসেজ থাকলে আমাকে দিয়ে যেতে পারেন।"

তিতির বুঝতে পারছিল না কি হচ্ছে। মুগ্ধ বলল,

-"ওহ। আমরা কি একটু ভেতরে আসতে পারি? আসলে আমরা খুবই টায়ার্ড।"

-"আপনার পরিচয়?"

-"আমি মেহবুব চৌধুরী। মেহতাব চৌধুরীর একমাত্র বড় ছেলে।"

-"ওহ! আর ওই সুন্দরী কিশোরীটি কে? ওনার পরিচয় তো দিলেন না?"

-"আপনি মেহদিন চৌধুরীকে চেনেন? মেহতাব চৌধুরীর একমাত্র ছোট ছেলে।"

-"জ্বী চিনি।"

-"ওই কিশোরীটি তার বড় ভাবী।"

ছেলেটা দুই কদম সামনে এসে চোখদুটো বড় বড় করে বলল,

-"ভাইয়া তুমি বিয়ে করে ফেলেছো? আম্মু যে বলল গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে আসছো? একা একা কেন বিয়ে করলে? আমরা কি বাধা দিতাম?"

এতক্ষণে মুগ্ধর মা আর পিউ চলে এল। মা তিতিরের কাছে এসে ওর মুখটা ধরে বলল,

-"মাশাল্লাহ! চোখদুটো যেন ধন্য হয়ে গেল। কি মিষ্টি দেখতে তুমি মা।"

তিতির লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করলো। তারপর পা ছুঁয়ে সালাম করলো। মা ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,

-"কী লক্ষী মেয়ে গো।"

স্নিগ্ধ বলল,

-"মিষ্টি আর লক্ষী হলে কি হবে? দেখে তো মনে হচ্ছে আমার চেয়েও ছোট।"

মুগ্ধ সব দেখছিল আর মিটিমিটি হাসছিল। পিউ স্নিগ্ধকে একটা ধমক দিয়ে তিতিরের কাছে এসে বলল,

-"আপু ভেতরে এসো তো। পাগলদের পাগলামি চলতেই থাকবে। তোমরা যে এতটা পথ জার্নি করে এসেছো সে খেয়াল কারোর নেই।"

মা বলল,

-"ওহো তাই তো। তোমাকে দেখে সব ভুলে গেছি। ভেতরে এসো মা, ভেতরে এসো।"

ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে তিতির একবার মুগ্ধর দিকে তাকালো। মুগ্ধ ওকে চোখ মেরে দিল। এর অর্থ কি ছিল কে জানে! ভেতরে ঢুকে পিউ তিতিরকে ওর ঘরে নিয়ে গেল। বলল,

-"শোনো এখনি তো ভাইয়ার ঘরে থাকার পারমিশন পাবে না। তাই আমার ঘরেই থাকতে হবে। আর আমি কিন্তু আপু টাপু বলতে পারবো না। এখন থেকেই ভাবী বলবো আপত্তি নেই তো?"

-"নাহ। তোমার যা ইচ্ছে তুমি বলো।"

-"আচ্ছা, আর অনেক গল্প হবে আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।"

তিতির ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখলো মা বসে আছে। ওর এখন আর একটুও নার্ভাস লাগছে না, শুধু লজ্জা লাগছে। মা বলল,

-"চলো চলো নাস্তা করবে। সবাই তোমার জন্য বসে আছে।"

সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে অপেক্ষা করছিল। তিতির রুমে ঢুকতেই মুগ্ধ ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তিতির জানে কেন! তিতিরের চুল দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। এই দৃশ্য অনেক দিন পর দেখছে মুগ্ধ। পাগল একটা।

মুগ্ধ সারাদিন ঘুমিয়ে কাটালো। কারন তিতিরকে ভাগে পেলনা। সকালে স্নিগ্ধ কতক্ষণ পাগলামি করে স্কুলে চলে গেল। তারপর সারাটাক্ষণ মা আর পিউ মিলে ওর সাথে গল্প করলো, ম্যাক্সিমাম মুগ্ধর ব্যাপারে। মুগ্ধ কি পছন্দ করে কি অপছন্দ করে এসবই। খুব ভাল লাগছিল তিতিরের। পিউ ঘুরে ঘুরে পুরো বাসাটা ওকে দেখালো। তারপর মা যখন রান্না করতে চলে গেলে পিউ ফিসফিস করে বলল,

-"এবার ভাইয়ার কাছে একটু যাও। নাহলে বোধহয় পাগল হয়ে যাবে। বেচারার চেহারা দেখে আমি তো অবাক। কখনো কোনো মেয়ের জন্য আমি ওর এমন ফিলিং দেখিনি জানো?"

তিতির লজ্জা পেয়ে হাসলো। পিউ বলল,

-"আরে আমার কাছে লজ্জা কি? যাও না। ভাইয়া সেই সকাল থেকেই একা একা তোমার দুক্ষে নিজের ঘরে ঘুমাচ্ছে। যদি তোমাকে একটু না ছাড়ি তাহলে হয়তো তোমাকে আর আমাদের কাছে আনবেই না।"

-" না আনলেও আমি আসব। এত আদর বুঝি আমি নেব না?"

পিউ তিতিরকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বলল,

-"ভাবী তুমি অনেক ভাল। তোমাকে দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে।"

তিতির পিউএর গাল ধরে বলল,

-"আর তুমিও এত্ত কিউট যে খালি আদর করতে ইচ্ছে করে।"

-"আচ্ছা আচ্ছা, এবার ভাইয়ার কাছে একটু যাও। আমার ভাইয়াটাও কিন্তু অনেক কিউট।"

তিতির মুগ্ধর ঘরে ঢুকে দরজাটা ভেজিয়ে দিল। মুগ্ধ খালি গায়ে ঘুমাচ্ছে। তিতির ওর পাশে বসলো। খুব ইচ্ছে করছিল ওর বুকে হাত রাখতে। কিছু না ভেবেই তিতির মুগ্ধর বুকে হাত রাখলো। এই প্রথম বোধহয় ওর যা ইচ্ছে হলো তাই করলো। মুগ্ধর ঘুম ভেঙে গেল কিন্তু তিতিরের স্পর্শ বুঝতে পেরে ঘুমের ভান করে রইলো। তিতিরের খুব ইচ্ছে করছে মুগ্ধর বুকে একটা চুমু দিতে। কিন্তু মুগ্ধ যদি জেগে যায়? ওর যা পাতলা ঘুম! জেগে গেলে যাবে। তিতির মুগ্ধর বুকে একটা চুমু দিয়ে উঠতে নিয়ে আর উঠতে পারলো না। মুগ্ধ ওকে জড়িয়ে ধরেছে। তিতির বলল,

-"ছাড়ো। কেউ এসে পড়বে।"

-"আসুক! তো কি হয়েছে? মুগ্ধ কাউকে ভয় পায় নাকি?"

-"তুমি ভয় না পেলেও আমি পাই, ছাড়ো।"

-"আরে এত ছটফট করছো কেন? শোনো না।"

-"কি?"

-"তুমি এটা কেন করলে?"

-"কোনটা?"

-"এইযে আমার বুকে হাত রাখলে, চুমু দিলে।"

তিতিরের মাথাটা মুগ্ধর বুকের উপর ছিল। তিতির মুগ্ধর বুকে জোড়ে একটা কামড় দিয়ে বলল,

-"ঘুমের ভান করে ছিলে? ছিঃ তুমি একটা খুব খারাপ।"

-"ভাল হয়েছে, আমি খারাপই। আর তাই এখন তুমি যেটা করেছো সেটা আমিও করবো।"

-"কোনটা? কি করবে?"

-"তুমি কি করেছো সেটা তুমিই চিন্তা করো। ঠিক সেটাই করবো। আমি নিজের মুখে বললে তো আবার রাগ করবে।"

তিতির লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছিল। কি করবে এখন? মুগ্ধর হাতে কামড় দিল। মুগ্ধ এটার জন্য রেডি ছিল না। তাই হাত আলগা হতেই তিতির উঠে দৌড় দিয়ে ঘর থেকে বের হতে নিল। কিন্তু তার আগেই মুগ্ধ দৌড়ে ধরে ফেলল ওকে। তিতির বলল,

-"ছেড়ে দাও। মাফ চাই এরকম আর করবো না।"

মুগ্ধ পেছন থেকে তিতিরকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে একটা চুমু দিতেই লাফিয়ে উঠলো। নিজেকে প্রাণপনে ছাড়াতে চাইলো মুগ্ধর হাত থেকে। মুগ্ধ ওর হাত আলগা করে দিল তিতির কি করে দেখার জন্য। তিতির নিজেকে কোনরকমে ছাড়িয়ে এক দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। ব্যাপারটা কি হলো? মুগ্ধ বুঝতে পারলো না। অবাক হয়ে চেয়ে রইল তিতিরের চলে যাওয়া পথের দিকে। তিতিরের গায়ের ধাক্কায় দরজাটা এখনো নড়ছে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

২৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌরি মরিয়ম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন