উপন্যাস       :         প্রেমাতাল
লেখিকা        :         মৌরি মরিয়ম
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা মৌরি মরিয়মের “প্রেমাতাল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম Ebook


২৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম (পর্ব - ৩০)

তিতির ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে মুগ্ধর দিকে। বংশীর কথা তো শুনতে পাচ্ছে না কিন্তু মুগ্ধ চুপ করে থেকে একসময় বলল,

-"আচ্ছা আচ্ছা নো প্রব্লেম। হুট করে এলে এমনটা হতেই পারে। আচ্ছা বংশী দা। রাখছি তাহলে।"

ফোন রাখতেই তিতির বলল,

-"ব্যবস্থা হয়নি না?"

মুগ্ধ তিতিরের গাল টিপে দিয়ে বলল,

-"মন খারাপ করোনা। আমি সামনের মাসেই আগে থেকে বুকিং দিয়ে তোমাকে নিয়ে আসব।"

তিতির বলল,

-"আমি পারমিশন পাব না।"

-"পাবা পাবা।"

-"না পাবনা।"

-"আচ্ছা বাদ দাওনা এখন, যেভাবেই হোক আমি তোমাকে নিয়ে আসবো। এখন একটু খাও।"

তিতির প্লেট এগিয়ে নিল। খাওয়া শুরু করে বলল,

-"হ্যা, এতক্ষণ তো টেনশনে ছিলাম তাই খেতে পারছিলাম না। এখন তো আর কোনো টেনশন নেই, সব শেষ।"

-"বোকার মত কথা বলোনা তিতির। কিসের সব শেষ?"

তিতির কিছু বলল না, মন খারাপ করে খেতে থাকলো। হঠাৎ তিতিরের চোখ পড়লো টেবিলের উপর রাখা লাচ্ছির দিকে। গ্লাস লাচ্ছি আর সাথে হাফ লিটারের বোতলের এক বোতল লাচ্ছি। তিতির বলল,

-"এত লাচ্ছি দিয়ে কি হবে?"

-"খাব। গ্লাসের গুলো এখন খাব। বোতলের টা রাস্তায় যেতে যেতে খাব। নষ্ট হয়ে যাবে নাহলে আরো নিতাম। এটা আমার প্রিয় লাচ্ছি। সব ইনগ্রিডিয়েন্স গুলো এত পারফেক্ট পরিমাণে দেয় যে একদম পারফেক্ট একটা লাচ্ছি হয়। তিতির এতক্ষণে হাসলো। বলল,

-"তুমি পাগল একটা।"

-"না, খাদক।"

রাস্তার অপজিটে আর্মিদের একটা সুপার শপ ছিল। খাওয়া শেষ হতেই মুগ্ধ ওই শপটা দেখিয়ে বলল,

-"চলো ওই শপটাতে একটু যাব।"

-"কি কিনবে আবার?"

-"চকলেট কিনবো।"

-"তুমি যাও। আমার যেতে ইচ্ছে করছে না। এখানেই বরং ভাল লাগছে। তুমি যাও। কেনাকাটা শেষ করে এসো। আমি এখানেই বসে থাকি।

মুগ্ধ আর জোর করলো না, চলে গেল। মুগ্ধ যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ করে বৃষ্টি নামলো। তিতির ভিজে যাচ্ছে, ধুর! সবগুলো টেবিলের উপর ছাতা আছে, শুধু ওদেরটাতেই নেই। ভেতরে চলে যেতে পারে কিন্তু তাহলে তো মুগ্ধ ওকে খুঁজে পাবে না। ফোনটাও তো ব্যাগে আর ব্যাগ মুগ্ধর কাছে। যখন বৃষ্টির জোর বাড়লো তখন তিতিরের ভালই লাগলো ভিজতে। এর মধ্যেই মুগ্ধ দৌড়াতে দৌড়াতে এল। এসেই ওকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তিতির বলল,

-"কোথায় যাচ্ছি?"

-"সিএনজি ঠিক করেছি।"

-"ওহ।"

মুগ্ধ বলল,

-"ভিজছিলে কেন তুমি?"

-"তো কি? যদি হারিয়ে যাই, আমার ফোন তো তোমার কাছে।"

মুগ্ধ তাকিয়ে দেখলো তিতিরের ঠোঁট বেয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে আর সেই ফোঁটা ফোঁটা পানিগুলো তিতির ওর ঠোঁট দিয়ে পিষে ফেলছে কথা বলার সময়। মুগ্ধর সেই ফোটাগুলোকে এখন হিংসা হচ্ছে। তিতির বলল,

-"কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লে যে?"

-"এমনি, চলো চলো।"

সিএনজিতে উঠেই মুগ্ধ আবার তাকালো তিতিরের দিকে। ওর ঠোঁটদুটো ভিজে সপসপে হয়ে আছে। এই মুহূর্তে মুগ্ধর প্রচন্ড ইচ্ছে করছে ওই ভেজা ঠোঁটের ছোঁয়া পেতে। এই অন্ধকারে সিএনজিতে সেটা পাওয়াও সম্ভব। কেন যেন মনে হচ্ছে তিতির আজ বাধা দেবে না। কিন্তু নিজেকে সামলে নিল মুগ্ধ। ওদের প্রথম চুমুটা কিনা এভাবে হবে? নাহ! সুন্দর, পারফেক্ট একটা সময়ের জন্য মুগ্ধ অপেক্ষা করবে। যখন কোনো তাড়া থাকবে না, কেউ দেখে ফেলার আতঙ্ক থাকবে না আর যখন তিতিরের কোনো সংকোচ থাকবে না।

সিএনজি বাস স্ট্যান্ড পার হওয়ার পর তিতির বলল,

-"এই আমরা বাস স্ট্যান্ড পার হয়ে এলাম তো।"

মুগ্ধর ঠোঁটে মুচকি হাসি দেখেই তিতির বুঝে ফেলল। বলল,

-"আমরা আজ থাকছি?"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"হ্যা, বংশী ফোন দিয়ে কনফার্ম করেছিল তখন, আমি তোমার সাথে একটু মজা করছিলাম। আর তাঁবুতে থাকতে হবে না। আমরা কটেজ পেয়েছি।"

তিতির একমুখ হাসি নিয়ে এক লাফ দিয়ে মুগ্ধর গলাটা জড়িয়ে ধরলো। মুগ্ধ হাসতে হাসতে বলল,

-"তুমি এত পাগলী কেন?"

তিতির ওর পিঠে খামচি মেরে বলল,

-"তুমি এত খারাপ কেন? কি মন খারাপ হয়েছিল আমার।"

মুগ্ধ হঠাৎই তিতিরের কোমর জড়িয়ে ধরে ওকে কোলের মধ্যে উঠিয়ে নিল। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

-"আই লাভ ইউ পাগলী!"

তিতিরের ইচ্ছে করছিল রিপ্লাই দিতে কিন্তু দিলনা। যখন দিবে বলে ঠিক করে রেখেছে তখনই দিবে। ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ কি শুধু লাভ ইউ টু বললেই হয়? আরো কত উপায় আছে! তিতির তারই একটা বেছে নিল। মুগ্ধর শার্টের ডান পাশের কলারটা সরিয়ে মুখ ডুবিয়ে দিল ওর গলার ডান পাশে। তারপর ইচ্ছেমত চুমু দিল। মুগ্ধর পায়ের রক্ত এক লাফে মাথায় উঠে গেল। হাওয়ায় ভাসতে লাগলো। নিজ উদ্যোগে করা তিতিরের প্রথম আদর। মুগ্ধ ওকে জাপ্টে ধরে রাখলো নিজের বুকের মধ্যে।

কিছুক্ষণের মধ্যে যখন ওরা "রিসোর্ট হলিডে ইন" পৌঁছল, গাড়ির শব্দ পেয়ে বংশী দৌড়ে এল,

-"আইয়ে বিবিজি আইয়ে। আল্লাহ মেহেরবান কি হাম আপকো লিয়ে কুছ কার পায়া।"

তিতির হাসলো কিছু বলল না। ওদের ব্যাগ দুটো জোর করে নিয়ে নিচ্ছিল। মুগ্ধ দিলনা। জিজ্ঞেস করলো,

-"বংশী বিবিজিকে কেমন দেখলে? পছন্দ হয়েছে?"

বংশী মাথা নিচু করে বলল,

-"সাহাব ইয়ে আপনে কেয়া পুছা? মুজহে তো লাগা কি বেহেশত সে কোয়ি হুর আগেয়া।"

মুগ্ধ বলল,

-"হ্যা তা ঠিক, কিন্তু বেশি বাচ্চা না?"

-"লেড়কি কাভি বাচ্চা নেহি হোতি সাহাব। উহারা পালাট কে সাত সাত জোয়ান বান যাতা।"

কথা বলতে বলতে ওরা রিসিপশনে চলে এল। তিতির বসলো। মুগ্ধ ফর্মালিটিজ সেরে তিতিরকে নিয়ে কটেজের সামনে যেতেই তিতির বলল,

-"আমরা এখানে থাকব?"

-"হ্যা।"

-"আর ইউ সিওর?"

-"হ্যা।"

-এই পুরো কটেজটা আজকের জন্য আমাদের?"

মুগ্ধ এবার হেসে দিল। তারপর বলল,

-"হ্যা।"

তিতির আরেকবার তাকিয়ে দেখে নিল কটেজটাকে। ছোট্ট একটা একতলা ঘর। কিন্তু দোতলা সমান উঁচু। নিচতলা সমান যায়গা ফাকা। টোঙ ঘরের মত করে বানানো। সামনেই চওড়া সিঁড়ি। সিঁড়ির উপরে দোচালা ডিজাইনের চাল। সিঁড়ি দিয়ে উঠলেই বারান্দা। বারান্দা দিয়েই ভেতরে ঢোকার দরজা দেখা যাচ্ছে। তিতির পা বাড়াতেই মুগ্ধ থামালো,

-"এই দাঁড়াও।"

-"কেন?"

-"বংশী একটা ছেলেকে পাঠালো না আমাদের ব্যাগ নিয়ে?"

-"হ্যা।"

-" বের হোক, তারপর আমরা যাব।"

-"আচ্ছা।"

ছেলেটা বের হয়ে চলে যেতেই মুগ্ধ তিতিরকে কোলে তুলে নিল। তিতির মুগ্ধর গলার পিছনে দু'হাত বাধলো, মুখে হাসি। মুগ্ধ ওকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে উঠে গেল। ভেতরে নিয়ে নামালো। তিতির ভেতরটা দেখে বিস্ময়ে মুখ চেপে ধরলো। পুরো রুমটাই কাঠের, ইভেন দেয়াল, ফ্লোর সব কাঠের। রুমে ঢুকেই হাতের ডান পাশে বিছানা সাদা বেড কভার বিছানো। বিছানার পাশেই বিশাল আয়নার বিলাশবহুল ড্রেসিং টেবিল। একটু সরে একটা আলমারি। সব ফার্নিচার ম্যাচিং ডিজাইনের। বাম পাশের দেয়ালের কর্নারে একটা দরজা, হয়তো টয়লেট। বাকী দেয়ালটুকু পুরোটাই সাদা পর্দা দিয়ে ঢাকা, নিচে কি? জানালা নাকি? কে জানে। সামনের দেয়ালে থাই গ্লাস লাগানো সিলিং থেকে ফ্লোর পর্যন্ত পুরোটা। এখানেও সাদা পর্দা। মুগ্ধ পর্দাটা টেনে দিয়ে তিতিরের সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর বলল,

-"কি ম্যাম? পছন্দ তো?"

-"পছন্দ হবে না মানে? আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না কি দেখছি আমি!"

-"আচ্ছা শোনো, অনেকক্ষণ ভেজা কাপড়ে আছো। চেঞ্জ করো। নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে। সারারাত যখন এখানেই আছো তখন সব দেখতে পারবে আস্তে আস্তে।"

-"আচ্ছা। আমি বাথরুমে যাচ্ছি চেঞ্জ করতে। তুমি রুমেই চেঞ্জ করে নাও।"

-"হুম।"

তিতির যখন ব্যাগ থেকে কাপড় বের করতে যাচ্ছিল মুগ্ধ বাধা দিল। তারপর নিজের ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে তিতিরের হাতে দিয়ে বলল,

-"এই নাও। এটা পড়ো।"

-"এটা কি?"

-"শাড়ি। তোমার জন্য কিনলাম একটু আগে।"

-"মানে আর্মি শপটাতে তুমি এজন্যই গিয়েছিলে?"

-"হ্যা। কাল তো একটু দেখেছি শাড়ি পড়া বউ তিতিরপাখিকে। আজ যখন সুযোগ পেয়েছি মিস করতে ইচ্ছে হলোনা।"

-"কিন্তু শাড়ি পড়তে তো আরো অনেক কিছু লাগে। পেটিকোট, ব্লাউজ। ওগুলো কোথায় পাব স্যার? কাল তো পিউয়ের টা পড়েছিলাম।"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"তোমার কি আমাকে বলদ মনে হয়? আমি আর যাই হইনা কেন বলদ নই। আর মেয়েদের ব্যাপারে সবই জানি সো শাড়ি পড়তে কি লাগে না লাগে তা আনবো না ভাবলে কি করে?"

তিতির হেসে বলল,

-"জানি আমি। কিন্তু আমি তো শাড়ি পড়তে পারিনা। কালই প্রথম পড়লাম। তাও মা পড়িয়ে দিয়েছিল।"

-"তো তুমি দেখোনি মা কিভাবে পড়িয়েছিল?"

-"হুম দেখেছি, শিখেছি কিন্তু অনেক প্যাঁচ। সব ভুলে গেছি।"

-"হায় খোদা! এখন শাড়ি পড়ানোটাও আমার শিখিয়ে দিতে হবে?"

-"তুমি পারো?"

-"পারব না কেন? মুগ্ধ সব পারে।"

-"কিভাবে পারো?"

সন্দেহের দৃষ্টি তিতরের চোখে। মুগ্ধ বলল,

-"ইউটিউবে আজকাল কি না শেখা যায় বলো? আমার খুব সাধ জেগেছিল শাড়ি পড়া দেখবার। কিন্তু জিএফ বউ কিছুই তো ছিলনা। তাই ইউটিউব থেকেই দেখেছি। আর শিখেও ফেলেছি।"

-"তুমি ওই মেয়েটার পেটের দিকে তাকিয়েছিলে?"

মুগ্ধ চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলো,

-"কোন মেয়ে?"

-"ইউটিউব ভিডিওতে যে মেয়েটা শাড়ি পড়া শেখাচ্ছিল?"

মুগ্ধর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এল। বলল,

-"হ্যা। মানে একটা সুন্দরী মেয়ে চোখের সামনে সুন্দর, মসৃন পেট বের করে শাড়ি পড়ছে। আর আমি কি চোখ বন্ধ করে থাকবো বলো? আমি কি পুরুষ মানুষ নই?"

-"তুমি সত্যি দেখেছো?"

-"হ্যা দেখেছি। বাট আই প্রমিস আমি আর কোনো শাড়ি পড়া মেয়ের পেটের দিকে তাকাব না। তখন তো তুমি ছিলে না তাইনা?"

তিতির উত্তর নাদিয়ে রাগ করে বাথরুমে ঢুকে গেল। ঢুকে তো ভিমরি খাওয়ার জোগাড়। বাথটাব, হাই কমোড সব আছে। কিসের সাথে কিসের কম্বিনেশন! যাই হোক, ওর মুডটা অফ! মুগ্ধ কি বলল এটা! সত্যি কি দেখেছে নাকি ওকে ক্ষ্যাপানোর জন্য বলেছে কে জানে!

প্যাকেট টা খুলতেই তিতির দেখলো সিলভার পাড়ের লাল তাতের শাড়ি এনেছে মুগ্ধ। উফ শাড়িটা এত সুন্দর কেন? মুগ্ধর পছন্দ আছে বলতে হবে। সাথে লাল ব্লাউজ, পেটিকোটও আছে। ফ্রেশ হয়ে শাড়িটা পড়ার অনেক চেষ্টা করলো তিতির কিন্তু পারলো না। কোনোভাবে পেঁচিয়ে বেড়িয়ে এল। বাইরে এসে দেখলো মুগ্ধ সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। ইশ! কাল রাতে ঘুমাতে পারেনি বলেই হয়তো এখন ওর অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে। তিতির ওর কাছে গিয়ে ভেজা চুলগুলো মুগ্ধর চোখের উপর ধরলো। কয়েক ফোঁটা পানি পড়তেই মুগ্ধ লাফিয়ে উঠে হেসে দিল। তারপর তিতিরের দিকে তাকাতেই চোখে যেন নেশা ধরলো। লাল শাড়িতে কিযে অপূর্ব লাগছে তিতিরকে! কাল নীল শাড়িতে বউ বউ লাগছিল আর আজ লাল শাড়ি, ভেজা চুল সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে নতুন বউ বিয়ের পরদিন সকালে গোসল করে বেড়িয়েছে! কি বলবে! কিভাবে এক্সপ্রেশ করবে তিতিরকে দেখে ওর ভেতরে কি হচ্ছে। বাকরুদ্ধ হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল মুগ্ধ।

মুগ্ধ এমনভাবে তাকিয়ে ছিল যে তিতির লজ্জায় কোনো কথাই বলতে পারছিল না। মুগ্ধ আচমকা তিতিরকে কোলে তুলে নিল তারপর টয়লেটের পাশের দেয়ালের পর্দা সরিয়ে দরজা ঠেলে বারান্দায় চলে গেল। বারান্দাটা দেখে আরও একবার মুগ্ধ হলো তিতির। সামনে বিশাল লেক। লেকটা কি কৃত্রিম না প্রাকৃতিক কে জানে! মুগ্ধকে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে পরে। এখন আর কোনো কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।

বারান্দাটা বেশ বড়। বারান্দায় কোনো ছাদ দেই। আর ঘরের সাথে লাগোয়া দেয়কলটি ছাড়া বাকি তিন দিকের দেয়ালগুলো ছোট ছোট হাটুসমান। প্রত্যেকটা কর্নারে ফুলের টব। একপাশে একটা সাদা রঙের সোফা। একটা ইরানি লাইটও জ্বলছিল বারান্দার এক কোনায়। মুগ্ধ তিতিরকে কোল থেকে নামিয়ে লাইটটা বন্ধ করে দিল। কারন লাইট টা চোখে লাগছিল। যদিও আকাশে মেঘ ছিল, পূর্নিমাও ছিল। মেঘের বিচরণ যেন খেলছিল ওদের সাথে। সরে গেলেই জোছনায় ভেসে যাচ্ছিল চারপাশ। আর মেঘে চাঁদ ঢেকে যেতেই আবছা অন্ধকারে লুকোচুরি খেলছিল। তিতির লেকের দিকে তাকিয়ে ছিল। মুগ্ধ লাইট অফ করে তিতিরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই তিতির বলল,

-"একটা গান শোনাবে?"

মুগ্ধও আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল গান শোনাবে তাই বিনাবাক্যে শুরু করে দিল,

"মোর প্রিয়া হবে এসো রানী

দেব খোঁপায় তারার ফুল

কর্ণে দোলাবো তৃতীয়া তিথির

চৈতি চাঁদেরও দুল..

খোঁপায় তারার ফুল

মোর প্রিয়া হবে এসো রানী

দেব খোঁপায় তারার ফুল

কন্ঠে তোমার পড়াবো বালিকা

হংস সাড়ির দোলানো মালিকা

বিজরী জরির ফিতায় বাধিব

মেঘরঙ এলোচুল...

দেব খোঁপায় তারার ফুল।

মোর প্রিয়া হবে এসো রানী

দেব খোঁপায় তারার ফুল

জোছনার সাথে চন্দন দিয়ে

মাখাব তোমার গায়ে..

রামধনু হতে লাল রঙ ছানি

আলতা পড়াব পায়ে..

আমার গানের সাত সুর দিয়া

তোমার বাসর রচিবও প্রিয়া

তোমারি হেরিয়া গাহিবে আমার

কবিতার বুলবুল

দেব খোঁপায় তারার ফুল

মোর প্রিয়া হবে এসো রানী

দেব খোঁপায় তারার ফুল।"

গানটা শেষ হতেই তিতির বলল,

-"এটা শুধু একটা গান ছিলনা। তার চেয়েও যেন অনেক বেশি কিছু ছিল।"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"হুম চলো বসি।"

একথা বলেই মুগ্ধ সোফায় গিয়ে বসলো। তিতিরও যাচ্ছিল পেছন পেছন। হাঁটা শুরু করতেই পায়ে বেঝে তিতিরের শাড়ির কুচি খুলে গেল। তিতির কুচিগুলো কুড়িয়ে নিল। মুগ্ধ উঠে এসে হেসে বলল,

-"এসো আমি পড়িয়ে দেই।"

-"না আমি পারব।"

এই বলেই তিতির ঘরে যাচ্ছিল। মুগ্ধ তিতিরের কোমর আঁকড়ে ধরে আটকালো। তারপর বলল,

-"পারলে প্রথমবারই পারতে। একবার পড়িয়ে দেইনা। কি হয়েছে? আমার অনেক ইচ্ছে ছিল আমি আমার বউকে শাড়ি পড়িয়ে দেব তাইতো শিখেছিলাম।"

-"কিন্তু তখন যে বললে.."

-"ওটা তো তোমাকে রাগানোর জন্য বলেছি।"

তিতির দাঁড়ালো। মুগ্ধ দেখলো তিতির শাড়ি উলটো পড়েছে। শাড়িটা ঠিক করে পড়িয়ে তিতিরের সামনে হাটু গেরে বসে যখন কুচি দিচ্ছিল তখন তিতির বলল,

-"ব্লাউজটা একদম ঠিক মাপের হয়েছে। তোমাকে তো আমি কখনো বলিনি তাহলে মাপ জানলে কোত্থেকে?"

-"তোমার মাপ আমি জানবো না তো জানবে কে? তোমার পা থেকে মাথা অবধি কত শতবার চোখ দিয়ে মুখস্থ করেছি জানো?"

তিতির লজ্জা পেল। মাঝে মাঝে মুগ্ধ যে কিসব বলে, মুখে কিছু আটকায় না। এরপর মুগ্ধ বলল,

-"অবশ্য মেয়েদের সবচেয়ে সুন্দর লাগে কিভাবে শাড়ি পড়লে জানো?"

-"কিভাবে?"

-"আগের যুগে ওভাবে পড়তো। এখন যা দিনকাল পড়েছে তাতে অবশ্য ওভাবে শাড়ি পড়া যাবে না আমাদের সমাজে। তবে হাজবেন্ডের জন্য প্রত্যেক মেয়েরই পড়া উচিৎ। পাহাড়ীরা তো এখনো পড়ে।"

-"কিভাবে বলবে তো?"

-"চোখের বালি সিনেমা টা দেখেছো? ইন্ডিয়ান বাংলা সিনেমা।"

-"কোনটা ওইযে প্রসেনজিৎ, ঐশরিয়া আর রাইমা সেনের টা?"

-"চোখের বালি একটাই হয়েছে।"

-"দেখিনি, তবে ট্রেইলর দেখেছি।"

-"ওখানে ঐশরিয়া কিভাবে শাড়ি পড়েছে দেখেছো?"

-"ব্লাউজ ছাড়া? পেঁচিয়ে?"

-"হ্যা, মারাত্মক লাগে... উফ।"

-"ছিঃ"

-"ছিঃ কেন? সবার সামনে পড়ার কথা তো বলছি না।"

তিতিরের এত লজ্জা লাগছিল! মুগ্ধ কিভাবে যে বলে এই কথাগুলো কে জানে! শেষমেশ তিতির বলল,

-"প্লিজ তুমি থামবে?"

-"তুমি কেন এত লজ্জা পাচ্ছো? তোমার জন্য তো ব্লাউজ এনেছিই।"

তিতির আর কথাই বলল না। ওর সাথে নিয়ে আরো কথা বললে আরো লজ্জা দেবে। কুচি দেয়া শেষ হতেই মুগ্ধ তিতিরের হাতে দিয়ে বলল,

-"নাও এবার গুঁজে নাও।"

তিতির শাড়ি উলটো গুঁজছিল মুগ্ধ ধরে ফেলল,

-"শাড়ি গুঁজতেও জানোনা? কি শেখালো তোমার শ্বাশুড়ি মা তোমাকে?"

তিতির কিছু বলল না, হাসছিল। মুগ্ধ কুচিগুলো ঠিক করে ধরে গুঁজে দিল। এই কাজ করতে গিয়ে তিতিরের নাভিতে চোখ চলে গেল, তারপর ঠোঁটও অটোমেটিক্যালি চলে গেল। নাভির ডানপাশে চুমু দিল মুগ্ধ। তিতির শিউরে উঠলো। দুহাত দিয়ে ওর চুল খামচে ধরে সরিয়ে দিতে চাইলো। মুগ্ধ সরলো না। আশেপাশে আরো কয়েকটা চুমু দিল। মুগ্ধর ঠোঁটের প্রতিটা স্পর্শে তিতির কেঁপে কেঁপে উঠছিল, আর সরে সরে যাচ্ছিল। তিতিরের পিছনেই ছিল ঘরের দেয়াল। কাঁপতে কাঁপতে আর সরতে সরতে দেয়াল পর্যন্ত চলে গেল। পেছনে হাত দিয়ে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে ব্যালেন্স রাখছিল। মুগ্ধ উঠে দাঁড়ালো। তিতিরকে দেয়ালে ঠেকিয়ে দুহাতে ওর মুখটা তুলে ধরলো। তারপর নিচু হয়ে তিতিরের চোখে চোখে রাখলো। একজনের নিশ্বাস আরেকজনের নিশ্বাসের সাথে ধাক্কা খেয়ে লুটিয়ে পড়ছিল। তিতির তাকিয়েই ছিল। মুগ্ধ ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো,

-"আজ নিশ্চয়ই তোমার কোনো আপত্তি নেই?"

মুগ্ধর কন্ঠটা ভারী শোনালো। তিতির বলল,

-"কিন্তু একটা কথা বলার ছিল যে!"

তিতিরেরও গলা কাঁপছিল। মুগ্ধ বলল,

-"বলো।"

তিতির মুগ্ধর চোখে চোখ রেখেই বলল

-"আই লাভ ইউ।"

মুগ্ধ হাসলো। তিতিরও মাথা নিচু করে সামান্য হাসলো। মুগ্ধ একটা হাত তিতিরের কোমরে রাখলো। আরেকটা হাতে ওর কানের নিচ দিয়ে চুলের ভেতর দিয়ে ওর মুখটা তুলে ধরলো। তিতির তাকালো। মুগ্ধ এগিয়ে যেতেই তিতির চোখ বন্ধ করে ফেললো। তারপর মুগ্ধ তিতিরের ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। তিতিরের দেয়ালে রাখা হাত দুটো একসময় মুগ্ধর কোমর পার করে পিঠে উঠে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুগ্ধ টের পেল তিতিরের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। কিন্তু কেন? মেয়েরা অতি সুখে চোখের জল ফেলে বটে কিন্তু তাই বলে এরকম সময়ে! কই ওর এক্স গার্লফ্রেন্ডদের বেলায় তো এমনটা হয়নি! ধুর এসব কথা ভাবার সময় নেই। তিতিরকে এখন স্বর্গে নিয়ে যাবে।

তিতিরের কাঠের ফ্লোরে রাখা পায়ের গোড়ালি দুটোও উঁচু হয়ে উড়ে যেতে চাইছিল। ওড়াবার জন্য মুগ্ধ তো আছেই।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌরি মরিয়ম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন