উপন্যাস       :         প্রেমাতাল
লেখিকা        :         মৌরি মরিয়ম
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা মৌরি মরিয়মের “প্রেমাতাল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম Ebook



৩৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম (পর্ব - ৩৬)

সবসময় এরকমই হয় নিজ থেকে তিতির কখনোই এগিয়ে আসে না। কিন্তু মুগ্ধ যখন একবার শুরু করে দেয় তিতির আর ছাড়তেই চায়না। নেশা হয়ে যায় ওর। বুদ্ধদেব গুহ লিখেছেন, 'মধুতে যে মরে তাকে বিষ দিয়ে মারতে নেই।' কোন বইতে যেন লিখেছেন? 'সবিনয় নিবেদন' নাকি 'একটু উষ্ণতার জন্য' তে? এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, তা সে যে বইতেই লিখুক না কেন কথা সত্য। তাই মুগ্ধ ওকে মধু দিয়েই মারলো। অনেকদিন ধরে এরকম একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল মুগ্ধ! কিন্তু তিতির তো দেখাই করতে চাইতো না। যাই হোক, এবার কিছু তো একটা হবে। ফলাফল নিশ্চিত সুপ্রসন্ন!

তারপর তিতিরকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এল মুগ্ধ। পুরো রাস্তায় কেউ কোন কথা বলেনি। তিতির আর একটি বারের জন্যও তাকালো না মুগ্ধর দিকে। গলির মাথায় যেতেই তিতির বলল,

-"আমাকে এখানেই নামিয়ে দাও। বাসার সামনে তোমার সাথে যেতে চাচ্ছি না।"

-"হুম, ঠিকাছে তুমি বোসো। আমি তোমার জন্য একটা রিক্সা নিয়ে আসি।"

-"রিক্সা লাগবে না, এটুকু তো হেটেই চলে যেতে পারব।"

-"তোমার শরীরটা এখন উইক। পারবে না।"

-"বেশী বাড়াবাড়ি করো না। এটুকু কোন রিক্সা যায় নাকি? দুই কদমে চলে যেতে পারবো।"

একথা বলেই তিতির গাড়ি থেকে নামছিল। মুগ্ধ তিতিরের হাত ধরে থামালো। বলল,

-"সবকিছু নিয়ে আরেকটু ভেবো প্লিজ। আরেকটা বার ট্রাই করো বাবা-মাকে রাজী করাতে? তোমাকে ছাড়া থাকার অনেক চেষ্টা করেছি তিতির, পারছি না।"

তিতির একথার কোন উত্তর না দিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

-"আমি আসছি।"

তিতির যতক্ষণ ধরে হেটে হেটে গেল ততক্ষণ তাকিয়ে রইলো মুগ্ধ। তিতির একবারও পেছন ফিরে তাকালো না।

বাড়ির গেটের ভেতর ঢুকে দাঁড়িয়ে পড়লো তিতির। কয়েক সেকেন্ড পর ভেতর থেকেই উঁকি মারলো। মুগ্ধ ততক্ষণে ঘুরে গেছে। গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। তারপর চলে গেল। যতক্ষণ গাড়িটা দেখা যাচ্ছিল ততক্ষণ তাকিয়ে রইলো তিতির। মুগ্ধ চোখের সীমানার বাইরে যেতেই উপরে চলে গেল। দু'বার বেল দেয়ার পরও কেউই দরজা খুলছে না। তিতিরের কষ্ট হচ্ছিল দূর্বল শরীরে দাঁড়িয়ে থাকতে। এরপর তিতির কলিং বেলের সুইচটা অনেকক্ষণ চেপে ধরে রইলো। তখন চম্পা এসে দরজা খুলে দিয়ে আবার দৌড়ে চলে গেল ড্রইং রুমে। তিতির দরজা আটকে ড্রইং রুমের দরজায় দাঁড়াতেই দেখতে পেল মা ডিভানে শুয়ে আছে, বাবা আর ভাবী সোফায় বসে। আর চম্পা ফ্লোরে বসে আছে। যে যেখানে যেভাবেই থাক না কেন সবার মনোযোগ টিভির দিকে। টিভিতে একটা ইন্ডিয়ান বাংলা সিরিয়াল চলছে। যেখানে এই মুহূর্তে একটা ছেলেকে কোন এক পার্টিতে তার শ্বশুর সবার সামনে অপমান করছে। একটা মেয়ে কাঁদছে, মেয়েটা সম্ভাবত ছেলেটার স্ত্রী। মা উত্তেজনায় শোয়া থেকে উঠে বসে বলল,

-"দেখসো দেখসো কি ভাল ছেলেটাকে কিভাবে অপমান করতেছে। অমানুষ একটা, আরে ব্যাটা খালি টাকাই দেখলি! নিজের মেয়েটার সুখের দিকে তাকাইলি না!"

তিতিরের মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো। হায়রে জীবন! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ঘরে চলে গিয়ে দরজা লাগালো।

আয়না ধরে নিজের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে তিতির। মাত্র কিছুক্ষণ আগে মুগ্ধ ছিল এখানে। নিজেই নিজের ঠোঁট স্পর্শ করলো। মুগ্ধকেই অনুভব করতে পারছে। ইশ কি সুখ দিল মুগ্ধ। আচ্ছা, মুগ্ধর যখন অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে যাবে তখনও কি মুগ্ধ এভাবেই সুখ দেবে ওর বউকে? হয়তো দেবে না, কিন্তু সত্যি যদি দেয়! তাহলে সেটা কিভাবে সহ্য করবে তিতির? ধুর, তিতির তো জানবেই না তো সহ্য করার ব্যাপারটা আসছে কোত্থেকে? কিন্তু এসব তো শুধু ওর অধিকার, অন্য কাউকে পেতে দেবে না ও। মুগ্ধর শেষ কথাটা কানে বাজছিল। 'আরেকবার চেষ্টা করো' কিন্তু কিভাবে চেষ্টা করবে ? কম চেষ্টা তো করেনি।

রাতে খাওয়ার টেবিলে বাবা বলল,

-"তিতির মা.."

তিতির বাবার উল্টোদিকে ঠিক মুখোমুখি বসা ছিল। বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

-"জ্বী বাবা, বলো?"

-"তোর চাচ্চু তোর জন্য যে প্রপোজাল টা এনেছিল সেটা কিন্তু এসলেই ভাল। ছেলেটা তোর ছবি দেখে তোকে খুবই পছন্দ করেছে। এখনো বিয়ে করেনি। একবার কথা বলে দেখ, ভাল লাগতেও তো পারে। ছেলেটা কিন্তু অসাধারণ, লাখে একটা যাকে বলে।"

তিতির মুখের ভাতটুকু শেষ করে স্পষ্ট স্বরে বলল,

-"বাবা, আমি বিয়ে করলে মুগ্ধকেই করবো এবং তোমাদের সম্মতিতেই। অন্য কাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমাকে কেটে ফেললেও আমি অন্য কাউকে বিয়ে করবো না।"

মা টেবিলের উল্টোদিকে বসে ছিল। উঠে এসে তিতিরের গালে একটা চড় মারলো। এত জোরে মারলো যে তিতির টাল সামলাতে না পেরে পাশে বসে থাকা ভাবির গায়ের উপর গিয়ে পড়লো। মা বলল,

-"কোন বিয়েসাদির দরকার নেই তোর। এমনি থাকবি আজীবন। মাস্টার্স কম্পলিট হলেই চাকরী খুঁজবি। বিয়ে দেব না তোকে।"

মা একথা শেষ করেই আবার নিজের চেয়ারে বসে খাওয়া শুরু করলো। তিতির উঠে সোজা হয়ে বসতেই তান্না বলল,

-"বাবা, আজীবন লক্ষী মেয়ে লক্ষী মেয়ে বলেছ না? দেখো এখন তোমার লক্ষী মেয়ের অধঃপতনের নমুনা।"

তিতির উঠে নিজের ঘরে চলে গেল। দরজা লাগিয়ে ফ্লোরে বসে কাঁদতে লাগলো। কেউ পেছন থেকে ডাকলো না আজ। অথচ আগে একবেলা না খেয়ে ঘুমাতে পারতো না। ঘুমিয়ে পড়লেও মা নাহয় ভাইয়া প্লেটে করে ভাত এনে ওর মুখে তুলে খাইয়ে দিত। ঘুমের ঘোরেই খেত। ওর ফ্যামিলির কেউ কখনো ওর কোন কিছুতে বাধা দেয়নি, কখনো খোঁচা দিয়ে কথা বলেনি গায়ে হাত তোলা তো বহুদূরের কথা। মাত্র কিছুদিনের ব্যাবধানে সবকিছু কেমন বদলে গেল।

তারপর আরো কয়েক মাস পার হয়ে গেল। এর মধ্যে মুগ্ধ অনেকদিনই ফোন করেছে, তিতির কখনো ধরেছে, কখনো ধরেনি। ধরে কি বলবে সেই তো এক কথা নিয়ে তর্কাতর্কি হবে। কি লাভ এসব করে! কিন্তু একদিন রাতে ইন্টারনেট অন করতেই হোয়াটস এ্যাপে মেসেজ এল। মুগ্ধর নাম দেখেই বুকটা কেঁপে উঠলো তিতিরের। মুগ্ধ একটা অডিও পাঠিয়েছে। তিতিরের মন বলে, 'তারাতারি প্লে কর তিতির' আর ওর ব্রেইন বলে, 'খবরদার তিতির, ভুলেও প্লে করিস না। মরবি মরবি।' শেষপর্যন্ত মনেরই জয় হলো। তিতির অডিওটা প্লে করতেই মুগ্ধর গিটারের টুংটাং শুরু হয়ে গেল। তারপর গান....

"যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে,

কেটেছিল নৌকার পালে চোখ রেখে।

আমার চোখে ঠোঁটে গালে

তুমি লেগে আছো..

যেটুকু রোদ ছিল লুকোনো মেঘ

দিয়ে বুনি তোমার শালে ভালবাসা,

আমার আঙুলে হাতে কাধে

তুমি লেগে আছো..

তোমার নখের ডগায় তীব্র প্রেমের মানে,

আমিও গল্প সাজাই তোমার কানে কানে,

তাকিয়ে থাকি হাজার পরদা ওড়া বিকেল,

শহর দুমড়ে মুচড়ে থাকুক অন্য দিকে।

ট্রাফিকের এই ক্র্যাকার ফোনই..

আমাদের স্বপ্ন চুষে খায়।

যেভাবে জলদি হাত মেখেছে ভাত

নতুন আলুর খোসার এই ভালবাসা,

আমার দেয়ালঘড়ি কাঁটায়

তুমি লেগে আছো..

যেমন জড়িয়ে ছিলে ঘুম ঘুম বরফ পাশে,

আমিও খুঁজি তোমায় আমার আশেপাশে,

আবার সন্ধ্যেবেলা ফিরে যাওয়া জাহাজ পাশে,

বুকে পাথর রাখা আর মুখে রাখা হাসি,

যে যার নিজের দেশে

আমরা স্রোত কুড়োতে যাই।

যেভাবে জলদি হাত মেখেছে ভাত

নতুন আলুর খোসার এই ভালবাসা

আমার দেয়ালঘড়ি কাঁটায় তুমি লেগে আছো।

যে কটা দিন তুমি ছিলে পাশে

কেটেছিল নৌকার পালে চোখ রেখে

আমার চোখে ঠোঁটে গালে

তুমি লেগে আছো।"

গানটা শুনে নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না তিতির। কান্নায় ভেঙে পড়লো তিতির। গানটার প্রত্যেকটা শব্দ যেন ওদের জন্যই লেখা হয়েছে। আগেও বহুবার শুনেছে এই গানটা, তখন ওর এরকম ফিলিং হয়নি। মুগ্ধও যেন একটু বেশিই আবেগ দিয়ে গেয়েছে। কেন মুগ্ধ এমন করছে! মুগ্ধ এমন করলে বাঁচবে কি করে? মুগ্ধ কি একটুও বোঝে না? মুগ্ধকে দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কিভাবে দেখবে! একটা ছবিও তো নেই। মুগ্ধর ছবিওয়ালা ফোন, মেমরি কার্ড সবই তো কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেছিল ভাইয়া। মুগ্ধ তো ইদানীং ফেসবুকও ইউজ করে না। শুধু হোয়াটস এ্যাপের এই ছবিটা দেখে তো মন ভরছে না তিতিরের। কোনভাবে রাতটা পার করলো। তারপর সকাল সকাল উঠেই টার মধ্যে রেডি হয়ে বের হয়ে গেল তিতির। সিএনজি নিয়ে :১৫ এর মধ্যেই তিতির পৌঁছে গেল মুগ্ধর অফিসের সামনে। না মুগ্ধর সামনে যাবে না, শুধু দূর থেকে একবার দেখেই চলে যাবে। মুগ্ধর অফিস ১০ টায়। কখন আসবে কে জানে। মাত্র সকাল হলো এখনি রোদ খা খা করছে। ওড়নাটা মাথায় তুলে ঘোমটা দিয়ে নিল। মুগ্ধর অফিসের ঠিক অপজিটে একটা বিউটি স্যালুন। তার সামনে একটা গাছের আড়ালে দাঁড়ালো তিতির। মুগ্ধ যেদিক দিয়েই আসুক না কেন তিতির ওকে দেখতে পাবে। প্রায় আধাঘন্টা অপেক্ষা করার পর পৌনে ১০ টার দিকে দেখলো মুগ্ধর গাড়িটা এসে অফিসের সামনে থামলো। গাছের আড়াল থেকেই লুকিয়ে দেখছিল তিতির। রাস্তার এপাশ-ওপাশ হলেও দুরত্ব অনেক। তবু তিতিরের দেখতে প্রব্লেম হচ্ছিল না। মুগ্ধ গাড়ি নিয়ে বেজমেন্টে চলে গেল। হায় খোদা! যদি বেজমেন্ট থেকেই লিফটে উঠে যায় তাহলে তো দেখতেই পাবে না। না মুগ্ধ বেজমেন্ট থেকে ফিরে এল। সিকিউরিটির সাথে কথা বলছে। সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট, টাই, সানগ্লাস সব মিলিয়ে কি যে দারুন লাগছে মুগ্ধকে! শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করছে। মুগ্ধ সিকিউরিটির সাথে কথা বলা শেষ করে হাসছিল। ইশ কি মারাত্মক সে হাসি! কতদিন পর দেখছে তিতির। অবশেষে মুগ্ধ ভেতরে চলে গেল। এক পা ভেতরে দিয়েই আবার ফিরে এলো। আশেপাশে তাকালো, কি খুঁজছে ? পকেট থেকে ফোন বের করলো। তারপর পরই তিতিরের ফোনে কল এলো। মুগ্ধ ফোন করেছে! ভাগ্যিস ফোনটা সাইলেন্ট ছিল। কিন্তু মুগ্ধ কি কিছু বুঝতে পারলো নাকি এমনিতেই ফোন করেছে? কি করবে ফোন কি ধরবে নাকি ধরবে না? ভাবতে ভাবতেই কলটা কেটে গেল। মুগ্ধ বিরক্ত হয়ে আবার কল দিল। তিতির কি করবে কি করবে করেও কলটা রিসিভ করেই ফেলল।

-"হ্যালো।"

-"হ্যা, হ্যালো তিতির.. তুমি কোথায়?"

-"এইতো ক্যাম্পাসে যাচ্ছি। এত সকালে তুমি?"

-"আসলেই ক্যাম্পাসে যাচ্ছো?"

-"হ্যা, ক্লাস আছে।"

এমন সময় মুগ্ধর সামনে দিয়ে একটা গাড়ি গেল। যার ভেতর গান বাজছে,

"Nothing gonna change my love for u..."

গানটা মুগ্ধ একই সাথে ফোনের মধ্যেও শুনতে পেল। ব্যাস মুগ্ধ এখন সিওর তিতির আশেপাশেই আছে। মুগ্ধ আশেপাশে হাটছে আর খুঁজছে। বলল,

-"তিতির, সিরিয়াসলি বলো.. তুমি কোথায়? তুমি কি বনানী? যদি এসে থাকো তো মিট মি প্লিজ। আমি তোমাকে দেখতে চাই।"

-"না, আমি বনানী কেন আসতে যাব? আমি ধানমন্ডিতে।"

এমন সময় মুগ্ধ দেখে ফেলল তিতিরকে। এক দৌড় দিল রাস্তা ক্রস করার জন্য। অর্ধেকটা আসতেই একটা গাড়ি এসে পড়লো, তিতির আঁৎকে উঠলো। মুগ্ধ থেমে গেল। গাড়িটা চলে যেতেই মুগ্ধ আবার দৌড় দিল। এক দৌড়ে তিতিরের সামনে। তিতির কোথায় যাবে বুঝে উঠতে পারলো না। এমনভাবে ধরা খাবে ভাবেনি। মুগ্ধ বলল,

-"পাবলিক প্লেস না হলে এমন একটা চড় মারতাম এখন তোমাকে যে জীবনে ভুলতে পারতে না। ফাজিল মেয়ে, যেমন ভাই তেমনি তার বোন।"

তিতিরের কান্না পেল, কিন্তু কাঁদলো না। একটুও রাগ করলো না। তিতির জানে এটা মুগ্ধর ভালবাসা প্রকাশেরই একটা ধরণ।

মুগ্ধ আর অফিসে গেল না। ফোন করে ছুটি নিয়ে নিল। তিতিরকে নিয়ে হাইওয়েতে চলে গেল। একসময় মুগ্ধ বলল,

-"এমন আর কখনোই করোনা তিতির। জানো তোমাকে একটা বার দেখার জন্য আমার মনটা কেমন করে? আর তুমি কিনা লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখে চলে যাও। এমন করে কি লাভ বলো?"

তিতির একথার উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করলো,

-"একটা কথা রাখবে?"

-"কি?"

-"আগে এটা জিজ্ঞেস করলে বলতে 'বলো' আর এখন বলছ 'কি?' এখন আর আগের মত ভরসা নেই তোমার।"

-"আরে না না পাগলী! আমি তো অন্য কথা বলছিলাম হঠাৎ তুমি অন্য কথা বলায় জিজ্ঞেস করে ফেলেছি। বলো কি কথা রাখতে হবে।"

-"আমি প্রায় বছর ধরে বাসায় বন্দী। কেউ বেধে রাখছে না, কিন্তু নিজেই বের হইনা। প্রায় প্রতিদিনই কথা শুনতে হচ্ছে বাসায়। আর পারছি না। আমাকে একটু কোথাও নিতে যাবে?"

-"হ্যা বলো কোথায় যেতে চাও।"

-"ঢাকার বাইরে, একদিনের জন্য জাস্ট। একটু রিফ্রেশড হতে চাই।"

মুগ্ধ অবাক হয়ে বলল,

-"মানে? ঢাকার বাইরে যাবে? তোমার ফ্যামিলি জানলে..."

আর বলতে দিল না তিতির। মুখ চেপে ধরলো। তারপর বলল,

-"একটা দিনের জন্য আমি সবকিছু থেকে দূরে চলে যেতে চাই। যেখানে ফ্যামিলি থাকবে না, প্রব্লেম থাকবে না, দুশ্চিন্তা থাকবে না, ভয় থাকবে না, শুধু তুমি আর আমি থাকবো। নিয়ে যাবে না?"

-"হুম নিয়ে যাব। কবে যাবে বলো?"

-"এক্ষুনি।"

-"মানে? এখন যাবে? বাসায় বলে এসেছো?"

-"নাহ, আজ আমার গ্রুপ স্টাডির জন্য ফ্রেন্ডের বাসায় থাকার কথা ছিল। সেই হিসেবেই আমি বলে বেড়িয়েছিলাম। গত পরশু আমার বাসায় ছিল। প্রব্লেম নেই। আর আমার আসলে এই মুহূর্তেই মনে হলো কোথাও গেলে ভাল লাগবে। সুযোগও আছে কিন্তু তুমি ছুটি কি পাবে?"

-"আজ তো ছুটি নিয়েই নিয়েছি।"

-"কিন্তু আজ তো থাকবো। কাল আসবো। কালকের ছুটি নিতে হবে না?"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"মাথাটা গ্যাছে না? কাল শুক্রবার।"

-"ওহ, আমার খেয়ালই ছিল না।"

-"ওকে, কোথায় যাবে বলো।"

-"তুমি যেখানে নিয়ে যাবে।"

-"কক্সবাজার?"

-"ধুর, ওটাতো আরেক ঢাকা। খালি বিল্ডিং আর বিল্ডিং।"

-"তাহলে?"

-"এনি আদার অপশন?"

-"পাহাড়ে তো কতই গিয়েছি দুজনে। চলো এবার সিলেটে যাই। ওখানে আমাদের একসাথে যাওয়া হয়নি। পাহাড়, নদী, ঝড়না সবই আছে।"

-"আচ্ছা।"

-"কিন্তু আমি তো উলটো এসে পড়েছি। এমন সৌভাগ্য হবে জানতামও তো না।"

-"এখন ঘুরে যাও।"

মুগ্ধ গাড়ি ঘোরালো। তিতির বলল,

-"আমি যদি ঘুমাই তুমি কি রাগ করবে?"

-"রাগ কেন করবো?"

-"এত লম্বা জার্নি, আমি ঘুমাবো আর তুমি এতটা রাস্তা একা একা বোর হয়ে ড্রাইভ করবে।"

-"আরে নাহ পাগল, তুমি পাশে থাকলে কিছুতেই আমি বোর হইনা।"

-"তবু, আচ্ছা চলো বাসে যাই। তাহলে তোমাকে কষ্ট করে ড্রাইভ করতে হবে না।"

-"না বাসে গেলে যেতে যেতে রাত হয়ে যাবে, গাড়িতে গেলে দুপুরের মধ্যে পৌঁছতে পারবো। আর তুমি তো জানো ড্রাইভ করতে আমার অনেক ভাল লাগে।"

-"আচ্ছা। বাসায় জানাবে না?"

-"পরে। যখন ব্রেক নেব তখন জানিয়ে দেব।"

-"আচ্ছা।"

এরপর তিতির মুগ্ধর দিকে ফিরে সিটে হেলান দিয়ে মুগ্ধর একটা হাত টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,

-"এক হাতে চালাতে পারবে?"

-"হুম। তো কয়হাত লাগবে?"

-"তাহলে এই হাতটা আমার কাছেই থাকুক? আমি একটু ঘুমাই। জানো অনেক রাত ধরে ঘুমাতে পারি না আমি। এখন তোমার স্মেল নিয়ে নিয়ে ঘুমাবো, ঘুমাই?"

মুগ্ধ হেসে বলল,

-"ঘুমাও।"

তিতির শুনতে পেল না মুগ্ধর শেষ কথাটা। কারন ততক্ষণে ঘুমে তলিয়ে গেছে। মুগ্ধর হাত-পা কাঁপছে। আজ কতদিন পর তিতির স্বাভাবিক ব্যাবহার করছে ওর সাথে। ঘুরতে যেতে চেয়েছে! তাও আবার ঢাকার বাইরে! ইভেন যাচ্ছেও! কি যে ভাল লাগছে মুগ্ধর। মুগ্ধ জানে ভাললাগা ক্ষণিকের তবু যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকুতেই সুখ।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌরি মরিয়ম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন