উপন্যাস       :         প্রেমাতাল
লেখিকা        :         মৌরি মরিয়ম
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা মৌরি মরিয়মের “প্রেমাতাল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম Ebook



৪৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম (পর্ব - ৪৮)

সন্ধ্যা হতে না হতেই তিতিরের জ্বর মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেল। ওকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। কিন্তু কিছুতেই যেতে চাচ্ছে না। উল্টোপাল্টা কথাবার্তা বলছে। অবশেষে মুগ্ধ ওকে জোর করে তুলে নিয়ে গেল। ডাক্তার দেখে বলল, 'ভাইরাস জ্বর। এন্টিবায়োটিকস দিচ্ছি। চিন্তা করবেন না ঠিক হয়ে যাবে।' মুগ্ধর বুকের উপর থেকে পাথর নেমে গেল। তিতিরের খারাপ কিছু হয়নি তো এটা ভেবে এতক্ষণ ওর মন কু ডাকছিল।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে হসপিটালের সামনে যেতেই মুগ্ধ পড়লো বিপাকে। বৃষ্টি নেমেছে। বর্ষাকাল টাকে এজন্যই মাঝেমাঝে অসহ্য লাগে। কথা নেই বার্তা নেই হুটহাট বৃষ্টি। এটুকু সময়ের জন্য গাড়িটা আবার বেজমেন্টে পার্ক করবে সেটা ভেবেই রাস্তায় পার্ক করেছিল। এখন তিতিরকে নিয়ে গাড়ি পর্যন্ত যেতে গেলে তো তিতির ভিজেই যাবে। তিতির মুগ্ধর বুকে মাথা দিয়ে রেখেছিল। আর মুগ্ধ একহাতে তিতিরকে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। মুগ্ধ বলল,

-"তিতির, তুমি একা একা দাঁড়াতে পারবে না দু'মিনিট? আমি গাড়িটা নিয়ে আসি?"

-"হ্যা পারবো। তুমি গেলেও পারবো।"

-"সত্যিসত্যি তো?"

তিতির চোখ পিটপিট করে বলল,

-"না মিথ্যামিথ্যি তো।"

-"এক থাপ্পড় দিব নড়লে। এখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে।"

-"ওক্কে! কিন্তু থাপ্পড় নিবনা, চুম্মা নিব।"

তারপর আবার মুখজোড়া হাসি দিয়ে চোখ পিটপিট করলো। হাসলো মুগ্ধ! এক জ্বরে ওর ভেতরের বাচ্চাটা বেড়িয়ে এসেছে।

মুগ্ধ চিন্তায় চিন্তায় গেল। গাড়ি নিয়ে এসেই হা হয়ে গেল। যা ভয় করছিল তাই তিতির নেই। চারপাশ খুঁজতে খুঁজতে দেখলো রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। সাথে সাথে গিয়ে টেনে নিয়ে গাড়িতে ওঠালো। তিতির বলল,

-"উফফ, আমি ভিজবো। আমাকে ভিজতে দাও।"

মুগ্ধ ততক্ষণে গাড়িতে উঠেছে মাত্র। একটা চড় মেরে বলল,

-"আমি বলেছিলাম না কোথাও না যেতে?"

যদিও আস্তেই মেরেছে মুগ্ধ তবুও তিতির কান্না করে দিল,

-"তুমি আমাকে মারলে?"

-"খুব ভাল করেছি। তোমাকে আরো মারা উচিৎ। তোমার কোন আইডিয়া আছে এই জ্বরে বৃষ্টিতে ভিজলে কি হতে পারে? কিংবা একটা অসুস্থ রোগীকে একা কোথাও রেখে ফিরে এসে তাকে না দেখলে কেমন লাগতে পারে?"

তিতির ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগলো। বেশিদূরের হসপিটালে যায়নি তাই ফিরতেও দেরী হলো না। বাসায় ফিরতে ফিরতেই পিউকে ফোন দিল।

-"হ্যালো, পিউ তুই কই?"

-"এইতো ভাইয়া বাসায় ফিরছি। জামে পড়েছি।"

-"আচ্ছা ঠিকাছে।"

-"কেন কিছু বলবি? বল না।"

-"তিতিরের জ্বর বেড়েছিল, ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। তুই এখন না ফিরলে ফিরতে বলতাম।"

-" আচ্ছা। ডাক্তার কি বলল?"

-"ভাইরাস জ্বর। এন্টিবায়োটিকস দিয়েছে।"

পাশ থেকে তিতির বলল,

-"আমি পিউপাখির সাথে কথা বলবো। দাও দাও।"

মুগ্ধ ঝাড়ি মেরে বলল,

-"চুপ, একদম চুপ। বাসায় গিয়ে কথা বলো।"

-"অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ।"

ওপাশ থেকে পিউ বলল,

-"ভাইয়া বকিস না তো। কথা বলতে চাচ্ছে যখন দে প্লিজ।"

মুগ্ধ দিল। তিতির ফোন ধরে বলল,

-"পিউউউ.."

-"হ্যা আমার সুইটি ভাবী বলো।"

-"জানো, তোমার ভাইয়া আমাকে মেরেছে?"

-"সেকী কেন?"

-"আমি বৃষ্টিতে ভিজেছি তাই।"

-"ওওও, সোনা ভাবীটা আমার, কেন ভিজলে এই জ্বর নিয়ে?"

-"আমি বৃষ্টি ভালবাসি যে তাই।"

-"আমিও, তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হও। তারপর আমরা একসাথে ভিজবো। ওকে ভাবী?"

-"আচ্ছা।"

-"টাটা।"

-"টাটা।"

ফোন রাখার পর মুগ্ধ বলল,

-"এক কাজ করো। আমাদের বাসর রাত কাটাবার পর সকালবেলা পিউকে গিয়ে বইলো, 'জানো পিউ তোমার ভাইয়া আমার সাথে সেক্স করেছে।"

-"আচ্ছা ঠিকাছে।"

মুগ্ধ তিতিরের রিপ্লাই শুনে অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো ওর দিকে।

বাসায় ফিরে দেখলো পিউ এখনো ফেরেনি। তিতিরের সিলেটের সেই কাপড়চোপড় সব মুগ্ধর কাছেই ছিল। সেখান থেকে কাপড় বের করলো। তারপর তাড়াতাড়ি তিতিরকে নিয়ে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,

-"জাস্ট বৃষ্টির পানিটুকু ধুয়ে ফেলতে যতটুকু লাগে ততটুকু গোসল করবে। বেশি হলে আবার চড় মারবো তখনকার মত।"

তিতির বলল,

-"তাহলে তুমিই গোসল করিয়ে দাওনা। আমি তো বুঝিনা বৃষ্টির পানি ধুতে কতটুকু গোসল লাগে। তারপর যদি আবার চড় খাই?"

মুগ্ধ বলল,

-"জাতে মাতাল তালে ঠিক। যাও একা গোসল করো।"

তিতির মুগ্ধর গলায় ঝুলে পড়ে বলল,

-"প্লিজ আসো না।"

অবশেষে মুগ্ধ গেল। তিতিরকে বৃষ্টির ভেতর থেকে আনতে গিয়ে নিজেও ভিজে গিয়েছিল। ওরও তো মাথাটা ধুতে হবে। তিতির লক্ষী বাচ্চার মত দাঁড়িয়ে রইলো। মুগ্ধ শাওয়ার ছেড়ে তিতিরের চুলগুলো ধুয়ে দিল। তিতিরও পাক্নামি করলো, হাত উপরে উঠিয়ে মুগ্ধর চুলগুলো ধুয়ে দিল। তারপর মুগ্ধ শাওয়ার বন্ধ করে বলল,

-"হয়ে গেছে ম্যাম। এখন দয়া করে চেঞ্জ করে আমাকে উদ্ধার করেন। আমি যাই?"

-"এই না।"

-"তো?"

তিতির এগিয়ে এসে মুগ্ধকে বলল,

-"তুমি মাঝেমাঝে এত আনরোম্যান্টিক হয়ে যাও কেন?"

-"অসুস্থ মানুষের সাথে রোমান্স করতে হয়না।"

-"ইশ, কে বলেছে তোমাকে?"

-"বলতে হয়না। এটা জানা কথা।"

-"ভুল জানো তুমি। অসুস্থ মানুষকে বেশি আদর করতে হয়, যত্ন করতে হয়।"

-"হ্যা যত্ন তো করছি। আদর করবো সুস্থ হওয়ার পর।"

-"না না না।"

তিতির মুগ্ধকে যেতে দিল না। হাতদুটো শক্ত করে ধরে রইলো। মুগ্ধ হেসে তিতিরকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল। তারপর বলল,

-"ঠান্ডা লাগবে, জ্বর আরো বাড়বে। তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে বের হয়ে এসো, পাগলী আমার!"

তারপর তিতির তার বিশ্বজয় করা হাসিটা দিল। মুগ্ধও হেসে বেড়িয়ে গেল।

রাত টা বাজে। তিতিরকে যতদ্রুত সম্ভব ওষুধ খাওয়াতে হবে কিন্তু তার জন্য তো ওকে কিছু খাওয়াতেও হবে। মুগ্ধ ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে রান্না ঘরে গিয়ে ভাত নিয়ে এল। ফিরে এসে দেখে তিতির এখনো বের হয়নি। বাথরুমের দরজায় নক করলো মুগ্ধ,

-"তিতির? কি ব্যাপার এতক্ষণ লাগে?"

তিতির বেড়িয়ে এল। ওর চুল দিয়ে পানি পড়ছে। মুগ্ধ বলল,

-"আজও চুল মুছতে শিখলে না? এদিকে এসো।"

মুগ্ধ নিজেই ওর চুলগুলো ভাল করে মুছে দিল। তারপর ভাত খাওয়াতে এলেই তিতির বলল,

-"আমি খাব না।"

-"না খেলে ওষুধ খেতে পারবে না। ওষুধ না খেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারবে না। আর তাড়াতাড়ি সুস্থ না হলে তো তাড়াতাড়ি বিয়েও করতে পারবো না।"

-"আমি খাব।"

মুগ্ধ মনে মনে হাসলো। তারপর খাইয়ে দিল। খেতে খেতে তিতির বলল,

-"না, আমরা কালই বিয়ে করবো সুস্থ হই বা না হই।"

-"আচ্ছা বাবা আচ্ছা.. ঠিকাছে কালই বিয়ে করবো, এখন তো খাও।"

তিতির খাওয়া শুরু করলো এমন সময় পিউ এল। তিতির হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

-"আমার পিউপাখি!"

পিউ এসে তিতিরকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বলল,

-"ইশ, ভাবী তোমার তো অনেক জ্বর।"

তিতির বলল,

-"ঠিক হয়ে যাবে।"

মুগ্ধ তিতিরকে খাওয়াতে খাওয়াতেই পিউকে জিজ্ঞেস করলো,

-"তোর সাথে কি ইকরার দেখা হয়েছিল?"

-"হ্যা, কেন ভাইয়া?"

-"ওকে কি বলেছিস যে তিতির এসেছে?"

-"হ্যা। না মানে... আপু স্নিগ্ধর কথা জিজ্ঞেস করছিল ওর সাথে নাকি কি কাজ আছে কিন্তু নাকি ফোন ধরছে না। পরে আমি বললাম আমি জানিনা তো বিকেলেই মা কে আনতে কুমিল্লা গিয়েছে। আপু জিজ্ঞেস করলো কেন মামীর তো আরো পরে আসার কথা। তখন না আমি মুখ ফসকে বলে ফেলেছি ভাবীর কথাটা। কি হয়েছে ভাইয়া?"

-"বাসায় এসেছিল আমার মেজাজটা খারাপ করতে।"

-"সরি ভাইয়া।"

-"আমাকে বলছিল মা নেই তাই খোঁজ নিতে এসেছে। আমিতো আগেই বুঝেছি তিতির আসার খবরটা পেয়েই এসেছে।"

-"আমি বুঝতে পারিনি শুনেই চলে আসবে। তাহলে বলতাম না।"

-"আচ্ছা আচ্ছা, ঠিকাছে। যা গেছে তা গেছে।"

-"ওকে ভাইয়া, আমি তাহলে ফ্রেশ হয়ে নিই?"

-"হ্যা, যা।"

তিতিরকে খাওয়ানো শেষ করে ওষুধগুলো টুকরো টুকরো করতে করতে মুগ্ধ বলল,

-"কি আজব না? এতবছর প্রেম করেও জানতে পারলাম না যে তুমি আস্ত ওষুধ খেতে পারো না। জানলাম এসে আজ সকালে। আরো কত কি জানি অজানা আছে আমার।"

তিতির বলল,

-"আর আমার?"

-"তোমারও হয়তো আছে। সত্যিই প্রেম করে একসাথে থাকা আর বিয়ের পর একসাথে থাকার মধ্যে অনেক পার্থক্য।"

তিতির বাচ্চাদের মত হাত তুলে বলল,

-"ইয়েএএএএ কি মজা কালকে আমাদের বিয়ে।"

মুগ্ধ বলল,

-"হ্যা, অনেক মজা। তাই তুমি এখন ঘুমাও। আমি মাকে একটা ফোন করি?"

-"ওক্কে।"

তিতির কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লো। মুগ্ধ মাকে ফোন করলো।

-"মা, কখন রওনা হচ্ছো?"

মা বলল,

-"আমরা কাল খুব ভোরে রওনা দিয়ে দিব। সকাল সকাল পৌঁছে যাব। তারপর তিতিরকে নিয়ে একটু শপিং যাব। তুই কিন্তু বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট সব করে রাখিস যাতে সন্ধ্যানাগাদ বিয়েটা কম্পলিট হয়ে যায়।"

-"মা ওর তো অনেক জ্বর।"

-"ডাক্তারের কাছে না গিয়েছিলি?"

-"হ্যা, ওষুধ দিয়েছে, খাইয়ে দিয়েছি।"

-"তাহলে তো হলোই। জ্বরে কিছু হবে না, বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়া দরকার। তুই আর কথা বলিস না তো।"

-"আচ্ছা মা তাই হবে, সেফলি এসো। কাল দেখা হবে, রাখছি।"

-"আল্লাহ হাফেজ।"

যা ভেবেছিল মুগ্ধ তাই হলো। তিতির একটু পর পর হাঁচি দিচ্ছে, খুক খুক করে কাশছে। অনেকক্ষণ আগেই পিউ একবার এসেছিল রাত জাগবে বলে। মুগ্ধ বলেছে 'আমার এমনিতেও টেনশানে ঘুম হবেনা। আমিই থাকি, তুই ঘুমা।' পিউও বুঝেছে মুগ্ধ তিতিরের কাছে থাকতে চাচ্ছে তাই ভাইয়ের কথা মেনে নিল। তিতির কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। বাইরে তুমুল বৃষ্টি! বাতাসও ছিল তাই ফ্যান বন্ধ করতে হলো। মেয়েটা যা পাগলামি করে মাঝেমাঝে, খুব চিন্তা হয় মুগ্ধর! রাত টা পর্যন্ত ঠায় বসে রইলো তিতিরের মাথার পাশে। তারপর তিতিরের পাশে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর তিতিরের ঘুম ভেঙে গেল। ফিরলো মুগ্ধর দিকে। বলল,

-"পানি খাব।"

মুগ্ধ উঠে পানি দিল। খেয়ে তিতির বলল,

-"তুমি ঘুমাওনি এখনো?"

-"না, ভাবছি।"

-"কি নিয়ে ভাবছো?

মুগ্ধ তিতিরের একটা গাল টিপে দিয়ে হেসে বলল

-"ভাবছি তোমাকে নিয়ে।"

তিতির মুগ্ধর গলা জড়িয়ে ধরে জানতে চাইলো,

-"আমাকে নিয়ে কি ভাবছো?"

মুগ্ধ তিতিরের কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,

-"আমার বউটা যে কতটা পাগলী তাই ভাবছি।"

-"পাগলী? কেন কি করেছি আমি?"

মুগ্ধ সেকথার উত্তর না দিয়ে হঠাৎই বলল,

-"আচ্ছা তুমি কি সত্যি চলে এসেছো? আমার না এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। সত্যি কি এই সুখটা আমার কপালে ছিল?"

-"কি সুখ?"

-"এইযে, বাকী জীবনটা তোমার সাথে কাটাতে পারবো, এর চেয়ে সুখের আর কি হতে পারে? প্রতিদিন তোমার মুখটা দেখে ঘুমাতে যাব, আবার ঘুম থেকে উঠেও তোমার মুখটা দেখতে পাব। আর কি লাগে জীবনে?"

একথা শুনেই তিতির জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করে দিল। মুগ্ধ তো আকাশ থেকে পড়লো কান্নার মত কি বলল খুঁজে পেলনা! বলল,

-"কাঁদছ কেন তিতিরপাখিটা আমার?"

তিতির কাঁদতে কাঁদতেই বলল,

-"শুধু মুখ দেখবে কেন? আদর করবে না কেন?"

মুগ্ধ এবার হেসে দিল। তারপর হঠাৎই মনে হলো তিতির তো এরকম পাগলামি করে পরে সব ভুলে যায়। রেকর্ডিং করে রাখলে কেমন হয়, কাল যখন সব অস্বীকার করবে তখন শুনিয়ে মজা করা যাবে। ফোন বের করে রেকর্ডিং অন করলো মুগ্ধ। তারপর তিতিরের কপালে চুমু দিয়ে বলল,

-"শুধু মুখ না সব দেখবো আর অনেক অনেক আদরও করবো।"

-"তাহলে করো আদর।"

-"হুম, আগে সুস্থ হও। তারপর অনেক অনেক আদর করবো।"

-"না, আমাকে এখনি আদর করতে হবে। তুমি এমন কেন? আদর করতে চাও না কেন? অলওয়েজ খালি হাগ আর কিসসি! আর কিচ্ছু করতে পারোনা তুমি?"

মুগ্ধ তিতিরের মুখে এসব কথা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো ওর মুখের দিকে। অসুস্থ না হলে এখনি বুঝিয়ে দিতো মুগ্ধ কি পারে আর না পারে! তিতির বলল,

-"খালি মুখের দিকে তাকিয়ে থাকো কেন? হুম? আর কিছু কি তোমার চোখে পড়ে না?"

-"তিতির পাগল হলে আবার?"

তিতির সেকথার পাত্তা না দিয়ে ওড়নাটা ছুঁড়ে ফেলে দিল ফ্লোরে। তারপর বলল,

-"এই দেখো কত্ত সুন্দর একটা ক্লিভেজ! জীবনে তো একবার তাকালেও না।"

মুগ্ধ অবাক হতে হতে শেষ সীমানায় পৌঁছে গেল। ওড়নাটা তুলতেই তিতির জোরে জোরে বলল,

-"খবরদার, ওটা ধরবা না। ফেলো ফেলো বলছি।"

মুগ্ধর ভয় করলো যদি পিউ চলে আসে! পিউকে দেখে হয়তো তিতির নালিশ করবে। কার কাছে কি বলছে সেই বোধ এখন ওর নেই। মুগ্ধ ওড়নাটা ফেলে দিল। তিতির তিতিরের কথামতো ওড়নাটা ফেলে দিল। তিতির মুগ্ধর একটা হাত নিয়ে ওর কোমরে রাখলো। তারপর বলল,

-"এখানে ধরো।"

মুগ্ধর নিঃশাস বন্ধ হবার জোগাড়। কোনরকমে বলল,

-"আস্তে কথা বলো পিউ উঠে আসবে নাহয়।"

-"আচ্ছা আস্তে কথা বলবো কিন্তু তাহলে আদর করো।"

-"তিতিরপাখি আমার, তুমি না অনেক লক্ষী! ঘুমাও প্লিজ, এভাবে আদর করা যায়না বাবা।"

তিতির ব্যাপারে কোন কথা না বলে বলল,

-"এই তুমি এই টি-শার্ট টা পড়ে আছো কেন? খুলো এটা, এটা খুব পচা।"

তারপর টি-শার্ট টা ধরে খুলতে চেষ্টা করতে লাগলো। মুগ্ধ বলল,

-"আরে, পাগল হলে নাকি?"

তিতির জবাব দিল না। টি-শার্ট টা কামড়ে ছিঁড়তে চেষ্টা করলো। পাতলা টি-শার্ট হওয়ায় খানিকটা ছিঁড়েও গেল। তারপর মুগ্ধ নিজেই টি-শার্ট টা খুলে দিল। তিতির পাগলের মত হামলে পড়ে কামড়াতে লাগলো মুগ্ধর বুকে। কামড়াতে কামড়াতে একসময় রক্ত বের হয়ে গেল। মুগ্ধ বাধা দিল না।

একটু পর হঠাৎই তিতির উঠে সোজা হয়ে বসলো। মুগ্ধ বলল,

-"কি?"

তিতির উত্তর দিল না। আচমকাই মুগ্ধ কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিজের কামিজটা খুলে ফেলল। মুগ্ধ অবাক হয়ে বলল,

-"এই কি করছো?"

কিন্তু ততক্ষণে তিতির খুলে ফেলেছে। মুগ্ধ কাঁথাটা তিতিরের গায়ে দিতেই তিতির সেটা ফেলে দিল। তারপর মুগ্ধর থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্টটা খুলতে চেষ্টা করলো। মুগ্ধ ধরে ফেলল। ওর সারা শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠলো। নিঃশ্বাস টা যেন গলায়ই আটকে যাবে। কোনভাবে বলল,

-"তিতির আমাকে এভাবে মেরোনা প্লিজ, লক্ষী না তুমি?"

তিতির কাঁদতে কাঁদতে বলল,

-"তুমি এমন করছো কেন? কেন আদর করছো না? তুমি আসলে আমাকে আদর করতেই চাওনা।"

মুগ্ধ তিতিরকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁথাটা আবার গায়ে দিয়ে দিল। তারপর ওর মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে বলল,

-"আমি এভাবে কিছু করতে চাইনা তিতির। সুস্থ হয়ে তো সব ভুলে যাবে। কিন্তু আমি চাই আমাদের ফার্স্ট এক হওয়ার স্মৃতিটা সারাজীবন তুমি মনে রাখো। এত এত আদর করবো যা তুমি চিন্তাও করতে পারবে না। আজকে শুধু পাগলামি করো না প্লিজ।"

তিতির কিছু বলল না আর। কাঁদতেই থাকলো। মুগ্ধ তিতিরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,

-"তোমাকে আমার অচেনা লাগছে। সুস্থ থাকলে তুমি কখনোই এরকম করতে না, উল্টো লজ্জা পেতে। তোমাকে আমার ওইভাবেই ভাল লাগে। এখন থেকে তো তুমি সারাক্ষণ আমার কাছে থাকবে, অনেক অনেক আদর করবো, তুমি দেখে নিও।"

তিতির কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতেই একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।

কিন্তু মুগ্ধর চোখে আর ঘুম নেই, চলছিল বিরামহীন তুফান বাইরে ভেতরে!

ভোরে তিতিরের ঘুম ভাঙতেই দেখলো আর মুগ্ধ জড়াজড়ি করে একটা কাঁথার মধ্যে শুয়ে আছে। মুগ্ধ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে, ইশ কী মায়াবী লাগছে। কিন্তু বাসায় তো পিউ আছে। পিউ থাকতেও মুগ্ধ ওর সাথে ঘুমালো! পিউ কি মনে করলো! ধ্যাত, ছেলেটার না একফোঁটা লজ্জা নেই। উঠে বসতেই কাঁথা সরে গেল আর অবাক হয়ে দেখলো ওর গায়ে কিচ্ছু নেই। শুধু একটা সালোয়ার পড়া। তাড়াতাড়ি কাঁথাটা টেনে গায়ে জড়ালো। মনে করতে চেষ্টা করতে লাগলো কাল রাতে কি হয়েছিল! কিছুতেই মনে করতে পারছে না। ওদিকে কাঁথা টান দিতেই মুগ্ধর ঘুম ভেঙে গিয়েছে। মুগ্ধ বলল,

-"এখন আর ঢেকে কি হবে?"

তিতির লজ্জায় প্রায় কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,

-"তুমি এটা কেন করলে?"

মুগ্ধ অবাক হয়ে বলল,

-"হায় খোদা! এখন আমার দোষ হলো?"

তিতির কিছু বলল না। মুগ্ধ উঠে বাথরুমে গেল আর বলল,

-"ড্রেস পড়েন।"

মুগ্ধ বাথরুমে ঢুকতেই তিতির তাড়াতাড়ি কাপড় পড়ে নিল। ভাবতে লাগলো কি হয়েছিল রাতে? মুগ্ধ ওভাবে কথা বলল যে! নিজেই কি জ্বরের ঘোরে কিছু করেছে? মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইয়ারফোন লাগালো। তারপর একটা নিজের কানে দিয়ে আরেকটা তিতিরের দিকে এগিয়ে দিল। তিতির বলল,

-"এটা কি?"

মুগ্ধ মুচকি হেসে বলল,

-"শোনোই না মন দিয়ে।"

রেকর্ডিংটা শুনতে শুনতে তিতির লজ্জায় লাল, নীল, বেগুনী হয়ে গেল। কি করবে কোথায় লুকোবে বুঝতে পারছিল না। পুরোটা শোনার পর তিতির আর লজ্জায় মুগ্ধর দিকে তাকাতে পারছিল না। মুগ্ধ বলল,

-"কি বুঝলে? কিছু বলো?"

তিতির একটা কথাও বলল না। মুগ্ধ মিটিমিটি হাসছিল আর বলছিল,

-"আহা! এখন লজ্জা পাচ্ছো কেন? এখন তোমার আশিকি কোথায় গেল?"


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৪৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌরি মরিয়ম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন