উপন্যাস        :         নিবেদিতা
লেখিকা        :          মুন্নি আক্তার প্রিয়া
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১০ই মে, ২০২৪ ইং

লেখিকা মুন্নি আক্তার প্রিয়ার “নিবেদিতা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ১০ই মে থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া
নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া

২৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া (পর্ব - ২৯)

নির্ণয়ের মনটা কেমন যেন উশখুশ করছে। হারানোর একটা অদৃশ্য ভয় সর্বাঙ্গে কাঁপুনি ধরিয়ে দিচ্ছে। শরীরের প্রতিটা কোষে চলছে যু'দ্ধ-বিগ্রহ। নিবেদিতা যখন আতিকের সাথে কথা বলছিল তখন এপাশ থেকে সে সবই শুনেছে। শুনেছে নিবেদিতার অবলীলায় বলা স্বীকারোক্তিও। সেখানে কোনো রাখঢাক ছিল না। স্পষ্টভাবেই সে আতিক ছেলেটাকে তার রিলেশনের কথা বলে দিয়েছে। তবুও নিবেদিতাকে হারানোর ভয় কেন তাকে এভাবে চেপে ধরেছে সে বুঝতে পারছে না। নিবেদিতার আশেপাশে কোনো ছেলে আছে, সে ছাড়াও নিবেদিতাকে অন্য কেউ ভালোবাসে এটা ভাবতেও বুকের ভেতর অসহনীয় তীব্র ব্যথা সৃষ্টি হয়। অথচ সে নিজেও জানে যে, নিবেদিতা ভালোবাসার মতোই একটা মেয়ে। তাকে যে কেউই ভালোবাসতে পারে। সবাই তো আর তার মতো বোকা নয়। সে বোকা বলেই তো নিবেদিতার ভালোবাসা শুরুতে বুঝতে পারেনি। কিন্তু কী অদ্ভুত, এখন সেই নির্ণয়ই নিবেদিতা বলতে অজ্ঞান! ওকে ছাড়া একটা মুহূর্তও কল্পনা করতে পারে না। এখন যেন সেই চাওয়া-পাওয়া বেড়ে ভয়ে পরিণত হয়েছে। তার ভীষণ ভয় করে যদি নিবেদিতা তার না হয়?
পরক্ষণে মনকে সে শান্ত করল। নিবেদিতা তাকে ভালোবাসে এবং সেও নিবেদিতাকে ভালোবাসে। তাহলে কেন তারা এক হবে না? নিশ্চয়ই এক হবে। ফোন হাতে নিয়ে সে নিবেদিতার অপেক্ষায় ছটফট করতে লাগল। কখন যে ফোন দেবে! সে ফোনের গ্যালারীতে ঢুকে নিবেদিতার ছবি দেখতে লাগল।
.
.
মিদহাদের ব্যস্ততা উবে গেছে। মনটা হঠাৎ করেই উদাসীন হয়ে পড়ল যেন। কাজে মন বসছে না। কিছুক্ষণ আগেও কাজের প্রেশারে মাকে ডেকে একটা কফি পর্যন্ত চাইতে পারেনি। আর এখন মনে হচ্ছে সব উচ্ছন্নে যাক। সে কেবলমাত্র এখন নিবেদিতাকে নিয়েই ভাববে। আর কিছু নয়। নিবেদিতার সাথে তার কথা হয় না বিশেষ। এমনকি সে খুব প্রয়োজনে কল করলেও নিবেদিতা তাও করে না। কোনো ম্যাসেজও নয়। তাই আজ নিবেদিতার এই ছোট্ট ম্যাসেজেই তার মন উতলা হয়ে পড়েছে, উদাসীন লাগছে। খুব ইচ্ছে করছে নিবেদিতার কণ্ঠস্বর শুনতে। একটুখানি কথা বলতে। কিন্তু সে জানে তার এই তীব্র ইচ্ছে অপ্রত্যাশিত ও নিষিদ্ধ। সে এটাও জানে নিবেদিতার জীবনে তার কোনো স্থান নেই, প্রায়োরিটি নেই। থাকার কথাও নয়। সে তো নিবেদিতার কেউ হয় না। মেয়েটা তাকে শুধু তার ভাইয়ের বন্ধু হিসেবেই চেনে। ব্যস এতটুকুই তো! তাহলে কেন নিবেদিতা তাকে প্রায়োরিটি দিতে যাবে? সে এটাও জানে, নিবেদিতার জীবনে নির্ণয়ের মূল্য ঠিক কতটা। পৃথিবীর সকল কিছুর বিনিময়ে হলেও যে সে শুধু নির্ণয়কেই বেছে নেবে এটা বোধ করি মিদহাদের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না।
মিদহাদের বুকচিরে একটা ভারী দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। সে চেয়ারে গা এলিয়ে বসল। কী করবে বুঝতে পারছে না। তবে নিবেদিতাকে যে কল করবে না এটাও শিওর সে। কোনোভাবেই সে নিবেদিতার চোখে খারাপ হতে চায় না। আর পাঁচটা ছেলের মতো ছ্যাঁচড়া হতে চায় না। সে নিবেদিতার ভালোবাসা পায়নি এটা সহ্য করতে পারলেও, নিবেদিতার চোখে তার জন্য ঘৃণা সে কখনোই সহ্য করতে পারবে না।
টেবিলের ওপর থেকে ফোন নিয়ে সে ফেসবুকে ঢুকল। সার্চলিস্টে প্রথমেই নিবেদিতার আইডি। সে নিবেদিতার আইডিতে ঢুকল। নতুন কোনো ছবি আপলোড করেনি। দেশে আসার পর লাস্ট ছবি আপলোড করেছিল। সেগুলোই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল সে কিছুক্ষণ। তাছাড়া ক্যামেরাম্যানের থেকে তুবার বিয়ের সব ছবি সে ফোনে নিয়েছিল। সেখানে অনেকগুলো ছবিতেই নিবেদিতা আছে। সেগুলোও দেখল বসে বসে। একটা ছবিতে নিবেদিতা এবং নির্ণয় পাশাপাশি দাঁড়ানো। কী সুন্দর লাগছে দুজনকে! অবচেতন মন আবার হিংসাও করছে। হিংসার অগ্নিশিখাকে সে বাড়তে দিল না। মৃদু হেসে নিবেদিতার ছবির দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকাল। মৃদুস্বরে স্বগতোক্তি করে বলল,
"নিষিদ্ধ মানুষের প্রতি আমাদের এত টান কেন, প্রাণ?"
.
.
সুবর্ণলতা একটা ইংলিশ নভেল পড়ছে। রোমান্টিক বই। আজকাল তার রোমান্টিক নভেল পড়তে ভালো লাগে না। মিদহাদের কথা মনে পড়ে যায়। অজান্তেই তখন সে মিদহাদের কল্পনায় বুঁদ হয়ে যায়। সে বুঝে গেছে, সে মিদহাদকে যতটা ভালোবাসে তারচেয়েও কয়েকগুণ বেশি ভালোবাসে মিদহাদ নিবেদিতাকে। সেখানে সুবর্ণলতার কোনো জায়গা নেই। থাকার কথাও নয়। সুবর্ণলতা কে? বলতে গেলে সে একজন তৃতীয় ব্যক্তি। কিন্তু মন তো এসব মানতে নারাজ। বড্ড বেহায়া, ঘাড়ত্যাড়া মনকে সে হাজার নিষেধ করেও মিদহাদকে ভুলতে পারেনি। এজন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখতে সে বাবার সাথে অফিসে জয়েন করেছে। সারাদিন সে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চায়। মিদহাদকে ভুলে থাকতে চায়। নিজেকে আর ছোটো করতে চায় না সে। ভালোবাসার মানুষের অবজ্ঞা বড়ো ভয়ানক জিনিস। সহ্য করা যায় না। ম'রে যেতে ইচ্ছে করে।
সে বইটা বন্ধ করে বিছানার ওপর রেখে দিল। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে বারান্দায় চলে গেল। আকাশের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই হুহু করে কেঁদে ফেলল সে। কী আশ্চর্য! হঠাৎ করেই তার এত কষ্ট হচ্ছে কেন? না পাওয়া ভালোবাসার জন্য কান্নাই বা আসবে কেন? আকাশের দিকে তাকিয়ে সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে লাগল,
"নিবেদিতা তো আপনার হবে না, কেন বোঝেন না আপনি? কেন সেধে সেধে কষ্ট পাচ্ছেন? কী হয় আমাকে একটুখানি ভালোবাসলে?"
সুবর্ণলতার কান্নার গতি বাড়ে। মিদহাদকে মুখে এই কথাগুলো বলার সাহস নেই তার। সত্যি বলতে চায়ও না সে বলতে। সে চায় না নিজের ভালোবাসাকে ছোটো করতে। তাই নিজেই একটা অদৃশ্য দেয়াল তুলে দিয়েছে দুজনের মাঝে। কাজের ব্যস্ততাকে করে তুলেছে সে নিত্যসঙ্গী। মনকে যখন কোনোভাবেই মানানো সম্ভব হয় না তখন ব্যস্ততাই ভরসা। তবুও ভালো থাকুক মিদহাদ, তার ভালোবাসার মানুষ।
.
.
নিবেদিতা ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার গরম করে নিল। এরপর প্লেটে করে খাবার এনে পড়ার টেবিলে বসে নির্ণয়কে ভিডিয়ো কল দিল। সারা শরীরে অবসাদ। ক্লান্তিতে ঘুমে ঢুলে পড়ছে সে। চোখ দুটো ছোটো হয়ে গেছে। পড়ার জন্য শক্তি, ইচ্ছে কোনোটাই নেই এখন আর। ফজরের নামাজ পড়ে ক্লাসের পড়াগুলো কমপ্লিট করে ফেলবে।
নির্ণয় কল রিসিভ করে দেখল নিবেদিতা খাচ্ছে। জিজ্ঞেস করল,
"কী রান্না করেছিলে?"
"বেশি কিছু না। ডিম ভুনা আর আলু ভাজি করেছিলাম। এখন সেগুলোই গরম করে নিলাম। একা মানুষ বেশি কিছু করে কী হবে?" খেতে খেতে বলল নিবেদিতা।
নির্ণয় দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,
"তোমার খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাই না?"
নিবেদিতা হেসে বলল,
"কষ্ট হবে কেন?"
"এইযে একা একা সব সামলাচ্ছ। এখন যদি আমি সুস্থ থাকতাম তাহলে আমাদের বিয়েটা হয়ে যেত। আমরা এক সাথেই থাকতে পারতাম। তখন তোমার আর কষ্ট করে পার্ট টাইম জব করতে হতো না।"
"ইশ! এতে কী কষ্ট হয় আমার? কোনো কষ্টই হয় না। আমি একদম ঠিক আছি। আপনি দয়া করে আমাকে নিয়ে শুধু শুধু চিন্তা করবেন না। শরীর খারাপ হয়ে যাবে আরো।"
"আমার কথা যে এত ভাবো। নিজের জন্য ভাবো তো?''
"কেন ভাবব না? আমাকে তো সুস্থ থাকতেই হবে। নয়তো আপনাকে কীভাবে শায়েস্তা করব?"
নির্ণয় এবার হেসে ফেলল। বলল,
"আমি খুব ভাগ্যবান একজন ব্যক্তি জানো?"
নিবেদিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
"কেন?"
"কারণ আমি নিবেদিতার ভালোবাসা পেয়েছি।"
নিবেদিতা এবার লজ্জা পেয়ে গেল। বলল,
"ধুর, যাহ্!"
"আমি কিন্তু সত্যিই বলছি। তোমাকে ধন্যবাদ আমার জীবনে আসার জন্য।"
"হয়েছে, হয়েছে। আর লজ্জা দিতে হবে না আমাকে।"
কথা বলতে বলতে নিবেদিতার খাওয়া হয়ে গেছে। হাত আর প্লেট ধুয়ে ফোন নিয়ে সে বিছানায় গেল। একটা বালিশের সাথে ফোন হেলান দিয়ে রেখে শুয়ে পড়ল সে। নির্ণয় বলল,
"এখন ঘুমিয়ে যাও। তোমাকে ভীষণ ক্লান্ত দেখাচ্ছে।"
"কেন? আরেকটু কথা বলি।"
"অনেক কথা হয়েছে। এখন চুপচাপ ঘুমাও।"
নিবেদিতা মুখটা গোমড়া করে ফেলল। নির্ণয় হেসে বলল,
"কিন্তু কল কাটতে হবে না।"
নিবেদিতা এবার হেসে ফেলল। দুজন দুজনের দিকে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন দুজনের চোখে কত বছরের তৃষ্ণা, আকুলতা। মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে একজন আরেকজনের আলিঙ্গন পাওয়ার জন্য। নিবেদিতা ফোনের স্ক্রিনে নির্ণয়ের মুখের ওপর হাত বুলাল। নির্ণয় জিজ্ঞেস করল,
"কী করছ?"
"তোমাকে ছুঁয়ে দিচ্ছি। কতদিন হয়ে গেল এই মুখটা ছুঁই না!"
নির্ণয় গোপনে দীর্ঘশ্বাস নিল। নিবেদিতার আরো বেশি মন খারাপ হয়ে যাবে ভেবে কথা এড়িয়ে যেতে বলল,
"ভালোবাসি জান।"
"ভীষণ ভালোবাসি।"
"এখন চুপটি করে ঘুমাও কেমন?"
"হু।"
নিবেদিতা তবুও অনেকক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে নির্ণয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। এক সময় ক্লান্তি ও অবসাদের কাছে পরাস্ত হয়ে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল সে। নির্ণয় মন ভরে ঘুমন্ত নিবেদিতাকে দেখছে। নিবেদিতার ঘুমন্ত মুখে ফোনের স্ক্রিনে চুমু খেয়ে বলল,
"কেন জানি না তোমাকে হারানোর ভয় মনে প্রবল আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আজকাল নিজের ত্রুটি নিয়ে ভীষণ ভয় হয় আমার। প্লিজ নিবেদিতা, আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না!"

 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
“মুন্নি আক্তার প্রিয়া” বাল্যকাল থেকেই কল্পনা ও সাহিত্য বিলাসী। লেখা লেখিটা মূলত শখের বশে শুরু করলেও, পরবর্তীতে তা একসময় নেশায় পরিণত হয় তার। লেখালেখির পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ফেসবুকের ফলোয়ারদের থেকে। তাদের ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণাই তাকে সাহিত্য জগতে টিকে থাকার ক্ষেত্রে অদম্য সাহস ও ইচ্ছে শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। এইভাবেই সাহিত্য জগতে তার প্রথম “সাঁঝের কন্যা” বইটি প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমেই প্রকাশণা জগতে পদার্পন। 
তার লেখা প্রথম বইটি ব্যাপক সাড়া ও সফলতার ধারাবাহিকতায় তার দ্বিতীয় বইটি “চক্ষে আমার তৃষ্ণা” প্রকাশিত হয়। সফলতার পথে অগ্রসর হওয়া এই লেখিকার জন্ম শরিয়তপুর জেলায়, কিন্তু বেড়ে ওঠা ও সপরিবারে বাস করেন গাজীপুরে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন