উপন্যাস        :         নিবেদিতা
লেখিকা        :          মুন্নি আক্তার প্রিয়া
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১০ই মে, ২০২৪ ইং

লেখিকা মুন্নি আক্তার প্রিয়ার “নিবেদিতা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ১০ই মে থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া
নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া

২৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া (পর্ব - ৩০)

আকাশে লালাভ উত্তপ্ত সূর্যের কিরণে শরীর ঝ'ল'সে যাচ্ছিল। কিন্তু সরে দাঁড়ানোর উপায় নেই। পেছনে সমুদ্রের জলরাশি। উথালপাতাল ঢেউ সমুদ্রের বুকে। ঠাই পাওয়া অসম্ভব। সামনে কাঁটাযুক্ত বন। পা রাখার অবকাশ নেই কোত্থাও। নিজেকে প্রচণ্ড অসহায় লাগছে নিবেদিতার। এখান থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। আশেপাশে নেই জনজীবনের ছায়াও। কেউ নেই তাকে বাঁচানোর। তবুুও সে হন্যে হয়ে চতুর্দিকে দৃষ্টি বুলাল। নাহ্, কোত্থাও কেউ নেই। এমনকি আকাশে আজ একটা পাখিকেও দেখা যাচ্ছে না। নিবেদিতার কান্না পাচ্ছে। দুচোখ ঝাপসা হয়ে এসেছে। তখনই সে নির্ণয়ের কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। সে চিৎকার করে ডাকছে,
"নিবেদিতা!"
নিবেদিতা চকিতে তাকাল। নির্ণয়কে দেখার পূর্বেই তার ঘুম ভেঙে গেছে তার। মৃদু আর্তনাদ করে সে উঠে বসল বিছানায়। সারা শরীর তার ঘর্মাক্ত। অথচ পরিবেশ ঠান্ডা, এসি চলছে। সে কপালের ঘাম মুছে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইল। হঠাৎ করে এরকম স্বপ্ন দেখার মানে কী? সে বালিশের নিচ থেকে ফোন নিয়ে সময় দেখল। রাত তিনটা পনেরো বাজে এখন। সে স্বপ্নের কোনো মানে খুঁজে পেল না। উঠে গিয়ে পানি খেয়ে আসলো। বিছানায় কতক্ষণ এপাশ-ওপাশ করার পরও ঘুম আসছে না। সকালে তার ক্লাস আছে। ঘুমানো প্রয়োজন। দুঃস্বপ্নটাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে সে জোরপূর্বক চোখ বন্ধ করে রাখল।
.
.
বাইরে মিঠে রোদ, মৃদু পবন। সুন্দর সকাল দেখে মন ভালো হয়ে গেল মিদহাদের। সে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে এসে বাবা-মা ও বোনের সাথে সকালের নাস্তা করতে বসল।
সে একটা চেয়ার টেনে বসে ব্রেড নিল। জেলী মৌটুসীর ডানপাশে ছিল। তাই ওকেই বলল,
"জেলীটা দে।"
মৌটুসী মুখ বাঁকিয়ে বলল,
"পারব না। সবসময় আমি তোমার ফরমায়েশ খাটব কেন? বিয়ে করে বউকে বলো।"
মিদহাদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,
"সকাল সকাল কি মাথার তার সব ছিঁড়ে গেছে? কী যা তা বলছিস?"
মৌটুসী এবার বাবাকে নালিশ দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
"আব্বু, দেখো ভাইয়া আমাকে কী বলছে!"
আহসান আহমেদ খেতে খেতে ছেলেকে বললেন,
"ও ভুলটা কী বলেছে?"
মিদহাদ নিজেই হাত বাড়িয়ে জেলী নিল। ব্রেডে জেলী মাখিয়ে এক কামড় মুখে নিয়ে চিবুতে চিবুতে বলল,
"সঠিকই বা কী বলেছে?"
"বউ আনা দরকার।"
"তোমার তো সাহস কম না আব্বু! আম্মুর সামনেই তুমি আরেকটা বিয়ের কথা বলছ!"
আহসান আহমেদ বিরক্ত হলেন। বিয়ের কথা বললেই ছেলেটা হেসে উড়িয়ে দেয় সর্বদা। তিনি চোখ পাকিয়ে বললেন,
"আমার বিয়ের কথা বলিনি। তোমার বিয়ের কথা বলেছি। তোমায় বিয়ে করিয়ে বউ আনব।"
মিদহাদ জবাব দিল না। এবার মমতা বেগম বললেন,
"তোর কি পছন্দের কেউ আছে? থাকলে আমাদের বল। আমরা কথাবার্তা বলি।"
খাবার গলায় আটকে গেল মিদহাদের। পানি পান করে বলল,
"আমি এখনই বিয়ে করব না। আরেকটু সময় লাগবে আমার।"
"কত সময়?" জিজ্ঞেস করলেন আহসান আহমেদ।
মিদহাদ টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে বলল,
"জানাবো পরে।"
এরপর সে উঠে গেল ডাইনিং টেবিল ছেড়ে। স্বগতোক্তি করে নিজেকে বলল,
"আমার পছন্দের মানুষটা আমার জন্য নিষিদ্ধ, আম্মু।"
______
নির্ণয়ের মনটা কয়েকদিন ধরেই আনচান করছে। একটা সূক্ষ্ম উত্তেজনা শরীরে ক্রমশ বয়ে যাচ্ছে কিছুদিন ধরেই। এর কারণটা অবশ্য তার জানা আছে। বাংলাদেশে এতদিন চিকিৎসা নিয়েও হাত ভালো হয়নি তার। হাঁটতেও পারছে না। তাই ওর বড়ো চাচা ওকে রাশিয়ায় নিয়ে যেতে বলেছেন। সেখানে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। নির্ণয় সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাবে বলেই তারা আশাবাদী। নাদিম হোসাইন এতদিন দৌঁড়াদৌঁড়ি করে রাশিয়ায় যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। একমাত্র ছেলে তার। এমন অবস্থা আর সহ্য করা যাচ্ছে না। ছেলেটাও তার দিনদিন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছিল। বাবা হয়ে তিনি আর এসব সহ্য করতে পারেননি।
নির্ণয়ের মন এজন্যই আনচান করছিল কিছুদিন ধরে। এখন আরো বেশি করছে কারণ আগামীকালই তারা রাশিয়ায় যাচ্ছে। নিবেদিতাকে সে এখনো কিছুই বলেনি। অন্যদেরও বলতে নিষেধ করেছে। তার ইচ্ছে ছিল একেবারে সুস্থ হয়ে ফিরে এসে নিবেদিতাকে সারপ্রাইজ দেবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তার ভাবনা ভুল। অপারেশনের সময় তো নিবেদিতার সাথে কথা হবে না, তখনই বা সে ওকে কী অজুহাত দেবে? এরচেয়ে ভালো এখনই নিবেদিতাকে সত্যিটা বলে দেওয়া। এতদিন পর বলার জন্য হয়তো নিবেদিতা রাগ করবে, বকাঝকা করবে। তা করুক! তবুও না বলে সে মনে স্বস্তি, শান্তি কোনোটাই পাচ্ছে না। হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে সে নিবেদিতাকে কল করল। রিং হচ্ছে। একবার, দু'বার রিং হতে হতে কল কেটে গেল। চারবার পর্যন্ত কল দিয়েও নিবেদিতাকে পাওয়া গেল না। নির্ণয় সময় দেখল। এই সময়ে তো নিবেদিতার বেকারি থেকে বের হওয়ার কথা। বরং বের হয়ে সে তো প্রতিদিন নিজেই ফোন দেয়। আজ এখনো দিল না যে! নিশ্চয়ই কাজে ব্যস্ত। অল্পতেই সে আজকাল অনেক বেশি ভাবে। হঠাৎ কেন জানি মনে হচ্ছে নিবেদিতাকে সত্যিটা জানানো হবে না তার।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
“মুন্নি আক্তার প্রিয়া” বাল্যকাল থেকেই কল্পনা ও সাহিত্য বিলাসী। লেখা লেখিটা মূলত শখের বশে শুরু করলেও, পরবর্তীতে তা একসময় নেশায় পরিণত হয় তার। লেখালেখির পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ফেসবুকের ফলোয়ারদের থেকে। তাদের ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণাই তাকে সাহিত্য জগতে টিকে থাকার ক্ষেত্রে অদম্য সাহস ও ইচ্ছে শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। এইভাবেই সাহিত্য জগতে তার প্রথম “সাঁঝের কন্যা” বইটি প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমেই প্রকাশণা জগতে পদার্পন। 
তার লেখা প্রথম বইটি ব্যাপক সাড়া ও সফলতার ধারাবাহিকতায় তার দ্বিতীয় বইটি “চক্ষে আমার তৃষ্ণা” প্রকাশিত হয়। সফলতার পথে অগ্রসর হওয়া এই লেখিকার জন্ম শরিয়তপুর জেলায়, কিন্তু বেড়ে ওঠা ও সপরিবারে বাস করেন গাজীপুরে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন