উপন্যাস        :        দোলনচাঁপার সুবাস
লেখিকা        :         তাসফিয়া হাসান তুরফা
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফার “দোলনচাঁপার সুবাস” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
Bangla Golpo দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা
দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা

৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা (পর্ব - ৯)


(ক)

"কি নাম বললি যেন মেয়েটার?"
দাদুর প্রশ্নে নিশীথ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। এক পলক উনার দিক চেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে বলে,
---দোলনচাঁপা।
দাদুর দৃষ্টিতে কিঞ্চিৎ বিস্ময়। সেভাবেই বললেন,
---তোর দাদির ভীষণ প্রিয় ফুল ছিলো ওটা। নামটা কিছুটা বড়, এখনকার মর্ডান যুগে তো এসব নাম খুব কমই শুনা যায়।
দাদুর কথায় হাসি ফুটে উঠে নিশীথের মুখে। মাথা নাড়িয়ে বলে,
---আমিও এটাই ভেবেছিলাম জানো? যেদিন প্রথম ওর নাম শুনি। একদিন জিজ্ঞেস করবো দেখি!
নিশীথের কথায় দাদু ঠোঁট টিপে হেসে বলেন,
---শুধু জিজ্ঞেস করলেই হবে, দাদাভাই? আরও যে অনেককিছুই করতে হবে। তুই তো বুদ্ধিমান, তোকে তো আর নতুন করে বলতে হবেনা কিছু! শুধু এটুকুই বলবো, যা করার জলদি কর। মরার আগে যেন তোর বিয়েশাদি দেখে যেতে পারি!
দাদুর প্রথমের কথায় নিশীথ হাসলেও পরের কথায় চটে যায়। থমথমে মুখে বলে,
---ফারদার এসব কথা আমার সামনে বলবেনা, দাদু। তুমি শুধু আমার বিয়েই নয়, আমার নাতিপুতিও দেখে যাবে।
নিশীথের অসন্তুষ্টতায় মলিন হাসেন দাদু। তার শরীরের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়, কে জানে কতদিন বাচবেন? হায়াত-মউতের কথা কি আর কেউ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারে? তাইতো তিনি এ কথা বলেছেন। কিন্তু তার নাতি এসব বুঝতে নারাজ। তাই নিশীথকে শুধরে তিনি বললেন,
---ইনশাআল্লাহ বলতে হয় রে, ভাই। আল্লাহ রহম করলে আর তোদের দোয়া থাকলে অবশ্যই দেখবো। আমারও এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার ইচ্ছে নাই।
দাদুর কথায় একটি দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে নিশীথের বুক চিড়ে। নিজের রুমে যেতে যেতে আপনমনে সে দাদুর জন্য প্রার্থনা করলো সেই সৃষ্টিকর্তার কাছে, যিনি জন্ম-মৃত্যু থেকে শুরু জীবনসঙ্গীসহ সবকিছু পূর্বে থেকেই নির্ধারণ করে রেখেছেন। একমাত্র তিনি চাইলেই সকলের জীবনের সব অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণ হওয়া সম্ভব!
__________________
পরদিন দুপুর। আজকে দোলার ভার্সিটি নেই। ক্লাস না থাকায় সারাদিন অলস সময় পার করিয়েছে। এরই মধ্যে রান্নাঘর থেকে উচ্চস্বরে মা পারভীন বেগম ডাকলেন ওকে। মায়ের কথায় দোলা রান্নাঘরে গেলো। পারভীন বেগম মাছ কাটছিলেন। বড় মেয়েকে দেখে প্রশ্ন করলেন,
---তোর কি কোনো কাজ আছে রে?
---নেই তো, মা। কেন?
দোলা উত্তর দেয়। উত্তরে পারভীন বেগম বললেন,
---তবে একটা কাজ করতে পারবি?
---হ্যাঁ বলো না।
---মাছ কাটতে বসে খেয়াল হলো আলু ফুরিয়ে গেছে। কামিনি তো নেই বাসায় যে ওকে বলবো। তুই তো ফ্রি আছিস। একটু গিয়ে আলু আর ধনেপাতা নিয়ে আয় না! আলু দিয়ে ছোটমাছের চচ্চড়ি করবো। তোরা তো পছন্দ করিস! রাস্তা পেরোলেই সামনে বাজার। ওখানেই পাবি।
মায়ের কথায় দোলা রাজি হয়। পারতপক্ষে বাসায় বসে বসে সে বোর হচ্ছিলো। এ সুযোগে একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসা যাবে। তাই বরাবরের ন্যায় মায়ের বাধ্য সে এক কথাতেই রাজি হয়ে গেলো। রুমে গিয়ে বাসার জামা পালটে সুতির জামা গায়ে জড়ালো। টাকার ব্যাগটা হাতে নিয়ে বাসা থেকে বের হলো।
নিজমনে গুনগুন করতে করতে হেটে চলছিলো দোলা। মনে মনে ভাবছিলো নিশীথ সামনে না পড়লেই ভালো। সেভাবেই এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলো। আজকে ওর ভাগ্য প্রসন্ন মনে হলো। কেননা নিশীথকে আশেপাশে কোথাও দেখা গেলোনা। তাইতো খুশিমনে এলাকার মোড় থেকে বেরিয়ে বাজারে চলে গেলো সে। ঘণ্টাখানেক পেরোনোর আগ দিয়েই হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে ফিরে আসছিলো। কিন্তু এবার বিধি বাম! খানিকটা সামনেই এলাকার এক মুরব্বি চাচার সাথে নিশীথ কথা বলছে। দোলা পড়ে গেলো দ্বিধায়। যদি নিশীথ ওকে দেখে ফেলে? কথা বলতে আসবে কি? নাকি আসবেনা? সে কি একটু বেশিই ভাবছে? দোলা মনে মনে ভাবে। ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে যায় তাড়াহুড়ো করে। কিন্তু নিশীথ ওকে দেখেনা। নিশ্চিন্ত মনে যখন দোলা নিজ বাসার কাছে পৌঁছাবে ঠিক এমন সময় পেছন থেকে ভরাট পুরুষালি গলা ভেসে আসে,
---দোলনচাঁপা?
যার ভয় ছিলো তা হয়ে যাওয়ায় দোলা হকচকিয়ে যায়। চোখখানা বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নেয়। নিশীথের সাথে কথা বলবেনা ভেবেও নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে পেছন ফিরে জবাব দেয়,
---জি বলুন।
নিশীথ চেহারা স্বাভাবিক করে উত্তর দেয়,
---আজ এ সময় বাসায় যে? ভার্সিটি নেই?
---না, ভাইয়া।
কথাটা দ্রুত বলে দোলা কেটে পড়তে ধরে। কিন্তু নিশীথ পালটা প্রশ্ন করে বসে,
---আরে দাঁড়াও, কোথায় গিয়েছিলে? বাজারে নাকি?
দোলার হাতের ব্যাগের দিক তাকিয়ে নিশীথ বলে। দোলা মনে মনে বেশ বিরক্ত হয়। নিশীথ যে ওকে ইচ্ছে করে আটকিয়ে সব জেনেবুঝেও প্রশ্ন করছে, ব্যাপারটা বুঝতে ওর বিলম্ব হয়না খুব একটা!
তাইতো চোখমুখ শক্ত করে মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে উত্তর দেয়,
---দেখতেই যখন পারছেন তখন আবার প্রশ্ন করছেন কেন, নিশীথ ভাই? আমার একটু তাড়া আছে। মা বাজারের জন্য অপেক্ষা করছে। আসি কেমন?
দোলার এহেন ঠান্ডা উত্তরে নিশীথ খানিকটা চমকে যায়। মেয়েটা সচারচর এভাবে কথা বলেনা। তবে আজকে হঠাৎ কি হয়েছে ওর? নিজ ভাবনাকে পাশে সরিয়ে নিশীথ বলে,
---ব্যাগটা সম্ভবত ভারী। আমি সাহায্য করবো?
কিন্তু দোলা এবারও আগেকার ন্যায় মেঘমন্দ্র কণ্ঠে বলে ওঠে,
---তার দরকার নেই। এতক্ষণ যখন একা আনতে পেরেছি, বাকি রাস্তাও আর দরকার পড়বেনা। থ্যাংক ইউ।
ব্যস। এবার কথার বুলি শেষ হতেই দোলা আর আগ-পিছ না তাকিয়ে দ্রুত হাটা ধরে। বলতে গেলে একপ্রকার পালিয়েই চলে গেলো নিশীথের সামনে থেকে। বিষয়টা নিশীথ বেশ গভীরভাবে লক্ষ্য করে। কিন্তু ওর মনে ভর করে বিস্ময়! হঠাৎ করে কি এমন হলো মেয়েটার? এমন করছে কেন?
চিন্তার প্রমাণস্বরুপ ওর কপালের মাঝে ভাজ প্রত্যক্ষমান হয়। তর্জনীর সাহায্যে কপাল ঘেঁষে নিশীথ মনে মনে আওড়ায়,
---কিছু তো একটা হয়েছে। নয়তো দোলার এমন অদ্ভুত আচরণ করার কথা নয়। কিন্তু বিষয়টা কি আমাকে খোজ করতে হবে! এবং সেটা অত্যন্ত দ্রুত। নয়তো এভাবে চলতে থাকলে আমাদের প্রেমটা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে।

(খ)

নিশীথের ধৈর্য বরাবরই খুব কম হলেও এই প্রথম সে ধৈর্য সহকারে নিজের ও দোলার ব্যাপারটা নিয়ে বেশ অনেকক্ষণ চিন্তাভাবনা করলো। নিছক একদিনে দোলার এহেন ব্যবহারকে পুজি করে মনে সন্দেহ পোষাটা ঠিক হবে কিনা তা বুঝতে না পারায় আরও কয়েকদিন দোলার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো। তবে দুঃখজনক হলেও এ যাত্রায় নিশীথের ধারণাকে সঠিক প্রমাণ করে দোলা ওর সাথে আগেকার ন্যায় ঠিকাঠাক ব্যবহার করলোনা। বরঞ্চ সেদিনের ন্যায় রুক্ষ্ম ও ঠান্ডা ব্যবহার করেই একপ্রকার পালিয়ে গেলো ওর সামনে থেকে। বিষয়টা নিশীথের মনে বাজেভাবে দাগ কাটলো। সে সিদ্ধান্ত নিলো এবার আর হেলাফেলা করা যাবেনা। হয় দোলাকে ওর মনের কথা বলে দিতে হবে, নয়তো ওর মনের দ্বিধা দূর করতে হবে। কিছু একটা তো করতে হবেই!
যেমন ভাবনা তেমন কাজ। নিশীথ ঠিক করলো এবার সে সময় নিয়ে দোলার সাথে দেখা করবে। সরাসরি কথা কথা বলে সব ভুল বুঝাবুঝি দূর করবে, দরকার পড়লে তৎক্ষণাত ওকে নিজের মনের কথা বলে দিবে। তবু আর কাল বিলম্ব করবেনা! তাই নিজের প্ল্যান মোতাবেক পরদিন বিকেলে নিশীথ চলে গেলো দোলার ভার্সিটির সামনে। ঠিক যখন দোলার ছুটি হয় তার আগে, সে কিছুদিন আগে খেয়াল করেছে এ সময় দোলা ভার্সিটি থেকে বের হয়। তাইতো সুযোগ বুঝে ওই সময়েই দোলার অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলো সে। নিশীথ চাইলেও পারতো বাসার কাছে দোলাকে থামিয়ে প্রশ্ন করতে কিন্তু সে চায়না এলাকার কেউ ওদের অন্য চোখে দেখুক। যেহেতু এখনো ওদের মধ্যে কোনোকিছু হয়নি এবং দোলাও এসব বিষয়ে কম্ফোর্টেবল হবেনা তাই সে ইচ্ছা করেই এখানে এসেছে। মিনিট পনেরো অপেক্ষা করার পর ভার্সিটির মেইন গেটের বাইরে বের হলো দোলা। কিন্তু সে নিশীথকে লক্ষ্য করেনি তাই নিজমনে হেটে চলছিলো বরাবরের মতোন। নিশীথও ওকে বুঝতে না দিয়ে চুপচাপ ওর পিছু পিছু হেটে চলছিলো।
এদিকটার রাস্তায় প্রচুর ভীড়। গাড়ি অনবরত চলতে থাকায় রাস্তা পার হতে পারছিলোনা দোলা। এমনিতেও সে এই কাজে খানিকটা অপারগ। তাইতো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর অন্যদিকে যাবে, ঠিক এমন সময় পেছন থেকে হাতে টান পড়ায় বেজায় চমকে যায় সে! চোখ বড় বড় করে সেদিক তাকাতেই চোখ পড়লো সুঠামদেহী নিশীথের দিকে। যে আপাতদৃষ্টিতে বেশ মনোযোগ দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। এই সময় এই স্থানে নিশীথকে নিজ স্বপ্নেও আশা না করায় দোলা যেন আকাশ থেকে পড়লো। কি করবে না করবে চিন্তা করার মাঝেই পুনরায় হাতে টান পড়লো। কেননা, কয়েকটা গাড়ি পার হয়ে যেতেই দোলার হাত ধরে দ্রুত ভংগিতে রাস্তা পার হয়ে গেলো নিশীথ। রাস্তা পার হওয়া মাত্র সেকেন্ড খানেকের জন্য হাত ছাড়তেই দোলা যেন সুযোগ পেয়ে গেলো। সাথে সাথে উল্টো দিক ঘুরে দ্রুতগতিতে হাটতে আরম্ভ করলো।
---এক মিনিট দাঁড়াও। আমার কথা শুনো!
পেছন থেকে নিশীথের আওয়াজ ভেসে এলো। কিন্তু দোলার পা থামলোনা তবুও। সে নিজের মতোই ক্রমশ এগিয়ে চলছে এক পথে। এমন সময় নিশীথ চড়া গলায় ডাকায় পা জোড়া যেন খানিকটা কেপে উঠলো ওর!
---দাঁড়াতে বলেছি, দোলনচাঁপা। স্টপ!
বলাবাহুল্য, এতক্ষণ দোলার কদম বেশ দ্রুতগতিতে চললেও এবার নিশীথের এমন গুরুগম্ভীর আদেশ অমান্য করার সাহস তার পায়ের হয়নি। কেননা বিনা নিমন্ত্রণে, বিনাবাক্য ব্যয়ে নিশীথের এক কথায় ওর কদমজোড়া থেমে গেলো নিজ হতেই! দোলাকে থামতে দেখে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেললো নিশীথ। অবশেষে মেয়েটা কথা শুনেছে। বড় বড় কদম ফেলে সেকেন্ড খানেকের মাঝে সে পৌঁছে গেলো দোলার নিকট। যা পিছন না ফিরেও বেশ বুঝতে পারলো মেয়েটা। এ গলির দিকটা এমনিতেও নির্জন। মানুষজন খুব একটা দেখা যাচ্ছেনা। তার মধ্যে নিশীথ এভাবে পথ আটকানোয় অজানা ভয়ে ও অনাকাঙ্ক্ষিত কোনোকিছু ঘটার আশংকায় নিশ্বাস ক্রমান্বয়ে ভারী হতে লাগলো তার।
ফলস্বরূপ, নিশীথ কিছু বলার আগেই নিচু স্বরে অনুরোধের সুরে সে বললো,
---পথ আটকালেন কেন? যেতে দিন প্লিজ।
দোলার কথায় নিশীথের ভাবমূর্তির বিশেষ পরিবর্তন হয়না। সে আগেকার মতোই ভরাট আওয়াজে ডাকে,
---পেছন ফিরো।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও এবার দোলা পেছন ফিরে। কেননা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কথা শেষ করে চলে যেতে পারলেই সে বাচে! তাই মুখভঙ্গি ভার করে দোলা পেছন ফিরলো। ফিরতেই চোখ পড়লো তীক্ষ্ণ চোখে ওর দিকে চেয়ে থাকা নিশীথের দিকে। যে দৃষ্টি যেন বিনাবাক্যে ওকে অভিযোগ বলছে, বিনাবাক্যে ওকে শাসন করছে! দোলা কিছুক্ষণের জন্য ভড়কায়! নিশীথ যেন এটারই সুযোগ নেয়! কোনো প্রকার ভনিতা ছাড়াই সরাসরি প্রশ্ন করে,
---কি সমস্যা তোমার? আমায় ক'দিন ধরে ইগ্নোর করছো কেন?
নিশীথ কথাটা এভাবে সরাসরি প্রশ্ন করে বসবে দোলা আশা করেনি। তাই কিছুক্ষণের জন্য দ্বিধায় পড়ে যায় কিভাবে উত্তর দিবে। আদৌ উত্তর দিবে কিনা এসব নিয়ে। কিন্তু, নিশীথের কড়া চাহনি ও মুষ্টিবদ্ধ হাতের দিক তাকিয়ে সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটাই আপাতত শ্রেয় মনে করলো।
মনে সাহস সঞ্চার করে একটা ঢোক গিলে শুষ্ক গলা ভিজিয়ে বলল,
---আ,আমি আপনাকে ইগ্নোর করবো কেন? আজব তো!
নিশীথের দিকে না তাকিয়ে দোলা চেরাচোখে উত্তর দেয়। ওর মিথ্যা ধরতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব হয়না নিশীথের। সেভাবেই পালটা প্রশ্ন করে,
---সত্যি বলছো তো?
দোলা বিরক্তিতে কপাল কুচকায়। লোকটা এমন কেন? জেনেবুঝে ইচ্ছে করে জেরা করছে ওকে! সে যখন বুঝছেই ওকে ইগ্নোর করা হচ্ছে তবে কেন যেচে পড়ে দোলার কাছে আসছে? এমন কোনো ভালো সম্পর্ক তো এখনো হয়নি ওদের মধ্যে যার রেশ ধরে নিশীথ ওকে এভাবে প্রশ্ন করতে পারে। তাই মনের সংশয় মনে না চেপে দোলা নিশীথের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
---এখানে সত্যি মিথ্যে বলার কথাটা আসছে কোত্থেকে বলুন তো, নিশীথ ভাই? আর আপনিই বা আমাকে এসব প্রশ্ন করছেন কেন?
এতক্ষণ দোলার সব কথায় নিশীথ নির্বিকার থাকলেও এবার আর অনুভূতি দমন করতে পারেনা। নিজের ভেতরের ক্রো'ধ যেন ডুকরে বেরিয়ে আসতে চায়। তবু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো সে, বরং সহসা কদম বাড়িয়ে এগিয়ে এলো দোলার নিকট। ওর এগিয়ে আসা দেখে দোলা ক্রমশ পিছিয়ে গেলো ভয়ে। কম্পনরত ওষ্ঠ নাড়িয়ে কিছু বলবে এর আগেই নিশীথ শীতল কণ্ঠে শুধালো,
---কেন করবোনা?
নিশীথের কাছে থেকে এমন প্রশ্ন আশা করেনি দোলা। তাই কিছুটা অবাক হয়ে মাথা তুলে তাকালো ওর মুখপানে। কিন্তু ছেলেটা আগেকার ন্যায় একিদৃষ্টিতেই তাকিয়ে আছে ওর দিকে। যেন অপেক্ষা করছে ওর নিকট থেকে কোনো উত্তরের! দোলা ঘাবড়ায়। তবু ওর দমে গেলে চলবেনা। তাই যথাসম্ভব স্বাভাবিক কণ্ঠে জবাব দেয়,
---করবেন না কারণ আমাদের মধ্যে এমন কোনো সম্পর্ক নেই যার ফলে আপনি আমাকে এভাবে মাঝরাস্তায় আটকিয়ে এসব প্রশ্ন করতে পারবেন।
দোলার প্রশ্নে নিশীথের বাম ভ্রু ঠেলে একপাশে উঠে গেলো কপালে। ঠোঁট বাকিয়ে কৌতুকের ছলে বললো,
---তবে কি তুমি চাচ্ছো আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হোক?
দোলার ডাগর চোখে ভর করে বিস্ময়। অক্ষিদ্বয় কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে যেন সেভাবে তাকায়। লোকটা এরকম কেন? কই সে তো এভাবে ভেবে কিছু বলেনি! এখন তো দেখছে তাকে নিজের প্রশ্নেই ফাসিয়ে দিলো নিশীথ। নিদরুণ লজ্জায় চোখ এদিক সেদিক ঘুরায়। নাক ফুলিয়ে রা'গী গলায় বলে,
---আমি কি সেটা বলেছি? দু লাইন বেশি বুঝেন কেন?
দোলার রা'গ করায় যেন নিশীথ মজা পায়। তবে তা নিজের মুখভঙ্গিতে প্রকাশ পেতে দেয়না। কেননা, এখন মজা করার সময় নয়। আগে দোলার থেকে সব শুনতে হবে তারপর ওর ভুল ধারণা ভাঙতে হবে। তাইতো আগেকার ন্যায় শীতল কণ্ঠে বলে,
---আমি যখন দুই লাইন বেশি বুঝছি, তখন তুমিই না হয় চার লাইন ক্লিয়ার করে দাও।
---মানে?
দোলা ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে। নিশীথের কথার আগামাথা কিছুই ওর মস্তিষ্কে ঢুকেনা। ওর প্রশ্নে নিশীথ তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে,
---মানেটা খুব সিম্পল। তুমি আমাকে কেন ইগ্নোর করছিলে বলে দাও। আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিবো।
---আপনার আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে হবেনা। আমার এখন টিউশন আছে, সেখানে যাবো। আর আমি আপনাকে কোনোকিছুর জবাব দিতে বাধ্য নই। আমাকে প্লিজ যেতে দিন, নিশীথ ভাই!
নিশীথ এবার চটে যায়। মেয়েটাকে যতটা নরম ভেবেছিলো, এখন মনে হচ্ছে দোলা ততটাও নরম নয়। তাই রাগ চাপতে ব্যর্থ হওয়ায় নিশীথ ঠান্ডা গলায় বলে,
---ভালোই ভালোই প্রশ্ন করছি, ভালোই ভালোই উত্তর দিবে। এখন আমায় রাগিও না, দোলনচাঁপা। অনেকক্ষণ ধরে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে আছি, একবার আমার রাগ মাথায় চাপলে যা হবে, তা তোমার জন্য ভালো হবেনা।
নিশীথের শীতল গলার হুমকি শুনে দোলা বড়সড় এক ঢোক গিললো। নিশীথকে বেশ নাছোড়বান্দা মনে হচ্ছে। আজকে জবাব না শুনে সে যেতে দিবেনা। তাই কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে অবশেষে দোলা মাথা নিচু করে মিনমিনিয়ে বললো,
---আপনি মানুষকে মা'রেন। এগুলো খারাপ কাজ। আমার এসব ভালো লাগেনা। তাই আপনাকে এড়িয়ে চলছিলাম এ ক'দিন।
নিশীথের চোখেমুখে বিস্ময়। দোলার কথাগুলো মাথায় ক্রমাগত ঘুরপাক খাচ্ছে যেন। কিন্তু দোলা ওকে মা'রপি'ট করতে দেখলো কবে? কোথায় দেখলো? কখন দেখলো?
নিশীথ মনে মনে অনুসন্ধান করতে লাগলো!


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন