উপন্যাস        :         তুমি অপরূপা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ৮ই জানুয়ারী, ২০২৩ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “তুমি অপরূপা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৩ সালের ৮ই জানুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
তুমি অপরূপা || রাজিয়া রহমান
তুমি অপরূপা || রাজিয়া রহমান 

৩৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তুমি অপরূপা || রাজিয়া রহমান (পর্ব -৩৬ )


গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সমুদ্র। সকালে ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছে। সারারাত এক প্রকার জেগেই ছিলো।
দুচোখে ঘুম ছিলো না। সকাল বেলায় তাই শুয়েছে।
ঘুম ভেঙে গেলো ফোনের ভাইব্রেশনে। সমুদ্র লাফিয়ে উঠে বিছানায় বসলো।মাহি টেক্সট করেছে।
টেক্সট পড়ে মুহুর্তেই সমুদ্রের মন হতাশ হয়ে গেলো। মা তাহলে এতো কিছু করে ফেলেছে!
অথচ সে মা'কে বিশ্বাস করেছিলো।
সমুদ্র উঠে মায়ের রুমে গিয়ে দেখে রুম ফাঁকা। মায়ের রুমে বিছানার উপর উঠে বসলো সমুদ্র।
রেখা এলো কিছুক্ষণ পর। সমুদ্রকে তার রুমে দেখে কিছুটা অবাক হলো।
ছেলেকে তা বুঝতে না দিয়ে বললো, "উঠে গেছিস ঘুম থেকে? চা খাবি?"
সমুদ্র নরম স্বরে বললো, "খাবো মা।বেশি করে দুধ দিয়ে এক কাপ দুধ চা বানিয়ে দাও।তোমার প্রিয় কাপে করে দিও মা।"
সমুদ্রের অত্যধিক শীতল ব্যবহার রেখার নজর এড়ালো না।রেখা চা বানিয়ে আনলো। সমুদ্র চা'য়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো, "কোথায় গিয়েছিলে মা?রূপকদের বাসায়?"
রেখা চমকালো।সমুদ্র কি জেনে গেছে সে রূপকদের বাসায় গিয়েছিল যে!
গলার স্বর যথেষ্ট পরিমাণ শান্ত রেখে বললো, "আমি? কে বললো তোকে এই কথা?
ওই বাসায় আমি কেনো যাবো?আমি দোকানে গিয়েছিলাম।আচ্ছা শুন বাবা।
আমি সারারাত ভেবেছি।তোর চাচা একবার যে কাজ করেছে আমি চাই না তুই ও সেই কাজ করিস।
তুই আমার একমাত্র ছেলে।এই বংশের প্রদীপ তুই।আমি তোর বাবার সাথে কথা বলেছি।তোর বাবা বলেছে তুই যা চাস তা যেনো হয়।আমি ও ভেবে দেখলাম তোর বাবা ভুল কিছু বলে নি।
রাগ,জেদ,ইগো নিয়ে থেকে তোর জীবন নষ্ট করতে দিতে পারি না আমি। তুই যাকে পছন্দ করিস তার সাথেই তোর বিয়ে হবে।"
সমুদ্র মুচকি হাসলো মায়ের কথা শুনে। চা শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে এক আছাড়ে কাপটা ভেঙে ফেললো।
রেখা চমকে উঠলো। সমুদ্র কেমন হিংস্র হয়ে উঠলো মুহূর্তে। চিৎকার করে বললো, "আমার সাথে অভিনয় করতে এসো না মা।আমি নিজে ও থিয়েটার অভিনেতা ছিলাম তুমি জানো ভালো করে। তোমার এই অভিনয় ভীষণ কাঁচা।কেনো গিয়েছিলে তুমি ওই বাসায়?
কার কাছে গিয়েছিলে?
রূপার কাছে?
কি বলেছ তুমি রূপাকে?
বলো আমাকে?"
রেখা বিস্মিত হলো। সমুদ্র কিভাবে জানলো রেখা ওই বাসায় গিয়েছিলো?
রূপক তো ওর সাথে কথা বলে না, ওই মেয়ের সাথে ও সম্পর্ক নেই। তাহলে কিভানে জেনে গেলো তিনি বাসায় না আসতেই?
সমুদ্রের চিৎকারের সামনে রেখা চুপ করে থাকতে পারলো না।সে-ও সমান তালে চিৎকার করে বললো, "হ্যাঁ গিয়েছি,গিয়েছি বেশ করেছি।আমাদের একটা লেভেল আছে,একটা ক্লাস আছে,রেসপেক্ট আছে।ফকিরের মেয়ে এনে তো সেই সম্মান নষ্ট করতে পারি না।তুমি চোখে রঙিন চশমা পরেছ তাই বলে তো আমি পরি নি তোমার বয়সটা এমন তাই তুমি বুঝতেছ না। তাই বলে আমি তো তোমার মতো বোকামি করতে পারি না।
আর যাকে তুমি পছন্দ করেছ সে কোনো ভাবেই যোগ্য না এই বাড়ির বউ হওয়ার। "
সমুদ্র হেসে উঠে বললো, "ভালোবাসার কি ক্লাস হয় মা?
ভালোবাসা ফার্স্ট ক্লাস,থার্ড ক্লাস মেনে হয় বুঝি?
আমি রূপাকে ভালোবাসি,এটাই সবচেয়ে বড় সত্য আমার কাছে। তুমি যদি মানতে পারো মানবে আর যদি মানতে পারো তবে আজকেই আমাকে ভালো করে দেখে নাও মা।আজকেই এই বাসায় আমার শেষ দিন।আমি আবার ফিরবো বাসায়,সাথে করে বউ নিয়ে। তুমি ভেবো না চাচার মতো আমি চিরকুমার থাকবো।
যেই ক্লাস,সোসাইটি,রেসপেক্ট এর জন্য তুমি আমার ভালোবাসা মেনে নাও নি আমি সেই সব ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে ফিরবো। লজ্জায় সেদিন তোমার মাথা হেট হয়ে যাবে।আমি সেদিন বিজয়ীর হাসি হাসবো। "
রেখা ছেলের হাত ধরে বললো, "পাগল হয়ে গেছ তুমি? "
সমুদ্র ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। শান্ত স্বরে বললো, "হ্যাঁ মা,আমি পাগল হয়ে গেছি।ভাবতে পারো তুমি, আমি কতটা পাগল হয়ে গেছি। একটা মেয়েকে আমার ভালো থাকা,আমার শান্তি, আমার স্বাচ্ছন্দ্য সব কেড়ে নিয়েছে। নিজেকে কেমন নির্জীব, অসাড় মনে হয় আমার।
আমি যেনো আমার না।আমি পুরোটা রূপার।ও মা,আমি পারবো না ওরে ছেড়ে থাকতে। আমি মরে যাবো মা।"
রেখার মন টললো না মোটেও।এক দলা থুথু ফেলে বললেন,"একবার ফেলে দেওয়া থুথু যেমন পুনরায় মুখে তুলে নেওয়া যায় না সমুদ্র, তেমনই একবার যাকে অপছন্দ করেছি,মেনে নিবো না বলেছি দুনিয়া এসপারওসপার হয়ে গেলে ও তাকে আমি এই বাড়ির বউ করবো না। ওই মেয়ে আমার কাছে ছুড়ে ফেলা থুথুর দলা।"
সমুদ্র হতবাক হলো মায়ের এরকম নিষ্ঠুর আচরণে। সমুদ্রর হতবাক দেখে রেখা বললো, "ভালো কথা শুনে যাও,তোমার ওই মাস্তান, বেয়াদব বন্ধুটা তো ওই মেয়ের কাজিন হয়।সে বলে দিয়েছে দরকার হলে ওই মেয়েকে কেটে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিবে তবুও তোমার সাথে বিয়ে দিবে না।আর মোস্ট সারপ্রাইজিং ব্যাপার হলো তুমি হয়তো জানো না,ওই মেয়ের প্রেমে তোমার বন্ধুও হাবুডুবু খাচ্ছে। আর তুমি তো জানো তোমার বেয়াদব বন্ধুটা কেমন বেয়াড়া তোমার কি মনে হয় ও তোমার সাথে ওই মেয়ের বিয়ে হতে দিবে?"
সমুদ্র আকাশ থেকে পড়লো যেনো। রূপক!
রূপক রূপাকে ভালোবাসে?
সমুদ্র বিছানায় বসে পড়লো। রেখা মুচকি হাসতে লাগলো দাঁড়িয়ে। সমুদ্র কিছুক্ষণ পর উঠে দাঁড়ালো। যএই ব্যাগটা সবসময় গুছিয়ে রাখতো ট্যুরের জন্য, সেই ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বের হয়ে গেলো।
মাথার ভেতর প্রলয়ঙ্কারী ঝড়।বুকের ভেতর আগুনের দহন।
ভালো নেই সমুদ্র। সমুদ্রের জীবন কেমন রংহীন হয়ে গেছে। ভালোবাসা এমন হিংস্র ও হয়?
এভাবে সব শান্তি কেড়ে নেয়?
অথচ সে জানতো ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর শান্তির শব্দ।
বিক্ষিপ্তভাবে হাটছে সমুদ্র। হঠাৎ করে টের পেলো একটা শক্ত হাত তাকে এক ঝটকায় টেনে সরিয়ে এনেছে। টাল সামলাতে না পেরে সে লোকটার বুকের উপর গিয়ে পড়েছে। তাকিয়ে দেখলো একটা মাইক্রো যাচ্ছে, আর একটুর জন্য সে গাড়ির নিচে পড়তে যাচ্ছিলো।
যে তাকে সরিয়ে এনেছে তার দিকে তাকানোর আগেই মানুষটা বাইকে উঠে গেলো।
অশ্রুসজল চোখে সমুদ্র তাকিয়ে বাইকটা দেখতে লাগলো।
এই বাইক তার চেনা,তার চিরচেনা। এটা রূপকের বাইক।হেলমেট মাথায় দিয়ে যেই ছেলেটা বাইক নিয়ে যাচ্ছে সে তার প্রাণের বন্ধু ছিলো। অথচ কি হয়ে গেলো!
হুট করে সমুদ্রের মনে হলো সে আসলে কখনোই বন্ধু হিসেবে রূপকের জন্য কিছু করতে পারে নি ।
রূপক সবসময় তার জন্য করেছে সে সবসময় সুবিধা ভোগ করে গিয়েছে। অথচ রূপকের ও তো তার থেকে অনেক কিছু পাওনা ছিলো।
হাসপাতালে সালমার চিকিৎসা পুরো দমে চলছে। কিছুক্ষণ পর পর সালমা মেয়েদের জন্য কেঁদে উঠে। অন্তরা তখন মাকে সামলে নেয়।
ডাক্তাররা আশা দিলেন সালমা যেভাবে রেসপন্স করছে,এভাবে রেসপন্স করলে ১ মাসের মধ্যে রিকভারি সম্ভব। অন্তরাকে ডাক্তার বললো, "আপনারা যত বেশি পারেন ওনাকে মা বলে ডাকবেন। বারে বারে ডাকবেন। "
অনামিকা ভিডিও কলে মা'কে দেখে মায়ের সাথে কথা বলে। অন্তরা,অনিতা দুজনেই কথা বলে সমানে।
সিরাজ হায়দার গুমরে মরেন রূপার জন্য।
ভয়ে রূপা আসতে চায় না যদি তাকে দেখে সালমা অশান্ত হয়ে যায় আবার।
সিরাজ হায়দার ভাবেন মেয়েটার বুঝি কপাল পুড়লো।সবাইকে অবাক করে দিয়ে ৫ম দিন সালমা উঠে বসে সোজা জিজ্ঞেস করলো, "রূপা কই গেলো?"
সিরাজ হায়দার আনন্দে কাঁদলেন আজ সাথে সাথে রূপককে কল দিলেন।রূপক বাসায় ছিলো । ফুফার কথা শুনে তখনই রূপাকে নিয়ে হাসপাতালে এলো।
সালমা কতো দিন পর রূপার হাত চেপে ধরলো। রূপা কাঁদবে না, কাঁদবে না বলে ও কেঁদে দিলো।সালমা ভেবে পেলো না মেয়ের কান্নার কারন কি
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, "কেনো কান্দস?"
রূপা জবাব না দিয়ে মা'কে জড়িয়ে ধরলো। রূপকের চোখ ভিজে উঠলো। কোনো দিন মা তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে বলে তার মনে পড়ে না।
কেনো মা এভাবে তার থেকে দূরে সরে গেলো!
ক্যারিয়ার শুধু!
ক্যারিয়ারের জন্য কি মানুষ এরকম নিষ্ঠুর হতে পারে?
রূপক তো তার প্রথম সন্তান ছিলো, অথচ কখনো কি এভাবে ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছেন তিনি?
১ মাস পর........
সালমাকে আজ হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে। সালমার কন্ডিশন এখন ৮০% ভালো। এখন শুধু প্রপার কেয়ার করতে হবে তার।
রূপক বাসায় কিছু জানালো না।একটা উবার নিয়ে সবাইকে নিয়ে বাসায় চলে এলো।
শুক্রবার হওয়ায় তানিয়া আজ অফিসে যায় নি।বাসায় ছিলো। কলিং বেল বাজতেই বিরক্ত হলো। দরজা খুলতেই দেখে সালমা দাঁড়িয়ে আছে। সালমার পেছনে রূপক,রূপা,সিরাজ হায়দার, অন্তরা,অনিতা।
তীব্র ঝাঁকুনি খেয়ে তানিয়া পড়ে যেতে নিলো। টেবিল ধরে নিজেকে সামলে নিলো।
রূপক হেসে বললো, "তারপর, ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে এসেছে আজ।আফসোস আজ আমার দাদা দাদী নেই।তারা যদি দেখতো তবে হয়তো তাদের মন শান্ত হতো। "
তানিয়া চুপ করে রইলো। রূপক সমুদ্র কে টেক্সট দিয়ে বললো,"একটু আমাদের বাসায় আসতে হবে এখনই। "

 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন