উপন্যাস       :        শাহজাহান তন্ময়
লেখিকা        :        নাবিলা ইষ্ক
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২০ই নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা নাবিলা ইষ্ক-র “শাহজাহান তন্ময়” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ২০ই নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
শাহজাহান তন্ময় || নাবিলা ইষ্ক
শাহজাহান তন্ময় || নাবিলা ইষ্ক 

৭৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

শাহজাহান তন্ময় || নাবিলা ইষ্ক (পর্ব - ৭৮)


৭৮.১
বিকট শব্দে বজ্রপাত ঘটে, খুব কাছাকাছি। ঝুম তবে ধারালো বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির শব্দে আলোড়ন হয় চতুর্দিক জুড়ে। হলদেটে দানব আকৃতির ট্রাকটি এলোমেলো গতিতে তেড়ে আসছে বৃষ্টি মেখে। ট্রাকের সামনের দুটো বাতির সূক্ষ্ম আলো এসে ছুঁয়েছে তন্ময়ের থমকানো মুখ। তীক্ষ্ণ বৃষ্টি, চোখে লাগা গাড়ির আলোতে বন্ধ হয় চোখের পাতা। একমুহূর্তের জন্য মনে হয়, এই যেন ধার্যমাণ মরণ ডাক। এই যেন পৃথিবীর অন্যতম নিষ্ঠুর সত্যের বাস্তব রূপ তার সামনেই। সেমুহূর্তেই তন্ময়ের পকেটের সেলফোন বেজে ওঠে। এবং বেজে চলে বিরতিহীন। ত্বরিত চোখ মেলে চায় তন্ময়। 
ওদিক ড্রাইভিংয়ে বসা সুমনের হাত দুটো ভয়ে বরফের মতো জমে আছে হুইলের ওপর। মরণ ভয়ে মস্তিষ্ক শূন্য, মাত্রাতিরিক্ত বড়ো হয়ে গিয়েছে চোখ দুটো। বুকের ওঠানামার গতি নেই, শ্বাস বন্ধ। নড়ছে না, কিচ্ছুটি করছেও না।
 তন্ময় চোখের পলকে তেড়েমেরে কাছে আসা ট্রাকটির চেয়েও দ্বিগুণ গতিতে সুমনকে শক্ত হাতে ঠেলে সরিয়ে হুইল ধরে দু'হাতে। গাড়ি নিজের আয়ত্তে এনে বিশ্রী ধরনের এক বাঁকা মোড় নেয়—আগেপাছে কিচ্ছু দেখার প্রয়োজনবোধ করে না। শুধুই যেন এই ট্রাকটিকে এড়ানোই তার একমাত্র লক্ষ্য। তৎক্ষণাৎ এক ভয়াবহ বিকট শব্দে জমিন সহ কেঁপে ওঠে চতুর্দিক। সেই শব্দে যেন বৃষ্টি থামে, উড়ে যায় আশ্রিত পাখিরা। সেই উৎকৃষ্ট শব্দের পরপর সব নীরব, শান্ত। মিনিটের মাথাতেই নীরবতা চিড়ে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুনের ফুলকি। সেই ভয়াবহ আগুনের ওপর নামছে ঝুম বৃষ্টি। কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন চারপাশ। 
আশেপাশে, সামনে-পেছনে নেই একটি গাড়ি। নেই কোনো বাড়ি, নেই লোকজন। বিধাতার দোয়াতেই যেন বৃষ্টির গতি বাড়ে। সেই ধারালো বৃষ্টির স্পর্শে দাউদাউ করে জ্বলে উঠতে পারছে না আগুন। ধীরে ধীরে বাধ্য হচ্ছে নিভছে, শান্ত হতে। কালো ধোঁয়ার মাত্রা তখন অতিরিক্ত ভবে ছড়িয়ে পড়ছে।
নিভে গিয়েছে আগুন। পুরোপুরি। উল্টে পড়ে থাকা গাড়ির ভেতর থেকে সড়ক পথের জমিন ছুঁয়ে দেয় র ক্তা ক্ত, দুর্বল একটি হাত। জানালার কাঁচ ভেঙে গুড়িয়েছে চতুর্দিক। বৃষ্টির স্পর্শে র ক্ত ধুয়ে জমিন লা ল করে ফেলে। বেয়ে যায় র ক্তাক্ত বৃষ্টি। সে হাতটার অনামিকা আঙুলে একটি নির্ভেজাল, ডিজাইন বিহীন একটি আংটি। খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যাবে আংটির গায়ে লেখা ছোটো 'অ' অক্ষরটির। তন্ময়ের ফরসা হাতটা কেঁপে ওঠে। চেষ্টা করে হাতটা নাড়াবার। কিন্তু পারে না। ব্যথার ভার যে খুব অতিরঞ্জিত। কিঞ্চিৎ জ্ঞান থাকা তার কপালের র ক্ত বেয়ে ছুঁয়েছে আধবোজা চোখ। তারপর ঠোঁট, এরপর গলা বেয়ে শার্ট। নিভুনিভু চোখের পাতায় নিজের পরিবার ব্যতীত কেউ নেই। বাবার গম্ভীর তবে আহ্লাদী মুখ, মায়ের আদুরে মুখ আর… আর অরুর অভিমানে ভেজা মুখ। টলমলে চোখ আর ওর কণ্ঠের ডাক,
‘তন্ময় ভাই।’
 তন্ময়ের ডান চোখ বেয়ে গড়ায় একফোঁটা অশ্রুজল। সে জল গাল বেয়ে গড়ায় গলায়। ফোনটা ফের বেজে ওঠে। বাজতেই থাকে। সুমন জ্ঞান হারিয়ে মাথা বেঁকিয়ে পড়ে আছে। র ক্তে ভেসে যাচ্ছে ওর মাথা। তন্ময়ের আধবোজা চোখজোড়াও ধীরে ধীরে বন্ধ হতে চায় চিরতরে। সে চেষ্টা করেও পারে না চোখদুটো মেলে রাখতে।
— — —
‘হেই, হেই…স্টপ দ্য কার। স্টপ।’
মালকিনের কথা মতো ড্রাইভার গাড়ি থামায়। সে অদূরের দৃশ্য দেখে ভয়ে ভয়ে বলে,
‘ম্যাম, এক্সিডেন্ট মনে হচ্ছে। যাব?’
রোশানারা আশ্চর্য হয়, ‘যাব মানে? দৌড় দাও।’
ড্রাইভার দ্রুত বেরোয়। বৃষ্টিতে ভিজেই ছুটে সামনের ট্রাকটির সামনে। ট্রাকে কেউ নেই। হয়তো-বা ভেগেছে। ইতোমধ্যে রোশানারা নিজেও গাড়ি থেকে বেরিয়েছে। মুহূর্তেই ভিজে জবজবে হয় শরীর। উঁচু হিলে বড়ো কদমে শব্দ তুলে এগোয় সামনে। ড্রাইভার চ্যাঁচায়, 
‘ম্যাম মানুষ আছে ভেতরে। গোঙ্গানির শব্দ শুনলাম। জীবিত আছে।’
রোশানারা অশান্ত কণ্ঠে আদেশ ছুঁড়ে, ‘তাড়াতাড়ি টেনে বের করো। ভেতরে ক'জন?’
ড্রাইভার ইতোমধ্যে বসে পড়েছে সড়কপথে ঠিক গাড়ির সামনে। জানালাটা খোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু হচ্ছে না। গাড়িটা সোজা করা গুরুত্বপূর্ণ। অথচ কোথাও একটা কেউ নেই, নেই কোনো গাড়ি অবধি। রোশানারা তার হাসপাতালে কল দিয়েছে। খুব দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স পাঠাতে বলেছে। 
ড্রাইভার অসহায় গলায় বলে,
‘ম্যাম, গাড়িটা সোজা করতে হবে।’
রোশানারা শাড়ির আঁচল কোমরে বেঁধে নিজেও জমিনে বসে। ফোনের বাতি জ্বালায়। গাড়ির ভেতরে তাঁক করতেই দেখতে পায় তন্ময়কে। যার দু’চোখ কাঁপে সেই আলোর স্পর্শে। রোশানারা উচ্চস্বরে ডাকে,
‘মিস্টার, হ্যালো? শুনতে পারছেন?’ বলতে বলতে সে তন্ময়ের হাতের নল অনুভব করে। খুব স্বাভাবিক গতিতে চলছে। রোশানারা ফের ডাকে। এবার ঝুঁকে হাতও বাড়িয়ে গা ছুঁয়ে ঝাঁকি মারে। অদূর হতে গাড়ি আসার শব্দ কর্ণধার ছুঁতেই ড্রাইভার লাফিয়ে ওঠে। দ্রুত চিৎকার করে,
‘ইমার্জেন্সি সাহায্য লাগবে। হেল্প করুন।’
ড্রাইভারের হয়তো-বা ডাকতে হতো না৷ কারণ গাড়িটি কাছাকাছি পৌঁছাতেই— তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে এদিকেই ছুটে আসছে। ড্রাইভার দ্রুত গলায় বলে,
‘স্যার, দু'জন ভেতরে। বেঁচে আছে। গাড়িটি সোজা না করলে বের করা সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনজনই ড্রাইভারের সাথে হাত লাগায় গাড়িটি সোজা করার জন্যে। চার বারের সময় সোজা হয়। 
ড্রাইভার ভাঙা জানালা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে গাড়ির জানালা পুরোপুরি খুলে দেয়। বের করে আনে তন্ময়ের মৃদু সজাগ দেহ খানা। রোশানারা বলে চটজলদি গলায়,
‘উনি স্বাভাবিক আছেন। উনাকে এখানেই, গাড়ির সাথে লাগিয়ে বসাও। অন্যজনকে দেখো।’
ড্রাইভার তন্ময়কে গাড়িতে পিঠ ছুঁইয়ে সড়কপথে বসায়। তন্ময়ের পকেটের ফোন ফের বেজে ওঠে। এবং বেজেই যায়। আগন্তুক পুরুষদের একজন নিজের গাড়ি থেকে পানির বোতল এনে এগিয়ে দেন রোশানারার দিক। রোশানারা পানির বোতল নিয়ে তন্ময়কে অনেকটা খাইয়ে দেয়। বাজতে থাকা ফোন বন্ধ হয়ে ফের বাজে। রোশানারা বিড়বিড় করে,
‘আপনার পরিবারকে জানানো দরকার।’ বলেই সে হাত বাড়ায় তন্ময়ের পকেটে। ফোনটা বের করতে চায়। তখনই তার হাতটা তন্ময়ের দুর্বল, র ক্তাক্ত কাটা হাত শক্ত করে ধরে ফেলে। মৃদু চোখে চাইতে চেয়ে অস্পষ্ট গলায় আদেশের মতো করে বলে,
‘ডোন্ট।’
সেই কণ্ঠে রোশানারা চমকে ওঠে। তন্ময় বড়ো করে শ্বাস নিচ্ছে৷ পুরুষালি বুকের ওঠানামার গতি অস্বাভাবিক দ্রুত। ক্লান্ত মাথাটা সে গাড়িতে ঠেলে স্পর্শ করায়। তার রুক্ষ হাতের মুঠোয় থাকা হাতটা ছেড়ে দিয়ে ফের দমবন্ধ হয়ে আসা দাম্ভিক গলায় আওড়ায়,
‘ডোন্ট টাচ মাই ফোন।’
আগন্তুকদের তিনজন পুরুষের একজন বসে তন্ময়ের কাছে। আলতো হাতে কাঁধ ছুঁয়ে বলে,
‘হেই, ব্রাদার। ইউ ওলরাইট? ফোন না ধরলে আপনার বাসায় কল করব কীভাবে?’
তন্ময় তখনো দুর্বল, অজ্ঞান প্রায়। কোনোরকমে জবাবে বলে, 
‘তারা পাগল হয়ে যাবে। হয়তো-বা আমার থেকেও খারাপ অবস্থা হবে তাদের। ডোন্ট কল দেম। প্লিজ!’
রোশানারার ড্রাইভার সুমনকে বের করেছে গাড়ি থেকে। অজ্ঞান, তবে বেঁচে আছে৷ প্রথমে অনেক খারাপ অবস্থা মনে হলেও, অতটা খারাপ নয়। ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। অতিরিক্ত র ক্ত মূলত ডান কানের লতি কেটে বেরুচ্ছে। কপালে খানিক কেটেছে। বাদবাকি সব ঠিকাছে। রোশানারা দেখে নিয়েছে সুমনকেও। বৃষ্টির জল চোখে পড়তেই ও পিটপিট করে চোখ মেলে চায়। তন্ময়ের থেকে ভালো অবস্থা শরীরের। কিছুটা সজাগ হয়েই ও পাগলের মতো ডেকে ওঠে,
‘স্যার? স্যার?’
বলতে বলতে সুমন হাঁটুতে হেঁটে দ্রুত তন্ময়ের সামনে আসে। বিচলিত কণ্ঠে ডাকে,
‘স্যার? স্যার? অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন তাড়াতাড়ি।’
তন্ময় সময় নিয়ে থেমে থেনে দুর্বল প্রত্যুত্তর করে, ‘অ্যা-ম্বু-লেন্স লাগবে না। হস-পিটাল চলো। এভা–বে বাসা-য় যাওয়া যাবে না।’
রোশানারা দ্রুত বলে, ‘আমাদের হসপিটাল কাছেই। চলুন, আসুন।’
আগন্তুক পুরুষদের দু'জন মিলে তন্ময়কে ধরে তোলে। লম্বাচওড়া সুঠাম গতরের তন্ময়কে আড়চোখেই অবলোকন করে। তখনো সুমন দুর্বল পায়ে পিছু নিতে নিয়ে অস্পষ্ট গলায় বলে,
‘বড়ো স্যারকে জানাই, স্যার? নাইলে পরে আমাকে মে রে ফেলবে।’
তন্ময় সে অবস্থাতেও গম্ভীর গলায় ধমকের সুরে আওড়ায়, ‘তোমা-র বড়ো স্যার মা-রার আগে আমিই তোমাকে মেরো ফেলব সুমন।’
এমন এক পরিস্থিতিতেও রোশানারার কেন যেন হাসি পায়। সে ঠোঁটে ঠোঁট টিপে হাসি দমায়। আড়চোখেই চায় তন্ময়ের ক্লান্ত মুখে। পরপর নজরে আসে ডান হাতের অনামিকা আঙুলের আংটির ওপর।

৭৮.২
সুমন থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কপালের এক কোণে গ্রিন স্ট্রিপ লাগানো। কিছুক্ষণ আগেই ডাক্তার তার ছোটোখাটো আঘাতটুকুর ওপর ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছেন। আপাতত বেশ সুস্থ স্বাভাবিক সে নিজের একটুখানি প্রাণ নিয়ে সংশয়ে আছে। এই অবলা প্রাণটুকু বুঝি সে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না। সম্ভবই না। চোখের দৃষ্টির সামনেই হসপিটাল সিঙ্গেল করিডোর বেডের হেডবোর্ডে পিঠ এলিয়ে তন্ময় চোখ বুজে আছে। কপালের আঘাত গাঢ় হওয়াতে পুরো কপাল জুড়ে নিখুঁত ব্যান্ডেজ করতে হয়েছে। ঘাড়ে ছোটো খাটো আঘাতের দরুন ঔষধ মেখে গ্রিন স্ট্রিপ লাগিয়েছে। বাম হাতের দুটো আঙুলের ডগায়ও মলমপট্টি করা হয়েছে। ওপর দিকে সুমনের কিচ্ছুটি হয়নি; সামান্য কপালে চোট পেয়েছে। শাহজাহান মোস্তফা যখন এহেন বিস্তৃত ফারাক দেখবেন, তাকে তখুনি মে রে ফেলবে্ন নিশ্চিত। তার আদরের পুত্রর নাজেহাল অবস্থা, আর ড্রাইভার সে একদম অখ্যাত! এই কী মানবেন? মানবেন না। সুমন ভয় পাচ্ছে ওই ভদ্রলোককে। ছেলের বেলায় উনি কোন ধরনের উদগ্রীব তার জানা আছে। পূর্বের ইতিহাস পরিষ্কার মনে আছে এখনো।
রোশানারা এই প্রাইভেট হাসপাতালের একজন ডাক্তার। তার বাবা এই হাসপাতালের ডিরেক্টর। তাই বলা যায় এই হাসপাতাল তার দ্বিতীয় বাড়ি। ইতোমধ্যেই একজন নার্স এসে সুমনের কপালে পট্টি লাগিয়ে দিলেও, তন্ময়ের মলমপট্টি রোশানারা নিজ হাতে করেছে। স্বেচ্ছায়! মলমপট্টি করে চলে গিয়েছিল কিছুক্ষণের জন্য। এবারে এসে দাঁড়ায় বেডের কাছাকাছি। নরম স্বরে জানতে চায়,
‘এখন কেমন বোধ করছেন, মিস্টার শাহজাহান?’
তন্ময় চোখ মেলে চায়। চোখ দুটো রক্তিম তার। মুখ ক্লান্ত। ভ্রু-দ্বয়ের মধ্যিখানে কয়েকটি ভাঁজ পড়ে আছে। শার্টে র ক্তের দাগ ভেসেছে। শরীর জুড়ে নীল ব্যথার আনাগোনা। ক্ষত গুলোর ব্যথাও বেশ অসহনীয়। এর ওপর আবার বাজতে থাকা ফোন চার্জের অভাবে সাট-ডাউন হয়ে বসে আছে। তবুও সে প্রত্যুত্তরে বিনয়ের সঙ্গে বলে,
‘মাচ বেটার। থাংকিউ ডক্টর।’
রোশানারার চোখ দুটো হাসে। ঠোঁটে এসে ভিড়ে মৃদু হাসি। ত্বরিত বলে, ‘এটা আমার দায়িত্ব ছিল।’
সুমন আড়চোখেই দেখছিল সুন্দরী ডাক্তারের ভেজালযুক্ত হাসিটুকু, উজ্জ্বল চোখ দুটো। সেই লাজুক হাসির অর্থ তার বুঝতে আর বাকি রয় না। এমন অহরহ লাজুক হাসি তার স্যার না দেখলেও সে দেখে অভ্যস্ত বলা যায়। এবেলায় সুমন ঠোঁট বাঁকায় অগোচরে। দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় চড়তেই হঠাৎ করে কাঁদোকাঁদো তবে খুব বেদনায় জর্জরিত হৃদয়ে মুখ খোলে, 
'স্যার, খুব টেনশন হচ্ছে। বিশেষ করে অরু মামণি—না মানে আপনার ওয়াইফ তো আপনাকে এমন দেখলে রীতিমতো কেঁদেকেটে অস্থির হয়ে যাবে।’ 
বলতে বলতে সুমন বাঁকাচোখে একটিবার চেয়ে নেয় রোশানারার মুখের দিকে। উজ্জ্বল মুখ খানা কেমন চুপসে গেছে। তবুও সুন্দরী মানুষ বলেই দেখতে ভালো লাগছে। মিষ্টি হাসিটুকু আর ঠোঁটে নেই। তবে বেশ স্বাভাবিকই আছে। সুমন মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ নেয়। তন্ময়ের ধারেকাছে মেয়েমানুষ ঘেঁষতে চাইলে —এই তার ম্যারিড স্ট্যাটাস নিয়ে এমনভাবে মজা নেওয়াটা এতো আনন্দদায়ক! হা হা,  সুমনের তো দারুণ লাগে। অন্যদিকে তন্ময় মাথা তুলে চায় না। তবে তাকে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখা যায়। চিন্তার ভাঁজ কপালে গাঢ় হয়। কেমন অদ্ভুত দ্যুতি ছুঁয়ে দেয় চোখমুখ। বন্ধ ফোন হাতে নিয়ে সে নিজেও নরম কণ্ঠে ফিসফিস করে,
'এভাবেই তো ছিঁচকাঁদুনি স্বভাব। এবার বাড়িঘর মাথায় তুলে ফেলবে।’
প্রাসাদের বাইরে যেমন পাহারাদার হিসেবে সৈন্য রাখে তেমন ভাবেই সুমন কান দুটো দাঁড় করিয়ে রেখেছিল প্রত্যুত্তর শোনার জন্য। মৃদু হলেও সে স্পষ্ট শোনে। গদগদ স্বরে তৎক্ষণাৎ বলতে বলতে আড়চোখে রোশানারার মুখের দিকে চায়, 
'মামণিরে কত্তো আদর, যত্নে রাখেন একটু তো ছিঁচকাঁদুনি হবেই। আপনার জন্যই তো সে এমন। বড্ড বেশি ভালোবাসে তো।’
তন্ময় জবাবে নিশ্চুপ রয় ঠিকই তবে তাকে দেখলেই বুঝে ফেলা যাচ্ছে তার চোখমুখে এক অদ্ভুত আদুরে দীপ্তি ছুঁয়ে দিয়েছে। কিছুটা প্রফুল্ল হয়েই সে বেড থেকে নামতে চায়। তাকে বেড থেকে নামতে দেখে দ্রুত কাছে আসে সুমন। তন্ময় হাত উঠিয়ে ধরতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। দুর্বল শরীরে সে একাই দাঁড়ায়। শুধায়, 
‘উবার এসেছে?’
সুমন দ্রুত মাথা দুলিয়ে বলে, ‘জি, স্যার। চলে এসেছে। আমি—’
রোশানারা চুপ করে ছিল অনেকক্ষণ। এবারে একটু অসহায় গলায় তন্ময়কে শুধোয়, 'আপনি কী এনিহাউ এই অবস্থাতেই ফিরতে চাচ্ছেন?’
তন্ময় স্বাভাবিকভাবেই মাথা দোলায়। প্রত্যুত্তর করতে না চেয়েও ভদ্রতার খাতিরে করে, ‘জি। এগেইন থ্যাঙ্কিউ ডক্টর।’ বলতে বলতেই পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে একটি কার্ড রোশানারার দিকে এগিয়ে ধরে ফের বলে, ‘দিস ইজ মাই পার্সোনাল কার্ড। যদি প্রয়োজন হয়— ফিল ফ্রি টু কল মি। আমি সাহায্য করার চেষ্টা করব। আসি।’
তন্ময় কিছুটা ধীরে হাঁটছে। পা দুটো টনটন করছে ব্যথায়। সুমন ইতোমধ্যে হসপিটাল বিল পরিশোধ করে দিয়েছে। যাবার সময় রোশানারার দিকে চেয়ে মিষ্টি হেসে বলে, ‘আপনার এই সাহায্য কোনোদিন ভুলব না। ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করব না। আসি ডাক্তার, আপা।’
হাসপাতালের পার্কিং এরিয়াতেই এসে থেমেছে সাদাকালো মিশেলের প্রাইভেট গাড়িটি। এটাই বুক করেছে সুমন। সে দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে দেয় তন্ময়ের জন্যে। তন্ময় উঠে বসতেই নিজে গিয়ে বসে ড্রাইভারের পাশে। তন্ময় তখন ক্লান্ত দেহ সিটে এলিয়ে দেয়। প্রশ্ন করে,
‘গাড়ির কী ব্যবস্থা করলে? আর ওই ট্রাক ড্রাইভারের কী অবস্থা?’
সুমন নাকমুখ কুঁচকে ফেলে বকাঝকা করে ওঠে মুহূর্তেই, ‘ধান্দাবাজের বাচ্চা পালিয়েছে, স্যার। আমি লোক লাগিয়ে দিয়েছি। ওকে দু’দিন জেলের ভাত না খাইয়ে ছাড়ব না।’
তন্ময় জবাবে নিশ্চুপ। মাথাটা এলিয়ে চোখ বুজে আছে। গাড়িটা চলছে সাধারণ বেগে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। স্যাঁতসেঁতে রাস্তায় শব্দ তুলে গাড়ি চলেছে আপন গতিতে। 
— — —
গাড়িটা শাহজাহান বাড়ির সদর দরজা দিয়ে যখন ঢুকেছে —তখন রাত একটা ত্রিশ। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি নেমে যাচ্ছে তখনো। দারোয়ান চাচা বাড়ির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। গাড়িটা দেখা মাত্র ভদ্রলোক অত্যন্ত উত্তেজিত কণ্ঠে, বড্ড জোরসেই চ্যাঁচিয়ে ভেতরে জানিয়ে দিলেন তৎক্ষণাৎ,
‘তন্ময় বাবা আইছে, তন্ময় বাবা আইছে।’
সুমন এহেন কাণ্ডে হকচকাল। তার স্যার তো বলে আসেনি। তাহলে অপেক্ষা কীসের? নাকি এক্সিডেন্টের খবর কোনোভাবে জেনে গিয়েছে? তন্ময়ের প্রশ্নাত্মক দৃষ্টির সম্মুখে সুমন দুর্বল বড়ো,
'স্যার, কিচ্ছুটি বলি নাই। আল্লাহর কসম।’
তন্ময় স্পষ্ট দেখল দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে তার তিন বাপ-চাচার দলবল। চাচাদের মুখের অবস্থা অবর্ণনীয় হলেও তার বাবা শাহজাহান মোস্তফার মুখের খুব করুণ অবস্থা—সেটুকু বুঝে নিলো। তন্ময়কে খুব সম্ভবত গিলে খেয়ে ফেলতে চাইছেন। কিন্তু কেন? আর তার এমন দুর্দশা তন্ময় ব্যতীত কেউ করতে পারদর্শী নয়। কিন্তু তন্ময় তো কিচ্ছুটি করেনি। তার তো মনে পড়ছে না তেমন কিছু। এইমুহূর্তে বাপ-চাচাদের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে বাড়ির প্রত্যেক সদস্য। এমনকি ছোটো দীপ্তও। বাকি রয় শুধু অরু! তন্ময় ওর ছায়া পর্যন্ত দেখছে না। এতে সে চিন্তিত হয় কিছুটা। অনেকগুলো কল করা হয়েছে তাকে। অরুর কিছু হলো না তো? বিহ্বলিত চোখে বাড়ির একেকজনকে দেখতে দেখতে বেরোতে নেয় সে। 
ইতোমধ্যে কপাল পট্টি করা সুমন বেরিয়েছে। তন্ময়ের জন্য খুলে দিয়েছে দরজা। তন্ময় বেরুতেই যেন নীরবতা কিছুক্ষণের জন্য গাঢ় হয়। পরপর আকাশ-জমিন কাঁপিয়ে চিৎকার করে ওঠেন জবেদা বেগম। তার সেই চিৎকারের শব্দে বোধ হয় বাকিদেরও মস্তিষ্ক নড়বড়ে হয়। মোস্তাফা সাহেবের রাগিত মুখের পরিবর্তন ঘটে দৃশ্যমান রূপে। জবেদা বৃষ্টির ধার না ধেরে ছুটে গেলেন ছেলের দিকে। কোনোভাবে কম্পমান হাতে ধরেন ছেলের হাত। তার পূর্বের ছলছলে চোখ দিয়ে এবার ঝর্ণাধারায় নামে জল। তন্ময় ডান হাতে খুব চটজলদি মায়ের কাঁধ জড়িয়ে ভেতরে নিতে উতলা হয়। তখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি বাইরে বহমান। তন্ময়ের পাশাপাশি ভদ্রমহিলা মৃদু ভিজেছেন বটে। সুমন উবারের ভাড়া মিটিয়ে পিছু পিছু এগুচ্ছে। কয়েক বার আড়চোখে দেখে নিয়েছে মোস্তফা সাহেবের অবিশ্বাস্য চোখের দৃষ্টি। ছেলের দিকে কেমন কাতর চোখে চেয়ে আছেন। ভদ্রলোক যেন পারছেন না কেঁদেকেটে ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে! 
ইতোমধ্যে কমবেশ সকলেই কেঁদেকেটে একাকার। তন্ময়কে বসানো হয়েছে সোফায়। 
মোস্তফা সাহেব ছেলের সামনেই দাঁড়িয়েছেন। বাবার ওমন ভেঁজা চোখ দেখে তন্ময়ও নিজেও অসহায় হয়ে পড়ে। হাত বাড়িয়ে ধরে মোস্তফা সাহেবের হাতটা। বলে থেমে থেমে,
‘আমি ঠিক আছি, বাবা। শান্ত হও।’
মোস্তফা সাহেবের কণ্ঠে স্বর কেঁপে কেঁপে ওঠে কেমন,
 ‘ক-কোথায় ঠিক? কীভাবে কী হলো?’ 
বলতে নিয়েই তিনি ছেলের র ক্তে মাখা মুখখানি ভালো করে দেখেন। কেমন চিকচিক করে তার চোখ দুটো। তন্ময় বাবার ডান হাতটা আলোতে ভাবে ধরে টেনে বসিয়ে দেয় পাশেই। প্রত্যুত্তরে সে শুধু বাবার ছলছল চোখজোড়া দেখে। জবেদা বেগমকে সামাল দিচ্ছেন মুফতি বেগম, সুমিতা বেগম। তারাও কেঁদেছে। তবে মায়ের চেয়ে নয়! মা তো মা! অন্যদিকে দীপ্ত পারছে না তন্ময়ের কোলে চড়ে কাঁদতে। ওকে জোরপূর্বক আকাশ কোলে একপ্রকার জাপ্টে আটকে রেখেছে। তন্ময়ের ধারেকাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। আনোয়ার সাহেব চিন্তিত কণ্ঠে শুধান,
‘কীভাবে কী হলো, বাবা?’ 
তন্ময় বেশ স্বাভাবিকভাবেই বলে, ‘এক্সিডেন্ট হয়েছে চাচ্চু। তবে আলহামদুলিল্লাহ্, তেমন কিছুই হয়নি আমার। চিন্তা করো না। শান্ত হও।’
মোস্তফা সাহেব তাকালেন সুমনের দিকে। পরিপূর্ণ ভাবে ঘটনা শুনতে আগ্রহী বোঝায়। সুমন জড়োসড়ো হয়ে যায়। রোধ হয়ে আসে কণ্ঠনালি। তবুও কোনোরকমে মুখ খুলে সবকিছু পরিষ্কার করে বলে। এতে রুষ্ট হয় তিন শাহজাহান। তারা ওই ড্রাইভারের নামে মাম লা দেবেন। ওই গাড়ির মালিকের নামে দেবেন। প্রচণ্ড রাগে তারা ট্রাক ড্রাইভারের গুষ্ঠি উদ্ধার করতে ব্যাকুল। তন্ময় আশেপাশে খুব করে নজর রাখছিল। অরুকে সে এখনো দেখেনি! 
ওর স্বরও শোনা যাচ্ছে না। অবশেষে সে জিজ্ঞেস করেই বসে,
'অরুকে দেখছি না যে? কোথায় ও?’
মুহূর্তেই ফিরে আসে দোরগোড়ার সেই থমথমে পরিস্থিতি। তন্ময়ের পাশে বসা মোস্তফা সাহেবের শরীর কাটকাট হয়ে যায় কেমন। আনোয়ার সাহেব কাচুমাচু করছেন। জবেদা বেগম কাঁদছিলেন। এহেন প্রশ্নে যেন তার কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে। তিনি চোখমুখ মুছে স্বামীর উদ্দেশ্যে বলেন,
‘আশরাফুল ভাইকে আবার আসতে বলো কষ্ট করে। ছেলেটাকে দেখে যাক। ঔষধ আনাতে হবে। খেয়েদেয়ে ঔষধ খাবে। আমি খাবার গরম করতে বসাই।’
তন্ময় মায়ের বলা একটি কথাই পরিষ্কার শুনে। ‘আশরাফুল ভাইকে আবার আসতে বলো’ এতটুকুতেই তার পুরো মনোযোগ। আশরাফুল চাচা তার বাবা কাছের বন্ধু। ভদ্রলোক একজন সুনামধন্য ডাক্তার। তার বাতাদের এলাকাতেই। 
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেশের বাইরে থাকেন। বছর খানেক হচ্ছে দেশেই আছেন। সে কেনো এসেছিল? সচরাচর তো আসে না? তন্ময় ফের চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করে,
'আশরাফুল চাচা কেনো এসেছিলেন? আর অরু কোথায় বলছো না কেন?’
আবারো এক গাঢ় নীরবতা বয়ে যায়। দীপ্ত কিছু একটা বলতে চাইলে আকাশ ওর মুখ চেপে সরে গেল। আশ্চর্য! মোস্তফা সাহেবের ছলছল দৃষ্টি এবারে কেমন রহস্যময় হয়ে উঠেছে। তন্ময়কে বাঁকাচোখে আপদমস্তক একবার দেখে নিয়ে অন্যদিকে ফিরে রাখলেন মাথা। তন্ময় হতভম্ব। সে জবাবের আশায় চাচাদের দিকে চাইল, তার চাচা দুটো কাঁচুমাচু করছে। কী অবস্থা! মোস্তফা সাহেব ইতোমধ্যে ফোন করেছেন বন্ধুকে। ফের আসতে বললেন, এক্ষণ–এইমুহূসুমন ওপর দিকের সোফায় বসেছে গুটিশুটি মেরে। জবেদা বেগম এসেছেন ট্রে নিয়ে। টেবিলে রাখতে রাখতে হেসে বলেন,
‘রাতে আজ এখানেই থাকো, ঠিকাছে? বেশ রাত হয়েছে। ফেরার দরকার নেই।’
সুমন মাথা দুলিয়ে নিজের সম্মতি বোঝায়। তার বাড়ির সদরদরজা বারোটায় বন্ধ করে দেয়। ফিরেও ঢুকতে পারবে না। বাড়ির কড়া নিয়ম রয়েছে। জবেদা বেগম কথা শেষ করে ছেলের হাতে কমলার জুসের গ্লাস ধরিয়ে দেন। বলেন,
‘খাবার গরম করতেছি। অন্য কিছু চটপট রেঁধে দিমু?’
তন্ময় এবার মহা বিরক্ত। তার ক্লান্ত শরীরও যেন ক্লান্তি ভুলে বসে আছে। নীল ব্যথারাও পালিয়েছে। সে সবার এমন ভাঁওতাবাজি দেখে অবাক না হয়ে পারছে না। অশান্ত হয় সে।
‘হয়েছেটা কী? বলবা তো?’
জবেদা বেগম প্রত্যুত্তরে স্বামীর মুখের দিকে চান। আনোয়ার সাহেবও ভাইয়ের মুখের দিকে চেয়ে। ওহী সাহেবও বড়ো ভাইয়ের মুখের দিকে চেয়ে। তন্ময় নিজেও চোখমুখ কুঁচকে উঠতে উতলা হয়। সে নিজেই ওপরে যাবে এমন অবস্থা! মোস্তফা সাহেব ছেলের দিকে একপলক চেয়ে এক অদ্ভুত ভাবে ভেংচি কাটলেন। তন্ময় আশ্চর্য হতেও ভুলে যায়। ভদ্রলোক অন্যদিকে ফিরে বলেন,
‘মেয়েটা ঘুমুচ্ছে। ওকে ডিস্টার্ব করো না। তোমার এই অবস্থা ও দেখলে সমস্যা আছে।’
তন্ময় সচেতন হয় মুহূর্তেই, ‘কী হয়েছে ওর? আমাকে জানাওনি কেন?’
এবারো মোস্তফা সাহেব দুর্দান্ত গম্ভীর গলায় মিনমিন করেন, 'ওহ, জানো না দেখতেছি। তোমারই তো আগে জানার কথা।’
আনোয়ার সাহেব মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে চেয়ে আছেন। সুমিতা বেগম আঁচলে মুখ গুঁজে রেখেছেন। হাসছেন নাকি কাঁদছেন বোঝা মুশকিল। তন্ময় কী বলবে বা করবে বুঝতেই পারছে না! 
‘ওখান থেকে আমি কীভাবে জানব?’
মোস্তফা সাহেব এবারো মিনমিন করেন, ‘যা করার আগেই সেরেছো। হুম!’
আনোয়ার সাহেব চোখমুখে ডান হাত চেপে আলগোছে উঠে পড়েছেন। তার কাঁধ কাঁপছে। তন্ময় বাড়ির সবার দিকে ভালোভাবে নজর রাখল। ওদের মুখের এমন অবর্ণনীয় এক্সপ্রেসনস বুঝতে পারল না ঠিক। 
‘আশ্চর্য!’
মোস্তফা সাহেব এবারো ছেলেকে বাঁকা চোখে পরখ করে নিয়ে বলেন, ‘আশ্চর্য তো বটেই। অসভ্য ছেলেমানুষ। একটুখানি মেয়ে আমার। হুম!’
তন্ময়ের মুখটা হা হয়ে আসে। তার পাগল হয়ে যাওয়া বাকি। তখনই হন্তদন্ত কদমে ঢোকেন আশরাফুল সাহেব। তন্ময়কে দেখেই তিনি আবেগে আপ্লূত হয়ে বলতে নিয়েই হেঁটে কাছে আসতে থাকেন,
‘আরেহ আমার রাজপুত্র! কেমন বোধ করছো? হা হা, কংগ্রাচুলেশনস টু ইউ ইয়ংম্যান। একজন চমৎকার বাবা হও সেই দোয়া করছি। আমাকে কিন্তু দিনাজপুরের মিষ্টি খাওয়াতে হবে বুঝছো?’
তন্ময়ের হাতের জুসের গ্লাসটা মুহুর্তেই পড়ে গেল। ফ্লোরে পড়ে ওটা শ'খানেক খণ্ডে ভেঙেচুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। শব্দ তুলল নীরবতা চিড়ে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


চলবে ...

৭৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা নাবিলা ইষ্ক সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন