উপন্যাস       :        তাজমহল প্রথম খন্ড
লেখিকা        :         প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১লা অক্টোবর, ২০২৫ ইং

লেখিকা প্রিমা ফারনাজ চৌধুরীর “তাজমহল - ১ম খন্ড” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৫ সালের ১লা অক্টোবর থেকে লেখা শুরু করেছেন।

তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী


তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী || প্রথম খন্ড (পর্ব - ২৫)

শাইনা তাজদারের বাহু থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেল। দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই তাজদার ধীরে মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালো। কণ্ঠটা ধারালো শোনাল,"আমি ধরার মতো ধরলে সেদিন তুমি আর বাঁচতে পারবে না শাইনা মমতাজ।"

শাইনা একটাও শব্দ না করে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর, নিঃশব্দে ফিরে এল। হাতে চায়ের কাপ। টেবিলে কাপটা রেখে বলল,

"ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। বড়আম্মু বলেছে চা খেয়ে দেখা করতে। জরুরি কথা আছে।"

তাজদার তাকালো কাপটার দিকে। ঠোঁটের কোণ থেকে একটুখানি ব্যঙ্গ উঠে এল,"ওখানে রাখলে খাব কীভাবে?"

শাইনা টেবিল থেকে কাপটা তুলে আনল, তার দিকে এগিয়ে দিল। কাপটা হাতে নিয়ে তাজদার অনেকক্ষণ ধরে কিছু ভেবে দেখল, তারপর নির্দ্বিধায় পুরো চা মেঝেতে ঢেলে দিল।

শাইনার মুখটা এক নিমিষে বিবর্ণ হয়ে গেল। সে থমকে দাঁড়াল, চোখদুটো বিস্ময়ে বড় হয়ে উঠল।
তাজদার কাপটা বিছানার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে পেছন ফিরে শুয়ে পড়ল, যেন কিছুই ঘটেনি।

চায়ের ছিটে পড়া গরম তরলটুকুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শাইনা।

তার কণ্ঠ কেঁপে উঠল,"আপনি চা ফেলে দিয়ে ভালো করেননি।"

কোনো সাড়া নেই তাজদারের। শাইনা অপমানিত বোধ করছে। সে সকাল সকাল চা বানিয়েছে দুধ চিনি ভালো করে দিয়ে।

চায়ের কাপটার দিকে তাকালো সে। অনেকক্ষণ চেয়ে রইলো।

তারপর কাঁপা হাতে চায়ের কাপটা তুলে তাজদারের দিকে তাকালো। তাজদার এখনো শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে।

শাইনার কণ্ঠ আরও একবার কেঁপে উঠল। কথা ঠোঁট ছুঁয়ে বেরিয়ে এল না চাইতেও,

"আপনি চা ঢাললেন কেন জবাব দিন। আমার সাথে এই ধরণের আচরণ করবেন না। আমি আর ছোট নেই। এটা কেন করলেন জবাব দিন।"

তাজদার ধীরে মুখ তুলল। চোখদুটো খেপাটে, রাগে দগদগে। চেহারাটা মুহূর্তেই বদলে গেল।
ভ্রু কুঁচকে, ঠোঁট চেপে ধরে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকাল শাইনার দিকে।

আঙুল তুলে সরাসরি দরজার দিকে ইশারা করল। বরফশীতল কণ্ঠে বলল,

"বের হও। তোমার সঙ্গে কথা বলার রুচি হচ্ছে না এখন। জাস্ট বের হও।"

শাইনা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইল।
তার চোখে জল নেই, কিন্তু মুখটা ঢেকে গেল গভীর কালো মেঘে।

অপমান, ঘৃণা আর অসহায়তায় মিলেমিশে আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘে ঢাকা আকাশের মতো রঙ ধারণ করলো গেল তার চেহারা।

হঠাৎ কোনো শব্দ ছাড়াই নিজের হাতে ধরে রাখা কাপটা সে মেঝেতে ফেলে দিল।

শব্দ হলো!

তাজদার হকচকিয়ে শাইনার দিকে তাকালো। চোখে জল, আগুন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শাইনা। হাতে কাপটা নেই। মেঝেতে পড়ে গিয়েছে। তাজদারের বিস্ময় বাড়লো। সে ধীরেধীরে বিছানা থেকে নেমে এল। শাইনা তার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

যার তাজদার সিদ্দিকীর মতো লোকের ত্রি সীমানায় প্রবেশের সাহস ছিল সে তার সামনে দাঁড়িয়ে তার চায়ের কাপ ভেঙেছে এটা দুঃসাহস বটে!

তাজদার কোনো কথা না বলে কাবার্ড খুলে তার একটা নেভি ব্লু রঙের শার্ট নিল। গায়ে চাপাতে চাপাতে শাইনাকে শান্তভাবে বলল,

"মেঝে পরিষ্কার করে নাও।"

শাইনা বেরিয়ে পড়ছিল। তাজদার সিদ্দিকী কটাক্ষের সুরে বলল,

"আকাশটা দিলেই হেঁটে চলার মাটিটা আর পছন্দ হয় না। এজন্যই বলে বেশি দিলে মানুষ বেমানুষ হয়ে যায়।"

শাইনা বেরিয়ে গেল। অমানুষ সে নিজেই।

কিছুক্ষণ পর রওশনআরা এল ঘরে। মেঝেতে কাপের অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখে তাজদারকে বলল,

"এটা কিভাবে ভাঙলো?"

তাজদার ল্যাপটপটা চার্জে দিতে দিতে মায়ের দিকে তাকালো। কিছু বললো না। মা উত্তরটা জানে।

শাইনা রওশনআরার পিছু পিছু ঘরে ঢুকে এলেন। কাপের ভাঙা অংশগুলো কুড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল।

রওশনআরা কপাল কুঁচকে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলো। তাজদার এখনো মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পকেটে একহাত গুঁজে। রওশনআরা হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লেন। বেরিয়ে যাওয়ার সময় বললেন,"এরকম করলে ও জীবনেও তোমার সাথে কোথাও যেতে চাইবে না। তুমি ছোট নও। সব বোঝো। ওদের বাড়িতে এসব কথা গেলে ওরা কি মনে করবে? এইসব ছোটখাটো বিষয় থেকেই বড় ঝামেলা শুরু হয়। এই ঘটনার পর ও আর তোমার সাথে কক্সবাজার যাবে?"

তাজদার এবার মায়ের দিকে ফিরলো।

"না গেলে ওর বাপের বাড়িতে চলে যেতে বলো। এখানে থাকতে হলে আমার কথার দাম দিতে হবে।"

"ও আমাকে বলে দিয়েছে ও আর যাবে না কক্সবাজারে। আমার কি বলার আছে এখানে? আমি ওকে জোর করতে পারব না। তুমি চা ঢেলে দিয়ে ভুল করেছ। পরের মেয়ের সামনে এসব করলে সে আপন ভাববে না।"

শাইনা তখুনি ঘরে এল। তাজদার তার দিকে তাকালো। তারপর চোখ সরিয়ে নিল। রওশনআরা শাইনাকে বললেন,

"একটু ঝাড় দাও। ছোট ছোট ভাঙ্গা অংশ থাকতে পারে। আর কক্সবাজার যাওয়া নিয়ে তাজদারের সাথে কথা বলো।"

বলেই তিনি বেরিয়ে গেলেন।

শাইনা ঘরটা ঝাড়ু দিল। ফ্লোর মুছলো। বালতিটা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তাজদার বলল,

"বিকেলে বাড়ি এসে আমি যেন দেখি স্যুটকেস গোছানো আছে। যাচ্ছি না টাইপ কথা আমি শুনতে চাইনা। যদি দেখি কেউ কথা অমান্য করছে তাহলে কেলেংকারি ঘটবে এখানে।"

শাইনা একটু থামলো। তাজদারের বলা শেষ হতেই সে বেরিয়ে গেল।

___________

শাইনা বিকেলে তাদের বাড়িতে গিয়েছে। সাথে তিতলিও ছিল। তার বড় ভাইয়ের বাচ্চাটার জ্বর। তাকে দেখতে ছুটে এসেছে সে। শাহিদা বেগম বললেন রাতে খেয়ে যেতে। তিতলি বলল, ওরা তো বেড়াতে যাবে। ভাইয়া তার এক স্যারের বাড়িতে গিয়েছে। ওখান থেকে এসে কক্সবাজারে রওনা দেবে।

শাহিদা বেগম খুশি হয়ে বললেন, তাহলে তো ভালোই। শাইনা তার ভাইপোকে কোলে নিয়ে আদর করছিল তখন। দাদীমা বললেন,

"ও শানু আমাদের জন্য আচার আনিস।"

শাইনা বলল,"আমার হাতে এখন টাকাপয়সা নেই। পারব না কিছু আনতে।"

শাহিদা বেগম গল্প করতে করতে চা বসালেন। চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার সময় খবর এল তাজদার এসেছে।

তিতলি দ্রুত চা খেয়ে শাইনাকে বলল,"চলো।"

শাইনা বলল,"তুমি যাও, আমি আসছি।"

"না ভাইয়া আমাকে বকবে। চলো।"

শাইনা তাকে জোর করে পাঠিয়ে দিল। শাহিদা বেগম তার হাতে এক হাজার টাকা গুঁজে দিয়ে বলল,"ইচ্ছে হলে কিছু কিনিস ওখান থেকে। এটা রাখ।"

শাইনা টাকাটা নিয়ে চলে এল। বাড়িতে এসে নিজের ঘরে গিয়ে দেখলো তাজদার সিদ্দিকী যেটা পাচ্ছে হাতের কাছে সেটাই এলোমেলো ভাবে ভরছে স্যুটকেসে। শাইনা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে চুপচাপ চেয়ে রইলো। তাকে দেখামাত্রই তাজদার বলল,

"এখন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়ানোর সময়?"

শাইনা তার হাত থেকে স্যুটকেসটা নিয়ে নিল। তারপর সব কাপড় একে একে টেনে বের করলো। তারপর নিজের পছন্দমতো কাপড়চোপড় ভরে নিল। তাজদার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো। রওশনআরা এসে বলল,

"তোমাদের জন্য কিছু খাবার প্যাক করে দেব?"

তাজদার সাথে সাথে বলল,"না।"

"সাবধানে যেও। পানিতে বেশি নেমো না। শাইনা বেরোনোর আগে তোমার শ্বশুরকে একবার দেখা দিয়ে যাবে।"

শাইনা মাথা দোলাল।

তাজদার হ্যাঁচকা টান দিয়ে স্যুটকেসটাকে এককোণায় ফেলে রাখলো। শাইনা দাঁড়িয়ে তার কাজকর্ম দেখতে লাগলো। তাজদার তার দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল। বলল,

"এইসব ড্রেস পড়ে ওখানে যাওয়া যাবে না। চেঞ্জ করো।"

শাইনা বলল,"আমার পছন্দমতো ড্রেস পরেই আমি যাব।"

"এইসব সেলোয়ার-কামিজ পরে?"

"তাহলে কি নাইটি পরে যাব?"

"নাইটিতে অনেক ভালো দেখাবে এগুলোর চাইতে। এগুলো কে দিয়েছে? আমার তো মনে পড়েনা এই ধরণের থ্রিপিস আমি কিনেছি।"

শাইনা বেরিয়ে যাচ্ছিল। তাজদার বলল,

"ড্রেস চেঞ্জ করো।"

শাইনা বলল,"বের হোন।"

তাজদার হকচকিয়ে গেল। শাইনা তার দিকে তাকিয়ে বলল,"আপনার সামনে নিশ্চয়ই আমি চেঞ্জ করবো না?"

তাজদার বেরিয়ে গেল। শাইনা একটা নতুন পাকিস্তান তাওয়াক্কাল পরে নিল। তাজদার দরজা ধাক্কালো। শাইনা দরজা খুলে দিতেই তাজদার ঘরে ঢুকে এসে বিড়বিড়িয়ে বলল,

"রেডি হয়ে থাকলে এতক্ষণে বেরিয়ে যেতে পারতাম। কোনো কথা কানে নেবে না।"

শাইনা চুল আঁচড়াচ্ছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে। তাজদার হাতের কব্জিতে ঘড়ি পরতে পরতে শাইনার দিকে তাকালো। শাইনা তাকে তাকাতে দেখে ওড়না টেনে নিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলো। ওভাবে ওড়না টেনে নেওয়াটাই তাজদার সিদ্দিকীর জন্য অপমান। যার দিকে ছোটবেলায় ভুলেও ফিরে তাকাতো না সে এখন অহংকার দেখায় নিজের রূপ নিয়ে। তাজদার সিদ্দিকী অনেক সহ্য করেছে। এতদিন সে ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছিল তারমানে এই নয় যে সে শাইনা মমতাজের সব ত্যাড়ামো মেনে নেবে। তাকে তার জায়গাটা বুঝিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে।

শাইনা ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে মাথা কাপড় টানলো। জুতোটা পায়ে দিয়ে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে গেল। চাচী, ফুপু শ্বাশুড়ি সবাইকে বলে এল সে বেরোচ্ছে। শ্বশুরকেও দেখা দিয়ে এল। তিতলি বলল, তার জন্য এটা ওটা আনতে হবে।

রওশনআরা বেরোনোর সময় শান্তভাবে বললেন,"ও ওর দাদার স্বভাব পেয়েছে। কথার ধরণ ওরকম। তুমি সবকিছুতে মাইন্ড করলে কষ্ট পাবে।"

শাইনা চুপ করে শুনলো। পাল্টা কিছু বললো না।

তাজদার গাড়ির কাছে দাঁড়িয়েছে। ওই বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে সবাই তাকে দেখছে। তাজদার বিরক্ত হয়ে বলল,

"এতক্ষণ লাগে বেরোতে? এতক্ষণ কি করছে ওখানে?"

শাইনা বেরিয়ে এল। উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকা মা বোনদের দিকে একবার তাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।

কক্সবাজার পৌঁছাতে তাদের সাড়ে তিন ঘন্টার মতো সময় লেগেছে। শাইনা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তারা ইনানি ও হিমচরির নিকটবর্তী একটি অভিজাত রিসোর্ট মারমেইডে উঠেছে। শাইনা কাপড়চোপড় নিয়ে শুয়ে পড়েছিল রুমে ঢুকে।

প্রায় দুই ঘণ্টার মতো ঘুমিয়েছিল শাইনা। কিন্তু তাজদার তাকে বেশিক্ষণ ঘুমাতে দিল না। টেনে তুলে আনলো বাইরে, রিসোর্টের সামনের ফাঁকা বীচে। শাইনা তখনও আধো ঘুমে, চোখের পলকে অলসতা। চারপাশটা স্বপ্নের মতো ঝাপসা লাগছিল। তাজদার তাকে নিয়ে চলে এল সমুদ্রের পাড়ে।

চাঁদের আলোয় সমুদ্রের ঢেউগুলো রূপোলী আলোর মতো ঝলমল করছে। ফুরফুরে বাতাস গায়ে এসে লাগছে। পায়ের নিচে নরম, স্নিগ্ধ বালু। মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা হয়ে আসা পানির ছোঁয়ায় কেঁপে উঠছে শরীর।

দূরের আকাশজুড়ে তারা ঝিকিমিকি করছে, ঢেউয়ের একটানা শব্দে মন ভরে যাচ্ছে।

চারপাশে কোনো কোলাহল নেই। শুধু এই রাত, সমুদ্র, আর অদ্ভুত ভালো লাগা। শাইনার চমৎকার লাগছিল। মনে হচ্ছিল, সময় যদি থেমে যেত এইখানে। কিন্তু হঠাৎই তার চোখ আটকে গেল তার পেছনে হাঁটতে থাকা লম্বা ছায়ায়। তাজদার সিদ্দিকীকে দেখামাত্রই তার ঠোঁট থেকে হাসিটা মুছে গেল। তাজদার সিদ্দিকী তার পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলল,

"তুমি হয়তো ভাবছো এত সুন্দরের মাঝখানে এই অসুন্দর জিনিসটি কি করছে? অ্যাম আই রাইট?"

শাইনা জবাব দিল না। তাজদার হেঁটে চলে যেতে যেতে বলল,

"আমিও ঠিক একই কথা চিন্তা করছি শাইনা মমতাজ। চারপাশে এত সুন্দরের ছড়াছড়ি আর আমি ডুবলাম পঁচা ডোবায়। Congratulations to me for being today’s biggest disappointment!"

শাইনা বলল,"কাপটা ভেঙে আমি ভুল করেছি। সেটা কাপের মালিকের কাছে স্বীকারও করেছি। আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনা এটা আমার দোষ।"

তাজদার সিদ্দিকী থেমে গেল। অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালো। সরু চোখে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর আচমকা ঠোঁটের কোণায় তীর্যক হাসি টেনে বলল,

"তোমার শ্বাশুড়ি শিখিয়ে দিয়েছে এইসব কথা?"

শাইনা বলল,

"জি, উনি শিখিয়ে দিয়েছেন আমি যাতে আপনার সাথে রাগারাগি না করি। আপনি লন্ডনে যাওয়ার আগপর্যন্ত যেন নিজের শান্ত রাখি। আজ থেকে সেটাই হবে। নিজের ভালোর জন্য এটুকু শান্ত আমি থাকতেই পারি।"

তাজদার দাঁত কটমট করে, রাগের অগ্নি বুকে নিয়ে তাকালো তার দিকে। শাইনা নিজ জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে তাজদারের দিকে তাকালো। তাজদার কর্কশ স্বরে বলল,

"তোমাকে বিয়ে করে আমি পস্তাচ্ছি। তুমি আমাকে অশান্তিতে রেখেছ। তুমি সারাদিন ফন্দি আঁটো কিভাবে আমাকে শায়েস্তা করা যায়। তোমাদের মতো ছোটলোকদের সমস্যা একটাই। ভালো কিছু দিলে সহজে গিলতে পারেনা। তুমি আমাকে ডিজার্ভ করো না। তুমি ছোটলোক, তাই তুমি একটা ছোটলোককে ডিজার্ভ করো। আমাকে তুমি ভাগ্যের জোরে পেয়েছ। তুমি কখনো কল্পনা করতে পেরেছ আমার পাশে দাঁড়াতে পারবে এভাবে? And My touch? That’s something you’ll never have. Maybe that’s why you’re like this."

শাইনা চলে যাচ্ছিল হেঁটে। তাজদার তাকে একঝটকায় টেনে আনলো তার সামনে।

"কথা বলার সময় এভাবে এড়িয়ে যাবে না।"

শাইনা বলল,

"তাহলে এটাও শুনুন, আমি এমন কাউকে ডিজার্ভ করি যে আজকে এই মুহূর্তে আমার পাশে থাকলে পৃথিবীটা আমার কাছে স্বর্গ মনে হতো। আপনাকে আমি ডিজার্ভ করিনা। আপনার মতো লোককে আমি কেন কোনো মেয়েই ডিজার্ভ করেনা। আমি একটা ছোটলোক। আপনাকে, আপনার স্পর্শ কোনোটাই আমি নিতে পারছিনা কারণ আমার সেই যোগ্যতায় নেই। এবার আপনি খুশি?"

___

তাসনুভা তার আইফোনটা হারিয়ে ফেলেছে। পাগলের মতো খুঁজছে। তার বান্ধবীরাও তন্নতন্ন করে ফোনটা খুঁজছে। তাদের সাথে আরও একদল পর্যটক ছিল। তাদের জিগ্যেস করা হচ্ছে তারা একটা ফোন পেয়েছে কিনা।

একটা লোককে বাজেভাবে জেরা করছে তাসনুভার বন্ধুগুলো। লোকটা হতভম্ব! সে ফোন চুরি করতে এসেছে কক্সবাজারে? এরা তাকে চেনেনা, জানেনা। এমন কথা বলে কি করে? কি বেয়াদব আজকালকার ছেলেপেলেরা। মনে হচ্ছে বিশ্বিবদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী। কিন্তু এত অভদ্র কেন?

তাসনুভার বন্ধুবান্ধবরা বলল, আঙ্কেল আপনি ছিলেন আমাদের পেছনে। আর কেউ ছিল না এখানে। দেখেন ফোনটা যদি পেয়ে থাকেন দিয়ে দেন। এভাবে একটা ফোন তো আর হাওয়া হয়ে যেতে পারেনা। আমাদের ব্যাগগুলো ওখানে রাখা ছিল। আপনি তার আশেপাশে ছিলেন।

সন্দেহ করার আরও একটা কারণ আছে। তাদের কেন যেন মনে হচ্ছিল এই লোকটা তাদের ফলো করছিল অনেকক্ষণ ধরে। তাসনুভা ব্যাপারটা আরও বেশি খেয়াল করেছে। লোকটা তার দিকে কেমন একটা দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। এই লোকটা নিশ্চয়ই অজ্ঞান পার্টির লোক হবে। তার বন্ধু বান্ধবরা এইসব শুনে লোকটার পেছনে পড়েছে। লোকটা রীতিমতো অতিষ্ঠ ঠিক সেইসময় একজন পেছন থেকে বলল,"স্যার চলুন ডিনারের সময় হয়ে এসেছে। আপনি বিকেলে কিছু খাননি।"

লোকটা যেন ছেলেটাকে দেখে সাহস পেল। বলল,"আনিস দেখো না এরা আমাকে ডাইরেক্ট চোর বানিয়ে দিয়েছে।"

আনিস কপাল কুঁচকে তাকালো। তাসনুভা তাকে দেখে হকচকিয়ে গেল। এটা এখানে কি করছে? আর ইনি স্যার? স্যার দেখতে এরকম? মনে হচ্ছে কতদিন খেতে পায় না।

আনিস রুক্ষ স্বরে বলল,

"যে চোর বলেছে তাকে আমার সামনে ঠাস ঠাস করে চড় বসিয়ে দিন। না জেনে এরা কথা বলে কি করে?"

তখুনি তাসনুভাকে দেখলো সে। কপাল কুঁচকে গেল। তাসনুভা কানের পেছনে চুল গুঁজতে গুঁজতে বন্ধুদেরকে বলল,

"চল এখান থেকে।"

আনিস কাঠকাঠ গলায় বলল,"সরি না বলে কেউ এখান থেকে সরবে না।"

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


 Follow Now Our Google News



চলবে ...

২৬তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিমা ফারনাজ চৌধুরীর গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা প্রিয়া ফারনাজ চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। কল্পনার ভূবনকে শব্দে রুপ দিতে লেখালেখির জগতে তার পদচারণা শুরু হয়েছে ২০২১ সালের মার্চ মাসে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রিমা পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত আছেন অনলাইনভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং পেশায়। ‘প্রিয় বেগম’ উপন্যাসের মাধ্যমে তার পরিচিতি বেড়েছে। ২০২৪ সালের একুশে বইমেলায় তার প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছে যা পাঠকদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। শব্দের জগতে তার পথচলা এখনো চলমান। ভবিষ্যতে আরও পরিপক্ক, আরও বৈচিত্রময় লেখালেখির মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিতে চান তিনি।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন