আলোচনা : সভ্য হতে সমকামিতা বৈধ করতে হবে
লেখিকা : তসলিমা নাসরিন
মাধ্যম : ফেসবুক
প্রকাশকাল : ২৪ মার্চ, ২০২২
![]() |
সভ্য হতে সমকামিতা বৈধ করতে হবে || তসলিমা নাসরিন |
সভ্য হতে সমকামিতা বৈধ করতে হবে || তসলিমা নাসরিন
তসলিমা নাসরিনের “সভ্য হতে সমকামিতা বৈধ করতে হবে” শিরোনামের এই আলোচনাটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টের দেয়াল থেকে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে অপ্রাপ্ত বয়সী দুই কিশোরী আঁখি ও বিলকিস ভালোবেসে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা দুই বছর প্রেমের সম্পর্কে ছিলো। এতে সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এমন ঘটনার প্রেক্ষাপটেই এই আলোচনামূলক নিবন্ধটি লিখেছেন প্রথাবিরোধি নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
সভ্য দেশগুলোয় সমকামিতা বৈধ, সমকামীদের বিয়ে বৈধ, সমকামীদের সন্তান দত্তক নেওয়া বৈধ, সেই সন্তানের উত্তরাধিকার বৈধ। সভ্য হতে হলে এ সবই বৈধ করতে হবে।
নারী পুরুষের সম্পর্কই শুধু প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক, তা ঠিক নয়। যা প্রকৃতিতে বিরাজ করে, তা-ই প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক। প্রকৃতিতে সমকামিতার অস্তিত্ব আছে, তাই এটি প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক। প্রকৃতিতে উভকামিতার অস্তিত্বও আছে, তাই উভকামিতাও প্রাকৃতিক এবং স্বাভাবিক। বলতে পারো বিষমকামিতা বা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষণের সংখ্যা বেশি। যে কামিতা সংখ্যায় বেশি শুধু সেটিকে স্বাভাবিক বলবে, আর যে কামিতা সংখ্যায় কম, সেটিকে অস্বাভাবিক যদি বলো, তাহলে তুমি মূর্খ ছাড়া কিছু নও। মূর্খদের দাবি অনুযায়ী দেশের আইন আর সমাজের নিয়ম চললে সেই আইন এবং নিয়ম দুটোই হয় মূর্খ।
সরকার তার মূর্খামি ত্যাগ করে অতি দ্রুত সমকামীদের প্রাপ্য অধিকারে বাধা প্রদান বন্ধ করুক। বিষমকামীদের যা অধিকার, সমকামীদের একই অধিকার। পুরুষের যা অধিকার, নারীরও একই অধিকার। আসল কথা, মানুষের অধিকার সর্বত্র থাকা চাই এক এবং অভিন্ন।
সমকামীরা যদি একত্রবাস করতে চায়, তাদের একত্রবাসে যেন মূর্খ সমাজ বাধা না দেয়, যদি বিয়ে করতে চায়, তাদের বিয়েতে এবং বিবাহত্তোর জীবন যাপনে যেন মূর্খ সমাজ বাধা না দেয়, সরকারকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। ধর্মে, লিঙ্গে, বিশ্বাসে, যৌন-আচরণে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।
সাহসী মেয়ে আঁখি আর বিলকিস অসভ্য সমাজকে সভ্য বানানোর ইতিহাস তৈরি করুক।
কবি সংক্ষেপ : জনপ্রিয় প্রথাবিরোধী লেখিকা তসলিমা নাসরিন ১৯৬২ সালের ২৫ আগষ্ট ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৭৮ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে এমবিবিএস পাস করেন। তসলিমা নাসরিন ১৯৯৪ সাল অবদি চিকিৎসক হিসেবে ঢাকা মেডিকেলে কর্মরত ছিলেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে লেখালেখি নয়তো চাকুরি ছাড়তে বললে তিনি লেখালেখি ছাড়েন নি। বরং সরকারি চিকিৎসকের চাকুরিটিই ছেড়ে দেন তিনি। তখন এই লেখিকাকে কেন্দ্র করে উগ্র মৌলবাদীদের আন্দোলনে উত্তাল ছিলো পুরো দেশ। বেশ কিছু মামলাও হয়েছিলো তার বিরুদ্ধে। শেষে এককথায় বাধ্য হয়েই দেশত্যাগ করেন নারীমুক্তির অন্যতম অগ্রপথিক তসলিমা নাসরিন। এরপর তিনি নির্বাসিত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন