আত্মকথন              :          ঈদ জামা
লেখক                    :          সোয়াতি নিজ্জানান
প্রকাশকাল             :          ০২ মে, ২০২২

ঈদ জামা || সোয়াতি নিজ্জানান
ঈদ জামা || সোয়াতি নিজ্জানান

ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এই কথাটার বাস্তব রুপ আংশিক হলেও বাংলাদেশে কেবল ঈদের সময়ই দেখা যায়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে আনন্দ নিয়ে উদযাপন করে দিনটি। এমন খুশির দিনের স্মৃতি প্রায় সবাই মনসপটে জিইয়ে রাখে। ঈদের আনন্দের প্রসঙ্গ আসলে সেখানে বয়স একটা বিষয়। প্রাপ্তবয়স্ত প্রায় সবার কাছেই ঈদ মানে শৈশবের স্মৃতি। যদিও সবার যে ভালো স্মৃতি থাকে, তা নয়। তবে স্মৃতিকাতর হওয়ার মতো ঈদ প্রায় সবার জীবনেই আসে। ঈদ আনন্দের এমন স্মৃতি নিয়েই কবিয়াল'র আয়োজন 'আমার ঈদ'। এ আয়োজনে আজ প্রকাশিত হলো সোয়াতি নিজ্জানানের স্মৃতির এক টুকরো 'ঈদ জামা'।

ঈদ জামা || সোয়াতি নিজ্জানান


ছোট বেলায় আমাদের জামা কেনা হতো চাঁদ রাতে। কারন আব্বা টাকা পেতই চাঁদ রাতে। একবার এই ধরুন ক্লাস থ্রি কি ফোর, আব্বা আমার জন্য ৫০০টাকা বরাদ্দ করলো জামা কেনার জন্য। আমি মহাখুশি। জামা কিনবো! আম্মা, ফুফা আর আব্বার সাথে ২ ভাই-বোন মার্কেটে গেলাম। জামা কিনলো আম্মা আমার জন্য ৪০০ টাকা দিয়ে। এখন জুতাতো আর ১০০টাকায় হয়না! ভাইয়ের বাজেট থেকে ৫০ টাকা নিয়ে একটা জুতা ১৫০ তে আরামছে এসে গেলো। ভাই আমাকে ভিষন ভালোবাসত, তার কোন অভিযোগ নাই সেই বিষয়ে। আমিও মহাখুশি, গোটা পাড়া জামার খবর দিলাম। কিন্তু অনিষ্ট ঘটলো গিয়ে আমার বাসার পাশের বন্ধু মিম যখন তার ড্রেস দেখালো, সেই জামা দেখে আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেলো! কি সুন্দর স্টোনের কাজের জামা! লাইটের আলোয় চকমক করে উঠলো। সাথে সাথে আমার চোখও চকমক করতে থাকলো। জামার দাম জানতে চাইলে সগৌরবে উচ্চ কন্ঠে মিম বললো ১৩০০টাকা।

বাসায় দিলাম ভোঁ-দৌড়। এসে আম্মার পাশে চুপচাপ বসলাম। আম্মা মনোযোগ সহকারে মশলা বাটছে। বিদ্যুৎ নেই, তাই মা মোম জ্বালিয়ে মসলা বাটছে। আম্মা ঘামতেছে অনবরত। আম্মার ঝাড়ির ভয়ে গলা যথাসম্ভব মলিন করে বললাম--

- মা মিমের ঈদের জামা দেখছো?
- না, কেনো?
- কি সুন্দর জানো, লাইটের আলোয় ঝকমক করছিলো একদম। (বিবরন দিতে থাকলাম)
(মা চুপ করে মসলা বেটে যাচ্ছে)
- (ভয়েভয়ে আরও আহ্লাদী কন্ঠে) মা আমারে অমন একটা জামা কিনে দাওনা। কি সুন্দর জামা।
- দাম কতো?
- ১৩০০ বললো ও।
- বাপরে... আমাদের সবার বাজেটও তো ১৩০০ হয়নাই মা। ওরা বড়লোক মা, কতোকিছু করে, আমরা এতো টাকা কই পাবো?

আমার মনে সকল ঘটনা থাকলেও, সেসময় আমার মনের অবস্থা, রাগ, কষ্ট বা কি ছিলো আমার মনে নেই। শুধু মাথায় আসছিলো, মিমরাকি অনেক বড়লোক? হতেও পারে, আমরাতো অন্যের বাসায় ভাড়া থাকি। ওদের নিজের বাসা, ভাড়াটিয়া ও আছে। তারমানে ওরা বড়লোক। ঐগুলা বড়লোকদের জামা তাহলে?

আমি কতোক্ষন চুপচাপ বসে মাকে ধুম করে বললাম
 - "আচ্ছা মা, তাহলে কি আমরা ছোটলোক? আর মিমরা বড়লোক?"

আম্মা আমার কথার কোন উত্তর দিয়েছিলো কিনা আমার মনে নেই। মাকে বলেছিলাম "আমি বড় হলে তোমাকেও চাকরি করে একটা ১৩০০টাকার জামা কিনে দিবো মা"
মা কিছু বললো না, সে অনবরত মসলা বেটেই যাচ্ছে। আমার হঠাৎ মনে হলো, মায়ের কপাল বেয়ে যে ঘামের বিন্দুগুলো পরে যাচ্ছে, মোমের আলোয় তা মিমের ১৩০০ টাকার দামি জামার মতোই চকচক করছে।


লেখক সংক্ষেপ : 

কবিয়াল

কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন