উপন্যাস        :          শিমুল ফুল
লেখিকা         :          জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর
গ্রন্থ              :         
প্রকাশকাল      :         
রচনাকাল       :         

লেখিকা জাকিয়া সুলতানা ঝুমুরের “শিমুল ফুল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ০৯ সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
শিমুল ফুল || জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর
শিমুল ফুল || জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

১৮তম পর্ব পড়তে এখানে ট্যাপ/ক্লিক করুন

শিমুল ফুল || জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর (পর্ব - ১৯)

শিমুলের মুখের আদল লাল বর্ণ ধারন করেছে চোখ দেখাচ্ছে ভেজা। ঘরে ঢুকে ড্রয়িংরুমের সামনে রাখা বায়ান্ন ইঞ্চি টিভি ধরাম করে ফ্লোরে আছড়ে ফেলে দেয়। বিকট শব্দে টিভিটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সবাই রাতের খাবার খাচ্ছিলো হঠাৎ শব্দে চমকে তাকায়। মিজান শেখের সাথে হওয়া ঘটনাটা সবাই জানে।শওকত হাওলাদার বিচলিত হলেন না, শান্ত চোখে ছেলেকে পরখ করে।

শিমুলের রাগ তখন পারদ সীমার বাহিরে যার তাপ সবাই পাচ্ছে। শিমুল ড্রয়িংরুমে যা যা ভাঙ্গার মতো ছিলো সব ভেঙে ফেলে। ছোট ছোট কাচের টুকরো ছিটকে হাতে বিধে রক্ত আসে শিমুলের সেদিকে খেয়াল নেই। রাবেয়া ছেলেকে ধরতে আসলে শিমুল ধরতে দেয় না। দ্রুত পায়ে খাবার টেবিলের সামনে দাঁড়ায়। শওকত হাওলাদারকে বলে, "আপনাকে আমি সম্মান করে পছন্দের কথা জানিয়ে ছিলাম আর আপনি কি করলেন আমার পছন্দকে অসম্মান করলেন? পুষ্পর আব্বাকে অপমান করলেন?"

শওকত হাওলাদার নির্বিকার হয়ে খাবার খাচ্ছে, এমন ভাব যেন কিছুই হয়নি। শিমুল আবার বলে, "আপনি মিজান চাচাকে অপমান করলেন কেন?" শওকত হাওলাদার শিমুলের দিকে তাকায়। "লোভী লোকদের অপমান করাই মানায়।"

শিমুল চেঁচিয়ে বলে, "আপনি লোভী।"

শওকত হাওলাদার শাসিয়ে বলে, "শিমুল কি বলো মাথা ঠিক আছে? মিজান এটার যোগ্য তার মেয়েকে তোমার পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। বলো দেয়নি?"

"না দেয়নি। বরং আমি নিজেই পুষ্পকে চাই। আর আমি চাই বলেই পুষ্পকে বিয়ে করবো। খুব শীঘ্রই।"

শওকত হাওলাদার মুচকি হাসে। শিমুলের সাথে পুষ্পর বিয়ে? তিনি তো মিজানের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। আর এটাও ভালো করে জানেন মিজান যেভাবেই হোক এক সাপ্তাহর মাঝে পুষ্পর বিয়ে দেবে। শিমুলের দিকে তাকিয়ে বললো, "সেটা কখনো সম্ভব না।"

"সম্ভব না হলে কিভাবে সম্ভব করতে হয় জানা আছে।"

শওকত হাওলাদার বললো, "আচ্ছা।দেখা যাক।"

শিমুল রাগে খালি চেয়ারে লাথি দিয় চেয়ার উল্টো হয়ে ছিটকে পড়ে। তারপর আবার হনহন করে বেরিয়ে যায়। শিমুল সেদিন রাতেই তিয়াসকে সাথে নিয়ে ইউসুফ আব্দুল্লাহ সাহেবের বাড়িতে যায়। এতো রাতে শিমুলকে দেখে তিনি অবাক হলেও তা মুখে প্রকাশ করেনা।হাসিমুখে বলে, "কি ব্যাপার শিমুল?"

তার আব্বার উদ্যেশ্য তার অজানা নয়। উনার সাথে চলতে চলতে গুটির নড়চড় বুঝে ফেলেছেন। এমপির সাথে সম্পর্ক করে যে নিজের ক্ষমতা বাড়াতে চাইছেন এটা স্পষ্ট। শিমুল আলতো করে হাসে। চেহারার টেনশন লুকিয়ে বলে, "আংকেল, একটা রিকোয়েস্ট ছিলো।"

শিমুলের কাছে ভাগনী বিয়ে দিবেন বলে ঠিক করেছেন আর এর আগে শিমুলের কি রিকোয়েস্ট থাকতে পারে তিনি বুঝতে পারেন না। "বলো।"

শিমুল বললো, "আসলে আংকেল আমার একটা মেয়ের সাথে রিলেশন আছে। আপনি বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াতে আব্বা রাজি হয়ে গেছে। আমার মতামতের কোনো প্রয়োজন মনে করেনি। আসলে আপনার সাথে সম্পর্ক থাকলে উনার ক্ষমতা বাড়বে এই আশা করছেন।"

ইউসুফ সাহেব শিমুলের দিকে তাকিয়ে থাকে। শওকত সাহেবকে তিনি এমনভাবে আশা করেননি। ক্ষমতার লোভ সবারই থাকে তাই বলে ছেলের ইচ্ছা, পছন্দকে গুরুত্ব না দিয়ে ক্ষমতার লোভে বিয়ে ঠিক করে দিবেন? ভাগ্যিস শিমুল বলেছে তা না হলে আজকাল কার ছেলেমেয়ের ইচ্ছার বিরোদ্ধে বিয়ে দিলে পরবর্তীতে সেটা বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াতে দেরী হয় না। ইউসুফ সাহেব শিক্ষিত মানুষ, শিমুলকে পছন্দ হয়েছে বিধাই বিয়ের আলাপ করেছিলো এখন যেহেতু শিমুল নিজেই বলছে তার পছন্দের মানুষ আছে তাহলে প্রশ্নই উঠে না বিয়ের কথা এগুনোর। উনি মুচকি হেসে বললো, "তুমি কি এইজন্য'ই এসেছো শিমুল।"

শিমুল উনার মুচকি হাসি দেখে বিব্রত হয়। কিন্তু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। "আজকালকার জেনারেশনে ছেলেমেয়ের ইচ্ছার প্রাধান্য দেয়া জরুরী। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।"

শিমুল উনার দিকে কৃতজ্ঞতার চোখে তাকায়।তারপর বলে, "আংকেল আরেকটা কথা।"

"বলো।"

"আপনি একটু কষ্ট করে আব্বাকে ফোন দিয়ে এটা বলবেন যে, আপনার মতো লোভী মানুষ আমি আগে কখনো দেখিনি। যেই আশায় বিয়ে দিতে চাইছিলেন তা পুরন হবে না। আর আপনার মতো ছোটলোলের সাথে সম্পর্ক করতে পারবো না। ছেলের ইচ্ছার প্রাধান্য দিন।"

শিমুলের কথা শুনে ইউসুফ সাহেব হাসে। "এভাবে বললে তোমার বাবা কষ্ট পাবে না?"

"পাওয়া দরকার। উনি মানুষকে দাম দিতে যানে না।"

শিমুল রাত দুইটার দিকে বাড়িতে যায়। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। শিমুলের বুকটা চিনচিন করে ব্যাথা করে। বারবার পুষ্পর কান্নারত গলায় তাকে ডাকগুলো, হাহাকারগুলো মনে পড়ছে।তার জন্য কতো কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা? শিমুল বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে। খুব অশান্তি লাগছে, অজানা জ্বলনে সারা শরীর জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে। শিমুলের মনে হলো পুষ্পর কাছে গেলে শান্তি লাগতো কিন্তু আজকে এতো কিছুর পর আর যাওয়ার সাহস হয় না।যদি আবার মা*রে।

শিমুল চলে যাবার পরে মিজান শেখ চেয়ারম্যানের বলা সবগুলো কথা রোকসানা আর মুন্নীর কাছে বলে। বলতে বলতে এক পর্যায়ে কেঁদে দেয়। "এই জন্য মেয়ে জন্ম দিয়েছিলাম? বাবা হয়ে এতো নোংরা কথা শুনার ছিলো আমার?"

পুষ্প সব শুনে। কিন্তু নির্বিকার হয়ে শুয়ে থাকে। ইতোমধ্যেই সারা শরীর ফুলে উঠেছে। রাতে মুন্নী আসে পুষ্পর সাথে ঘুমাতে। পুষ্প চুপচাপ শুয়ে থাকে তার ঘুম আসেনা, শরীরের ব্যাথা মনের ব্যাথা সব মিলিয়ে নিঝুম রাতের নিস্তব্ধতায় হু হু করে কেঁদে দেয়। প্রেমে এতো যন্ত্রনা কেন? আর এতো যন্ত্রনা হওয়ার থাকলে বিধাতা প্রেম কেন সৃষ্টি করেছেন? কিছুক্ষণ পরেই পুষ্পর গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে। মুন্নীর গাঢ় নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে বুঝতে পারে তার বোন ঘুমিয়ে গেছে। এতো মারের পরেও পুষ্প উঠে বসে, খুবই আস্তে-ধীরে বিছানা থেকে নামে, মুন্নীর বালিশের কাছে থেকে মোবাইলটা তুলে নেয়। রাতে আপাকে একবার লক খুলতে দেখেছিলো। পুষ্প চেষ্টা করে দেখে খুলেছে। তারপর তার আপার দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে শরীর নাড়িয়ে বাথরুমে ঢুকে যায়। তার মনে হচ্ছে শিমুলের সাথে কথা না বললে সে মরে যাবে। প্রেমের একি নেশা! এতো মা*র খাওয়ার পরেও ছাড়ে না, যেন আরো চেপে ধরে নিউরনে নিউরনে ছড়িয়ে দেয় যন্ত্রনাদায়ক বিষ। পুষ্প শিমুলের নাম্বার টাইপ করে ডায়াল করে। শিমুল তখন পুষ্পর ছবিগুলো দেখছিলো। এতো রাতে অচেনা নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকে রিসিভ করে।
গম্ভীর গলায় বলে,
"হ্যালো।"

শিমুলের গলার স্বর শুনে পুষ্প ঠোঁট উল্টে কেঁদে দেয়।শিমুল কান্নার শব্দ শুনেই বুঝতে পারে এটা তার প্রানপাখিটা।
"জান,"

বাথরুমে আস্তে কথা বললেও বেশি শব্দ হয় তাই পুষ্প ফিসফিস করে বললো,
"আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাওনা।আমি আর এখানে থাকবো না।"

পুষ্পর কান্না শুনে শিমুলের শরীরটা কেঁপে উঠে।গভীর চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি।গলাটা জড়িয়ে আসে,

"তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে পুষ্প?"

পুষ্প শিমুলের কথা শুনে বলে,
"খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি তোমার কাছে যাবো আমার এখানে শান্তি লাগেনা।"

শিমুল বললো,
"নিয়ে আসবো আমার কাছে।আর একটু জান।"

তারপর থেমে বললো,
"এটা কার মোবাইল?"

"আপুর।"

"আবার যদি দেখে তাহলে তো মা*রবে।যাও মোবাইল রেখে দাও।"

পুষ্প অভিমান করে বললো,
"দেখুক দেখে মে*রে ফেলুক তাতে তোমার কি?তুমি তো আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাবে না।"

শিমুল পুষ্পর অভিমান বুঝতে পারে।তারও মনে হচ্ছে এভাবে কিছুই হবে না।দুই পরিবারের মানুষই ক্ষেপা যেকোনো সময় যেকোনো দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।দুজন দুজনকে হারালে সারাজীবন কেঁদেও লাভ হবেনা।জোড়ে শ্বাস ফেলে বললো,
"পালিয়ে যাই চলো।আসতে পারবা?"

পুষ্প থেমে যায়।পালিয়ে যাবে?সবাইকে ছেড়ে?শিমুলের কাছে?যদি পালিয়ে গেলে শিমুলকে আপন করে সারাজীবনের জন্য পাওয়া যায় তাহলে পালিয়েই যাবে।
"পারবো।"

শিমুল বললো,
"কালকে রাতে আমি আসবো।তুমি শুধু বের হয়ে আসার ব্যাবস্থা করবা।"

"আচ্ছা।"

"ভালোবাসি আমার ফুলটাকে।"

পুষ্প বলে,
"আমিও"

পুষ্প ফোন রেখে রুমে আসে।আগের জায়গায় মোবাইল রেখে চুপচাপ শুয়ে পড়ে।মুন্নী চোখ খুলে তাকায়।মোবাইল নেয়ার সময়ই মুন্নী টের পেয়েছে তার কিছু বলতে ইচ্ছে করেনি।এতো মার খাওয়ার পরেও কথা বলতে মোবাইল চুরি করে নিচ্ছে।মুন্নীর ইচ্ছা করেনা আর কথা বাড়াতে।একটু কথাই তো বলেছে।থাক বলুক।আর তো বলতে পারবে না।পুষ্পর জন্য সামনে কি অপেক্ষা করছে এটা পুষ্প জানেই না।
আর মুন্নীও জানলো না পুষ্প আর শিমুল কি পরিকল্পনা করেছে।জানলে হয়তো মোবাইলে কথার সুযোগ দিতো না।কখনোই না।

সকালে এমপির ফোন পেয়ে শওকত হাওলাদারের মুখে হাসি ফুটে উঠে উনার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো।ভাবে হয়ত দাওয়াত দিবে।কিন্তু ফোন রিসিভ করে কিছুক্ষণ পরেই উনার মুখ পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়।ফোন রেখে হুংকার দিয়ে ডাকে'
"শিমুল"

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে। 


চলবে.....

২০তম পর্ব পড়তে এখানে ট্যাপ/ক্লিক করুন


লেখক সংক্ষেপ :
তরুণ লেখিকা জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন