উপন্যাস       :        পিটুনিয়া
লেখিকা        :         আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “পিটুনিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের  ১৭ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
পিটুনিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি - Bangla Golpo - Kobiyal
পিটুনিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি

পিটুনিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ০১)

ছেলে হয়ে প্রথমবারের মত রাগিং এর স্বীকার হওয়া রাতের জন্য বড্ড লজ্জাজনক বিষয়। এই লজ্জাটা আরো দুইগুন বেড়েছে যখন রাত লক্ষ্য করল, তাকে ছেলেরা নয় বরং ভার্সিটির মেয়েরা রেগ দিচ্ছে। রাতের সামনে প্রায় ছ জনের এক গ্রুপ দাঁড়িয়ে আছে। সবার পরনে ছেলেদের মত জামা কাপড়। রাত তাদের একপল দেখে চশমা ঠিক করে। কেশে গলা পরিষ্কার করে বলে,
' আমাকে আটকে রেখেছ কেন? জরুরী কিছু হলে বলো, নাহলে আমি হলে যাব। নতুন ঢাকায় এসেছি। অনেক কাজ পরে আছে। '

মেয়েদের দল হেসে উঠল। একজন রাতের কাঁধে হাত রেখে বলল,
' তো বাবু, নতুন এসেছ? আহারে! এসেই আমাদের চোখে পরে গেলে। তোমার জন্যে আমার ভীষন মায়া লাগছে। ইশ! '

রাত ভ্রুঁ কূঁচকে তাকাল। নিজের কাঁধের উপর থেকে মেয়েটার হাত সরিয়ে বলল,
' মায়া না দেখিয়ে, কিসের জন্যে ডেকেছ বললে ভালো হয়। আমার দেরি হচ্ছে। '
মেয়েটা রাতের এমন গম্ভীর কণ্ঠ শুনে না চাইতেও কিছুটা পিছিয়ে গেল। আড়চোখে পাশে বসে বাদাম খাওয়া মেয়েটাকে ইশারা করে বলল,
' সপু, এই ছেলে মহা ফাজিল আছে। তুই হ্যান্ডেল কর। '

সপু কারো নাম হতে পারে? না, হতে পারে না। খুবই বিচ্ছিরি নাম এটা। কানের মধ্যে এই বিচ্ছিরি একটা নাম প্রবেশ করতেই রাত বিরক্ত বোধ করল। চোখ উল্টে দম ছেড়ে তাকাল সপু নামের মেয়েটার দিকে। মেয়েটার মুখ বোঝা যাচ্ছে না। ক্যাপ দিয়ে ঢাকা। তবে ঠোঁটে হালকা মেরুন রঙের লিপস্টিক চোখে লাগল রাতের। পাতলা ঠোঁটে এই রঙের লিপস্টিক বেশ মানিয়েছে বলে মনে হল রাতের। রাত এভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। নড়ল না জায়গা থেকে। মেয়েটা উঠে দাঁড়ালো। মাথার ক্যাপ খুলে হাতে ঝুলিয়ে তীক্ষ্ম চোখে রাতের দিকে তাকাল। রাত চমকে গেল। মেয়েটার চোখে কি তীব্র তেজ। যেন ঐ চোখেই সবার সর্বনাশ ডেকে আনবে সে। রাত চোখ সরাল। মেয়েটা ধীর পায়ে রাতের সামনে এসে দাঁড়াল। রাতের মুখোমুখি হয়ে কড়া কণ্ঠে বলল,
' নাম কি? '


রাত নির্লিপ্ত স্বরে উত্তর দিল,
' মুস্তাকিন হোসেন রাত। '
' রাত, রা-রাত' সুপর্ণা বিড়বিড় করে রাতের নাম কিছুক্ষণ আওড়াল। পরপরই রাতের দিকে চেয়ে বলল,
' চোখে চশমা কেন? ফ্যাশনের জন্যে নাকি কানা? '

রাত উত্তর দিল,
' ফ্যাশনের জন্যে কেউ সাদা গ্লাসের চশমা পরে, আমি জানতাম না। এটা পাওয়ারফুল চশমা। মাইনাস সিক্স। '

সুপর্ণা রাতের অতিরিক্ত ভাব নিয়ে কথা বলা ঠিক সহ্য করতে পারল না। এগিয়ে এসে রাতের চোখ থেকে চশমা খুলে নিয়ে নিজের চোখে পরে নিল। রাত এই কাজে প্রচন্ড বিরক্ত হল। সুপর্ণা রাতের চশমা চোখে দিয়ে আশপাশ দেখল। তারপর রাতের দিকে চেয়ে বলল,
' এত পাওয়ারফুল চশমা পরে মাথা ঘুরায় না? সহ্য হয়? '

' সহ্য করতে পারি বলেই পরছি। মাথা ঘুরালে নিশ্চয়ই সারাক্ষণ পরে থাকতে পারতাম না! '
সুপর্ণা এবার বিরক্ত হল। রাতের অনবরত দায়ছাড়া কথা শুনে অপমানিত বোধ হল তার। সে চশমা খুলে রাতের সামনেই হাত দিয়ে সেটা মুচড়ে ভেঙে ফেললো। রাত চমকে উঠল। রাগান্বিত চোখে তাকালো সুপর্ণার দিকে। সুপর্ণা রাতের লাল চোখ দেখে চোখ টিপে বলল,
' উপস! ভয় পাইসি! শুনো ছেলে, এসব রাগ, তেজ, ভাব আমার সামনে দেখাবা না। নিজের গার্লফ্রেন্ডকে দেখাবা। আমার সামনে দেখালে তোমার চশমার মত তোমাকেও ভেঙে দেব। মনে থাকবে? '


রাত উত্তর দিল না। হাত বাড়িয়ে সুপর্ণার হাত থেকে নিজের ভাঙা চশমা কেড়ে নিয়ে ব্যাগে রেখে দিল। তারপর সুপর্ণার দিকে চেয়ে হিড়হিড় করে বলল,
' মনে রাখার প্রয়োজন নেই।  নেক্সট টাইম আমার চোখের সামনে আপনি না পরলেই আমি বেশি খুশি হব। আর চশমা ভাঙার টাকা আমি আপনার থেকে ঠিকই উসুল করব। গুড বাই। '
রাত আর একমুহুর্ত অপেক্ষা করল না সেখানে। পা চালিয়ে ব্যস্ত হয়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গেল। সুপর্ণা রাগে, অপমান রীতিমত কাঁপছে। সুপর্ণার বন্ধু এসে তার পাশে দাঁড়ালো। রাতের চলে যাবার দিকে চেয়ে বলল,
' ছেলেটার ভাব কিন্তু মারাত্মক। তোকে কতোগুলো কথা শুনিয়ে গেল, ভাবতে পারছিস। কী করা যায় একে? '

সুপর্ণা মৃদু হাসলো। বলল,
' প্রেমের জালে ফাঁসানো যায়, এই ভাবওয়ালাকে। ওর সাহসের দৌঁড় ঠিক কতটুকু পর্যন্ত যেতে পারে, আমিও দেখব। '

__________________________________

রাত হল ঠিক করে রেখেছে। ইন্ডিয়া থেকে ঢাকায় এসে পড়াশোনা করা, সেটেল্ড হওয়া, জীবন কাটানো এতটাও সহজ বলে মনে হচ্ছে না রাতের। রাত নিজের রুম যতটা পারে, গোছগাছ করল। গোসল করে বের হতেই মায়ের কল। রাত টুকটাক কথা বলল মায়ের সঙ্গে। এখানে ঘটা সব কাহিনী বলল। রাতের মা চিন্তিত স্বরে বললেন,
' বাংলাদেশের মেয়েদের এত তেজ থাকে? শুনেছি, ওখানকার মেয়েরা নাকি অনেক কনজারভেটিভ হয়। তাহলে এই মেয়ে এমন কেন? '


রাত এক হাতে টাওয়াল দিয়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে বলল,
' সব মেয়েদের এক কাতারে ফেলা যায় না। কেউ কেউ ওই মেয়ের মত ডিফরেন্টও হয়, মা।'

তারপর রাতের মা ছেলের ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে ফোন কেটে দিলেন। রাত ফ্রেশ হয়ে এবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে। ল্যাপটপে খুললেই ইন্ডিয়ার বন্ধুদের মেসেজ পায়। ধীরেসুস্থে সবার রিপ্লাই করে ল্যাপটপে কিছু দরকারি বই দেখে। ফার্স্ট ইয়ারের বইগুলো কেনার আগে রিচার্স করে নেওয়া ভালো। রিভিউজ দেখে নেওয়া ভালো। রাত ভাবনামত ইন্টারনেট দেখে বই সিলেক্ট করে রাখল। আগামীকাল লাইব্রেরীতে গিয়ে বইগুলো কিনে আনবে।

রাত ঘুমিয়ে যাবে, তার আগে মোবাইলে অচেনা নাম্বার থেকে কল এলো। রাত কল রিসিভ করলে ওপাশ থেকে সুরেলা কণ্ঠে কেউ বলল,
' হ্যালো। আপনি কি রাত বলছেন? '

রাত অবাক হল। সচরাচর মেয়েদের সঙ্গে তার তেমন একটা পরিচয় নেই। বাংলাদেশি মেয়েদের সঙ্গে তো আরো নেই। নতুন এসে বন্ধুবান্ধব তেমন হয়নি। তাহলে বাংলাদেশী নাম্বার থেকে কে এই মেয়ে কল করল? এমনকি রাতের নাম্বারও জানে? রাত নাম্বার আরো একবার দেখে নিল। চেনে না সে নাম্বার। রাত গলা একটু কঠোর করে বলল,
' এটা রাতের নাম্বার নয়। রং নাম্বার। '


রাত কল কেটে দেয়। পরপরই রাতের মোবাইলে মেসেজ আসে। রাত মেসেজ ওপেন করে। সেখানে লেখা,
' তুমি রাত, আমি জানি। কেন নিজেকে লুকিয়ে রাখছ আমার থেকে। আমার থেকে লুকিয়ে থাকা অসম্ভব, মুস্তাকিন হোসেন রাত। '
রাত এবার বিস্ময়ের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেল। নাম জানে তো জানে, আবার পুরো নাম জানে। কে এই মেয়ে? রাত কি তাকে চেনে? 

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে 

০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন