উপন্যাস : পিটুনিয়া
লেখিকা : আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ইং
লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “পিটুনিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
পিটুনিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি |
১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
পিটুনিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ০২)
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিন বিধায় রাত সময়মতো এসে পৌঁছালো ক্লাসে। ক্লাসে বসার জন্যে জায়গা খুঁজল। প্রায় সব ছেলেদের সঙ্গে একটা করে মেয়ে বসা। একে অন্যের উপর ঝুঁকে পড়ছে সবাই। হয়ত তারা ক্লাসমেট থেকেও বেশি কিছু। রাত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বসার জন্যে সিঙ্গেল ছেলে খুঁজল। একদম পেছনের দিকে পেল একটা ছেলেকে। মাথা ঝুঁকে বই পড়ছে। রাতের মতই চোখে চশমা। রাত ব্যাগ কাধ থেকে নামিয়ে ছেলেটার পাশে গিয়ে বসল। রাত যে ছেলেটার পাশে এসে বসেছে, এতে যেন সেই ছেলের কোনো মাথা ব্যথাই নেই। পড়াশোনা করছে, তো করছেই। চারদিকের কোনো খোঁজ নেই তার। রাত কথা বাড়ালো না। চুপ করে ব্যাগ থেকে কিউব বের করল। সেটা মেলানতে ব্যস্ত হয়ে গেল। ক্লাস শুরু হবার বেশ কিছু সময় পর, রাতের পাশে এসে হঠাৎ করে বসল সেদিনের সুপর্ণা। রাত ক্লাসের নোট তুলতে তুলতে মাথা তুলে তাকাল। সুপর্ণাকে দেখেই রাতের মেজাজ খিচড়ে গেল। সুপর্ণা সেসব পাত্তা দিল না। ফিনফিনে আঙ্গুল নাচিয়ে বলল,
' হাই অন্ধকার রাত! হুয়াটসঅ্যাপ? '
রাত বিরক্ত হল। মেয়েটা একদম রাতের শরীরের সঙ্গে ঘেঁষে বসে আছে। রাগ কিছুটা সরে বসল। সুপর্ণার কথার উত্তরে চুপ থাকল। সুপর্ণা মৃদু হাসলো। রাত মনোযোগ দিয়ে ক্লাস শুনছে। একসময় সুপর্ণা একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
' তোমার ভাঙা চশমার টাকা। '
রাত বেঞ্চের নিচে তাকাল। সুপর্ণা ৫০০ টাকার নোট এগিয়ে রেখেছে রাতের দিকে। রাত চোখ ছোটছোট করে তাকালো। টাকা নেবে কি নেবে না ভাবলো। তারপর জেদ দেখিয়ে টাকাটা নিয়ে ব্যাগে রেখে দিল। সুপর্ণা চোখ দিয়ে তীক্ষ্ম চোখে রাতের এসব কাজ দেখে গেল। রাতের এমন অবহেলা দেখে সুপর্ণা যারপরনাই বিরক্ত। ভার্সিটিতে এমন কেউ নেই যে সুপর্ণার সান্নিধ্য পেতে চায় না। সুপর্ণা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড গার্ল। সবাই ইচ্ছেই বা অনিচ্ছেই সুপর্ণার প্রেমিক হতে চেয়েছে। অথচ এই ছেলে কি না সুপর্ণাকে বারবার এড়িয়ে যাচ্ছে। সুপর্ণার দাতে দাঁত চাপলো। একটু বুদ্ধি করে রাতের পায়ের উপর নিজের পা দিয়ে খোঁচা দিল। রাত চমকে উঠল। বেঞ্চের নিচে চেয়ে সুপর্ণার পা লক্ষ্য করতেই রাতের মেজাজ চটে গেল। বেহায়া মেয়েকে ইচ্ছে করল ঠাটিয়ে দুটো থাপ্পড় বসাতে। কিন্তু মেয়ে মানুষ! থাপ্পড় বসানো যাবে না। তাই রাত একটু কড়া স্বরে বলল,
' পা সরাবেন? আমি কিন্তু জায়গা ছেড়ে উঠে যাব। '
সুপর্ণা হাসলো। রেশমি স্ট্রেট করা চুল হাতের আঙ্গুলে পেঁচিয়ে ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,
' উঠে যাও। তুমি যেখানে যাবে, সুপর্ণাও সুড়সুড় করে সেখানে চলে যাবে, মিস্টার অন্ধকার রাত! '
রাত এবার রেগে গেল। সত্যি সত্যি ব্যাগ তুলে জায়গা ছেড়ে উঠে একদম সামনে বসে গেল। সুপর্ণা হাসলো। ইচ্ছে করল রাতের পাশে বসে রাতকে আরো একটু জ্বালাতন করতে। কিন্তু পরে অল্পতেই ছেড়ে দিল। ছেলেটা বড্ড সহ্য করেছে। আজকের জন্যে এটুকুই যথেষ্ট।
ব্রেক টাইমে রাত লাইব্রেরীতে গেল। খুঁজে খুঁজে কিছু বই বের করল। বই তালিকাভুক্ত করার জন্যে রেজিস্টারের কাছে গেল। রেজিষ্টার বই তালিকায় টুকে নিচ্ছে। ঠিক সেসময় সুপর্ণা এসে দাঁড়িয়ে পরল রাতের পাশে। টেবিলে হাত দিয়ে শব্দ করতেই রাত পাশ ফেরে তাকাল। সুপর্ণা হেসে বলল,
' পালাচ্ছ নাকি আমার থেকে, অন্ধকার রাত? '
রাত বইগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখতে দেখতে উত্তর দিল,
' রাত কারো থেকে পালায় না। আর হ্যাঁ, আমার নাম মুস্তাকিন হোসেন রাত। শুধু রাত কিংবা শুধু মোস্তাকিন বললে বেশি খুশি হব। নামের সঙ্গে অন্ধকার, বাতি, উজ্জ্বল, সূর্য এসব না অ্যাড করলেই বেশি খুশি হব। '
সুপর্ণা ঠোঁট টেনে হাসলো। কেন যেন রাতকে জ্বালাতে তার ভীষন ভালো লাগছে। রাতের চটে যাওয়া মুখখান দেখতে বেশ ভালো লাগছে। চশমার আড়ালে ভ্রু কুঁচকে যখন রাত তাকায়, উফ! মারাত্মক লাগে। সুপর্ণা বইগুলো উল্টেপাল্টে দেখে বলল,
' বই পাগল নাকি? ভালো একটা বই সাজেস্ট করছি। হুমায়ূন আহমেদের অপেক্ষা বইটা পড়তে পারো। আমি পড়েছি। এটা এই লাইব্রেরীতে পাবে না। নীলক্ষেতে যেতে পারো, বা বাতিঘরে। ওখানে এই লাইব্রেরী থেকে আরো ভালো ভালো বই পাবে। এখানকার বই পরলে মন মেজাজ এমনই বোরিংই থাকবে। '
রাত বইগুলো একটা বড় ব্যাগে করে নিয়ে হাটা ধরল সামনে। যাবার আগে বলে গেল,
' এসব প্রেমের বই পড়ে রোমান্টিক হবার কোনো ইচ্ছে নেই আমার। আমি বোরিংই ঠিক আছি। '
সুপর্ণা পেছনে থেকে হেসে বলল,
' কিন্তু আমার তো রোমান্টিকই পছন্দ। '
রাত এই কথা শুনতে পারল না। ততক্ষণে সে লাইব্রেরী ছেড়ে চলে গেছে।
সুপর্ণা মিরপুরে নিজেদের বাসা ছেড়ে হলে থাকে। বাসায় রোজ রোজ পারিবারিক ঝামেলা মেটাতে গিয়ে ক্লান্ত সে। অশান্তি থেকে তাই অনেক অনেক দূরে চলে এসেছে সে। হলে বন্ধুদের সাথে থাকে, সারারাত আড্ডা দেয়, পরীক্ষা এলে ফেইল করে, পরপর দুই বছর এই ফার্স্ট ইয়ারেই ঝুলে আছে। তবে এই বছর একটু ক্লাসে যাচ্ছে, হালকা পাতলা পড়াশোনা করছে। উদ্দেশ্যে টেনেটুনে পাশ করলেই চলে। সুপর্ণার মুখে রাতের সাথে ঘটা আজকের এই কাহিনি শুনে তার বন্ধুরা বেশ অবাক হল। হিয়া বলল,
' হ্যাভ ইউ ফলেন ফর হিম? '
সুপর্ণা মৃদু হাসলো। কফির কাপ নিয়ে জানালার পাশে দাড়িয়ে আনমনা হয়ে বলল,
' জানিনা। মে বি! '
লিলি চমকে উঠল। বিছানা থেকে ঝট করে উঠে সুপর্ণার পাশে দাড়িয়ে বড়বড় চোখে চেয়ে বলল,
' রিয়েলি? তুই ওই ভদ্র ছেলেটার উপর ফল করেছিস? অসম্ভব। এটা আমি মানতেই পারব না। '
সুপর্ণা তাকাল। কফির কাপে চুমুক দিয়ে চোখ টিপে বলল,
' অসম্ভব কেন? ও একটা ছেলে, আমি একটা মেয়ে। আমার যা চাই ওর কাছে তাই আছে। সো, হুয়াই? '
লিলি কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে থেকে আচমকা হেসে ফেললো। সুপর্ণার পিঠে থাপ্পড় বসিয়ে বলল,
' ইটস লাভ, ব্রো। তোর দুইদিনের এনজয়মেন্ট নয়। '
সুপর্ণা কাধ ঝাকিয়ে বলল,
' আমিও তো বলছি, ইটস লাভ। কোনো এনজয়মেন্ট নয়। '
সুপর্ণার কথা শুনে ওর সকল বন্ধু হতভম্ব হয়ে গেল। একেকজন হা করে বসে আছে। তাদের বিশ্বাসই হচ্ছে না, সুপর্ণার মত মেয়ে কিনা প্রেমে পড়েছে। তাও একটা অতীব ভদ্র নিরামিষ ছেলের। এটা কিভাবে সম্ভব হলো? এদের মাথায় আগুন ধরে গেছে। সব কেমন যেন উল্টেপাল্টে যাচ্ছে। তাদের বন্ধু কি না শেষঅব্দি একটা হিমুর মত ছেলের প্রেমে পড়ল। আজীবন চেয়েছিল বাকের ভাই। আর প্রেমে পরল হিমুর! উফ! অসম্ভব ব্যাপার শ্যাপার।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে …
০৩ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন