লেখিকা ইলমা বেহরোজের “পদ্মমির” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হয়েছে।
![]() |
পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ |
৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ (পর্ব - ৪)
আমির গোসল সেড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। তার ভেজা চুল লেপটে রয়েছে কপালজুড়ে।স্নিগ্ধ সুন্দর একটা মুখ।সতেজ ও চনমনে দেখাচ্ছে আমিরকে।
নারীর ভেজা চুল নিয়ে কবি -লেখকরা অনেক লিখেছে,পুরুষের ভেজা চুল নিয়ে কেন লেখেনি?
পদ্মজা লাজুক চোখে দেখে সৃষ্টির অব্যক্ত রূপ।আমিরের যত বয়স বাড়ছে তত যেন আকর্ষণীয় হচ্ছে।
পদ্মজাকে মিটিমিটি হাসতে দেখে আমির বলল,'হাসছ কেন?'
পদ্মজা মুখ গম্ভীর করার ভান ধরে কড়াইয়ে আরেকটা মাছ ছেড়ে বলল, 'কোথায় হাসলাম? '
'আমি কখনো ভুল দেখি না।'
আমির ইচ্ছে করে পদ্মজার শাড়ির আঁচল দিয়ে চুল মুছল। সূক্ষ্ম চোখে পদ্মজাকে দেখলে,পদ্মজা ঠোট টিপে আসছে! আমির দ্রুত নিজের পুরো শরীর পরখ করল, কোথাও সাবানের ফেনা লেগে আছে নাকি।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাবানের ফেনা কোথায় লেগে আছে খুঁজে বের করার ব্যর্থ চেষ্টা করে।
'কিছুই তো নেই। তাহলে হাসছো কেন? 'দ্বিধাভরে প্রশ্ন করল সে।পদ্মজা সশব্দে হেসে উঠলো।
আমির জেনে গেছে এরকম একটা ভাব নিয়ে বলল, 'বুঝেছি, মজা নিচ্ছো।ঠিক আছে, আমি মনে কিছু নেইনি।'তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যেন সে পদ্মজার অনেক বড় অন্যায় ক্ষমা করে দিল।
পদ্মজা ব্যস্ত হয়ে টেবিলে খাবার পরিবেশন করে। দুই রকম মাংস, মাছের মাথা দিয়ে মুগ ডাল,মাছ ভাজ, নিরামিষ চচ্চড়ি দেখে আমির সন্দিগ্ধ কন্ঠে বলল, 'ঘুম থেকে কখন উঠেছ? '
পদ্মজা বলল, 'কিছুক্ষণ আগে।'
'এতো দ্রুত এতোকিছু রান্না করা সম্ভব না। তোমাকে বলেছিলাম সকাল সকাল না উঠতে।'তার কন্ঠে রাগের আঁচ।
পদ্মজা জবাব দিল না। জগে জল ভরে ভিন্ন প্রসঙ্গে গেল,'অর্ডারটি কি পেয়েছেন?'রাতে এ নিয়ে প্রশ্ন করার ফুরসত হলো না। '
শেষ বাক্যটি উচ্চারণের সময় তার স্বর খাঁদে নেমে আসে।
বলাবাহুল্য, আমিরের কুয়েত যেতে বিলম্ব হওয়ার কারণ, হঠাৎ পদ্মজার গা কাঁপিয়ে জ্বর আসা।এমতাবস্থায় পদ্মজাকে রেখে আমির কিছুতেই বাড়ি থেকে বের হতে চায়নি। পুরোপুরি সুস্থ করে তুলে তারপর কুয়েত পাড়ি জমিয়েছে।
আমির চেয়ার টেনে বসে হাস্যমুখে বলল,'অন্য আরেকজন নিয়েই নিচ্ছিল, কিন্তু তোমার দোয়াতেই বোধহয় আমরা পেয়ে গেছি।'
'রিজিকে যদি থাকে তাহলে যেভাবে হোক পাওয়া যায়। এখন তো অনেক কাজ। আজ অফিস যাবেন? '
পদ্মজাকে টেনে কোলে বসিয়ে ওর রক্ত জবা ঠোঁটের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে আমির বলল, 'আজ কোথাও যাবো না, শুধু তোমার সঙ্গে থাকব।'
পদ্মজা শিথিল হয়ে আসল।এতদিন আমির ছিল না তাই তার হৃদয়ও চাইছে, মানুষটা আজ সারাদিন তার সাথে থাকুক। ও প্রশ্রয় দিল। পরক্ষণে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে দ্রুত দূরে সরে গিয়ে বলল, 'খাবার ঠান্ডা হচ্ছে। আমার ক্ষুদা লেগেছে।'
আমির হো হো করে হেসে ফেলল।দুজন একসঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে রাজা হরিশচন্দ্রের টিবি ঘুরে আহসান মঞ্জিলে পৌঁছায়। ঘুরতে বের হবার সিদ্ধান্ত পদ্মজার।তার হঠাৎ করে আমিরের সঙ্গে ঘুরতে ইচ্ছে করছিল।আজকের আবহাওয়া সুন্দর।রোদ নেই,মৃদুমন্দ বাতাস বইছে সর্বক্ষণ। এমন আবহাওয়া বের হতে কার না ভালো লাগে।
'বলুন তো,এই প্রাসাদের নাম আহসান মঞ্জিল কেন?'
আমির ইতিহাসে কাঁচা। সে তুখোর ফারসি,উর্দু,আরবি, ইংরেজি আর হিন্দি ভাষায়। এছাড়া হিসাব-নিকাশ খুব ভালো জানে। কিন্তু ইতিহাস -
পদ্মজা বলল, 'এই প্রাসাদের প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি। তিনি আর পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেছেন।'থামল,শ্বাস নিল। পরক্ষণে আমিরকে খোঁচা মারতে বলল,'মুক্তিযুদ্ধ কত সালে হয়েছে সেটা জানেন তো? '
আত্মসম্মানে প্রবল খাবা পরেছে এমনভাবে হইহই করে উঠল আমির,'মুক্তিযুদ্ধ স্বচক্ষে দেখেছি।তুমি জানো, মুক্তিযোদ্ধে আমার কত বড় অবদান আছে?
পদ্মজা হেসে আমিরের সাদা পাঞ্জাবি উপর থেকে শুকনো পাতা ঝেড়ে দিয়ে বলল,'জানি।পাকিস্তানি মিলিটারি আপনাদের বাড়িতে এসেছিল, একজন পানি খেতে চেয়েছিল তার পানিতে আপনি ইঁদুর মারার বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এতে মিলিটারির লোকের কিছু হয়নি। অনেক বড় অবদান রেখেছেন।'পদ্মজা গর্বে হাতে তালি দিল।
আমির থমকে দাঁড়িয়ে ব্রু নাচিয়ে বলল,'মশকরা হচ্ছে? '
তাদের খুনসুটি চলে বাড়ি ফেরা অবধি।বাড়িতে প্রবেশের সময় গেইটের বাইরে সন্দেহভাজন একজনকে আবিষ্কার করে আমির।যাবার সময় ও লোকটাকে দেখেছিল।
পদ্মজাকে দরজা অবদি এগিয়ে দিয়ে বলল, 'তুমি যাও, আমি আসছি।'
'অসময়ে কোথায় যাচ্ছেন? '
এখানেই আছি।তুমি হাতমুখ ধুয়ে নাও,ধুলোবালি লেগেছে।
আমিরকে দ্রুতপদে আসতে দেখে আগন্তুক বিজলির গতিতে স্থান ত্যাগ করে। তীব্র বাতাস বইছে। চারপাশে বৃষ্টির আগমনী বার্তা।
আমির দারোয়ান তরিকুলকে প্রশ্ন করে, ' সবুজ শার্ট পরা একটা লোক ওখানে ছিল,খেয়াল করেছ?'
দারোয়ান বলল,'জি স্যার।'
' কতক্ষণ ধরে ছিল?'
'সকাল থেকে। আমি কয়েকবার ডেকেছি,শুনলো না।'
সন্ধ্যার নাস্তার পর টেলিভিশন চালু করতেই পর্দায় ভেসে ওঠে লিখন শহের মুখ। এটা এই সিনেমা,যে সিনেমার অভিনয় আলন্দপুরকে ঘিরে পদ্মজাদের বাড়িতে হয়েছিল।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা ইলমা বেহরোজের ডাকনাম ইলমা। জন্ম ২০০৩ সালের ১৮ জুলাই। নেত্রকোনায় জন্ম হলেও তার বেড়ে ওঠা সিলেটে। ছোটোবেলা থেকেই গল্প/উপন্যাসের প্রতি ছিল তার ভীষণ ঝোঁক। ক্লাসের ফাঁকে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ার কারণে ̧গুরুজনদের তপ্তবাক্যও হজম করতে হয়েছে বহুবার। তবুও এই অভ্যাস কে কখনো বাদ দিতে পারেননি। সমাপ্ত গল্পকে নিজ কল্পনায় নতুনভাবে রূপ দেওয়া ছিল তার অন্যতম শখ। স্কুলের গন্ডি পেড়িয়ে একসময় তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার গল্পরাজ্যের সঙ্গে পরিচিত হোন। যেখানে সবাই নিজ চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করে নিজ লেখাকে আক্ষরিক রূপ দিয়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়। তাৎক্ষণিক নিজের কল্পনায় সাজানো গল্পগুলোকেও লিখিত রূপ দিতে শুরু করলেন তিনি। পাঠকদের থেকে আশানুরূপ সাড়া পেয়ে লেখালেখির যাত্রা অব্যাহত রাখার ইচ্ছে আরও বৃদ্ধি পায়। ফলসরূপ, রক্তে মিশে যাওয়া লেখালেখিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে পাঠকদের প্রতি ভালোবাসা থেকে বইয়ের পাতায় প্রকাশ করেছেন তাঁর প্রথম বই ‘মায়ামৃগ’। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের বইমেলায় বই আকারে প্রকাশ করেন তার আলোচিত উপন্যাস ‘আমি পদ্মজা’।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন