উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৮)

রাবেয়াকে সবারই পছন্দ হয়েছে। আলমগীর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো শুনে। অনেক বড় একটা চিন্তা ছিলো এতো দিন তার মাথায়।এবার রাবেয়াকে বিয়ে দিয়ে তাড়াতে পারলে তরুকেও যেকোনো মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারবে।
এরপর রাবেয়া নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলে আর আগের স্বামীর সম্পদ নিয়ে মাথা ঘামাতে আসবে না।
আলমগীর অনেক দিন আগেই এই পরিকল্পনা করেছে। আলমগীরের পরিকল্পনা আরো সহজ করে দিলো রাবেয়ার ভাই রাজীব।
বিছানায় শুয়ে আমেনা বিরক্ত হয়ে বললো, "রাবেয়ার বিয়ের কথা উঠানোর তো কোনো দরকার ছিলো না।রাবেয়া চলে গেলে বাড়ির কাম কাজ সব কে করবে?"
আলমগীর হিসাব করছে ছোট ভাইয়ের সম্পদের। আমেনার কথায় বিরক্ত হয়ে বললো, "মহিলা মানুষের বুদ্ধি থাকে হাটুর নিচে।বেশি কথা বলবা না।"
আমেনা রাগ হলো আলমগীরের কথা শুনে। আলমগীর কিছুক্ষণ পর বললো, "বেক্কল মহিলা,তোমার মোটা মাথায় এটা আসে না যে রাবেয়াকে বিদায় করতে পারলে সম্পদের ভাগীদার কমে যাবে।রাবেয়া নিজের সংসারে গেলে প্রথম সংসারের ব্যাপারে আর মাথা ঘামাবে না।এরপর তরুর একটা ব্যবস্থা করে ফেলা যাবে।"
আমেনা সবটা বুঝে আনন্দিত হলো। আসলেই তো।এই বিল্ডিং তরুর বাবার করা।রাবেয়া এখন সব মেনে নিচ্ছে,যে কোনো মুহূর্তে ফনা তুলে বসে যদি?
নিজের অধিকার বুঝে নিতে যদি সচেষ্ট হয় তখন কি হবে?
সব ভেবে আমেনা আলমগীরকে জড়িয়ে ধরলো। স্বামীর মাথায় এতো চিকন বুদ্ধি!
আমেনার মোটা মাথায় এই বুদ্ধি আসে নি।
পরদিন সকাল বেলা আমেনা রাবেয়াকে বললো, "রাবেয়া,এখন থাইকা এই কয়দিন তুই চুলার পাড়ে আসিস না।বিয়ের আগে মাইয়া মানুষের নিজের যত্ন নেওন দরকার। আমি হলুদ বাইটা দিমু,সারা গায়ে মেখে কিছুক্ষণ বসে থাক।"
রাবেয়া অবাক হয়ে আমেনাকে দেখতে লাগলো। তারপর নিঃশব্দে উঠে চলে গেলো ঘরে।
তরু স্কুল থেকে ফিরে দেখে মা আনমনা হয়ে বসে আছে জানালার সামনে।
মায়ের মুখে কেমন আষাঢ়ের ঘনঘটা।
তরু শান্ত স্বরে বললো, "মা?"
রাবেয়া চমকে উঠলো মেয়ের ডাক শুনে। কোন ভাবনায় হারিয়ে ছিলো এতোক্ষণ রাবেয়া নিজেও জানে না।
মেয়েকে দেখে আপনাতেই দুই চোখ ভিজে উঠলো রাবেয়ার।
তরু মায়ের সামনে কাঁদলো না।মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, "মা,এরকম খুশির সময় কাঁদতে নেই।আমার তো খুব আনন্দ হচ্ছে মা।আমার মা'য়ের একটা সংসার হবে ভাবতেই কেমন শান্তি শান্তি লাগছে।"
রাবেয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো, "এখন বুঝছিস না,মা যখন চলে যাবো তখন ঠিকই বুঝবি মা না থাকার যন্ত্রণা কেমন! দুনিয়াটা যখন অন্ধকার লাগবে,আকণ্ঠ তৃষ্ণায় যখন মা'কে খুঁজবি,হাতড়ে দেখবি মা পাশে নেই।তখন বুঝবি এই দুনিয়া কতো নিষ্ঠুর!"
তরু হেসে ফেললো মা'য়ের সামনে। হেসে বললো, "না গো মা,কিছু হবে না।ভেবো না।আমি ভালোই থাকবো।"
মা'কে এসব বলে তরু দ্রুত ছাদে উঠে গেলো।এই সময় লতার স্যার লতাকে পড়ায়।ছাদে কেউ নেই।
ছাদে গিয়ে তরু মুখে ওড়না চাপা দিয়ে কাঁদতে থাকে। তরুর বুক ফেটে যাচ্ছে যন্ত্রণায়।ইচ্ছে করছে মা'কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, মা তুমি যেওনা আমাকে ছেড়ে। আকি বাঁচবো না মা।
কিন্তু বলতে পারে না তরু।বললে যে ভীষণ স্বার্থপরতা হবে সেটা। নিজের ভালো থাকার জন্য মায়ের জীবন আর কতো নষ্ট করবে!
কাঁদতে কাঁদতে তরু ছাদে লুটিয়ে পড়লো।
ফাইজানের ভীষণ মাথা ধরেছে।তাই আজ আর লতাকে পড়াতে যায় নি। জানালা দিয়ে দেখলো তরু কেমন কাঁদছে। ফাইজানের মন খারাপ হয়ে গেলো তরুর কান্না দেখে।
অনেকক্ষণ ধরে আর সহ্য করতে না পেরে ফাইজান উঠে এলো।
তরুর পেছনে দাঁড়িয়ে নরম স্বরে বললো, "তরু!"
তরু চমকে তাকালো।ফাইজানকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকালো তরু।ফাইজান তো লতাকে পড়ানোর কথা এই সময়।
কোনো দিকে না তাকিয়ে তরু দৌড় দিতে গেলো।ফাইজান আচমকা তরুর হাত চেপে ধরলো।
ভীষণ ভয় পেয়ে কুঁকড়ে গেলো তরু।ফাইজান আজ আর ভয় পেলো না।বুকে সাহস নিয়ে বললো, "তোমার দুই চোখের জল মুছে দেওয়ার অধিকারটা দিবে আমাকে তরু?সারাজীবনের জন্য এই অধিকারটা চাই আমি।"
তরু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, "কি যা তা বলছেন এসব আপনি?"
ফাইজান আরেকটু এগিয়ে এসে বললো, "আমি যা বলছি সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে ভেবে বলছি তরু।এই কথাটা তোমাকে অনেক আগে থেকে বলবো ভাবছি।"
তরু বললো, "আপনি জানেন না আপনাকে লতা ভীষণ পছন্দ করে? "
"তাতে আমার কি?আমি তো লতাকে কখনো ওভাবে ভাবি নি।"
"ভাবেন নি যখন, এখন থেকে ভাবুন।আমাকে নিয়ে আর কখনো এসব ভাববেন না।আর কখনো এসব কথা বলবেন না আমাকে।"
ফাইজানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তরু চলে গেলো দ্রুত পায়ে।
ফাইজান তাকিয়ে রইলো তরুর দিকে। তারপর হেসে বললো একবার যখন বুকে সাহস নিয়ে বলতে পেরেছি তো আর কোনো কিছুর পরোয়া ফাইজান করবে না তরু। সারাজীবন বলবো এই কথা তোমাকে আমি।
প্রেমে পড়লে না-কি মানুষের অনেক চেঞ্জ আসে।ভীতু সাহসী হয়ে যায়।আমি ভীতু মানুষ যখন সাহস করে তোমার হাত একবার ধরতে পেরেছি কারো ক্ষমতা নেই আমাকে তোমার থেকে দূরে সরায়।"
তরু নিচে গিয়ে হাঁপাতে লাগলো। এই লোকটাকে তরুর সবসময় মনে হতো কেমন মুখচোরা, লাজুক।অথচ কি সাহস এই লোকটার!
তরুর হাত চেপে ধরলো!
নিজের হাতের দিকে তাকালো তরু।তারপর আচমকাই হেসে ফেললো। লোকটা তো পাগল পুরোপুরি।
হঠাৎ করেই তরুর কিশোরী মনটা কেমন খুশী খুশী হয়ে উঠলো।
লতা সেজেগুজে এসেছে তরুর রুমে।তরুকে আপন মনে হাসতে দেখে লতা বললো, "এভাবে হাসছিস কেনো?"
তরু চুপ করে রইলো। লতা ফিসফিস করে বললো, "তুইও কি কারো প্রেমে পড়েছিস না-কি? "
তরুর একবার ইচ্ছে হলো বলে যে,"না আমার প্রেমে একজন পড়েছে। "
কিন্তু বললো না। কেননা তরু জানে এই কথা শুনলে লতা খুব বাজেভাবে রিয়েক্ট করবে। তার চাইতে বড় কথা এসব জানলে মা বিয়েতে বেঁকে বসবে।
লতা তরুদের রুম থেকে বের হয়ে কিছুক্ষণ সিঁড়ির সামনে ঘুরঘুর করতে লাগলো। একবার ইচ্ছে হলো ছাদে যেতে।কিন্তু সাহস হলো না।লতার আব্বা একটু আগে চেয়ার নিয়ে উঠানে গিয়ে বসেছে।যদি দেখে ফেএ লতাকে!
লতার মন খারাপ হয়ে গেলো। ফাইজানের জন্য আজ কতো সুন্দর করে সেজেছে অথচ ফাইজান একবার ও দেখতে পেলো না!
এতো কষ্ট বৃথা যাবে লতার!


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন