উপন্যাস : নয়নে লাগিল নেশা
লেখিকা : মৌসুমি আক্তার মৌ
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ'র “নয়নে লাগিল নেশা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন। এই উপন্যাসে গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
![]() |
নয়নে লাগিল নেশা || মৌসুমি আক্তার মৌ |
৩৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
নয়নে লাগিল নেশা || মৌসুমি আক্তার মৌ (পর্ব - ৩৭)
গাড়ি হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা, পাশে অন্ত ও দাঁড়িয়ে আছে।প্রান্তিক আর রজনির জন্য অপেক্ষা করছে ওরা দু'জন। প্রিয়তার মন খারাপ বলে ওরা প্লান করে কুয়াকাটা যাচ্ছে চারজন।প্রিয়তার যাওয়ার একবিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিলনা।কিন্তু রজনির অনুরোধে যাচ্ছে।প্রিয়তা গাড়ি হেলান দিয়ে বিষন্ন মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ওই বিশাল আকাশ ছাড়া মাঝে মধ্য আর কারো কাছে মন খারাপ প্রকাশ করা যায়না।মাঝে মধ্য আমাদের মন খারাপের বোঝা এত ভারী হয় যা ওই বিশাল আকাশ ছাড়া কেউ বহন করতে পারেনা।আকাশের দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাত দমকা বাতাসে প্রিয়তার চোখে কিছু একটা গেল।প্রিয়তা চোখ ঢলছে কিন্তু কি গিয়েছে বুঝতে পারছেনা, বের ও হচ্ছেনা।চোখে তীব্র জ্বালা শুরু হল। প্রিয়তা যন্ত্রণায় ছটফট করতে শুরু করল।প্রিয়তার যন্ত্রণার আওয়াজ অন্তর কানে যেতেই অন্ত তড়িৎ গতিতে প্রিয়তার দিকে তাকাল।দ্রুত এসে প্রিয়তার মুখে হাত দিয়ে বলল, " কি হয়েছে প্রিয়তা?"
প্রিয়তা ছটফট করতে করতে বলল, " আমার চোখে কিছু গিয়েছে?"
"দেখিতো কি গিয়েছে।"
অন্ত প্রিয়তার চোখে কোয়া টেনে দেখল ছোট্ট কালো কিছু একটা চোখের সাদা অংশে লেগে আছে।অন্ত প্রিয়তা ওড়না টেনে চোখের মনি থেকে ময়লা বের করল।চোখে ক্রামাগত ফু দিতে দিতে বলছে, " যন্ত্রণা কি একটু কমেছে প্রিয়তা?চোখের জ্বালাপোড়া কমেছে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।"
অন্ত এমন উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বলছে প্রিয়তা অবাক হয়ে অন্তর দিকে তাকিয়ে আছে।এত বছর সে অন্তকে চিনে কই আগেতো অন্ত এমনভাবে কথা বলেনি তার সাথে।আগে কিছু নিয়ে কষ্ট পেলেই শ্রাবণ কে ডাকত। শ্রাবণ কে ডেকে বলত, ' দেখ প্রিয়তার কিছু হয়েছে।' অথচ আজ নিজেই এমন করছে যেন কষ্টটা ও পাচ্ছে।প্রিয়তাকে একভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অন্ত বলল, " ভাল লাগছে একটু।"
প্রিয়তা মিহি কন্ঠে বলল, " হুম। একটু পানি হবে।"
" এক্ষুনি আনছি।" বলেই অন্ত পাশের দোকানে গেল।দোকান থেকে কয়েক প্রকার কোল্ডড্রিংক্স সহ মিনারেল ওয়াটার এনে প্রিয়তার হাতে দিয়ে বলল, " যেটা ভাল লাগে খাও।"
প্রিয়তা আবার ও আবাক হয়ে অন্তর দিকে তাকিয়ে বলল, " শুধু পানি চেয়েছিলাম এত কিছু তো চাইনি।"
"তুমি কি পানি খাবে আমিতো জানিনা প্রিয়তা।তাই সব ধরনের পানি ই নিয়ে এসছি।"
প্রিয়তা মিনারেল ওয়াটার এর মুখ খুলে বোতল উঁচু করে পানি খেয়ে অন্তর হাতে দিয়ে বলল, " এসব গাড়িতে রেখে দিন।"
অন্ত বোতল গুলো গাড়িতে রাখতে গিয়ে প্রিয়তার খাওয়া পানি নিজে খেয়ে কেমন যেন একটা তৃপ্তি পেল।
এরই মাঝে অন্তর ফোন বেজে উঠল।ফোন রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠল, " কিরে শালা চু-রি করে বিয়ে করলি তাও আবার প্রান্তিক ভাই এর বোনকে। তোর কপাল কত বড়রে।"
"যা থাকে নসিবে তা এমনি এমনি ই চলে আসে।"
"তার পর বল বাসর ঘরে বউ কেমন আদর দিল।"
অন্ত প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল, " দিয়েছে তবে সেটা থা'প্প'ড় নট আদর।"
প্রিয়তা ভ্রু কুঁচকে অন্তর দিকে তাকাতেই অন্ত ফোন কেটে দিল।প্রিয়তা থমথমে মুডে অন্তকে বলল, " এসব কাকে বলছেন?"
" কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন এসছিল।"
"কাস্টমার কেয়ার থেকে এসব জিজ্ঞেস করে।"
"দেশ টা রসাতলে যাচ্ছে বুঝলে।দিন দিন আরো কত কী দেখতে হবে।"
প্রিয়তা যেন বেকুব বনে গেল।অন্ত তাকে বোকা বানাল সে বুঝতে পারল।
এরই মাঝে প্রান্তিক আর রজনি এসে পৌছাল।অন্ত প্রান্তিক কে দেখে হেসে দিল।অন্তকে হাসতে দেখে প্রান্তিক ভ্রু কুঁচকে তাকাল।হাসির কারণ খুজে না পেয়ে পেয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল, " কি সমস্যা তোর? হাসিস ক্যান?"
অন্ত হাসি থামানোর চেষ্টা করতে করতে বলল, " ভাই আপনি হানিমুনে যাচ্ছেন তাই থ্রি কোয়ার্টার পরে।"
"আমি তো সব সময় ই থ্রি কোয়ার্টার পরেই যায়। এ আর নতুন কী?"
"অন্যবার যাওয়া আর এইবার যাওয়া কি এক হল। এইবার যাচ্ছেন আপনি বিশেষ কারো সাথে।মানে আমাদের ভাবির সাথে।এইবার একটু অন্যভাবে যাবেন না।"
প্রান্তিক অন্তর দিকে তাকিয়ে বলল, " তুই ও তো অন্যবার থ্রি-কোয়ার্টার পরে যাস।এইবার জিন্স, শার্ট, কাহিনী কী?"
রজনি প্রান্তিকের দিকে অগ্নিচোখে তাকিয়ে বলল, " সবাই কি আপনার মত? মানুষ বিয়ের পর চেঞ্জ হয়।আর আপনি? শুধু মুখেই ভালবাসা।"
প্রান্তিক রজনির কথা শুনে কপালের চামড়া টান টান করে তাকাল।প্রিয়তার জন্য কিছু বলল না।শুধু বলল,
"কুয়াকাটা গিয়ে উত্তর দিচ্ছি তোমাকে।"
প্রিয়তার মাঝে কোনো হেলদোল নেই।এত কথা হচ্ছে কারো কোনো কথায় হয়ত সে শোনেনি।অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন ভাবছে। প্রান্তিক প্রিয়তার কাধে রাখল।প্রিয়তা আচমকা কেঁপে উঠল।প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে চোখ ছলছল করে উঠল তার।চোখের পানি পড়ার আগেই প্রান্তিক প্রিয়তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলল, " সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছিনা।তোর না বিশ্ব ভ্রমনের খুব ইচ্ছা ছিল।আমি তোকে বিদেশের কয়েকটি দেশে ভ্রমনে পাঠাবো "
প্রিয়তা মলিন মুখে বলল, " পৃথিবী আমার চেনা হয়ে গিয়েছে ভাইয়া। আর কিছু দেখতে চাইনা,চিনতে চাইনা।"
"চেনার এখানো অনেক বাকি। জীবনে ধাক্কা আসা খুব জরুরী।এতে মানুষ শক্ত হয়। ঘুরে দাঁড়াতে পারে।ধাক্কা না আসলে জীবন সম্পর্কে অনেক কিছুর ধারণা হয়না।মনে রাখবি কষ্টের সাথে আছে স্বস্তি।দুঃখ চিরস্থায়ী নয়।যত বেশী দুঃখ তত বেশী সুখ সামনে।আধার কেটে গিয়েই কিন্তু ভোরের আলো ফোটে।শুধু একটু ধৈর্য ধরতে হবে।ধৈর্য অনেক কঠিন জিনিস ফলাফল মধুর।"
প্রিয়তা ভাইয়ের কথা মন দিয়ে শুনল।কিন্তু কোনো প্রতিত্তোর করল না।আসলে যার ভালবাসা ম'রে যায় সেই জানে কষ্ট কত ভয়াবহ।ওই মুহুর্তে পৃথিবীর কোনো স্বান্তনা ই মানুষ কে সুখ দিতে পারেনা।
প্রান্তিক ড্রাইভ করছে।রজনি পাশে বসে আছে।পেছনের সিটে অন্ত আর প্রিয়তা বসে আছে।সাঁ৷ সাঁ গতিতে গাড়ি চলছে।গাড়ির জানাল খোলা। বাতাসে রজনির চুল উড়ছে। প্রান্তিকের চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে সেই চুল।প্রান্তিক হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিতে দিতে রজনির কানের কাছে গিয়ে বলল, " তোমার চুল এসে বিরক্ত করছে, তুমি কেনো করছো না।"
রজনি প্রান্তিকের মুখে হাত দিয়ে বলল, " আস্তে, পেছনে ওরা আছে।"
প্রান্তিক পেছনে তাকিয়ে দেখল প্রিয়তা অন্তর কাধে মাথা রেখে নিরিবিলি ঘুমোচ্ছে।মুখটা একদম ফ্যাকাসে আর মলিন দেখাচ্ছে। প্রান্তিক সামনের দিকে তাকাল। গাড়ি চালানো রেখে বার বার রজনির দিকে তাকাচ্ছে। রজনি প্রান্তিক কে বারবার চোখ রাঙিয়ে বলছে, " কত কাল দেখেন না আমাকে? মন দিয়ে গাড়ি চালান।রাস্তাঘাটে এত অমনোযোগী ভাবে গাড়ি চালানো ঠিক না।"
"কি হবে এক্সিডেন্ট। আমি সেই এক যুগ ধরে গাড়ি চালায় কিচ্ছু হবেনা।" বলতে বলতেই গাড়িটা একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা গেল। পেছন থেকে প্রিয়তা আর অন্তর চিৎকার শোনা গেল।প্রান্তিক গাড়িটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করল ঠিক ই কিন্তু এক্সিডেন্ট এর হাত থেকে রক্ষা পেল না।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৩৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
মৌসুমি আক্তার মৌ’র গল্প ও উপন্যাস:
- নয়নে লাগিল নেশা
- আরশি
- একটি নির্জন প্রহর চাই
- এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা
- রৌদ্র মেঘের আলাপ
- এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - ২
- তবুও বর্ষনের অপেক্ষা
- প্রণয়ের আসক্তি
- সংসার
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ-এর নড়াইলের ছোট্ট শহরে জন্ম আর সেখানেই বেড়ে ওঠা। তিনি নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে এম.এম. কলেজ থেকে এমবিএ করছেন। এর পাশাপাশি তিনি হেল্থ এন্ড ফ্যামিলি প্ল্যানিং-এ সরকারি চাকরি করছেন নিজ জেলাতেই। লেখিকার ছোটোবেলা থেকেই গল্প, উপন্যাসের বই পড়ার প্রতি প্রবল নেশা ছিল। পরিবার থেকে একাডেমিক বইয়ের বাহিরে অন্য কোনো বই অনুমোদন না থাকায় বন্ধুদের নিকট থেকে বইসংগ্রহ করে পড়তেন। তাঁদের ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তেন, এমনকি পাঠ্য বইয়ের ভাঁজে বই নিয়েও পড়তেন। আর বই পড়ার এই নেশা বা প্রেম থেকেই লেখালেখির প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি হয়। ফেসবুকে অসংখ্য গল্প, উপন্যাসের পাশাপাশি ছাপাবই ও ইবুক সেক্টরেও তিনি কাজ করছেন। লেখিকার প্রথম বই "তুমি নামক প্রিয় অসুখ" ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়। বইটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন