উপন্যাস        :         নিবেদিতা
লেখিকা        :          মুন্নি আক্তার প্রিয়া
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১০ই মে, ২০২৪ ইং

লেখিকা মুন্নি আক্তার প্রিয়ার “নিবেদিতা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ১০ই মে থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া
নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া

৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

নিবেদিতা || মুন্নি আক্তার প্রিয়া (পর্ব - ৪)

ছোটো মামার বিয়েতে আনন্দের 'আ' টুকুও হলো না। সারাদিন বৃষ্টি পড়ছে তো পড়ছেই। খাওয়া-দাওয়ার সময়ও ব্যাপক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। সেই ঝামেলা কোনো রকম মিটিয়ে সন্ধ্যা নাগাদ ছোটো মামার বউ নিয়ে রওনা দিয়েছে সবাই। এবার আর প্ল্যানিং করে কেউ গাড়িতে বসেনি। যে যেখানে পেরেছে বসে পড়েছে। তবে নিবেদিতার শরীরের অবস্থা খারাপ। বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর আরো বেড়ে গেছে। সে এখন নয়নের পাশে কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। পুরো শরীরজুড়ে যেন যন্ত্রণা হচ্ছে। মাথা ব্যথায় মাথা সোজা রাখাই কষ্ট হয়ে গেছে তার জন্য।
বাড়িতে পৌঁছাতে রাত প্রায় এগারোটা বেজে গেছে। বৃষ্টি না থাকলে আরো আগেই আসতে পারত। কাদার জন্য অনেক রাস্তা ঘুরে আসতে হয়েছে। নিবেদিতাকে মায়ের দায়িত্বে দিয়ে নয়ন চলে গেছে জামা-কাপড় বদলাতে। কেউই বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পায়নি।
বৃষ্টি আর যাই পারুক, গ্রামের মানুষদের বউ দেখতে আসা আটকাতে পারেনি। এই ঝড়-বাদলার মধ্যেও একেকজন মাথায় ছাতা গুঁজে নতুন বউ দেখতে চলে এসেছে। বাড়িতে মানুষের সংখ্যার চেয়ে যেন ছাতার সংখ্যাই বেশি। বউ দেখে বাড়ি ফেরার সময় গ্রামের কয়েকজনের মধ্যে বাঁধল বিরোধ। একজন আরেকজনের ছাতা নিয়ে গেছে তো, একজন আরেকজনের জুতা নিয়ে গেছে। এ নিয়ে গালমন্দের শেষ নেই।
নিবেদিতা মাথায় বালিশ চেপে শুয়ে আছে। তবুও বাইরে থাকা আসা হাউকাউ এর শব্দে কানের পোকাগুলোরও যেন শান্তি উধাও হয়ে গেছে। নিবেদিতা আর সহ্য করতে না পেরে উঠে বসল। বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বলল,
"ভাই এটা বিয়ে বাড়ি নাকি কোন্দল বাড়ি?"
"বিয়ে বাড়িতে এরকম হয়ই।" বলল তুবা।
"হয়। কিন্তু এত না। এই বৃষ্টিতে বউ কে দেখতে আসে?"
"গ্রামের মানুষরা আসে। তুই মনে হয় গ্রামে নতুন?"
নিবেদিতা কিছু বলতে গিয়েও বলল না। এই অসহ্য যন্ত্রণা আর তার সহ্য হচ্ছে না। কোনো রকম রাতটা পার করতে পারলেই কাল সকাল সকাল সে বাড়িতে চলে যাবে। দরকার নেই বৌভাতের অনুষ্ঠানে থাকার। যত্তসব!
সে রাতে নিবেদিতা খুব কষ্ট করে ঘুমাল। সকালে ঘুম ভাঙার পর বোঝাই যাচ্ছে না যে গতকাল এত বৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রকৃতি যেন একদম ঝকঝক করছিল। উঠানের কাদা না দেখলে বৃষ্টি আদৌ হয়েছিল কিনা ভেবে ভ্রম হতো সবার।
সবার পরে ঘুম ভেঙেছে নিবেদিতার। সে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রিনিকা রুমে ওর খাবার নিয়ে এসেছে।
"বিরিয়ানি খেয়ে ওষুধ খাও।" বলল রিনিকা।
নিবেদিতা তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল,
"সবার খাওয়া শেষ?"
"উঁহু! আমি খাইনি।"
"কেন?"
"পেট ভরা।"
"এত সকালে কী খেলি তুই?"
"বিস্কুট খেয়েছিলাম। ছাদে যাবে?"
"ছাদে কেন?"
"সবাই তো এখন ছাদেই।"
নিবেদিতা একটু টেনে বলল,
"সবাই?"
তার আসলে জানার আগ্রহ এই সবার মধ্যে নির্ণয়ও আছে কিনা। রিনিকা বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে ছিল। সে দু'পা দোলাতে দোলাতে বলল,
"হুম। তুবা আপু, হাসি, মীম, নির্ণয় ভাইয়া, হৃদয় ভাইয়া, তাদের বন্ধুরা।"
নিবেদিতা খুশি হয়ে গেল। সে যে ভেবেছিল সকাল হলেই বাড়িতে চলে যাবে, এই ভাবনা বাতিল। সে কোথাও যাবে না। তাছাড়া শরীরটাও তো এখন বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। সে অল্প একটু বিরিয়ানি আর ওষুধ খেয়ে রিনিকার সাথে ছাদে গেল। সবাই গোল হয়ে বসে কোনো বিষয় নিয়ে সম্ভবত আলোচনা করছিল। নিবেদিতা আর রিনিকাকেও বসার জায়গা করে দিল। বসার পর জানতে পারল মামার বিচ্ছু শ্যালক-শ্যালিকারা গতকাল যে ওদের নাস্তানাবুদ করেছে এবার ওরাও এমন কিছু করবে। যাকে সোজা ভাষায় বলা যায় রিভেঞ্জ। নিবেদিতা খেয়াল করল নির্ণয় মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। খুব সম্ভবত এই রিভেঞ্জ, রিভেঞ্জ শলাপরামর্শ তার পছন্দ হয়নি।
কীভাবে কী করা যায় প্ল্যানিং শেষ হলে হৃদয় বলল,
"তাহলে প্ল্যান এটাই রাখি?"
নির্ণয় ভ্রু কুঁচকে বলল,
"বাচ্চাদের মতো এসব করার প্রয়োজন কী?"
তুবা বলল,
"প্রয়োজন আছে ভাইয়া। ওরা কি আমাদের কম হেনস্তা করেছে?"
"এজন্য আমাদেরও করতে হবে?"
"হ্যাঁ, হবে। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা যাকে বলে। শোধবোধ।"
"ভেবেছিলাম কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য মনে হয় আমাকে ডেকেছিস। এসব কুপরামর্শে আমি নেই।"
নির্ণয় উঠে গেল। চুপচাপ নেমে গেল ছাদ থেকে। সবাই ওর যাওয়ার পানে হতাশ হয়ে তাকিয়ে আছে। নিবেদিতা হতাশ হলো অন্য কারণে। তার এসব রিভেঞ্জ, মজা নেওয়াতে কোনো মন নেই। সে তো এসেছিল একটু দুচোখ ভরে নির্ণয়কে দেখবে বলে। ওদের সাথে কাজ না করলে নাই। তাই বলে এভাবে চলে যেতে হবে? এত নিষ্ঠুর কেন এই লোক? তাকে দেখার তৃষ্ণায় যে এক তরুণী কী রকম ছটফট করে তা কি সে বোঝে না? নাকি দেখে না?
.
ছাদ থেকে সবাই নেমে এসে দেখল অনেক মানুষজন আবার ছোটো মামিকে দেখতে এসেছে। বউ দেখে সবাই বেশ প্রশংসাও করছে। কেউ কেউ বলছে প্রেমের বিয়ে। নতুবা ছোটো মামার পক্ষে এত সুন্দর মেয়ে পাওয়ার কথা নয়! কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ছোটো মামাও কোনোদিক দিয়েই কম নয়। একজন বয়স্ক মহিলা তো বলেই ফেলল,
"আমগোর যুগে প্রেম-ভালোবাসা কি বুঝি নাই। আর এহন তো পোলাপাইন মায়ের পেট থেইকা বাইর হইয়াই প্রেম-পিরিতি করে।"
নিবেদিতা হা করে তাকিয়ে আছে। বউ দেখতে এসে এসব কথা কে বলে? কয়েকজন তাকে উৎসাহও দিল। প্রসঙ্গ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে। বিরক্ত হয়ে নিবেদিতা ছাদে চলে গেল। সে ভেবেছিল ছাদ এখন ফাঁকা। কারণ সবাই নিচে। কিন্তু চমকে গেল নির্ণয়কে দেখে। সে কখন এসেছে ছাদে? এমনিতে নির্ণয়কে দেখার জন্য মন সর্বদা আনচান করলেও এভাবে একা সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে বা কথা বলবে এত সাহস নিবেদিতার নেই। তাই সে পালিয়ে যাওয়ার জন্য পিছু পা বাড়াবেই তখন নির্ণয় জিজ্ঞেস করল,
"ঐ মহিলাগুলো চলে গেছে?"
নিবেদিতা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে থমকে গেল। উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করল,
"কোন মহিলা?"
"যারা প্রেম-ভালোবাসার ফিরিস্তি শোনাচ্ছে!" নির্ণয়ের কণ্ঠে বিরক্তির ঝাঁঝ।
নিবেদিতা একটু রয়েসয়ে সাহস সঞ্চয় করে বলল,
"উঁহুঁ! আপনি কি ভালোবাসার বিপক্ষে?"
"এখানে পক্ষে-বিপক্ষে থাকার কিছু নেই। প্রেম বলো, ভালোবাসা বলো কোনোটাই খারাপ না। আমরা মানুষরা এটাকে একেকভাবে উপস্থাপন করি। যার মানসিকতা যেমন তার কাছে প্রেম-ভালোবাসার সংজ্ঞাটাও তেমন।"
নিবেদিতা এবার অনেকটা সাহস নিয়ে শুধাল,
"আপনার কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা কী?"
নির্ণয় এতক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল। প্রশ্ন শুনে নিবেদিতার দিকে তাকাল। তীর্যক সেই দৃষ্টি! অন্তরআত্মা কেঁপে উঠল নিবেদিতার। ফাঁকা ঢোকও গিলল সে। নিশ্চয়ই এই কঠিন পুরুষ এখন একটা কঠিন ধমক দিয়ে বলবে,
'এইটুকু বয়সে ভালোবাসার সংজ্ঞা জানতে ইচ্ছে হয়েছে? কলেজে কি এসব করতেই যেতে? খালা-খালু জানে তোমার অধঃপতন সম্পর্কে? যাও দূর হও চোখের সামনে থেকে।'
মনে মনে সব রকম কঠিন কথা ও ঝাড়ি-ধমক শোনার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নিতে থাকল নিবেদিতা। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে নির্ণয় বেশ শান্তকণ্ঠে বলল,
"আমার কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা মানে একটা নাম, একটা পরিচিত মুখ। যেই মুখ না দেখলে, যেই মুখে হাসি না ফুটলে আমার অস্থির লাগবে। বুকে যন্ত্রণা হবে। আমার কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা হলো একসাথে সারাজীবন শুধু থাকার চেষ্টাই নয়, সেই চেষ্টাকে বাস্তবে রূপদান করা। আমার কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা মানে যা-ই হয়ে যাক, যত ঝড়ই আসুক, দিনশেষে ভালোবাসার মানুষটাকে বুকে নিয়ে একটা শান্তির ঘুম দিতে চাই।"
নিবেদিতা মুগ্ধ হয়ে শুনল তার প্রেমিক পুরুষের মুখে ভালোবাসার সংজ্ঞা। ভালোবাসার সংজ্ঞা এত সুন্দরও বুঝি হয়?

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
“মুন্নি আক্তার প্রিয়া” বাল্যকাল থেকেই কল্পনা ও সাহিত্য বিলাসী। লেখা লেখিটা মূলত শখের বশে শুরু করলেও, পরবর্তীতে তা একসময় নেশায় পরিণত হয় তার। লেখালেখির পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ফেসবুকের ফলোয়ারদের থেকে। তাদের ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণাই তাকে সাহিত্য জগতে টিকে থাকার ক্ষেত্রে অদম্য সাহস ও ইচ্ছে শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। এইভাবেই সাহিত্য জগতে তার প্রথম “সাঁঝের কন্যা” বইটি প্রকাশিত হয়। এর মাধ্যমেই প্রকাশণা জগতে পদার্পন। 
তার লেখা প্রথম বইটি ব্যাপক সাড়া ও সফলতার ধারাবাহিকতায় তার দ্বিতীয় বইটি “চক্ষে আমার তৃষ্ণা” প্রকাশিত হয়। সফলতার পথে অগ্রসর হওয়া এই লেখিকার জন্ম শরিয়তপুর জেলায়, কিন্তু বেড়ে ওঠা ও সপরিবারে বাস করেন গাজীপুরে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন