উপন্যাস : রোদ শুভ্রর প্রেমকথন
লেখিকা : নৌশিন আহমেদ রোদেলা
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১১ নভেম্বর, ২০২০ ইং
লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলার “রোদ শুভ্রর প্রেমকথন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা
৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রোদ শুভ্রর প্রেমকথন || নৌশিন আহমেদ রোদেলা (পর্ব - ৮)
রাত ১০ঃ১৭। ড্রেসিং টেবিলের টোলটাতে চুপচাপ বসে আছি আমি।আমার ঠিক পেছনে বিছানায় পা গুটিয়ে বসে আছেন বাবা।।পাশে তেলের কৌটো.....খুব মনোযোগ দিয়ে আমার মাথায় তেল লাগাচ্ছেন তিনি।।আমি আয়নায় বাবাকে দেখছি আর মিটিমিটি হাসছি।আমার জীবনে বাবাকে এই কাজটা শুধু আমার সাথেই করতে দেখেছি.....হয়তো বা বাড়ির ছোট মেয়ে বলেই এমনটা করেন উনি।।আপু পাশে চেয়ার টেনে বসে ফোন চাপছে ঠিক তখনই ভদ্র ছেলের মতো রুমে ডুকলেন শুভ্র ভাই।।উনাকে দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো আমার....এতো রাতেও ঠিক ঠিক ড্যাং ড্যাং করে আমাদের বাসায় চলে এসেছেন উনি।ফাজিল ছেলে....ফুপির বাড়ি হলেই কি মাথা কিনে নিতে হবে নাকি??এখন নিশ্চয় ফাউল ফাউল কথা বলে মাথা ধরিয়ে দিবেন আমার?উনি আমার পাশে বেড সাইড টেবিলটাতে বসলেন।।বাবার সাথে কুশল বিনিময় করে আমার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন-
.
হায়রে দুনিয়া!!আর কতো কি দেখাবি তুই রোদু?বোন কাপড় ঠিক করে দিচ্ছে....ভাই নিজের ফোন দিয়ে দিচ্ছে...বাবা মাথায় তেল দিয়ে বেনুনী গাঁথছে....মা খাবারের প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে....ন্যাকামোর চূড়ান্ত।। তোকে দেখে মনে হয় এই দুনিয়াতে তুইই একমাত্র মায়ের পেট থেকে এসেছিস আর সবাই যেনো আকাশ থেকে টুপটাপ করে পড়েছে....
.
উনার কথায় রাগটা চরম আকার ধারন করলো আমার।আব্বু সামনে থাকায় কিছু বলতেও পারছি না আবার সহ্যও করতে পারছি না।।কি এক ঝামেলা!!আয়নায় তাকিয়ে দেখলাম আব্বু মুচকি হাসছেন।।আমি মুখ ফুলিয়ে বসে আছি।আমার চুপ থাকাতে শুভ্র ভাই যেন আরো সুযোগ পেলেন...একটু নড়েচড়ে বলে উঠলেন-
.
ফুপা?আপনার এই মেয়েকে নিয়ে কিন্তু ভীষন সমস্যায় পড়তে হবে আপনাকে....
.
উনার কথায় বাবা ভ্রু কুঁচকালেন তারপর হাসিমুখে বললেন... "কেন বাবা?" বাবার হাসিমুখ দেখে যেনো ভরসা পেলেন উনি।।বাবাকে আমার সব কাজিনরা বেশ ভয়ই পায়...একদম কাঁপাকাঁপি ভয় যাকে বলে।।ভয় না পাওয়ার মাঝে আছি আমি আর শুভ্র ভাই,,দুজনেই ত্যাড়ামোর চূড়ান্ত।উনি চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে বলে উঠলেন -
.
না মানে...আপনার অতি আদরের গুণবতী কন্যার জন্য পাত্র খুঁজা বেশ ঝামেলার ব্যাপার হবে না??পঞ্চগুণ সম্পন্ন পাত্র লাগবে তার।।যে তাকে গুছিয়ে দিবে....তাকে খাইয়ে দিবে....মাথায় তেল দিয়ে দিবে...বেনুনী করে দিবে....ফোন টোন সব দিয়ে দিবে।তারওপর আবার রোজগার করেও খাওয়াবে।।এমন ছেলে কি এখন আর পাওয়া যায় বলুন??কতো দুষ্কর না?
.
বাবা তখন বেশ মনোযোগ দিয়ে বেনুনি গাঁথছেন চুলে....সেদিকে চোখ রেখেই কিছু একটা বলতে যাবেন ঠিক তখনই আপু দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলেন -
.
কাহিনী কি শুভ্র ভাই?রোদকে নিয়ে চিন্তায় তো দেখছি রাতে ঘুম হচ্ছে না আপনার।।ওর সিরিয়াল অনেক দেরীতে......সামনে দাঁড়ানো বোনজাতিদের ছেড়ে পেছনের দিকে এতো নজর...উহুম...রহস্যময় গন্ধ পাচ্ছি।
.
আপুর কথায় বিষম খেলেন উনি।।কাঁশতে কাঁশতে আমার দিকে তাকালেন আমিও দাঁত বের একটা ক্লোজ আপ হাসি দিলাম ।বেশ হয়েছে....আপু একদম উচিত জবাব দিয়েছে।।এবার বুঝো ঠেলা।শুভ্র ভাইয়া নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠলেন-
.
আআরে সন্দেহ কিসের?ফুপা দেখেছেন?রুহির কি কথা ফুটেছে....একে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে বিদেয় করুন তো।।আমি রোদের জন্য কই চিন্তা করছিলাম?আমি তো চিন্তা করছিলাম ফুপার জন্য ।তোদের বিয়ে দিতে কি ফুপার এতো বেশি কষ্ট হবে নাকি?শান্তি শিষ্ট মেয়ে তোরা....জামাই আসবে হুটহাট তুলে নিয়ে চলে যাবে কিন্তু আমাদের রোদ তো তা নয়....সে বরকে বিয়ের দিনও ল্যাং মেরে ফেলে দিতে পারে।।তাই বলছিলাম কি,ফুপা?রোদেকে আত্মীয় স্বজনের মাঝেই বিয়েটা দিলে ভালো হয় না?যে ওর সম্পর্কে সবকিছু জানবে...নয়তো বর তো প্রথম দিনেই দৌড়ে পালাবে।
.
উনার কথা শেষ হতেই আবারও দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো আপু-
.
শুভ্র ভাইয়া কথাটা কিন্তু ঠিকই বলেছে বাবা।এমন একটা ছেলে দেখতে হবে যে কিনা রোদকে চুরি কিনে দিবে,,পায়ে পায়েল পড়িয়ে দিবে,,হাতে বেলীফুলের মালা গুঁজে দিবে,,শরীরে তেল ছিঁটবে বলে রান্না করে দিবে আর....
.
এটুকু বলতেই আবারও কাশতে লাগলেন শুভ্র ভাইয়া।।আপুকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বিমল হাসি হাসলেন।।আমতা আমতা করে বলে উঠলেন -
.
না মানে ফুপা... রুহি তো খারাপ কিছু বলে নি।।এ এমন বিষয়গুলো ছেলের মাঝে থ থাকতেই পারে।।আশেপাশে আত্মীয় স্বজনের মাঝে কতো ছেলে.. হে হে...এদের মাঝে দদেখুন এসব সুপ্ত প্রতিভা বিদ্যমান আছে কিনা??
.
এবার আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।। উনি কিসের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে কে জানে?আড়চোখে আয়নায় বাবার মুখের দিকে তাকালাম....বাবা মুচকি হাসছেন....চুলে রাবারটা লাগিয়ে বেনুনিটা আমার সামনে ঝুলিয়ে দিয়ে শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন -
.
আত্মীয়দের মধ্যে কাকে ইন্ডিকেট করছো তুমি শুভ্র?যাকেই করো না কেন...সে পরে দেখা যাবে।মেয়ে তো আমার নিতান্তই বাচ্চা আগে বড় হোক.... তারপর নাহয় ভাববো।।
.
কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন বাবা।।কিছুক্ষণ পর ফোন কানে নিয়ে বাঁকা হেসে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে আপুও বেরিয়ে গেলো...হয়তো আরাফ ভাইয়া ফোন দিয়েছে.....আহা,,কতো প্রেম!!শুভ্র ভাইয়া এবার বিছানায় গিয়ে বসলেন...পা দিয়ে টোলটা ঘুরিয়ে আমাকে সহ নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়েই বলে উঠলেন -
.
তোর বাপ আর তুই দুটোই হিটলার।।এতো বড় ধিঙ্গি মেয়ে আবার বাচ্চা হয় কিভাবে??১৮ টা বছর কি এমনি এমনি চলে গেলো??আমার বয়স কতো??২৪...তোর বাপের হিসেবে আমি নিশ্চয় কচি খোঁকা।।আরে নিজে বিয়ে করেছে ২২ বছরে....বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে ২৪ বছরে...তো আমার বেলায় আমরা শিশু!!!
.
আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে থেকেই চোখ বড় বড় করে বলে উঠলাম -
.
আপনি বিয়ে করতে চান?
.
আপনি বিয়ে করতে চান মানে কি?তুই কি বলতে চাস আমি বিয়ে করবো না??আমার বিয়ের বয়স হয় নি??
.
আমি এটা কখন বললাম?(অবাক হয়ে) আমি বলছিলাম যে...আপনি তো মাত্র মাস্টার্স করছেন...এখনই..
.
তো?আমি মাস্টার্স করছি তাতে তোর বাপের কি??মাস্টার্স করলে বিয়ে করা যাবে না??তুই আর তোর বাপ এক টাইপ।তোদের দুজনেরই আমার বিয়ে নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা কেন?হুয়াই?তোরা কি চাস?আমি বিয়ে না করে চিরকুমার থাকি??
.
আমরা কখন এ কথা বললাম?আপনার বিয়ে করার ইচ্ছে থাকলে বিয়ে করুন।শুধু একবার কেন?মন চাইলে হাজারটা করুন...আমাদের কি??কথায় কথায় বাবাকে দোষ দেন কেন শুনি?(রাগী গলায়)
.
দোষ দিবো না তো কি করবো??তোর বাপের মতো শশুড় পাওয়ায় মসজিদে মসজিদে জিলাপী বিলাবো??ডাফার!!আর হাজারটা বিয়ে কেন করবো?তোর কি আমাকে ক্যারেক্টারলেস মনে হয়??তোর বাপ আর তুই কি এখন আমাকে ক্যারেক্টারলেস প্রোভ করতে চাস??
.
আশ্চর্য!! আমি কখন বললাম আপনি ক্যারেক্টারলেস?আর আমার বাপের মতো শশুড় বলতে কি বোঝাতে চাইছেন?আমার বাবাকে নিয়ে ফাজলামো করবেন না বলে দিলাম....
.
হুহ...আসছে বাপ দরদী...আর আমি তোর বাপকে নিয়ে ফাজলামো করতে যাবো কেন শুনি?আমি তো আমার শশুড়মশাইকে নিয়ে ফাজলামো করছি..
.
কথাটা বলে হালকা হেসে হেঁচকা টানে আমার ডান পা'টা কোলের উপর নিয়ে নিলেন উনি....পায়ের মাঝারি আঙ্গুলটাতে একটা সাদা মোটা আংটি পড়িয়ে দিয়ে আবারও পা টা সযত্নে যথাস্থানে রেখে দিলেন।।পাঞ্জাবীর হাতা ঠিক করতে করতে উঠে দাড়িয়ে আবারও বলে উঠলেন উনি-
.
ওটা খুলবি তো এক চড়।।তোর বাপের টাকা দিয়ে কিনি নি যে খুলে রেখে দিবি....আর হ্যা...তোর বাপকে বলবি...আমার জান নিয়ে যেনো এমন টানাটানি না করে....নয়তো তাকে সহ তুলে নিয়ে যাবো।।
.
কথাটা বলেই শিষ দিতে দিতে বেরিয়ে গেলেন উনি।।আমি "হা" করে তাকিয়ে আছি।।একবার পায়ের দিকে তাকাচ্ছি তো একবার উনার যাওয়ার দিকে ...বাবা উনার জান ধরে টানাটানি করছে মানে কি??কি বলে গেলেন উনি??
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
নৌশিন আহমেদ রোদেলা’র গল্প ও উপন্যাস:
- আজ ওদের মন ভালো নেই
- মেঘের দেশে প্রেমের বাড়ি
- রোদ শুভ্রর প্রেমকথন
- তপোবনে যখন সন্ধ্যা নামে
- আরশিযুগল প্রেম
- নীল চিরকুট
- প্রিয়দের কাল্পনিক সাক্ষাৎ
- প্রেমিক অপ্রেমিকের গল্প
- আজি এই সন্ধ্যাক্ষণে
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা নৌশিন আহমেদ রোদেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন