উপন্যাস        :         পদ্মমির 
লেখিকা         :          ইলমা বেহরোজ
গ্রন্থ                :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল      :          

লেখিকা ইলমা বেহরোজের “পদ্মমির” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হয়েছে।
Bangla Golpo পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ
পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ

২৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ (পর্ব - ৩০)


গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় জুনি। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আলমগীর ও মজিদ হাওলাদার। রফিকের কাছে সবকিছু দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যায়। জুনি প্রতারণা করেছে। ছলনা করে তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছে। পুলিশ আমিরের পক্ষে নয় বরং নিরপেক্ষ ছিল। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই। যা ভুল হবার হয়ে গেছো আমির হিসহিসিয়ে বলল, ‘ভালোই হলো তখন মরিসনি। নিজের হাতে মেরে যে সুখ পাব, তা তখন মরে গেলে পেতাম না।’

রফিককে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও ছুড়িকাঘাত করে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে সেই হাওড়েই মাটিচাপা দিয়ে দেয়া হয়। চিরতরে গুন হয়ে যায় রফিক।

পদ্মনীড়ে প্রবেশ করতেই বেলি ফুলের ঘ্রাণ এসে লাগে নাকে। গতকাল তারা বাড়ি ফিরেছে। আমির কয়টা ফুল ছিড়ে শার্টের বুক পকেটে ভরে নিল।

কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলল পদ্মজা। আমির বুকপকেট থেকে ফুলগুলো এগিয়ে দিল পদ্মজার হাতে।

পদ্মজা ঘ্রাণ এঁকে বলল, ‘আব্বাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে এসেছেন?’

‘দিয়েছি।’ আমির অদ্ভুতভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

পদ্মজা আমিরকে টেনে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করল।

‘আলমগীর ভাইও চলে গেছে।’

‘ওমা! উনার না কিছুদিন থাকার কথা ছিল।’

আমির কিছু বলল না। আজ সে মিথ্যে বলতে চায় না। ঘড়ির কাঁটা বারোটায় ঠেকতেই আমির পদ্মজাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘শুভ জন্মদিন পদ্মবতী। শত বছর বাঁচো আর আমার হয়ে থাকো। তোমার জন্মদিনেও আমি আমার জন্য তোমাকে চাই। কত স্বার্থপর আমি তাই না?’

পদ্মজার মনেই ছিল না আজ তার জন্মদিন। সে আমিরের বুক থেকে মুখ তুলে বলল, ‘হ্যাঁ, ভীষণ। আর এমনই থাকবেন, স্বার্থপর। শুধু আমাকে চাইবেন।’

আমিরের দুই চোখ বেয়ে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। কুতুবউদ্দিন, রফিক তাকে কত আতঙ্কে রেখেছে তবুও ভেঙে যায়নি। অথচ আজ যখন সব বিপদ শেষ তার ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছে করছে। পদ্মজাকে হারিয়ে ফেললে কীভাবে বাঁচত সে?

পদ্মজার উৎকণ্ঠা, ‘কী হয়েছে? কাঁদছেন কেন?”

আমির হাসল। বলল, ‘জানি না। কাপড়চোপড় ব্যাগে ভরে নাও। আলো ফুটতেই আমরা বেরিয়ে যাব।’

‘আবার কোথায়?’

‘স্বপ্নের জগতে।’ আমির চোখ টিপল। বোট তৈরি। আগামী

দশদিন ওরা পদ্মা নদীতে কাটাবে।

পরিশিষ্টঃ

‘মিষ্টি রানি দুই রাজাকে তার অপকর্মের জন্য হত্যা করেছিল। তাই রানির কারাবাস হয়। তারপর কী হয়? এই গল্পের বাকি অংশ কোথায় জানব আপা?’ আলিয়া ঠোঁট উল্টে বলল।

নুড়ি আয়না থেকে চোখ সরিয়ে বলল, ‘মা জানে।’

‘মা তো বলে না।’

‘হয়তো গল্প শেষ, রানী এখনো কারাগারে আছে।’

‘কিন্তু মা তো বলল, গল্প বাকি।’

নুড়ি বিরক্তি নিয়ে তাকাল। ওর বয়স ঘোল। মেদহীন, একহারা গড়ন। চোখজোড়া কালো, স্বপ্নময়। কালো রঙা কোঁকড়া চুল কোমর ছাপিয়েছে। ও বলল, ‘তাহলে অপেক্ষা কর, মা নিশ্চয়ই একদিন বাকি গল্প বলবে।’

আলিয়া কার্থী মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। নুড়ি আনমনা হয়ে ভাবে, ‘মা যতদিন না বলছে আমি তোদের কিছু বলতে পারব না, সেই দুষ্ট রাজা আমাদের বাবা আর মিষ্টি রানি আমাদের মা। আমি কেন সব জেনে গেলাম বলতো? মায়ের কষ্ট যে আমার সহ্য হয় না।’

আজ আমির হাওলাদারের মৃত্যুবার্ষিকী। এই রাতটা পদ্মজা একা একা পাহাড়ের চূড়ায় বসে কাটায়। তীব্র জ্বরের কারণে আজ যেতে পারেনি। সন্ধ্যা থেকে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ কর্ণগোচরে এলো, দরজায় ঠকঠক শব্দ। এই নিশি রাতে কে ডাকে?

জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে পদ্মজা জানালার দ্বার খুলল। চাঁদের আলো লুটিয়ে গড়ে ওর গায়ে।একটা ভারী কন্ঠ বাতাসে ভেসে এলো, ‘আজ কেন আসোনি?’

পদ্মজার বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠল। দ্রুত চোখে চশমা পরে দেখল, জানালার পাশে আমির দাঁড়িয়ে আছে। ওর পরনে সাদা পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা। মাথার উপর চাঁদ। যেন চাঁদটা তার সঙ্গী।

পদ্মজা আবেগে আপ্লুত হয়ে বলল, ‘আপনি এসেছেন!’

‘না এসে থাকি কী করে? তোমায় ছাড়া কখনো থেকেছি আমি?”

পদ্মজার ঠোঁট দুটি ভেঙে এলো, ‘আমাকে ছাড়াই তো থাকেন।’

‘আমি সবসময় তোমার সঙ্গে থাকি। কখনো ছেড়ে যাই না।’

‘তাহলে সামনে কেন আসেন না? আমাকে কষ্ট দিতে ভালো লাগে? আপনি তো এমন ছিলেন না।’

‘ক্ষমা করে দাও। আর লুকিয়ে থাকব না।’

‘এবার কিন্তু আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন।’

নুড়ি পিছনে এসে দাঁড়ায়। পদ্মজাকে একা একা কথা বলতে দেখে ওর বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠে। জ্বর বাড়লেই পদ্মজার হ্যালুসিনেশন হয়। তখন একা একা বকবক করে, তার অদৃশ্য শ্রোতা হয় আমির হাওলাদার। নুড়িকে দেখে পদ্মজা হাসল, ‘দেখ, তোর বাবা এসেছো আমাকে নিয়ে যাবে। 


 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা ইলমা বেহরোজের ডাকনাম ইলমা। জন্ম ২০০৩ সালের ১৮ জুলাই। নেত্রকোনায় জন্ম হলেও তার বেড়ে ওঠা সিলেটে। ছোটোবেলা থেকেই গল্প/উপন্যাসের প্রতি ছিল তার ভীষণ ঝোঁক। ক্লাসের ফাঁকে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ার কারণে ̧গুরুজনদের তপ্তবাক্যও হজম করতে হয়েছে বহুবার। তবুও এই অভ্যাস কে কখনো বাদ দিতে পারেননি। সমাপ্ত গল্পকে নিজ কল্পনায় নতুনভাবে রূপ দেওয়া ছিল তার অন্যতম শখ। স্কুলের গন্ডি পেড়িয়ে একসময় তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার গল্পরাজ্যের সঙ্গে পরিচিত হোন। যেখানে সবাই নিজ চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করে নিজ লেখাকে আক্ষরিক রূপ দিয়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়। তাৎক্ষণিক নিজের কল্পনায় সাজানো গল্পগুলোকেও লিখিত রূপ দিতে শুরু করলেন তিনি। পাঠকদের থেকে আশানুরূপ সাড়া পেয়ে লেখালেখির যাত্রা অব্যাহত রাখার ইচ্ছে আরও বৃদ্ধি পায়। ফলসরূপ, রক্তে মিশে যাওয়া লেখালেখিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে পাঠকদের প্রতি ভালোবাসা থেকে বইয়ের পাতায় প্রকাশ করেছেন তাঁর প্রথম বই ‘মায়ামৃগ’। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের বইমেলায় বই আকারে প্রকাশ করেন তার আলোচিত উপন্যাস ‘আমি পদ্মজা’।

 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন