উপন্যাস        :         পদ্মমির 
লেখিকা         :          ইলমা বেহরোজ
গ্রন্থ                :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল      :          

লেখিকা ইলমা বেহরোজের “পদ্মমির” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হয়েছে।
Bangla Golpo পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ
পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ

২৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

পদ্মমির || ইলমা বেহরোজ (পর্ব -২৯ )


ওই টাকা আমার দরকার আছে। কক্সবাজারে বাংলো করব।’ বলেই ও নিচে নেমে যাচ্ছিল, আলমগীর পিছন থেকে বলল, ‘রফিক মারা যায়নি।’ আমির চমকে পিছনে তাকায়।

  চোখ খুলেই প্রথমে ডাক্তারকে দেখতে পেল রফিক। নিজেকে আবিষ্কার করল একটি হাসপাতালের বিছানায়। ডাক্তার প্রশ্ন করল, ‘দেখতে পাচ্ছেন রফিক সাহেব?’ রফিক এক চোখে ঝাপসা দেখছে, অন্য চোখে অন্ধকার। তার মনে পড়ে গেল, দুর্ঘটনার কথা। এক চোখ কী নষ্ট হয়ে গেছে? ভেবেই আঁতকে উঠল সে, ‘আমার ডান চোখে কী হয়েছে? কিছু দেখতে পাচ্ছি না কেন?’ ‘আপনি একটি চোখ হারিয়েছেন।’ রফিক হতবাক হয়ে গেল। কথাটি তার বিশ্বাস হচ্ছে না। সে বিছানা থেকে নামতে চাইল। শরীরে কী অসহ্য বেদনা। হাতে, পায়ে, মাথায় ব্যান্ডেজ। ডাক্তার বলল, ‘আপনার শরীরের উপর দিয়ে প্রচন্ড ধকল গেছে। এখন কোথাও যাবার চেষ্টা করবেন না, বিশ্রাম নিন।’ ‘আমি কতক্ষন ধরে এখানে?” ‘তিনদিন।’ রফিক অবাক হলো। ডাক্তার বলল, ‘আপনার স্ত্রী জুনি সারাক্ষণ আপনার সঙ্গে ছিলেন, সেবা করেছেন। আজ বাড়ি গেছেন।’ ‘আর কেউ ছিল না?’ ‘পুলিশ ইন্সপেক্টর হাকিম সাহেব বেশ কয়েকবার এসে দেখে গেছেন।’ রফিক ভাবছে, ‘কুতুবউদ্দিন কী আসেনি তাকে দেখতে?” জুনি ঢুকছে ঘরে। সে বলল, ‘তিন দিন ধরে কুতুবউদ্দিন স্যার নিখোঁজ। পাওয়া যাচ্ছে না।’ এমন ভয়ংকর কথা কখনো শুনেনি এমনভাবে তাকাল রফিক। জুনি বলল, ‘হঠাৎ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন। তারপর আর খোঁজ মেলেনি।’ রফিক স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছো ভুনি রফিককে শুতে সাহায্য করল। রফিক ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সে ভাবছে, কী হয়েছে তাদের সাথে? কুতুবউদ্দিন কী বেঁচে আছে? রফিক চোখ বুজল। অনেকক্ষণ চোখ বুজে পড়ে রইল। এই কাজ একমাত্র আমির করতে পারে। কিন্তু কীভাবে কী করেছে? কীভাবে পারল ও? বাসনকোসনের শব্দে চোখ মেলে চাইল সে। জুমি ট্রেতে করে খাবার নিয়ে এসেছে। হেসে বলল, ‘খেয়ে নাও।’ খাবার দেখেই রফিক বুঝতে পারল সে কতটা ক্ষুধার্ত। গপগপ করে খেয়ে শেষ করে সব খাবার। জুনি বলে, ‘আস্তে খাও, গলায় খাবার আটকাবে।’ রফিক খেয়ে আবেগঘন গলায় বলল, ‘তোমার কাছে কৃতজ্ঞ আমি।’ ‘কেন?’ ‘এইযে, তিনদিন তুমি আমার সেবা করলে।’ জুনি রফিকের গালে হাত বুলিয়ে বলল, ‘আমার বরের সেবা আমি করব না তো কে করবে?’ রফিক খুশি হয়ে জুনির হাতে চুমু খায়। পরদিন সকালে রুমে এসে ঢুকে ইন্সপেক্টর হাকিম। তাকে দেখে রফিক উঠে বসল। ‘কেমন আছেন?’ হাস্যোজ্বল মুখে বলল হাকিম। রফিক হ্যান্ডশেক করে বলল, ‘যে সবেমাত্র চোখ হারিয়েছে সে কী করে ভালো থাকবে?’ ‘ভাগ্যে যা ছিল হয়েছে। এটা ভয়ানক দুর্ঘটনা ছিল। বাঁচবেন যে সেটা কেউ ভাবিনি। স্বয়ং আল্লাহ রক্ষা করেছেন।’ ‘এটা দুর্ঘটনা নয়, কেউ আমাকে খুন করতে চেয়েছিল।’ ‘কেন এরকম মনে হচ্ছে?’ ‘আমি জানি।’ ‘সেরকম কোনো আলামত আমরা খুঁজে পাইনি।’ ‘দুর্ঘটনা নয় খুন। ওরা হয়তো আবার আমার উপর আক্রমণ করবে।’ ‘এটা শুধুমাত্র দূর্ঘটনা ছিল। আপনি ব্যালেন্স হারিয়েছিলেন।’ প্রতিবাদ করে বলল হাকিম। রফিক আর কথা বাড়াল না। হাকিম সাহেব বলল, ‘নিজের যত্ন নিন, আর চিন্তামুক্ত থাকুন। এখানে আপনি নিরাপদ।’ রফিক মাথা ঝাঁকাল। হাকিম চলে যেতেই জুনি বলল, ‘এটা সত্যি দূর্ঘটনা ছিল না?’ রফিক কাতর স্বরে বলল, ‘বিশ্বাস করো জুনি, আমি ব্যালেন্স হারাইনি। কেউ আমাকে খুন করতে চেয়েছিল।’ ‘আমি বিশ্বাস করি। তোমার ক্ষতি করার জন্য গতকাল দুজন লোক এখানে ঢুকেছিল।’ এ কথা শুনে রফিক ভড়কে যায়। চিৎকার করে উঠে, ‘তুমি এ কথা পুলিশকে বলোনি কেন?” ‘হাকিম সাহেব জানে। তবুও উনি ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছেন।’ রফিক বিড়বিড় করল, ‘ওরা সব এক দলে…সব।’ জুনি রফিকের মাথা বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে ভরসা দিল, ‘আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।’ রফিকের হঠাৎ মনে হয় জানালার পাশ থেকে কেউ তাকিয়ে আছে। সে তাকাতেই মানুষটা সরে যায়। রফিক ভয়ে ঢোক গিলল। জুনিকে ফিসফিসিয়ে বলল, ‘আমরা রাতেই এখান থেকে চলে যাব। নয়তো ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ ‘তুমি এখনো সুস্থ হওনি।’ রফিক জুনির হাত চেপে ধরে, অনুনয়ের চোখে তাকায়। ওর পাশে কেউ নেই। কুতুবউদ্দিন নিখোঁজ। হাসপাতালের পরিবেশ ঠিক লাগছে না। বাধ্য হয়ে জুনি রফিকের কথাতে সায় দিল। সেদিন রাতেই খোঁড়াতে খোঁড়াতে কাউকে না জানিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায় রফিক। রাস্তায় একটা ট্যাক্সি দেখে উঠে পড়ে ওরা। রফিকের গিটে, গিটে ব্যথা। যন্ত্রণায় মুচড়ে উঠছে কলিজা। জুনি বলল, ‘আমার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজো। ততক্ষণে পৌঁছে যাব আমরা।’ জুনির স্নেহার্দ্র আচরণে রফিক মুগ্ধা সে জুনির কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজল। কখন ঘুমিয়ে পড়ল টেরই পেল না। চোখ খুলে পাশে জুনিকে দেখতে না পেয়ে রফিক জানালার বাইরে তাকাল। হাওড়ের মাঝে গাড়ি! রফিক চোখ ঘুরিয়ে চারপাশ দেখে। ড্রাইভার চুপচাপ বসে আছে। রফিক ঠোঁট ভিজিয়ে কোনোমতে বলল, ‘জুনি…আ… আমার পাশে যে-‘ কথা শেষ করার পূর্বেই ড্রাইভার ঘুরে তাকাল। মানুষটিকে দেখে রফিকের মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল স্রোত বেয়ে যায়। রগে রগে পড়ে টান। অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করে, ‘তুই!’ আমির দাঁত বের করে হাসল। গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়

 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা ইলমা বেহরোজের ডাকনাম ইলমা। জন্ম ২০০৩ সালের ১৮ জুলাই। নেত্রকোনায় জন্ম হলেও তার বেড়ে ওঠা সিলেটে। ছোটোবেলা থেকেই গল্প/উপন্যাসের প্রতি ছিল তার ভীষণ ঝোঁক। ক্লাসের ফাঁকে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ার কারণে ̧গুরুজনদের তপ্তবাক্যও হজম করতে হয়েছে বহুবার। তবুও এই অভ্যাস কে কখনো বাদ দিতে পারেননি। সমাপ্ত গল্পকে নিজ কল্পনায় নতুনভাবে রূপ দেওয়া ছিল তার অন্যতম শখ। স্কুলের গন্ডি পেড়িয়ে একসময় তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার গল্পরাজ্যের সঙ্গে পরিচিত হোন। যেখানে সবাই নিজ চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করে নিজ লেখাকে আক্ষরিক রূপ দিয়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়। তাৎক্ষণিক নিজের কল্পনায় সাজানো গল্পগুলোকেও লিখিত রূপ দিতে শুরু করলেন তিনি। পাঠকদের থেকে আশানুরূপ সাড়া পেয়ে লেখালেখির যাত্রা অব্যাহত রাখার ইচ্ছে আরও বৃদ্ধি পায়। ফলসরূপ, রক্তে মিশে যাওয়া লেখালেখিকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে পাঠকদের প্রতি ভালোবাসা থেকে বইয়ের পাতায় প্রকাশ করেছেন তাঁর প্রথম বই ‘মায়ামৃগ’। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের বইমেলায় বই আকারে প্রকাশ করেন তার আলোচিত উপন্যাস ‘আমি পদ্মজা’।

 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন