লেখিকা মৌরি মরিয়মের “প্রেমাতাল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম Ebook |
১৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রেমাতাল || মৌরি মরিয়ম (পর্ব - ২০)
তিতির
মুগ্ধকে জড়িয়ে
ধরার
পর
মুগ্ধও
তিতিরকে ধরলো
কিন্তু
কয়েক
সেকেন্ডের জন্য।
তারপর
ছেড়ে
দিয়ে
বলল,
-"এইযে তিতিরপাখি! এবার
ফোন
নাম্বারটা বলো।"
-"01710533336"
-"আচ্ছা এবার বাসায়
গিয়ে
ভেজা
কাপড়
ছাড়ো।
আমি
বাসায়
গিয়ে
কল
দিচ্ছি।"
-"আচ্ছা, কিন্তু একবার
শুনেই
নাম্বারটা মনে
রাখতে
পারবেন?"
মুগ্ধ
নাম্বারটা বলল।
তিতির
দেখলো
মুগ্ধ
ঠিক
নাম্বারই বলেছে।
একবার
শুনেই
কি
করে
মনে
রাখতে
পারলো!
ভালই
হয়েছে
তিতির
এই
টাইপের
জিনিসগুলো মনে
রাখতে
পারেনা। এখন
থেকে
এগুলো
মনে
রাখার
দায়িত্ব মুগ্ধকেই দিয়ে
দিবে।
তিতির
এক পা দুপা
করে
পিছিয়ে
উলটো
ঘুরে
বাসায়
ঢুকে
গেল।
সিঁড়িতে উঠতেই
ওর
খেয়াল
হলো
ও
নিজের
বাসার
সামনের
রাস্তায় দাঁড়িয়ে মুগ্ধকে জড়িয়ে
ধরেছিল!
ভয়ে
শরীরে
কাটা
দিয়ে
উঠলো।
কেউ
দেখে
ফেলেনি
তো?
নিজের
ফ্যামিলির কেউ
না
হোক
আশেপাশের ফ্ল্যাটের কেউ
দেখলেও
বিপদ
আছে
কপালে।
তিতির বাসায় ঢুকে
যেতেই
মুগ্ধ
নিজের
বাসার
দিকে
রওনা
হল।
শত
শত
বৃষ্টির ফোটা
রাস্তায় জমে
যাওয়া
বৃষ্টির পানিতে
টুপ
করে
পড়েই
ছোট
একটা
সার্কেল হচ্ছে
তারপর
সেই
সার্কেল বড়
হতে
হতে
মিলিয়ে
যাচ্ছে। এই
সাধারণ
দৃশ্যও
আজ
মুগ্ধর
কাছে
অসাধারণ লাগছে।
মনে
মনে
তিতিরকে বলছিল,
'আমি জানতাম তুমি
আমাকে
ভালবাসো। তবু
কেন
আমার
এতটা
ভাল
লাগছে
তিতির?'
বাসায়
গিয়ে
কোনরকমে ভেজা
কাপড়
পালটে
ফোনটা
পলিথিন
থেকে
বের
করলো।
বৃষ্টি
নামায়
ও
চা
ওয়ালার
কাছ
থেকে
একটা
পলিথিন
নিয়ে
ফোনটা
পেঁচিয়ে রেখেছিল। তবু
ফোনটা
ভিজে
গেছে
খানিকটা। ভালমতো
মুছে
নাম্বারটা টাইপ করতেই দেখলো
সাজেশন
এসেছে!
তিতিরের নাম্বার আগে
ইউজড
হয়েছে
ওর
ফোনে!
কিভাবে!
সাজেশনে ঢুকতেই
দেখলো
সকালে
এই
নাম্বার থেকেই
কল
এসেছিল
যাকে
ও
অনেক
ঝেড়ে
দিয়েছিল। তার
মানে
ও
ওর
বাবার
ফোন
ঘেটে
নাম্বারটা বের
করেছিল
কিন্তু
সিওর
ছিলনা।
ঝাড়ি
খেয়ে
কেটে
দিয়েছিল। মুগ্ধ
নাম্বারটা ডায়াল
করল।
প্রায়
সাথে
সাথেই
ওপাশ
থেকে
হার্টবিট বাড়ানো
সেই
কণ্ঠস্বর,
-"হ্যালো।"
-"হ্যালো। চেঞ্জ করেছো?"
তিতির
ফোনটা
হাতে
নিয়েই
বসেছিল। অধীর
আগ্রহে
বসে
থাকার
পর
মুগ্ধর
এইটুকু
কথা
যেন
একগুচ্ছ সাদা
কামিনী
ফুলের
মত
বুকের
মাঝে
এসে
লুটিয়ে
পড়লো।
তিতির
মনে
মনেই
সেগুলোকে দুহাতে
জড়িয়ে
ধরতে
চাইলো,
-"হুম। আপনি?"
-"করেছি। মাথা মুছেছো
ভাল
করে?"
-"হুম।"
-"ঘোড়ার ডিম মুছেছো! তুমি তো মাথাই
মুছতে
পারোনা। টপটপ
করে
পানি
পড়তে
থাকে
চুল
থেকে।"
-"হ্যা তা ঠিক,
এর
চেয়ে
ভাল
মুছতে
পারিনা।"
-"হ্যা সেজন্যই তো
চিন্তায় পড়ে
গেছি।"
-"কিসের চিন্তা?"
-"আমার বাচ্চাকাচ্চাদের তো
সারাবছর ঠান্ডা
লেগে
থাকবে।"
-"মানে?"
-"মানে মা নিজেই
যেখানে
চুল
মুছতে
পারেনা
সেখানে
বাচ্চাদের চুল
কি
করে
মুছবে?"
তিতির
লজ্জা
পেয়ে
চুপ
করে
রইলো।
মুগ্ধও
তা
বুঝতে
পারলো।
এরপর
বলল,
-"অনেস্টলি স্পিকিং তিতির, আমার যে
তিনটা
গার্লফ্রেন্ড ছিল
তাদের
কারো
সাথেই
আমি
বাচ্চাকাচ্চা পর্যন্ত কথা
বলিনি।
কারও
প্রতি
এতটা
মুগ্ধতা আমার
ছিলই
না।
তোমার
সাথে
বললাম,
ভবিষ্যতেও বলবো।
তোমাকে
আমার
বাচ্চাদের মা
হতেই
হবে।
চুল
মুছতে
না
পারলেও
প্রব্লেম নেই।
আমি
শিখিয়ে
দেব।
আর
ছুটির
দিনগুলোতে আমিই
মুছে
দেব।
সকালে
আর
রাতে
ওদেরকে
আমিই
খাইয়ে
দেব।
তুমি
শুধু
কষ্ট
করে
দুপুরে
খাওয়াবে। বাইরে
বেরোলে
বাচ্চারা সব
আমার
কোলে
থাকবে।
একসাথে
দুজন
পর্যন্ত কোলে
নিতে
পারবো।
অভ্যাস
আছে,
ছোট
ভাইবোন
দুটোকেই একসাথে
কোলে
নিতে
হয়েছে।
কিন্তু
দুটোর
পরের
বাচ্চাগুলো অবশ্য
তোমাকেই নিতে
হবে।"
-"আপনি প্লিজ থামবেন?
এগুলো
কোনো
কথা
হলো?"
মুখে
এসব
বললেও
তিতির
মনে
মনে
উড়ছিল।
মুগ্ধ
বলল,
-"থামবো কেন? কেবল তো শুরু।"
-"আপাতত অন্য কথা
বলুন।
আমার
খুব
লজ্জা
করছে।"
-"এটাই তো মুশকিল। আমি
তোমাকে
কোনো
কথাই
আর
লজ্জা
দেয়া
ছাড়া
বলতে
পারবো
বলে
মনে
হয়না।"
-"ইশ! ওনার ওসব
কথা
শুনতে
আমি
যেন
বসে
আছি।
আচ্ছা
বলুন
তো
আপনার
আমার
জন্য
এই
ফিলিং
টা
কবে
হয়েছে?"
-"স্পেসিফিক করে বলতে পারবো
না।
একটু
একটু
করে
হয়েছে।
তবে
তোমার
ঘুমন্ত
মুখটার
উপরই
প্রথম
ক্রাশ
খেয়েছিলাম। তারপর
সেকেন্ড ক্রাশটা থানচি
গেস্ট
হাউজে
গোসলের
পর
যখন
তোমার
চুল
থেকে
টপটপ
করে
পানি
পড়ছিল
তখন।
কিন্তু
এসব
শুধুই
ক্রাশ!
ভালবাসা হয়েছে
একসাথে
পথ
চলতে
চলতে
যখন
দেখেছি
তুমি
ঠিক
আমার
মনেরই
মতন,
তখন।
আর
শুরুতে
একদম
এরকম
ভাবিনি। আমি
সাধারণত বাচ্চা
মেয়েদের দিকে
নজর
দিই
না।"
তিতির
অবাক
হয়ে
বলল,
-"আমি বাচ্চা?"
-"অবশ্যই তুমি বাচ্চা। ৮
বছরের
ছোট
তুমি।
আমার
তোমার
বয়সের
কোনো
মেয়ের
সাথে
প্রেমের কথা
চিন্তা
করতেও
খারাপ
লাগতো।
বড়জোর
আমার চেয়ে ২/৩ বছর ছোট
যারা
তাদের
সাথে
প্রেমটা প্রেফার করতাম।
কিন্তু
এখন
বুঝলাম
বাচ্চাদের সাথেই
প্রেমে
সবচেয়ে
মজা।"
-"কিরকম?"
-"সেটা ঠিক বলে
বোঝানো
সম্ভব
না।"
-"ও। কিন্তু আমি
তো
আর
এরকম
বাচ্চা
থাকবো
না,
বড়
হবো
একসময়...
তখন?"
-"হুম অবশ্যই তুমি
বড়
হবে।
আমিও
কিন্তু
এই
বয়সেই
থেমে
থাকবো
না।
তুমি
আজীবনই
আমার
থেকে
৮
বছর
কম
ম্যাচিওর থাকবে।
তাই
অলওয়েজ
তুমি
আমার
কাছে
বাচ্চাই থাকবে।
বুঝেছো
তিতিরপাখি?"
তিতির
হাসলো
কোনো
কথা
বলল
না।
মুগ্ধও
উত্তরের অপেক্ষায় রইলো
না।
বলল,
-"এবার তুমি বলোতো
তোমার
এসব
ফিলিং
আসলো
কবে,
কিভাবে?"
-"আমিও জানিনা। আমারও
একটু
একটু
করেই
হয়েছে।
কিন্তু
আপনি
যেরকম
ক্রাশের কথা
বললেন
ওরকম
বলতে
গেলে
বলতে
হবে
আমি
প্রথম
আপনার
পায়ের
উপর
ক্রাশ
খেয়েছিলাম।"
-"হুম খেয়াল করেছি
তো।
কি
লোভাতুর চোখে
তাকিয়ে
ছিলে
আমার
পায়ের
দিকে!"
-"ইশ! ছিঃ কখনোই
লোভাতুর চোখে
তাকাইনি। নরমালি
তাকিয়েছি। আপনি
যেরকম
আমার
দিকে
তাকিয়ে
থাকতেন
ওরকমই।"
-"হুম আমি যেন
বুঝিনা!"
-"বোঝেনই না।"
-"ভাল কথা মনে
পড়েছে
শোনো..
তুমি
রেমাক্রি গেস্ট
হাউজের
বারান্দায় স্যাভলন লাগাতে
দিয়েছিলে না
আমাকে?"
-"হ্যা।"
-"ওভাবে ভেজা চুল
সরিয়ে
অত
সুন্দর
ঘাড়
কোনো
পুরুষের সামনে
ধরলে
কি
হয়
জানো?"
-"কি হয়?"
-"সেই পুরুষের চরিত্র
নষ্ট
হয়।"
-"মানে?"
-"তখন যদি ঘাড়ে
একটা
চুমু
দিতাম
কি
হত?
আমি
চরিত্রহীনই তো
প্রমানিত হতাম।"
তিতির
লজ্জায়
আর
কোনো
কথাই
বলতে
পারলো
না।
কিন্তু
মনে
মনে
বলল,'দিলেও খুশিই হতাম
যেমনটা
রাতে
হয়েছিলাম।'
মুগ্ধ
বলল,
-"আরে বাবা বার
বার
সাইলেন্ট মুডে
চলে
গেলে
তো
হবেনা।
এটলিস্ট ভাইব্রেশনে আসো।"
-"শুনছি।"
-"নেক্সট টাইম ভুলেও
একাজ
করোনা।
তাহলে
কিন্তু
আর
ছাড়বো
না।"
-"নেক্সট টাইম আপনিও
খালি
গায়ে
আর
হাফ
কিংবা
থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে আমার সামনে
আসবেন
না।"
-"কেন? আসলে কি
তুমিও চরিত্রহীনা হবে?
তাহলে
আমি
বার
বার
ওভাবে
তোমার
সামনে
আসতে
চাই।"
-"না। কিন্তু মার
লাগাতে
পারি।"
-"মারকে কিভাবে আদরে
পরিণত
করতে
হয়
সেটা
আমি
ভাল
করেই
জানি
সুন্দরী।"
-"উফফ অন্য কথা
বলুন।
খেয়েছেন দুপুরে?"
-"না টেনশনে কি
খাওয়া
হজম
হতো?"
-"যান গিয়ে খেয়ে
নেন।
পরে
কথা
বলছি।"
-"তুমি খেয়েছো?"
-"হুম। খেতে ইচ্ছে
করছিলনা। জোড়
করে
খেয়েছি। আমার
বাসায়
না
খেয়ে
থাকা
অসম্ভব। আর
আমি
ফিরেছি
বলে
বাবা
দুপুরে
বাসায়
খেয়েছে
আমাকে
সাথে
করে।"
-"ভাল করেছো। আমার
মাও
এরকম।
কিন্তু
অনেকদিন মায়ের
সাথে
বসে
খাওয়া
হয়না।"
-"যেতে পারেন না?"
-"যাই তো। প্রতি
মাসে
একবার
যাই।
তাছাড়া
ছোট
ভাইবোন
দের
পরীক্ষা হয়ে
গেলেই
বাবা
ছাড়া
ফুল
ফ্যামিলি ঢাকায়
চলে
আসবে।
তখন
শুধু
শান্তি
আর
শান্তি।"
-"ওদের কি পরিক্ষা? কিসে
পড়ে?"
-"স্নিগ্ধর জেএসসি পরীক্ষা আর
পিউ
এর
এইচএসসি পরীক্ষা।"
-"বাহ নামগুলো সুন্দর
তো।
আগে
বলেননি
কেন?"
-"আগে তো তুমি
জিজ্ঞেস করোনি।
আর
এখন
তো
ওদের
কথা
অনেক
বলতে
হবে।
বার
বার
ছোট
ভাই
ছোট
বোন
বলতে
কেমন
লাগে
না?
তাই
নাম
বলে
দিলাম।"
-"ভাল করেছেন। এখন
খেয়ে
আসুন
না
প্লিজ।
আমি
তো
আছিই..
কথাও
হবে।"
-"পরে খাব।"
-"না এক্ষুনি খেতে
হবে
নাহলে
আর
একটা
কথাও
বলবো
না।"
-"উফ কি ব্ল্যাকমেইল রে
বাবা।"
-"যান না প্লিজ
প্লিজ
প্লিজ।"
-"ওকে। ১০ মিনিটে
খেয়ে
আসছি।"
-"হুম আপনি যান।
আমি
অপেক্ষা করছি।"
এরপর
মুগ্ধ
খেতে
গেল।
তিতির
ফোন
হাতে
বসে
ছিল।
ড্রেসিং টেবিলের দিকে
চোখ
পড়তেই
ওদের
কাজের
মেয়েজে
ডাকলো,
-"চম্পা, এই চম্পা..."
চম্পা এসে বলল,
-"জ্বী আফা.."
-"ভেতরে আয়।"
-"গেট লাগাইন্যা দি।"
-"ওহ দাঁড়া খুলছি।"
তিতির
দরজা
খুলে
দিতেই
চম্পা
ঘরে
এল।
তিতির
ওর
ড্রেসিং টেবিলের ওপর
থেকে
সব
লিপস্টিক গুলো
তুলে
চম্পার
হাতে
দিয়ে
হেসে
বলল,
-"এগুলো এখন থেকে
তোর।"
চম্পা
অবাক,
-"আফা আমনের মাতার
গন্ডগোল হইসে নাকি? এত
দামি
জিনিসগুলা আমারে
দিয়া
দিতাসেন যে!"
-"ওড়নার আঁচলটা মেলে
ধর
তো।"
চম্পা
হতভম্ব
হয়ে
তিতিরের কথামত
আঁচল
মেলে
ধরল।
তিতির
এবার
মেকাপ
বক্স
আর
নেইপলিশ গুলো
তুলে
ওর
আঁচলে
দিয়ে
বলল,
-"এগুলোও তোর।"
-"আফা সব দিয়া
দিতাসেন ক্যা?"
-"এগুলো তুই আমাকে
রেগুলার ইউজ
করতে
দেখেছিস কখনো?
চাচী,
ফুপি
আর
আপুদের
কাছ
থেকে
গিফট
পেতে
পেতে
এত
জমে
গেছে।"
-"হ কিন্তু মাঝেমইধ্যে তো
এগুলান
লাগান
দেহি।"
-"হুম। আগে মাঝেমধ্যে লাগতো।
কিন্তু
এখন
থেকে
আর
মাঝেমধ্যেও লাগবে
না।
তাই
তোকে
দিয়ে
দিলাম।
এখন
তুই
যা।"
চম্পার
বিস্ময়
কাটছিল
না।
বিস্ময়
নিয়েই
চম্পা
ঘর
থেকে
বের
হলো,
তিতির
আবার
দরজা
লাগিয়ে
দিল।
তারপর
তিতির
আবার
বিছানায় শুয়ে
মুগ্ধর
ফোনকলের জন্য
অপেক্ষা করতে
লাগলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই
কল
এল।
তিতির
মহানন্দে ফোন
ধরলো,
-"হ্যালো।"
-"হুম, খেয়েছি। এবার
খুশি?"
তিতির
হেসে
বলল,
-"হুম খুশি।"
মুগ্ধ
বলল,
-"আচ্ছা একটা ইম্পরট্যান্ট কথা
জানার
ছিল।"
-"কি বলুন?"
-"নিজের বাসার সামনে
দাঁড়িয়ে ওভাবে
আমাকে
জড়িয়ে
ধরার
সাহস
তুমি
পেলে
কোথায়
বলোতো?
আমার
কিন্তু
খুব
ভয়
করছিল।"
-"আমি নিজেও জানিনা। বাসায়
আসার
পর
ভয়
লেগেছে
কিন্তু
তখন
আমার
হুশ
ছিলনা।
সারাদিন কত
খোঁজার
পর
পেয়েছি
জানেন?"
-"হুম জানি।"
-"কি করে জানেন?"
-"তুমি বিকাল ৩
টার
দিকে
আমার
বাসায়
এসে
দারোয়ানের কাছে
আমার
খোঁজ
করেছিলে।"
-"হ্যা, কিন্তু সে
বলেছে
মুগ্ধ
নামের
কেউ
ওই
বাড়িতে
থাকেই
না।
আসল
ঘটনা
কি?
আপনি
কি
আসলেই
ওই
বাসাতে
থাকেন?"
-"হ্যা।"
-"তাহলে উনি মিথ্যে
বলল
কেন?"
-"মিথ্যে বলেনি। আসলে
আমার
ফরমাল
নেম
হলো
মেহবুব
চৌধুরী। নিক
নেম
মুগ্ধ।
তো
স্কুল,
কলেজ,
ভার্সিটি, অফিস
সব
যায়গাতে সবাই
আমাকে
মেহবুবই ডাকে।
বাসায়
যে
ফ্রেন্ডদের সাথে
থাকি
ওদের
মধ্যে
দুজন
ভার্সিটি ফ্রেন্ড আর
একজন
স্কুলফ্রেন্ড। ওরাও
মেহবুব
ডাকে,
ভাড়াটিয়ার লিস্টেও মেহবুব
চৌধুরী। তো
দারোয়ান কিভাবে
জানবে
বলো?"
-"ও, তাহলে সে
আপনাকে
বলল
কিভাবে
আমি
খুঁজতে
গিয়েছিলাম? আমি
তো
মুগ্ধকেই খুঁজেছি।"
-"আমি বের হবার
সময়
ওকে
বললাম
আমার
খোঁজে
একটা
মেয়ে
আসতে
পারে।
যে
মুগ্ধকে খুঁজবে। আমার
ডাক
নাম
মুগ্ধ।
যদি
কেউ
আসে
আমার
নাম্বারটা যেন
দিয়ে
দেয়।
তখন
ও
বলল
অলরেডি
একজন
এসেছিল,
ও
বলেছে
এই
নামে
কেউ
থাকেনা,
এইতো।"
-"ওহ।"
-"জানি আরো খুঁজেছিলে। তোমার
বাবার
মোবাইল
ঘেঁটে
আমাকে
কল
করেছিলে কিন্তু
আমার
ঝাড়ি
খেয়ে
আর
কথা
বলোনি।
কথা
বললে
কিন্তু
সকালেই
পেতাম।
তুমি
আমার কণ্ঠস্বর না
চিনলেও
তোমারটা আমি
চিনতাম।"
-"তার মানে আমি
ঠিক
নাম্বারই বের
করেছিলাম? ওই
কর্কশ
কণ্ঠী
লোকটা
আপনি
ছিলেন?"
মুগ্ধ
হেসে
বলল,
-"তখন তোমাকে খুঁজছিলাম তো
পাচ্ছিলাম না
তাই
মেজাজটা খুব
খারাপ
হয়ে
ছিল।
তার
উপর
তুমি
ফোন
দিয়ে
কথা
বলছিলে
না।
তাই
ঝেড়ে
দিয়েছি। আই এম সরি
ফর
দ্যাট
মাই
তিতিরপাখি।"
আহ
কি
মিষ্টি
কি
মিষ্টি!
তিতির
বলল,
-"আমি যখন বুড়ী
হয়ে
যাব
তখনও
আপনি
আমাকে
এভাবেই
তিতিরপাখি ডাকবেন?"
-"হুম সারাজীবন।"
-"দেখা যাবে।"
-"মানে?"
-"সবাইকে তো বলতে
শুনি
বয়ফ্রেন্ডরা প্রেম
হওয়ার
সময়
অনেক
কিছু
বলে
পরে
সেগুলো
ভুলে
যায়।"
মুগ্ধ
হেসে
দিল।
তিতির
বলল,
-"হাসছেন কেন?"
-"এমনি।"
-"হাসলে হবে না
উত্তর
দিন।"
-"যখন বলা বন্ধ
করে
দেব
তখন
নাহয়
শাস্তি
দিও।"
-"ওকে! শুনুন না
আমি
আপনাকে
আরো
খুঁজেছি। সাফি
ভাইয়াকে সারাদিন কল
করেছি।
উনি
ধরেনি,
কিন্তু
নিশ্চই
দেখেছে
কারন
কল
করতে
করতেই
ওনার
ফোন
অনেকবার বিজি
পেয়েছি।"
মুগ্ধ
হেসে
বলল,
-"ও তুমিও কল
করছিলে?
এবার
বুঝেছি। আসলে
আমিও
ওকে
কল
করছিলাম। তাই
তুমি
যখন
কল
করেছো
তখন
আমি
বিজি
পেয়েছি
আর
আমি
যখন
কল
করেছি
তখন
তুমি
বিজি
পেয়েছো। দেখেছো
আমাদের
দুজনের
কি
অবস্থা
হয়েছিল?
সেটা
কি
শুধু
শুধুই?
তুমি
আমার
বাচ্চাদের মা
হবে
বলেই
তো।"
-"ধ্যাত! বলুন না
সত্যি
আপনিও
কল
করছিলেন?"
-"হুম। কারো সাথে
কথা
বললে
ওয়েটিং
দেখাতো। ওর
ওয়েটিং
সার্ভিস চালু
করা
আছে।"
-"ওহ!"
কিচ্ছুক্ষণ থেমে
তিতির
বলল,
-"কিন্তু এখন আরেকটা
কথা
বলার
ছিল।"
-"বলো.. তোমার সব
কথা
শোনার
জন্যই
বসে
আছি।"
-"আমি যে সেই
কখন
থেকে
আপনি
আপনি
করে
যাচ্ছি
সেদিকে
তো
কারো
খেয়াল
নেই।
একবারও
তো
বলল
না
তুমি
করে
বলতে।"
মুগ্ধ
মজা
করে
বলল,
-"কে বলোতো? কার
এতবড়
সাহস?
-"আপনি! বুঝেও আবার
ঢঙ
করছে।"
মুগ্ধ
হা
হা
করে
হাসলো।
তারপর
বলল,
-"সিরিয়াসলি সবসময় তুমিতেই যে
রোমান্টিকতা আসে
তা
কিন্তু
না।
তোমার
মুখে
ওই
আপনিটাই আমার
বেশ
লাগে।
তোমার
ওই
আপনি,
শুনছেন,
শুনুন
এগুলো
কত
যে
রোমান্টিক আর
কত
যে
মিষ্টি
লাগে
তা
তুমি
বুঝবে
না।"
-"তাহলে কি আমি
আজীবন
আপনাকে
আপনি
করেই
বলবো?"
-"তোমার ইচ্ছে।"
-"অবশ্য হুট করে
আপনি
থেকে
তুমি
বলাটাও
মুশকিল।"
-"তোমার যখন যা
ইচ্ছে
তুমি
ডাকতে
পারো।
কিন্তু
শুধু
তুমি
করে
বললে,
কোলে
উঠলে
আর
জড়িয়ে
ধরলেই
তো
হবে
না।
বৃষ্টিতে ভিজে
যে
কথাটা
বলেছিলাম তার
উত্তর
চাই।"
-"এতকিছুর পর আবার উত্তরের কিছু
বাকী থাকে নাকি?"
-"থাকে কারন, আমি
উত্তরটা তোমার
মুখ
থেকে
শুনতে
চাই।"
তিতির
লাজুক
স্বরে
বলল,
-"আমি বলতে পারবো
না।"
-"সিরিয়াসলি, এই প্রথম শুনলাম
কোন
মেয়ে
ঢাকা
শহরের
খোলা
রাস্তায় নিজের
বাড়ির
সামনে
একটা
ছেলেকে
জড়িয়ে
ধরতে
লজ্জা
পায়না
কিন্তু
ঘরের
মধ্যে
ফোনে
"আই
লাভ
ইউ"
জাস্ট
তিনটা
শব্দ
বলতে
লজ্জা
পায়।"
-"হুম কারন, সবাই
তিতির
না।"
মুগ্ধ
হেসে
হেসে
বলল,
-"দ্যাটস হোয়াই মুগ্ধ
মার্ডারড বাই
তিতির।"
তিতিরিও হেসে
দিল।
মুগ্ধ
বলল,
-"আচ্ছা ফোর্স করবোনা। কিন্তু
অপেক্ষা করবো।"
এভাবেই
শুরু
হয়েছিল
এই
দুই
প্রেমাতালের একসাথে
পথচলা।
পাঁচ
বছর
কেটে
গেলেও
তিতিরের মনে
হয়
এইতো
সেদিনের কথা।
সব
স্পষ্ট
কানে
বাজে
আজও।
রাস্তায় ফুটপাত
ধরে
হাঁটতে
হাঁটতে
ভাবছিল
তিতির।
আজ
ওরা
দুজন
দুজনের
থেকে
আলাদা।
কোন
যোগাযোগ নেই,
দুজনের
ফোন
নাম্বার দুজনের
কাছে
থাকলেও
কথা
হয়না।
দেখা
হয়না
প্রায়
৭
মাস
হতে
চললো।
খুব
কষ্টে
সামলে
নিয়েছে
তিতির।
মেনে
নিয়েছে
মানুষের জীবনের
সব
চাওয়া
পূরণ
হয়না।
প্রতি
রাতে
কাঁদে
সকালে
উঠে
সেই
কান্নার সৎকার করে প্লাস্টিক একটা
হাসি
ঝুলিয়ে
রাখতে
হয়
সারাদিন। এই
রুটিনে
বেশ
মানিয়ে
গেছে
তিতির।
মানিয়ে
গেছে
মুগ্ধও
কিন্তু
হঠাৎ
হঠাৎ
মুগ্ধ
ফোন
করে,
মাসে
হয়তো
একবার।
যখন
মুগ্ধ
আর
কোনভাবেই নিজেকে
কন্ট্রোলে রাখতে
পারেনা
তখনই
ফোন
করে
কিন্তু
ওর
ওই
একটা
ফোনকল
তিতিরের সব ওলট পালট
করে
দেয়।
পাগলের
মত
হয়ে
যায়।
না
পারে
মুগ্ধর
কাছে
যেতে
না
পারে
ওকে
ছাড়া
থাকতে
আর
না
পারে
মরে
যেতে।
যেন
হাজার
হাজার
বিষলতা
আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে
রেখেছে
ওকে।
আর
সেই
বিষলতা
গুলো
থেকে
গুটি
গুটি
পায়ে
বের
হয়ে
আসা
হাজার
হাজার
বিষপোকা তাদের
সূঁচালো ঠোঁট
দিয়ে
খুবলে
খুবলে
রক্তাক্ত করে
ফেলে
ওর
ভেতরটা। কাল
রাতে
মুগ্ধ
ফোন
করার
পর
তিতিরের আবার
সেই
অবস্থাই হয়েছে।
আরো
বেশি
পাগল
পাগল
লাগছে
গানটা
শুনে..
"ভাল
আছি
ভাল
থেকো।"
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
২১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তরুণ লেখিকা মৌরি মরিয়ম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন