উপন্যাস : আদিল মির্জা'স বিলাভড
লেখিকা : নাবিলা ইষ্ক
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১৭ই অক্টোবর, ২০২৫ ইং
লেখিকা নাবিলা ইষ্ক-র “আদিল মির্জা'স বিলাভড” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৫ সালের ১৭ই অক্টোবর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
| আদিল মির্জা'স বিলাভড || নাবিলা ইষ্ক |
আদিল মির্জা'স বিলাভড || নাবিলা ইষ্ক (পর্ব - ১১)
জিহাদ যখন এলো তখনো তার চোখে ঘুমঘুম ভাব। সাথে নিজের বাবা-মাকে সে আনেনি। একাই এসেছে কোনোরকমে। রোযা লিভিংরুমেই বসেছিল। আজ সারাদিন সে এখানেই বসে কাটিয়েছে —টেলিভিশনের সামনে। দুপুরের লাঞ্চ শেষে কিছুক্ষণের জন্য অবশ্য ছাদে উঠেছিল। বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি তীব্র গরমের জন্য। আপাতত নিপা বেগমের ভেজে দেয়া চিপস খাচ্ছে মুভি দেখতে দেখতে। পাশে রাজু বসে আছে। ওর মাথাটা বড়ো বোনের কাঁধে। আর পা জোড়া সোফার হাতলে। জিহাদকে দেখে রোযা দ্রুতো উঠে দাঁড়াল। এতে রাজুর মাথাটা গিয়ে পড়ল সোফায়। নরম হওয়াতে বেচারা ব্যথা পায়নি। অসন্তুষ্ট হয়ে উঠে বসল। রোযার পরনে তখনো রাতের পাজামা সেট। একটা পাতলা ওড়না কোনোরকমে গলায় ঝুলিয়ে রাখা। জিহাদ তাড়াহুড়ো করে বলল -
‘কী হয়েছে? এমনভাবে বললে, আমি ভাবলাম তুমি অসুস্থ কি-না!’
আজিজুল সাহেবও মেয়ের কর্মকাণ্ডে দিশেহারা বটে।জিজ্ঞেস করার পরও কিছুই তো বলেনি। গতকাল থেকে মেয়ের উদ্ভট আচরণ শুধু দেখে যাচ্ছেন। জিহাদের দিকে চেয়ে বললেন -
‘আসো, বসো।’
জিহাদ দ্রুতো সালাম জানাল। এসে বসল আজিজুল সাহেবের পাশে। নিপা বেগম আগেই চা বসিয়ে রেখেছিলেন। এবারে ট্রে-তে সাজিয়ে নিয়ে চা, বিস্কুট আর একগ্লাস পানি। জিহাদ পানিটা সবে মুখে দিয়েছে। এক ঢোক পানি তার গলায়। তখুনি রোযা শান্ত গলায় বলল -
‘আন্টি, আংকেলকে আসতে বলো। আমরা আজই বিয়ে করব।’
জিহাদ কেশে উঠল আর সমানে কাশতেই থাকল। রোযা চিন্তিত হয়ে এগিয়ে গিয়ে তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে আওড়াল -
‘কী হলো? অতিমাত্রায় খুশি হয়ে গেছো নাকি?’
নিজেকে শান্ত করে জিহাদ বড়ো বড়ো চোখে তাকাল। রোযার চোখমুখে যেন কিছু খুঁজছে। ঘনঘন পলক ফেলে বিশাল এক ঢোক গিলল। তোতলালো সামান্য -
‘বি-বিয়ে? আজকে!!’
রোযা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। গিয়ে বসল তার পূর্বের যায়গায়। একটু চুপ থেকে বোঝানোর সুরে বলল -
‘আমার ওতো আয়োজন, হৈ-হুল্লোড় করে বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। আর না আছে ওমন বয়স। ভাবছি পারিবারিক ভাবে করে নিই। আজই! কিছু কেনাকাটা করার প্রয়োজন হলে করা যাবে। সময় আছে।’
জিহাদ তখনো হতবিহ্বল। চোয়াল ঝুলে আছে বেচারার। কাচুমাচু করে প্রশ্ন করল -
‘তোর গায়ে কি জ্বর, রোযা? আবোলতাবোল বকতেছিস ওইজন্যে?’
রোযা অপমানবোধ করল। সে প্রত্যাশা করেছিল, জিহাদ আনন্দে লাফাবে! ছেলেটা তো একেবারে হাত ধুয়ে পেছনে পড়েছিল বিয়ে করার জন্য সেই তাদের অনার্স শেষের পর থেকে। কতভাবে যে মানানোর চেষ্টা করেছে! বন্ধুদের দিয়েও শত চেষ্টা করিয়েছিল। কিন্তু রোযা ছিলো বাবা-মায়ের বড়ো সন্তান। ছোটোবেলা থেকেই নিজেকে সবসময় গন্ডিতে রেখেছে। অযথা কোনো সম্পর্কে জড়ায়নি। সবসময় পড়াশোনার ওপরে থেকেছে। তার স্বপ্ন একটাই ছিলো। পড়াশোনা শেষ করে বড়ো চাকরি করবে। বাবা-মায়ের দায়িত্ব নেবে। ছোটো ভাইকে মানুষের মতো মানুষ করবে। কাঁধে যে ছিলো অনেক দায়িত্ব! বিয়ে করে সংসার করার মতো অবস্থা কেনো, মনমানসিকতাও ছিলো না। কিন্তু যখন সে মির্জা বাড়িতে হৃদির ন্যানি হয়ে প্রবেশ করল, মোটা অংকের টাকা পেলো —সবটা ভালো হতে থাকল। জিহাদকেও ওয়াদা করে বসল, বছর কয়েক সময় দিতে। সবকিছু সামলে উঠলেই বিয়েটা করে ফেলবে তারা। অজানা কাউকে বিয়ে করার চেয়ে জিহাদ তার কাছে বেটার অপশন মনে হয়েছিল। কয়েক বছরের সম্পর্কে প্রত্যেকদিন অন্তত ছ’বার করে বিয়ের বিষয়টা তুলেছে ছেলেটা। তাই জিহাদের এমন প্রতিক্রিয়ায় একটু বিচলিত হলেও পাত্তা দিলো না রোযা। নিশ্চয়ই কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে এমনভাবে বলছে! আর রোযা নিজেইতো সহস্রবার বেচারাকে অপেক্ষা করিয়েছে! না এর ওপর না করেছে। অগত্যা আর অনুভূতির ধার ধারল না। সুন্দর করে শুধরে দিয়ে বলল -
‘তুইতোকারি করতে নিষেধ করেছি। আই ডোন্ট লাইক ইট।’
জিহাদ ও-কথায় মনো্যোগ দিতে পারল না। দ্রুতো বলল, ‘কী হয়েছে? হঠাৎ এমন স্বীদ্ধান্ত? কিছুতেই তো রাজি হচ্ছিলে না। হঠাৎ? কাজটা কি ছেড়ে দিয়েছো?’
‘দিইনি, তবে দেবো। বিয়ের পর। বিয়েটা আজই করতে হবে, আজ রাতের ভেতর। আন্টি, আংকেলকে ফোন দাও। এখুনি!’
জিহাদ কিছুক্ষণ চুপ থাকল। রোযা উত্তরের আশায় চেয়ে আছে -
‘কী হলো? কিছু বলো?’
জিহাদ চোখের চশমাটা সামান্য ঠেলে ওঠাল নাকের ওপর। বলল, ‘মা-বাবা তো গ্রামের বাড়ি গেলেন গতকাল। তাদের ছাড়া বিয়ে কি সম্ভব?’
রোযা আরাম করে বসেছিল। তার ধারণা ছিলো আজ বিয়েটা হবেই। কারও আপত্তি থাকার কথা ছিলো না। কোনোভাবে যে বাঁধা আসতে পারে তাও কল্পনায় আসেনি। এমন উত্তরের স্প্রিংয়ের মতো লাফিয়ে উঠে চেঁচাল -
‘হোয়াট? আই মিন, হুয়াই? হোয়াট দ্য….’
আজিজুল সাহেব মেয়ের এমন প্রতিক্রিয়ায় আশ্চর্য হয়ে গেলেন। হতবাক নিপা বেগম। অথচ দুটোর একটার প্রতিক্রিয়া জিহাদের মুখে দেখা গেলো না। সে নিজেকে ভীষণ, অতিমাত্রায় শান্ত করে বলতে গিয়েও একটু থমকে গেলো -
‘রি-ধিমা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ল! ওকে নিয়ে গ্রামে গিয়েছেন।’
রোযা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে শান্ত করতে চাইল। কিন্তু পারল না। ভয় সংকোচ আবারও বুকে বাসা বাঁধতে লাগল। কেনো মনে হচ্ছে তার পায়ে শেকল পরানো হয়েছে? যা সে চাইলেও ছাড়াতে পারছে না! রোযা অসহ্য হয়ে প্রশ্ন করল -
‘অসুস্থ হয়েছে তো হাসপাতাল নিবে। ওমন এক গ্রামে নিবে কেনো যেখানে ভালো চিকিৎসা নেই!’
জিহাদ স্বাভাবিক গলায় বোঝানোর সুরে বলল, ‘ডাক্তার দেখানো হয়েছে। মানসিক ভাবেও একটু দুর্বল। যেহেতু রিধিমার জন্ম ওই গ্রামে তো ও খুব অ্যাটাচড। গ্রামের আবহাওয়ায় দ্রুতো সুস্থ হবে।’
রোযা ত্যক্ত, বিরক্ত। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আজিজুল সাহেব হটাৎ করে প্রশ্ন করলেন যেন মনে করতে পারলেন না -
‘রিধিমি-টা কে যেন?’
রোযা গিয়ে বসেছে নিজের যায়গায়। অসন্তুষ্ট হলেও বাবার প্রশ্নের জবাব নিজেই দিলো -
‘ওর খালাতো বোন। মনে নেই? শ্যামলা করে, মিষ্টি চেহারার মেয়েটা যে একবার এসেছিল? তোমাকে ডাকল, আজিজুর চাচা!’
আজিজুল সাহেবের মনে পড়ল। একদম পাতলা গড়নের একটা মায়াবতী মেয়ে। ঘন কালো চুলে দুটো বিনুনি গাঁথা ছিলো ফিতে দিয়ে। সেই কী লম্বা আর মোটা বিনুনি ছিল! আজিজুল সাহেব ভেবেছিলেন আলগা লাগানো! ঘুন ভ্রু। মিষ্টি হাসি আর টানা চোখ। হাসলে টোল পড়তো। ভদ্রসভ্য, একদম গ্রামিণী ধাঁচের। কত যেন বয়সটা ছিল? বাইশ-তেইশ তো হবেই সম্ভবত! কিন্তু সে তো জানতো বেড়াতে এসেছিল! প্রশ্ন করলেন জিহাদের দিকে চেয়ে -
‘ও কি তোমাদের বাড়ি থাকে?’
রোযা এবারও জিহাদের হয়ে উত্তর দিলো, ‘তোমাকে তো বলাই হয়নি বাবা। ওর খালা মা রা গিয়েছিলেন গতবছর। রিধিমাকে রাখার মতো কেউ ছিলো না। ওর বাবা তো ছোটোবেলা থেকেই নেই। তাই ওদের বাসাতেই থাকতো। আন্টির টেক-কেয়ার করতো। জানোই তো জিহাদ তাদের একমাত্র সন্তান! আন্টির বয়স হচ্ছে যে! তাকে দেখার জন্য তো কাউকে প্রয়োজন ছিলো?’
আজিজুল সাহেব বিড়বিড় করলেন, ‘তা ঠিক আছে। তবে এমন বড়ো মেয়েকে এখনো রেখেছো কেনো, বাবা? বিয়েশাদি দেবার জন্য ভালো ছেলে খুঁজেছো? পড়াশোনা তো মনে হয় করেনি।’
জিহাদ গলাটা পরিষ্কার করে নিলো, ‘না আংকেল। পড়াশোনা করেনি আর। অষ্টম পর্যন্ত পড়েছিল। ছে-ছেলে এবারই মনে হয় বাবা-মা দেখবেন ওখানে।’
নিপা বেগম অসন্তুষ্ট হলেন। বললেন, ‘ওখানের ছেলে কেনো? ঢাকাতেই ভালো ঘরের ছেলে দেখতাম। কয়েকবার খোঁজ করলে একটা ভালো সম্বন্ধ অবশ্যই পেতাম।’
রোযা মনে করার চেষ্টা করল রিধিমার চেহারাটা। গতবছর সে শেষ দেখেছিল মেয়েটাকে। এরপর আর দেখা হয়নি। তেমন একটা খেয়ালই নেই। জিহাদের দিকে তাকাল। দেখল জিহাদ অমনোযোগী! রোযা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল -
‘আচ্ছা ওতো ভেবো না। আংকেল, আন্টি, রিধিমা –ওরা ফিরুক। দুটো দিন না-হয় অপেক্ষা করি। তবে তুমি আজই কল করে বলে দাও যত দ্রুত সম্ভব ফিরতে। বুঝেছো? বিয়ে করাটা ভীষণভাবে ইমার্জেন্সি হয়ে গেছে। বুঝলে কী বলছি?’
জিহাদ হাসল। আওড়াল, ‘বুঝেছি।’
নিপা বেগম হেসে বললেন, ‘খেয়েছো দুপুরে? আসো ভাত খেয়ে নাও আগে। পরে চা খেও।’
জিহাদ খায়নি। তাই উঠে গিয়ে বসল ডায়িংয়ে। রোযা উঠে দাঁড়াল। সারাদিনের চিন্তাভাবনা সে ক্লান্ত একরকম। বিধ্বস্ত! আগামীকাল কাজে যেতে হবে সকাল সকাল। দুদিন ধরে ভালো ঘুম হয়নি। আজ লম্বা ঘম দিতে হবে। অগত্যা নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে বলল -
‘আমি ক্লান্ত, ঘুমাতে গেলাম। স্বেচ্ছায় উঠলে তো উঠলামই রাতে। না উঠলে আমাকে কেউ ডাকবে না। খাবারের অজুহাতেও না।’
.
জায়গাটা নিরিবিলি। বাতাস বইছে মৃদু। অদ্ভুত সব প্রাণীদের আওয়াজ ভেসে আসছে। আকাশে পূর্ণ চাঁদ। চাঁদটা ঠিক ধ্রুবের ওপর। সে দাঁড়িয়ে আছে গাড়িতে হেলান দিয়ে। ইন্সটাগ্রাম স্ক্রল করছিল আনমনা। শান্ত কল করল তখুনি। ফোন রিসিভ করে আড়মোড়া ভেঙে ধ্রুব জানাল-
‘বলদটা এসেছিল। এসে আবার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ফিরে গেছে। মিস রোযার রুমের লাইট অফ। সম্ভবত ঘুমাচ্ছেন। এইমাত্র সারাবাড়ির লাইটও বন্ধ হলো।’
শান্ত জোরেশোরে শ্বাস নিচ্ছিল। মাত্রই এলেনের সাথে যু দ্ধ করেছে। ছেলেটাকে হারানো যায় না কুস্তিতে! মির্জা বাড়ির গার্ডেনের সকল লাইট তখনো জ্বালানো। তিতান আর থোর ঘাসের ওপর বসে আছে। দারোয়ান চাচা আর গার্ডেনার চাচা মিলে লুডু খেলছেন দরজার কাছটায়। হাসাহাসিও করছেন। শান্ত স্বতঃস্ফূর্ত গলায় বলল -
‘এক্সিলেন্ট। তুই দাঁড়া, আমি বসকে জানাচ্ছি।’
— — —
এলেন হাতমুখ ধুয়ে এসে সদরদরজার সামনে দাঁড়িয়েছিল মাত্র। শান্ত হাওয়ার গতিতে তাকে ঠেলে ঢুকল ভেতরে। আদিল মির্জা ডিভানে বসে আছে। ডান হাতে ফাইল, পাশে ল্যাপটপ খোলা। ল্যাপটপের পাশে হৃদির হোমওয়ার্কের খাতা। হোমওয়ার্ক করেছিল তার পায়ের কাছটায় শুয়ে শুয়ে। আদিল কোলে নিতে চাইলে কোলেও আসেনি। অভিমান করেছে, কেনো সে মিস রোযাকে আজ আনতে পারেনি বাড়িতে! আপাতত হৃদির মাথাটা তার ঊরুতে। কিছুক্ষণ আগেই চোখ বুঝেছে। আজ সারাদিন জ্বালিয়েছে। কিছুক্ষণ পরপরই জিজ্ঞেস করেছে মিস রোযার কথা। এতো এতো কাজ, সবই পেন্ডিংয়ে রাখা আপাতত।
শান্ত কাছে এসে ধীর গলায় সবটা জানাল। এতে তেমন পরিবর্তন এলো না আদিলের চোখমুখের। সে শুধু নাকমুখে শব্দ করল। যেন সে জানতো এমন কিছুই হবে। কিন্তু কেনো? এখানে কী এমন কিছু অজানা আছে যা শান্ত জানে না? দ্য পাওয়ারফুল, ইন্টেলিজেন্ট বডিগার্ড?
‘বস, মিস রোযা বিয়ে করতে চাইলে ওই বলদ করবে না কেনো? কোনো কাহিনী আছে নাকি?’
আদিল ফাইলে চোখ রেখেই জবাবে বলল, ‘কীভাবে শিয়র হলি?’
‘না মানে, এতটুকু শিয়র যে মিস রোযা আজ পারিবারিক ভাবে বিয়েটা সারতে চেয়েছিলেন। যতটুকু জানতাম, ওই বলদ মিস রোযাকে বিয়ে করতে মুখিয়ে ছিলো। তাহলে যেহেতু আজ বিয়েটা হয়নি, তারমানে কাহিনী তো একটা হয়েছে।’
এলেন এসে দাঁড়িয়েছিল পেছনে। এযাত্রায় নির্বিকার ভাবে বলল, ‘আগামীকাল গিয়ে কি কোনভাবে ও-বাসায় সিসিটিভি লাগিয়ে আসবো?’
শান্তর চোয়াল ঝুলে এলো। আড়চোখে তাকাল স্তব্ধ হয়ে। এলেনের মুখের পরিবর্তন হলো না। আদিল হাতের ফাইলটা শেষ করে অন্যটা ধরেছে। একফাঁকে হৃদির গায়ের কম্ফর্টার ভালোভাবে টেনে দিলো। এযাত্রায় বলল -
‘আপাতত কিছুই করতে হবে না। সময় আসুক।’
সময়? কোন সময়? কীসের সময়? বস!! আপন মনে অশান্ত হলেও ওপরে শান্ত স্বাভাবিক। ওসময় ফোন বাজল আদিলের। টি-টেবিলের ওপরে রাখা ফোন স্ক্রিনে চোখ গেলো। কল করেছে আদিল মির্জার ম্যানেজার — আনোয়ার খন্দকার। আদিল সময় নিয়ে ফোন হাতে তুলে নিলো। কল রিসিভ করে কানে ধরল। ওপাশে কী বলল শান্তর জানা নেই। শুধু শুনল আদিলের আদেশে -
‘জাস্ট টেল দেম টু ফলো। কিছু করার প্রয়োজন নেই। আপডেট চাই, উইদ প্রুফ। মেডিক্যাল চেক-আপের রিপোর্ট এসেছে?’
শান্ত কি একটু কাছে গিয়ে শুনবে ওপাশের ওই বুড়োটা কী বলছে? কীসে রিপোর্ট? কাকে ফলো করাচ্ছে? পার্সোনাল বডিগার্ড হয়ে কী লাভ যদি এমন রসালো খবর শান্ত না জানে? তার বসটা একটা যাচ্ছে তাই! তার ভাবনার মধ্যেই আদিল বলল -
‘অথেনটিক রিপোর্ট চাই। ডক্টরের স্টেটমেন্ট সহও।’
———
ফজরের আজান পড়েছে মাত্র। বাইরেটা ঘুটঘুটে অন্ধকার তখনো। হৃদির ঘুম ভেঙে গেছে। অস্থির লাগছে দেখেই হয়তো-বা ঘুম ভাঙছে বার বার। আর সময়ও যেন আজ যাচ্ছেই না। তার স্নো-হোয়াইটের আসতে এখনো কতো দেরি! আজও যদি না আসে? হৃদির বাচ্চা মন আনচান করে যাচ্ছে। সে ছোটোছোটো পায়ে বেরিয়ে এলো। গ্রাউন্ডফ্লোরের ঝাড়বাতিটার রঙ পরিবর্তন করা। একটা হলদে, মৃদু আলো জ্বালানোতে পুরোপুরি উজ্জ্বল না সবটা। একটু আঁধারে। হৃদি তার বিড়াল পুতুল জড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে। এসে দাঁড়াল দুয়ারের দিকে। দুয়ারে বডিগার্ড দাঁড়িয়ে আছে দুটো। হৃদি মিষ্টি করে বলল -
‘গুড মর্নিং।’
বডিগার্ড দুটোর একটার নাম ক্লান্ত। ক্লান্ত তার আসল নাম না। তার ভালো নাম আছে। এই নামটা দিয়েছে আদিল মির্জা। কারণ ক্লান্ত কখনো ক্লান্ত হয় না। সবসময় ফাইটিং মুডে থাকে। গম্ভীরমুখে হাসি আসে না ক্লান্তর। তারপরও নরম করে হাসার চেষ্টা করল পুতুলের মতো বাচ্চার সামনে -
‘প্রিন্সেস, মর্নিং টু ইউ টু। কিন্তু আপনি এতো ভোরে উঠেছেন কেনো?’
হৃদি বাইরেটা দেখতে চেয়ে প্রশ্ন করল, 'বডিগার্ড আংকেল, ধ্রুভ আংকেল কী গিয়েছে আমার স্নো-হোয়াইটকে আনতে?’
‘আমি এক্ষুনি জেনে আসছি। হুম?’
হৃদি মাথা দোলাল। ক্লান্ত গিয়ে খোঁজ নিয়ে ফিরে এসে জানাল, ‘গিয়েছে। শীঘ্রই চলে আসবে।’
হৃদি এসে বসল সোফায়। টেলিভিশন ছাড়ল। পা দুলিয়ে কিছুক্ষণ টেলিভিশনের দিকে চেয়ে আবার কিছুক্ষণ দুয়ারের দিক তাকাল। আধঘণ্টা খানেক পর গাড়ির শব্দ শোনা গেল। হৃদি দ্রুতো নামল সোফা থেকে। তখুনি দেখল রোযা দ্রুতো কদমে ঢুকছে। মুহূর্তে চিৎকার করে ডেকে ছুটল মেয়েটা…
‘স্নো-হোয়াইট!’
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
চলবে ...
১২তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
নাবিলা ইষ্ক’র গল্প ও উপন্যাস:
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা নাবিলা ইষ্ক সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন