কবিতা          :         গাড়ি
কবি              :         মাহমুদ সাজেদিন
গ্রন্থ               :        
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ইং


মাহমুদ সাজেদিনের কবিতা Kobiyal
মাহমুদ সাজেদিনের কবিতা

গাড়ি || মাহমুদ সাজেদিন


“মা যাবি নি, গাড়ির ভিতর হুইয়া থাকবি!”
দিলশাদ বেগম আরও কিছুক্ষন চোখ খোলার চেষ্টা না করে ভাবতে থাকে, এটা কি তার বাবার গলা না কাকার?
ভাইরা সকালে স্কুলে যেত। সেও মাঝে মাঝে সাথে যেত গাড়ি চড়ার লোভে।
এখনো কি তারা বেগবাগানেই আছে? তাহলে এতদিন যে জীবন কাটালো তা কি আসলে স্বপ্ন ছিল? দু:স্বপ্ন ছিল?

কিন্তু বাবা কাকারা তো শুদ্ধ উর্দু বলতেন। এ বাংলা..
ভয়ে ভয়ে এবার চোখ খোলেন।
ছেলে কেরামত সামনে দাড়িয়ে আছে।
“সারাক্ষন তো হুইয়াই থাকোস, একটা কাঠের গাড়ি বানায় আনছি। সকালে তোরে মগবাজার স্কুলের সামনে রাইখা আমু। কিছু টাকা রোজগার হইবো। যে যা দেয় দিবো। তোর চাওন লাগবো না।”

গাড়ির দিকে তাকিয়ে দাঁতহীন দিলসাদ বেগম শব্দ করে হাসে।
১৯৩২ ক্রাইসেলর ইম্পেরিওল এর মডেলটা উনি জানতেন না তবে ইয়া বড় গাড়িটা ছিল মনে আছে।

কেরামত অবাক হয়। মাকে অনেকদিন পর হাসতে দেখে। আসলে শেষ কবে মাকে হাসতে দেখেছে মনে নাই।
কেরামতের বয়স পঞ্চাশ হয়েছে বছর ছয়/ সাত আগে। স্কুলে দপ্তরীর কাজ করে। ঘন্টা বাজায়। সন্ধ্যার দিকে ভাড়ায় রিক্সা চালায়। আগে তাতে মাকে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার ভালই কাটতো কিন্তু ইদানিং জিনিষ পত্রের যা দাম বেড়েছে, কুলাতে পারছে না। বউ কুলসুম ই এই বুদ্ধি দিয়েছে।
বড় দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছে, ছোট মেয়েটা সিক্স আর ছেলেটা এইটে পড়ে। এদের পড়ার খরচও কম না
“মা তুই কি রাগ করলি?”
দিলশাদ তখন অন্য জগতে। গড়িয়ারহাটে তিন পুরুষের কাপড়ের দোকান। তিন ছেলের পর একটাই মেয়ে। কাকারও তিন ছেলে, মেয়ে নাই। রাজকন্যার মত আদরে ছিল।

ওর যখন সাত বছর বয়স, তখন বাবা এই গাড়িটা কিনে আনে। গাড়িটা এক সময় কবি নজরুলের ছিল।পরে হাত বদল হয়ে ওদের কাছে আসে। তখন কোলকাতায় হাতে গোনা মানুষের গাড়ি ছিল। যখন গাড়িতে করে যেত সবাই হা করে তাকিয়ে থাকতো। ছোট ছোট বাচ্চারা কাচের বাইরে থেকে ওর হাত ছুঁতে চেষ্টা করতো! ওও হাত বাড়িয়ে দিত। কেউ কাওকে ছুঁতে পারতো না।

তারপর কি হল, মারা মারি কাটিকাটি! কিছু লোকজন দা ছোড়া হাতে ওদের বাসায় ঢুকে….
রক্ত আর রক্ত।
ওদের ড্রাইভার নিখিল ওর হাত ধরে টেনে টেনে শিয়ালদা ষ্টেশনে এনে ঢাকা মেইলে তুলে দিয়েছিল। তারপর থেকে জীবন অন্য রকম হয়ে গেল!

মায়ের একটু পাগলামীর ধাত আছে। বাবাও বলতো। মাঝে মাঝে মা উর্দূ কথা বলত, কোলকাতার কথা বলতো। একেবারে অসংলগ্ন!

পরদিন সকালে মায়ের ডাকে কেরামতের ঘুম ভাংলো।
মা তার  ফুটা ছাড়া একমাত্র সাদা শাড়িটা পরে বিছানায় বসে আছে।
“আব্বা, মুঝে  স্কুল যানা। চালিয়ে..

কেরামত ঠেলা গাড়ি ঠেলতে  থাকে। মা এত সহজেই রাজি হয়ে যাবে ভাবে নি। এত দারিদ্রের মাঝেও মায়ের সব সময় অন্য রকম একটা অহংকার ছিল!

দিলশাদের বেশ খুশী লাগছে। এ গাড়িতে কাঁচের বাঁধা নেই। হাত বাড়ালেই হাতে হাত ছূঁয়ে দিতে পারবে।

আপনার পছন্দের কবিতা নাম কমেন্টে জানান 


 Follow Now Our Google News

মাহমুদ সাজেদিন’র কাব্যগ্রন্থ, গল্প ও উপন্যাস
  • ঈশ্বর চন্দ্রের বঙ্গদর্শন
  • বানুস সিক্রেট
  • ডেক্সটাকার্ডিয়া ও ৯৯ টি কবিতা
  • বেনিফিট অব ডাউট


লেখক সংক্ষেপ:
মাহমুদ সাজেদিন একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। পেশাগত জীবনে তিনি একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ, এবং পাশাপাশি একজন পরিচিত লেখক হিসেবেও সুপরিচিত। ডাঃ মাহমুদ সাজেদিন বাংলাদেশের চিকিৎসা ও সাহিত্য উভয় জগতেই নিজের অবদান রেখেছেন। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডেন্টাল অনুষদের অর্থোডন্টিকস (দাঁতের ব্রেস ও সারিবদ্ধকরণ বিদ্যা) বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক এবং এফসিপিএস (FCPS) ডিগ্রিধারী ডেন্টাল সার্জন হিসেবে কর্মরত আছেন। শিক্ষকতা ও চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার সাথেও যুক্ত। চিকিৎসার ব্যস্ততার বাইরে তিনি একজন কবি ও কথাসাহিত্যিক। তিনি মূলত বাংলা ভাষায় কবিতা, গল্প ও উপন্যাস রচনা করেন। ইতোমধ্যে তার লেখা বেশকিছু বই প্রকাশিত হয়েছে যা পাঠকদের কাছে বেশ সমাদৃত।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন