কবিতা          :         পিআর নামা
কবি              :         মাহমুদ সাজেদিন
গ্রন্থ               :        
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২১ আগস্ট, ২০২৫ ইং


মাহমুদ সাজেদিনের কবিতা Kobiyal
মাহমুদ সাজেদিনের কবিতা

পিআর নামা || মাহমুদ সাজেদিন


পিআর টার্মটার সাথে পরিচয় হয় পচানব্বই সালে সার্জিরী ওয়ার্ডে। একজন বাঘ আমাদের ক্লাস নিতেন- আউআল স্যার। এক বছরে  কোনদিন তাকে হাসতে দেখি নি।
থাইরয়েডএর মাস্টার ছিলেন আর প্রস্টেটও পড়িয়েছিলেন। প্রস্টেট এনলার্জ থাকলে পায়ূ পথে আঙ্গুল ঢুকিয়ে একজামিন করতে হতো। পার রেক্টাল! সংক্ষেপে পি আর। পরীক্ষার সময় বিনাইন এনলার্জমেন্ট অব প্রস্টেট পড়লে আমরা গ্লাভস পরে বোগীকে বলতাম, আপনাকে পায়ূ পথে আঙ্গুল দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে, আপনি যদি না চান তবে করবো না।  পরীক্ষার সময় স্যার জিজ্ঞাসা করলে বলবেন, আঙ্গুল দিয়েছে। তারপর গ্লাভস খুলে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখতাম।
পরীক্ষার সময় আমার রোগীকেও তাই শিখিয়ে রাখলাম।
স্যার প্রশ্ন শুরু করার আগেই রোগী বলে উঠলো-  স্যার, আমার হো*গা*য় আঙ্গুল দিছে। সেই প্রথম আউয়াল স্যারের মুখে হাসি দেখলাম। একেবার অট্টহাসি।

আমার ছেলে অলস প্রকৃতির। ছোট থেকেই বলে আসছে, বিদেশে অনেক কষ্ট। সে বিদেশে যাবে না। আশ্বস্থ লাগতো। বন্ধুদের আড্ডায় সগৌরবে এ কথা বলায় তারা বলল, কয়কটা দিন অপেক্ষা কর, আমাদের ছেলেমেয়েরাও এমন কথা বলতো। পিআর প্রেসারে কয়েকদিন পর দেখবি কিভাবে মত বদলাবে!
কয়েকদিন পর দেখি ওদের কথাই সত্যি।  বন্ধুবান্ধবরা বিদেশ যাচ্ছে তাই পিআর প্রেসারে এরাও লাফানো শুরু করলো।

তারপর পি আর শব্দ শুনলাম আগামী নির্বাচন নিয়ে। প্রোপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন। দুই পি আর এর কোনটাই ভাল না বলে এটা নিয়ে আমার আগ্রহ কম। এ দেশে চোর ডাকাতের প্রপোরশন বেশী,  হয়তো এবার তাদেরও সংসদে লিখিত ভাবে প্রতিনিধিত্ব থাকবে!

বাচ্চাদের বিশ বছর পূর্ন হল আজ। আঠারে পার হবার ছটফটানি কিছুটা থিতিয়ে এসেছে কিন্তু একেবার থামে নি।
তাদের মা গতকালও ছেলেকে গালে তুলে ভাত খাইয়ে মেয়েকে নিয়ে বসলো। অথচ এরা দাবী করে এরা বড় হয়ে গেছে। অনেক বড়!
এরা বন্ধন ছিন্ন করতে চায়, পরদেশে যেয়ে ছিন্নমূল হতে চায়। ভালবাসার উত্তাপে, অসম্ভব যত্ন ফোটানো ফুল, ভুলে যেতে চায় ওদের জন্য আমাদের অসংখ্য নিদ্রাবিহীন রাত!

এদের মা, যে ছেলেমেয়ে বাইরে যাবে চিন্তা করলেই ‘চোখ থেকে পানি ছেড়ে দিয়ে কান্দে’ তিনিও আমাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করেন। বলছেন এই দেশে থেকে কি হবে, অন্য দেশে পিআর পেলে জীবন বদলে যাবে। এই পি আর হল পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি!

আমি ইমোশনাল ব্লাক মেল করার সব চেষ্টা করে বিফল হলাম। ইমোশন জেন জি বাথরুমে ফ্লাশ করে  দিয়ে এসেছে।

চারজনের ছোট সাজানো একটা পৃথিবীতে সবাই সবার দিকে আবর্তিত হতো আজ পরিবর্তিত হতে চাচ্ছে।
সময়কে রুখবে কার সাধ্য? আল্লাহর হাতে ছেড়ে রাখলাম, তিনি যা ভাল মনে করেন করুন।

সবাই দোয়া করবেন আমার বাচ্চাদের জন্য। পি আর, মানে প্যারেন্টের রিলেশনটা যাতে ধরে রাখে।
যে যেখানে থাকুক ভাল থাকুক। জীবনটা সহজ থাকুক।

আপনার পছন্দের কবিতা নাম কমেন্টে জানান 


 Follow Now Our Google News

মাহমুদ সাজেদিন’র কাব্যগ্রন্থ, গল্প ও উপন্যাস
  • ঈশ্বর চন্দ্রের বঙ্গদর্শন
  • বানুস সিক্রেট
  • ডেক্সটাকার্ডিয়া ও ৯৯ টি কবিতা
  • বেনিফিট অব ডাউট


লেখক সংক্ষেপ:
মাহমুদ সাজেদিন একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। পেশাগত জীবনে তিনি একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ, এবং পাশাপাশি একজন পরিচিত লেখক হিসেবেও সুপরিচিত। ডাঃ মাহমুদ সাজেদিন বাংলাদেশের চিকিৎসা ও সাহিত্য উভয় জগতেই নিজের অবদান রেখেছেন। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডেন্টাল অনুষদের অর্থোডন্টিকস (দাঁতের ব্রেস ও সারিবদ্ধকরণ বিদ্যা) বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক এবং এফসিপিএস (FCPS) ডিগ্রিধারী ডেন্টাল সার্জন হিসেবে কর্মরত আছেন। শিক্ষকতা ও চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার সাথেও যুক্ত। চিকিৎসার ব্যস্ততার বাইরে তিনি একজন কবি ও কথাসাহিত্যিক। তিনি মূলত বাংলা ভাষায় কবিতা, গল্প ও উপন্যাস রচনা করেন। ইতোমধ্যে তার লেখা বেশকিছু বই প্রকাশিত হয়েছে যা পাঠকদের কাছে বেশ সমাদৃত।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন