গল্প : আমি বেশ্যা
গল্পকার : দিশানী বোস
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল :
তরুণ লেখিকা দিশানী বোসের “আমি বেশ্যা” শিরোনামের এই ছোট গল্পটি একটি ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে।
![]() |
আমি বেশ্যা || দিশানী বোস |
আমি বেশ্যা || দিশানী বোস
কবিতা রাতে বাড়ি ফেরার সময় দেখে ওদের কলোনিতে প্রচুর ভিড়, সঙ্গে চেঁচামেচির আওয়াজও আসছে। ভিড় ঠেলে সামনে এগোতেই দেখে ওর মা শুকনো মুখে ওর সাত মাসের ছেলে বুবুনকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশে ওদের বাড়ির সব জিনিসপত্র ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে। কবিতা দৌড়ে গিয়ে বললো - মা, এইসব কি করে হলো? কে করলো? বুবুন ঠিক আছে তো? তুমি তো আমাকে একটা ফোন করতে পারতে?
কবিতার মাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওদের কলোনির এক মহিলা উচ্চ স্বরে বলে উঠলো
- নির্লজ্জ মেয়ে, এত রাতে নোংরামি করে বাড়ি ফিরে আবার কৈফিয়ত চাইছে। কান খুলে শোন, এই কলোনিতে তোদের আর থাকা হবে না। তাই জিনিসপত্র গুছিয়ে ভালোয় ভালোয় কেটে পড়।
- কি হয়েছে কাকি ? আমরা কি এমন করেছি যে চলে যেতে বলছো ?
- মেয়ের কথা শুনছো, কি করেছে ও নাকি তা জানে না। তুই কি ভাবছিস আমরা কিছুই খবর রাখি না ? তুই যে নষ্টামি করে বেড়াস, আমরা সবাই জানি। কিন্তু এটা তো দীর্ঘদিন চলতে পারে না। আমাদের কলোনির একটা সুনাম আছে। তাছাড়া আমাদের ছেলেমেয়েরা এইসব দেখে কি শিখবে?
- বাহ্, তোমরা তোমাদের ছেলেমেয়েদের কথা ভাবছো, কলোনির সুনামের কথা ভাবছো, কিন্তু একবারও আমার, বুবুনের কিংবা আমার অসুস্থ মায়ের কথা ভাবছো না।
- দেখ, আমরা তোদের মতো নোংরা পরিবারের সংস্পর্শে থাকতে চাই না। তাই কথা না বাড়িয়ে চলে যা এখান থেকে।
- জানি আমার পরিবার নোংরা কারণ আমি যে নষ্টামি করি। কিন্তু তোমরা কেউ একবারের জন্যেও আমার এই নষ্টামি করার কারণ জানতে চেয়েছো? আচ্ছা তোমরা তো সবাই জানো, বুবুনের বয়স যখন এক মাস তখন ওর বাবা অন্য একজনকে বিয়ে করে এনে আমাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এক মাসের ছেলেকে নিয়ে আমি তখন আসি মায়ের কাছে এই কলোনিতে। ভেবেছিলাম যেই কলোনিতে ছোটো থেকে বড়ো হয়েছি তারা অন্তত বিপদের দিনে আমার পাশে দাঁড়াবে। এসে জানতে পারি, এই বাড়ির তিন মাসের ভাড়া বাকি আছে। যদি এক সপ্তাহের মধ্যে তিন মাসের ভাড়া শোধ করতে না পারি তাহলে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এদিকে মায়ের জমানো টাকাও প্রায় শেষের দিকে। কি করবো বুঝতে না পেরে আমি সুজয় কাকার দোকানে কাপড় সেলাইয়ের কাজ ভিক্ষা চাই। কাকা আমার কথায় কোনো গুরুত্বই দেয় না। তারপর বাবাইদার দোকানেও কাজ চেয়েছিলাম। কেউ কাজ দেয়নি। ওদিকে সময়ও কম ছিল। টাকা জোগাড় করতে না পারলে মাথার ছাদটাও হারাতে হতো। তাই পরিস্থিতির চাপে পড়ে তীব্র অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমাকে পতিতা হতে হয়েছে। আমাকে নিজের শরীর বিক্রি করতে হয়েছে শুধুমাত্র সংসার চালানোর জন্য। আচ্ছা তোমরা একটু মনে করে বলো তো, এই ছয় মাসে কেউ একবারও জিজ্ঞাসা করেছো মায়ের এত হার্টের ওষুধ, বুবুনের ওষুধ, বাড়ি ভাড়া সব কোথা থেকে আসছে? কেউ একটাকা দিয়েও তো সাহায্য করতে আসনি। এবার তোমারাই বলো আমি কি করতাম? আমি নিজেও কোনোদিন এইভাবে জীবনযাপন করতে চাইনি। পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছে। ভেবো না এখানে যাতে আমাদের থাকতে দাও সেই জন্য আমি এত কিছু বললাম, আমি মাকে আর বুবুনকে নিয়ে কালই চলে যাব এই কলোনি থেকে। আর হ্যাঁ, আমিও চাই তোমাদের ছেলেমেয়েরা যেন জীবনে অনেক বড়ো হয়, আর তোমাদের মতো অমানবিক না হয়ে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে।
আমাদের সমাজে সবাই পতিতাদের কেবল অপমান করে। ওদের সম্বন্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করতেও পিছপা হয় না। কিন্তু কেউ একটি বারের জন্যেও ওদের পতিতা হওয়ার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করে না।
লেখক সংক্ষেপ :
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন