কবিতা          :         সাম্প্রদায়িকতা
কবি              :         কাজী জহিরুল ইসলাম 
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১৪ জুলাই ২০২২ ইং

প্রবাসী লেখক কাজী জহিরুল ইসলামের “সাম্প্রদায়িকতা” শিরোনামের এই কবিতাটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে নেয়া হয়েছে। তিনি এটি নিউইয়র্কের ম্যানহাটন সিটিতে বসে লিখেছেন। 
সাম্প্রদায়িকতা || কাজী জহিরুল ইসলাম
সাম্প্রদায়িকতা || কাজী জহিরুল ইসলাম

সাম্প্রদায়িকতা || কাজী জহিরুল ইসলাম


পূজোর মন্দিরে ঘন্টা বাজান যে পুরোহিত
অথবা মিনার চূড়োয় দাঁড়িয়ে হাঁকেন আজান যে সুকন্ঠী মুয়াজ্জিন 
বলো না আঙুল তুলে তাদের সাম্প্রদায়িক। 

নাস্তিকের কন্ঠেও ধ্বনিত হয় নতুন আজান,
তার আহ্বান 
শিরদাঁড়া সোজা রেখে হেঁটে যাও অসীম শূন্যের কাফেলায়,

প্রকৃতিও নিয়ত বাজায় ঘন্টা
নিজেকে উজাড় করে হেমন্ত ঘোষণা করে নগ্নতার উৎসব, 
পত্রশূন্য ডাল ফেটে
জেগে ওঠে ফুল-পাতা নতুন বসন্তে,
এ-ও তো আজান,
কী শোনো বৈশাখে মেঘেদের কুরুক্ষেত্রে তুমি,
পাতার যে করতালি শোনো গ্রীষ্মের দুপুরে,
সেটাই কি জোহরের অভিন্ন আজান নয়?

প্রিয়তমা রমনীর জলপাই-ঘ্রাণ 
মাথার ভেতরে জাগায় দেহের প্রার্থনা নীরব অন্ধকারে,
সকলেই ডাকে তার নিজস্ব ভাষায়,
এসো, সঙ্গ দাও, ভালোবাসা দাও, আমাকে জড়িয়ে ধরো অঙ্গের উত্তাপে।

ফুলেরা কী উরু খুলে ডাকে না পতঙ্গ, ভেজাও পা আমার সুমিষ্ট রসে?
তুমি কি ঝিনুক ফোঁটা সকাল দেখেছ কখনো সৈকতে?
শুনেছো কি কোনো এক গাংচিল শিশুর ক্রন্দন?
সমুদ্র গর্জন করে কী জানায় তার বিশালত্বের অহংকার ছাড়া?

পাথরেরও রয়েছে ভাষা, আছে আহ্বান,
দেখোনি কখনো বুঝি পাথরের ঠোঁটে চুমু খায়
সমুদ্রের কামুক তরঙ্গ?

মরুঝড় কেন অন্ধ করে দেয় উটের কাফেলা,
কার প্রতীক্ষায় জেগে থাকে 
কস্মোপলিটন নগর সমস্ত রাত?

মোরগের চেয়ে স্পষ্ট আর কোন মুয়াজ্জিন,
পাখিদের কোরাস সঙ্গীত 
কী করে জাগায় ভোর পৃথিবীর প্রান্তরেখায়, শোনোনি তুমি সে আজান?
ওরাই তো ফের গোধূলী সন্ধ্যায় মাগরেবের আজান হেঁকে 
ডেকে আনে মহাতপস্যার স্নিগ্ধ রাত।

কখনো কি ভেবে দেখেছো উজ্জ্বল তারকার মতো 
লাল, শাদা, হলুদ, গোলাপি মিরাবিলিস জালাপা ফুল
কি বার্তা জানায় প্রতিদিন আসরের অক্ত হলে?

সিনাগগের কাফেলা দেখে শনিবার বিকেলে
বলো না সাম্প্রদায়িকতার মিছিল।
কেন তুমি সাম্প্রদায়িকতার প্রচ্ছায়া খোঁজো পাদ্রির কেশকতলে?

বোধিবৃক্ষের শেকড়ে, 
হেরা পর্বতের নীরব আঁধারে,
তুর পাহাড়ের সুউচ্চ চূড়োয় কোনো 
সাম্প্রদায়িকতার অমিয় বীজ হয়নি রোপণ সেই সব উজ্জ্বল মুহূর্তে। 

অভিন্ন বন্ধনে বাঁধা প্রাণীকূল, 
এমন কী যাদের ভেতরে প্রাণ নেই বলে জানো আজ, 
কাল জেনে যাবে তারাও জীবিত, 
বাঁধা আছে আমাদেরই প্রাণের সুতোয়,
সকলেই ডাকে তার নিজস্ব নিয়মে,
এ-আজান কী-করে সাম্প্রদায়িক হয় বলো?

বরং এখন বলি শোনো কান খুলে কাকে বলে সাম্প্রদায়িকতা।
যদি তুমি ঢিল ছোঁড়ো সিনাগগে,
যোগীর মাদুরে দাও টান,
অথবা জুম্মার কাফেলায় ছুঁড়ে দাও ঘৃণার আগুন,
কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম নাস্তিকের অবিশ্বাসে ছুঁড়ে দাও লানতের দৃষ্টি 
সাম্প্রদায়িকতার নিকৃষ্ট অভিশাপে দগ্ধ হবে তুমি।

প্রাণীজগতের কোনো আহ্বানই সাম্প্রদায়িক নয়, 
বরং তার কণ্ঠ চেপে ধরাই মূলত সাম্প্রদায়িকতা।

লেখক সংক্ষেপ : 

কবিয়াল

কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন