নাম               :         আঙুরবালার রেকর্ড
ধরন              :         কাব্যগ্রন্থ
কবিতা সংখ্যা:         ৫০ টি
মূল্য              :          ১৩৫ টাকা
কবি              :          কাজী মেহেদী হাসান
প্রকাশকাল    :         ২০১৭ ইং
প্রকাশনী        :         ঘাসফুল
রচনাকাল      :         

কবি কাজী মেহেদী হাসানের ‘আঙুরবালার রেকর্ড’ শিরোনামের কাব্যগ্রন্থটি ২০১৭ সালের একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। এটি প্রকাশ করেছে ঘাসফুল প্রকাশনী। অসম্ভব সুন্দর কবিতামালার এই গ্রন্থটি নিয়ে একটি পর্যালোচনা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এই পর্যালোচনার লেখকের নাম, পরিচয় জানা যায়নি।
আঙুরবালার রেকর্ড || অজ্ঞাত লেখক
আঙুরবালার রেকর্ড || অজ্ঞাত লেখক

আঙুরবালার রেকর্ড || অজ্ঞাত লেখক


“আঙুরবালার রেকর্ড” নামের মাঝেই সুঘ্রাণ! এটি একটি কবিতা বই। ‘আঙুরবালার রেকর্ড’ মূলত ত্রিশের দশকের গ্রামোফোন বা কলের গানে নজরুল সঙ্গীতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দূর্লভ রেকর্ড, যা অভিজাত ও সাধারণের কাছে সমান ভাবে সমাদৃত। আঙুরবালার আসল নাম ছিলো প্রভাবতী দেবী।

এবার আসি বইয়ে। বই পড়া খুব সহজ তার থেকেও আরো সহজ রিভিউ লেখা। কিন্তু কবিতার বই পড়া অনেক কঠিন এবং তার থেকেও কঠিন কবির ভাবের সাথে ভাব মিলানো। তবে সহজ করে মিলাতে কবির কবিতায় ঢুকে পড়ুন। যতই মগজে ধারণ করবেন ততই নিজের কথা গুলো কবির লেখায় ফুটে উঠতে দেখবেন। তা না হলে, কবিতা আপনার হবে কি করে! আর রিভিউ, সে তো বহু দূরের কথা।   হোক তা প্রেম বা বিরহ। হোক তা রাজনীতি বা দেশ সংক্রান্ত। আপনাকে আটকে যেতে হবে গুটি কয়েক লাইনে। একটা পুরো উপন্যাস বহন করে দুই লাইনের একটা ছন্দ!

আমি যখন এই বইয়ের রিভিউ লিখব ভাবছি,  একজন কবি বললেন, “৫০ টি কবিতার একটি বইয়ের রিভিউ লিখতে  তোমার ৫০ দিন নেওয়া উচিৎ!” কিন্তু আমি কি কবির ভাব পর্যন্ত পৌছাতে পারবো! সেটা কি ৫৫০ দিনেও সম্ভব হবে! হবার কথাও নয়। এত দূরদৃষ্টি আমি পাব কোথায়! তাই কবিতা গুলো রিভাইস করেই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি।

কবিতা গুলোতে ঢুকে পড়তে আমার কিছুটা সুবিধা হয়েছিলো। তার কারণ বেশ কিছু পংক্তি,  এমন কি একটা আস্ত কবিতার সাথেও আমার প্রণয় ছিলো বেশ কিছু কাল আগে থেকেই। সেই কবিতাটা হলো ‘চারুমিত্র’। এই একটা কবিতা পাঠ, কবির বাকি কবিতা গুলো পড়ে দেখবার জন্য তাড়িয়ে নেবে যে কোন পাঠককে।

প্রথম কবিতা “কোন শোক প্রস্তাব নয়”। একজন কবির মৃত্যুতে শহর অবশ্যই কেঁপে উঠা উচিৎ। কেন না, মানুষ মারা গেলে তার ভেতরেই থাকে শোক মিছিল। কিন্তু কবি মরে গেলে তাতে আরো অনেক কিছু যুক্ত হয়। সেখানে থাকে প্রতীক্ষা, ভালোবাসা। কবির মৃত্যুতে হারিয়ে যায় নিষ্কলুষ ভালোবাসার অর্ধেকটা!

৫০ টি কবিতা সবগুলো ভালোলাগার। ভালোবাসারও ছিলো অনেকগুলো। তার মধ্যে, “আমার বাবার কোন গল্প নেই” অন্যতম একটি। জানিনা কবি’র বাবা কবিতাটা দেখেছেন কিনা! দেখলেও অনুভূতি কি হয়েছিলো! আমার মতো কি গলায় কাঁটা অনুভূত হয়েছিলো কিনা! ছেলে বড় হলে বাবার গল্প বাড়ে, আরো বেড়ে যায় চাকরি পেলে কিংবা সে যদি বড় কর্মকর্তা হয় বা যদি হয় বিদেশ ফেরত, তাহলে বাবার বুকের ছাতি ফুলে উঠে গর্বে। কিন্তু ছেলে যদি কবি হয়, বাবার গল্পের পরিধী থেমে যায়। অতটুকুন হয়ে যায় তখন। কবির বাবার কাছে, আমার জানতে ইচ্ছা করে সত্যিই কি তাই?   তোমার কি অহংকার হয় না; সাধারণ মানুষ নয়, তোমার কবি ছেলের শুদ্ধতায়!

চুলের মতো বাবারও বয়স বাড়ে!!

এটাই সেরা কবিতা আমার কাছে। আমার জন্য এতোটুকু মুগ্ধতাই যথেষ্ট ছিলো। কিন্তু নাহ, কবি আমার মুগ্ধতার পরিধী আরো বাড়িয়েছেন। 'নীরু',  'নীরু ২', 'নীরু ৩', 'নামাতা',  'তোমাকে প্রিয়', 'ডাকনাম', 'প্রতিবিম্ব', 'আয়না', 'তথাকথিত', 'যদিদং হৃদয়ং তব', 'উত্তর' আরো আরো কতো গুলো চমক আটকে থাকা কবিতা দিয়ে!

এতটা বীভৎসভাবে কাউকে মরতে দেখিনি
প্রশ্নবোধক চোখ নিয়ে উল্টে ছিলো আমার লাশ!

বঙ্গবন্ধুকে আমিও কবির মতোই বাংলাদেশ নামে ডাকি।

স্মৃতির মতো আর কোন ভায়োলিন নেই!

বিদ্বেষ বাড়ছে-
মানুষের বিপরীতে মানুষ,
ইতস্তত। বিভক্ত।
লিখছি শান্তিপূর্ণ শ্লোগান-
রোজ ইজ রেড, এজ রোড এজ ব্লাড।
কি সাংঘাতিক!

আজকাল ভুলে যাওয়াটা  সাহসের ব্যাপার 
মনে রাখাটাও সাহস 
তোমাকে ভালোবাসতে চাওয়াটাও সাহস।  
ভালো না বাসতে চাওয়াটাও সাহস
কোন সন্দেহ নেই।

তোমার খুব কাছে এসে প্রতিদিন শেষদিনের মতো ভালবাসি যেন নিস্ফোম্যানিয়াক, আগামীকালের জন্য কোন প্রার্থনা নেই।

মানুষ বড় সরল
কথা শুনে নিশ্চিন্ত হতে চায়;
জানতে চায় ভালবাসি কি-না।
আমার কথা গুলো বলে দিলো যেন কালো কালি দিয়ে।

তবু এরও বেশি মৃত্যু
এরও বেশি অন্ধত্বে থাকে মানুষ!

যেহেতু মাটির গভীরে দাঁড়িয়ে যে গাছ
সে মূলত প্রার্থনা করছে আকাশের।

"দুর্লভ",  কবিতার পুরোটাই যেন দুর্লভ!

চোখের কাছে গল্প লিখি, শোকের কাছে জয়।
যা কিছু সে দেখেছিল, তা দ্যাখার কথা নয় ;
দৈর্ঘ-প্রস্থে মানুষ আমি, স্মৃতির সমান।

সব শেষে,
তোমারে চাইছি ; কইলজার ভিতর থিকা
যে ডাক দিবার পারে মানুষ ; তার থিকা বেশি!

কবির অভিমত অনুযায়ী কবিতার ব্যাকরণ বিশ্লেষণ - মানুষের চিন্তা, দর্শন, প্রেম যা প্রতিদিনের সহজলভ্য বিষয়বস্তু। কিন্তু মানুষ থেকে আলাদা হয়ে কিছুটা অন্যভাবে সাজিয়ে উপস্থাপন যা পাঠককে শেষ লাইন পর্যন্ত আটকে রাখে, তাই হলো কবিতা।

"দুর্লভ", "চারুমিত্র", "যতিচিহ্ন" , "খুন হয়ে ছুটছি গ্রীষ্মকালীন শহরে",  "চোখ টা বিক্রি করে দেব"  কবিতাগুলো পাঠ করার পর পাঠককে মানতে হবে, কবির আঙুলে পাঠক আকড়ে রাখার অসামান্য ক্ষমতা রয়েছে। কবিতা গুলোতে স্থান পেয়েছে যেভাবে দর্শন, তেমনি ভাবে প্রেম। "যতিচিহ্ন" আর "চারুমিত্র" অসাধারণ দুটি কবিতা। কি ধার তার লেখনীতে!

একদিন সব ছেড়ে ঠিক পালিয়ে যাবো
তোমাকে দিয়ে যাব অবহেলার অধিকার
এবার আর আমি নই, কবিতাই আমার মাঝে ঢুকে যাচ্ছে।

আমার বোনটা দু'দিন ধরে নিখোজ
জঙ্গলে বুনো পাতাদের হোলি উৎসব চলছে-
দয়া করে আপনারা কিচ্ছু বলবেন না
কাঁটাচামচে কচি মাংসের ডিনার করুন;
দোহাই আপনাদের, সকলে চুপ করে থাকুন
যতক্ষন না আপনার বোনের ধর্ষনের খবর আসছে!!

কি বলব আমি! নির্বাক! তবে "আঙুরবালার রেকর্ডে" নরম আলোর সুরে ডুবে থাকবে পাঠক। এটা নিঃসন্দেহ। "আঙুরবালার রেকর্ড" কবির তৃতীয় কবিতা বই। এতটুকুর পর এটাই বলব, কবির জন্য পাঠক হিসেবে একরাশ কৃতজ্ঞতা এবং ভালবাসা।

লেখক সংক্ষেপঃ

কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন