নাম               :         অগ্নিপুরাণ
ধরন              :         ঐতিহাসিক উপন্যাস
পৃষ্ঠা              :         ৩৩৮
মূল্য              :          ৫৫২ টাকা
লেখক           :         মুহম্মদ নিজাম
প্রচ্ছদ            :         চারু পিন্টু
প্রকাশকাল    :         
প্রকাশনী        :         বায়ান্ন
রেটিং            :         ৪.৮/৫ 

মুহম্মদ নিজামের ‘অগ্নিপুরাণ’ শিরোনামের এই ঐতিহাসিক উপন্যাসটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। এটি প্রকাশ করেছে বায়ান্ন প্রকাশনী। অসম্ভব সুন্দর কভারের এই বইটির প্রচ্ছদ একেছেন চারু পিন্টু। এ উপন্যাসটি নিয়ে একটি পর্যালোচনা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এই পর্যালোচনার লেখকের নাম, পরিচয় জানা যায়নি।
“বঙ্গদেশের মৃত্তিকা এবং রমনীরা খুব উর্বর হয়”
“বঙ্গদেশের মৃত্তিকা এবং রমনীরা খুব উর্বর হয়”

অগ্নিপুরাণ || অজ্ঞাত লেখক


ভূমিকাঃ
আজ থেকে প্রায় ৮০০ বছর আগের ঘটনা নিয়ে লেখা এই উপন্যাস। উপন্যাসের প্রধান ২টি চরিত্র বা ৩টা (ধরা যায়)। বঙ্গ রাজ্যের শেষ রাজা লক্ষ্মণসেন ও বখতিয়ার। এবং আরও একটি চরিত্র হচ্ছে নরুন। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় নরুনকে খুঁজে পাওয়া যাবে নাহ। এই তিনটি চরিত্র নিয়েই মুলত “অগ্নিপুরাণ”। উপন্যাসের পরিচ্ছদ ৩ টা অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। গল্পগুলোকে সাজানো হয়েছে ‘ওয়েব’ (ঢেউয়ের) আকারে। যারা ‘৮ডি’ গান শুনেছেন তারা এটা বেশ বুঝবেন। একটানা লক্ষ্মণসেন, বখতিয়ার কিংবা নরুনকে নিয়ে নয়, খন্ড খন্ড আকারে বিন্যাস করা হয়েছে।

কাহিনী সংক্ষেপঃ
১১৭৮ খ্রিস্টাব্দে পিতা বল্লাল সেনের মৃত্যুর পর রাজপুত্র লক্ষ্মণ বঙ্গদেশের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি যৌবন বয়স থেকেই বীরত্বের সাথে তার রাজ্যকে আগলে ধরে আছেন। এদিকে পাল-নৃপতি ডুম্মন সুন্দরবন অঞ্চল কে স্বাধীন রাজ্য ঘোষণা করছেন। এই নিয়ে উৎকন্ঠা, মহারাজ লক্ষ্মণসেন ডুম্মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। যুদ্ধ ঘোষণার প্রধান কারণ, প্রাগ-জ্যোতিষের মেয়ে সুভদ্রা। সুভদ্রা হলো লক্ষনসেনের খুব প্রিয় পাত্রি। ডুম্মন সুভদ্রা কে তুলে নিয়ে যেয়ে অমানবিক নির্যাতনের করেছে।

এদিকে বখতিয়ার একটু সুখে জীবন যাপনের জন্য নিজের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে। নিজের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য রাজ্যে রাজ্যে ঘুরছে। তার অদম্য ইচ্ছে শক্তি নিয়ে যায় হিজবর উদ্দিনের কাছে। সেখানেই তার ভাগ্য খুলে যায়। হিজবর বখতিয়ার কে একটা প্রশ্ন করেন, “তোমার জীবনের উদ্দেশ্য কি?” বখতিয়ার ম্লান গলায় বলে “থলের ভেতর দুই পা ঢুকিয়ে সামনে চলার নাম যদি জীবন হয়, সেই জীবনের কোনো উদ্দেশ্য থাকে না মালিক। উদ্দেশ্য থাকতে নেই।” মালিক খুশি হয়ে যায়। বখতিয়ারকে তার ইচ্ছায় সৈন্য দলে কাজে লাগিয়ে দেয়। অদম্য ইচ্ছে শক্তি, মনের জোর ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বখতিয়ার হয়ে যায় সেনা প্রধান। 

এই উপন্যাসের তৃতীয় চরিত্র নরুনপাল (কাল্পনিক চরিত্র)। নরুন পাল হচ্ছে গোপাল পালের একুশতম বংশধর। [এই চরিত্র টার মাধ্যমে লেখক তার লেখনির জাদু দেখিয়েছেন। এটি থ্রিলার চরিত্র বলা যায়] ভেঙে পড়া মানুষকে কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয় সেটাই দেখিয়েছেন নরুনের মাধ্যমে এবং উপন্যাসের প্রতি টান টান উত্তেজনা তৈরী করেছেন। উপন্যাসের প্রতি একঘেয়েমি ভাবটা দূর করেছেন।

শেষ পরিণতিঃ
লক্ষণসেন ডুম্মনকে পরাজিত করে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন। এদিকে বখতিয়ারের চোখ আসে বঙ্গদেশের উপর। একের পর এক রাজ্য বিজয়ের পর তিনি লক্ষণাবতী বিজয়ে স্বপ্ন দেখেন এবং যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন৷ লক্ষ্মণ সেনকে পরাজিত করে বখতিয়ার বঙ্গদেশে প্রথম মুসলিম রাজ্য স্থাপিত করেন। এদিকে তুর্কিস্থান জয়ের নেশায় পড়েন বখতিয়ার। এটাই ছিলো তার ভুল। জীবন নিয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন তিনি এবং প্রিয় বন্ধু আলী মর্দান অসুস্থ অবস্থায় বখতিয়ারকে হত্যা করে।

ব্যক্তিগত মতামতঃ 
খুবি সুন্দর এবং তথ্যে ভরা উপন্যাস। এখানে প্রেম আছে, যুদ্ধ আছে, টান টান উত্তেজনা আছে। লেখক তার সুকৌশল ব্যবহার করেছেন। এক বসাতেই শেষ করতে মন চাইবে। বিরক্তবোধ করিনি একবারও। আমি এটাকে ঐতিহাসিক থ্রিলার উপন্যাস বলছি তার কারণ জানতে হলে অবশ্যই উপন্যাসটা পরতে হবে। কাল্পনিক চরিত্রের থ্রিলার অনেক পড়েছেন। ইতিহাস যে সবথেকে বড় থ্রিলার সেটাই প্রমাণ করেছেন প্রিয় লেখক।

পুরো উপন্যাস জুরে দুইটা বানান ভুল পেয়েছি যেটা স্বাভাবিক। ‘যুবা-পুরুষ’ শব্দটা অধিক ব্যবহার হয়েছে। বিরক্ত লাগছিলো বার বার শব্দটা পড়তে। তাই মাঝে মাঝে এড়িয়ে গেছি।

উপন্যাসটিতে লেখক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাক্য লিখেছেন লেখক। তার মধ্যে কয়েকটি হলোঃ
★ পুরুষের প্রকৃত সুখ হচ্ছে রণে ও নারীতে। 

★ ভাগ্য বড় আজব চিরিয়া। কানা লুলা অন্ধ বধির সবাইকেই সে গোপনে প্রলোভন দেখায়। অথচ করুণা সে কাউকেই করে নাহ!

★ বঙ্গদেশের মৃত্তিকা এবং রমনীরা খুব উর্বর হয়,
বহিরাগত পুরুষ ও রাজশক্তির মনে অতি অল্পতেই এরা কামনার উদ্রেক করে। প্রতিদানে ঘুরেফিরে বারবরে থরে থরে ধর্ষিত হয়। 

★ কবি ধাঁচের মানুষ গুলো খুব ক্ষেপা গোছের হয়। এরা ক্ষণে ক্ষণে নিজেকে বিশ্বকর্মার চাইতেও বড় শিল্পী বলে দাবি করে বসে।

★ যে দেহের বাহার দেখিয়ে একদিন মানুষ সমগ্র পৃথিবীর বুকে রাজ করতে চায়, সেই দেহ টেনে নেবার ক্ষমতাও একদিন মানুষকে হারিয়ে ফেলতে হয়। 

অনেকেই ভাবছেন ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়বেন কোনো, এতো এতো প্রেমের কিংবা থ্রিলার উপন্যাস থাকতে। আমি বলবো এই উপন্যাস আপনার সব ধারণা ভেঙ্গে দিবে। ইতিহাস পড়ে এই প্রথম বিরক্তবোধ করিনি এবং প্রেমের বর্ণনা গুলো খুবি লোভনীয়। আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো শুধুমাত্র পড়েলেই বুঝবেন।

লেখক সংক্ষেপ

কবিয়াল

কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন