কবিতা          :         ঈশ্বরের আর্তনাদ
কবি              :         শিমুল চৌধুরী ধ্রুব
গ্রন্থ               :         নিষিদ্ধ পাণ্ডুলিপি
প্রকাশকাল   :         বইমেলা ২০২০
রচনাকাল     :         ২৭ এপ্রিল, ২০১৯ইং

বহুল পরিচিত কবি ও সাংবাদিক শিমুল চৌধুরী ধ্রুবর “ঈশ্বরের আর্তনাদ” কবিতাটি মূলত অলৌকিক ঈশ্বরকে উপজীব্য করে লিখেছেন। কবি এই গীতিকবিতাটি ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল সকালে লিখেছেন।
ঈশ্বরের আর্তনাদ || শিমুল চৌধুরী ধ্রুব
ঈশ্বরের আর্তনাদ || শিমুল চৌধুরী ধ্রুব

ঈশ্বরের আর্তনাদ || শিমুল চৌধুরী ধ্রুব


আজ আমার কথা তোমাদের শুনতেই হবে
অজস্র কথা জমে আছে। 
লক্ষ কোটি বছরের কথা
তিল তিল করে জমেছে বেদনার পাজর
আজ আমার কথা তোমাদের শুনতেই হবে!

হ্যা আমি ঈশ্বর বলছি
তোমাদেরই তৈরি করা 'প্রিয় ঈশ্বর'
সেই আদিম যুগের কথা
প্রাচীন কোন গুহার রাজত্বের দখল নিতেই
আমাকে জন্ম দিয়েছিলে তোমরা
তারপর থেকে এক এক করে আমার ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়েছো
তোমাদের সুবিধার্থে ভিন্ন ভিন্ন রুপে করেছো চরিত্রায়ন
আমার এই অদৃশ্য শরীরের মঞ্চায়ন করেছো বারংবার
কখনো মসজিদ, কখনো মন্দির, কখনো গির্জা কিংবা প্যাগোডায়
হ্যা, আমি তোমাদের ঈশ্বর বলছি।

অস্তিত্বহীন এই আমাকে টিকিয়ে রাখতে তোমরা
সর্বত্র চালু করেছো রক্তক্ষয়ী ব্যবসা।
যদিও এতে আমার তেমন ব্যথীত হওয়ার কথা নয়!
যখন নিজেই বুঝতে পারিনা আসলে কে আমি?
কি আমি? কেনই বা আমি?
তখন এই অস্তিত্বহীন বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়।

তোমরা বলো, আমি নাকি সর্বত্র বিরাজমান। আমি নাকি মঙ্গল, আমি স্রোষ্ঠা।
আমিই নাকি তোমাদের দোষ-গুন, ভালো-মন্দ, পাপ-পূণ্যের নির্ণয়ক!
আমার নামে তোমাদের পূজা আর্চনার মেলা হয়।
আমার নামে আমারই কল্পিত পায়ে উৎসর্গের নামে বলি দাও সব নিরীহ প্রাণ
সেই রক্তাক্ত শানিত অস্ত্র উচিয়ে জপ করো আমার কল্পিত খুশীর মন্ত্র

হ্যা আমি তোমাদের ঈশ্বর বলছি
এ সমাজের ভালো-মন্দ, পাপ-পূণ্য বিচারের আমি কেউ নই।
বিশ্বাস করো, এ যাবতকাল যা কিছু নির্ণয় হয়েছে তার কোনটাই আমি করিনি
সবই করেছো তোমরা, তোমাদেরই স্বার্থে
কোথাকার কোন আদম না ইভ!
তাদেরকে আমি কখনই চিনতাম না
তাদের চিনেই বা আমার কি লাভ?
কে আপেল খেল না গন্ধম খেলো তাতেই বা আমার কি!
অথচ, তোমরাই তাদের জন্মের দায়, ভূলের দায় চাপিয়েছো আমার কাধে।

হ্যা, আমি ঈশ্বর বলছি।
মনে পড়ে! বহুকাল আগে
তোমরা হরণ করেছিলে মরিয়মের কুমারিত্ব
তাও আবার আমারি জন্য তৈরি করা এক 'পবিত্র' গৃহে
তোমরাই ইতোপূর্বে সেই সঙ্গমকে ব্যবিচার বলে নিষিদ্ধ করেছিলে।
অথচ এই কুমারিত্বের অভিশাপের দায়ে অভিযুক্ত করেছো আমাকেই
আমি হয়েছি নিষিদ্ধ ব্যবিচারের দোষে দোষী
সেদিন আমাকে রুপ দিয়েছিলে নারী শরীরভোগী এক ঈশ্বরে
যে নীজের শরীরের অস্তিত্বের স্বাধ কখনই পায়নি
সে অন্য শরীর ভোগ করে কি করে?

তোমরা আমারই নাম করে ভোগ করেছো অসহায় এবং নিরিহদেরকে। ক্ষমতাহীনদেরকে।
তোমাদের অসভ্য যৌনতার থাবা থেকে রক্ষা পায়নি তোমাদেরই পুত্রবধূরা, কন্যারা।
সকল জাগতিক যাবতীয় অজাচার, অনাচারকে হালাল করেছো আমারই নামে
অথচ, তোমাদের রক্তাক্ত ক্রোধে বারংবার আমি নির্বাক, নিশ্চুপ কেদে যাচ্ছি
তোমাদের নির্ধারিত অসীম শূণ্যতায়।
আমার নামে তোমরা হত্যা করে যাচ্ছো তোমাদেরকেই
নৃশংসতার মাত্রা ছাড়িয়ে সব কিছুর দায় চাপাচ্ছ আমার উপর
তোমরাই বলো আমি নাকি পবিত্র, পরম করুণাময়
আবার আমারই পরিচয় দিচ্ছ রক্তপিপাসু হিংস্রতায়
এমন দ্বিচারিতা কোন ঈশ্বরের হতে পারে না
সে আর যাই হোক, ঈশ্বর হতে পারে না।

হ্যা, আমি তোমাদের সৃষ্ট ঈশ্বর বলছি
তোমাদের মগজের উগ্রতাকে ঝেড়ে ফেলে
"কোন স্রষ্টা তার এক সৃষ্টিকে দিয়ে অন্য সৃষ্টিকে হত্যা করতে পারে না"
এই সাধারণ কাথাটা অন্তত বোঝো।
তোমরা শান্ত হও, মানবিক হও, ভালোবাসতে শেখো।
হে পরম 'করুণাময়' মানুষ,
তোমাদের লাভ-ক্ষতি, পাপ-পূণ্যের হিসেবের খাতা থেকে
এই অস্তিত্বহীন অসহায় ঈশ্বরকে মুক্তি দাও।

লেখক সংক্ষেপ
কবি শিমুল চৌধুরী ধ্রুব তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'নিষিদ্ধ পাণ্ডুলিপিতে' নিজের পরিচিতি সম্পর্কে লিখেছেন ❝নাম, ধাম, বয়স, জন্ম, সময়-বিবিধের বেড়াজালে আমি কোনোদিন হারাতে চাইনি এবং ভবিষ্যতেও চাইনা। বইয়ের শেষ পৃষ্টা উল্টিয়ে কবি'র পরিচয় পাওয়া কি আদৌ সম্ভব! কবি যুবক নাকি বৃদ্ধ, ধনী নাকি দরিদ্র, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত কিনা, এসব আমার কাছে বরাবরই অপ্রাসঙ্গিক। কবির পরিচয় নিহিত থাকে মূলত তার সন্তানসম কবিতায়।

আমার পরিচয়ের কথা যদি বলতেই হয়, সেক্ষেত্রে আমি অতি সাধারণ এবং নগন্য এক মানুষ। এর বাইরে দেবার মতো পরিচয় আমার নেই।❞

কবিয়াল

কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন