উপন্যাস : বেশ্যা
কবি : অর্পিতা ঘোষ চক্রবর্তী
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : অক্টোবর ২০২০
পশ্চিমবঙ্গের তরুণ লেখিকা অর্পিতা ঘোষ চক্রবর্তীর “বেশ্যা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২০ইং সালের ৩রা অক্টোবর থেকে লেখা শুরু করে শেষ করেছেন একই সালের ১০ই অক্টোবর।
![]() |
বেশ্যা || অর্পিতা ঘোষ চক্রবর্তী (পর্ব - ১) |
বেশ্যা || অর্পিতা ঘোষ চক্রবর্তী (পর্ব - ১)
ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি বেশ্যাবাড়ির মাটি ছাড়া মা দুর্গার মূর্তি তৈরি হয় না অর্থাৎ শাস্ত্র মতে বেশ্যাবৃত্তি গ্রহণযোগ্য। তবুও সভ্য সমাজের কুদৃষ্টি ওদের ওপরেই। বেশ্যারা বেশ্যা কেন হল তার কারণ কেউ জানতে চায় না।
সভ্য মানুষদের কামনা লালসা মেটানোর জন্যই তো নাকি অন্য কোনো কারণ? নাকি তারা পুরুষকে টাকার বিনিময় নিজের শরীর দেয় বলে ঘৃণা সহ্য করতে বাধ্য? অর্থাৎ কোন সভ্য ব্যক্তিকে বিনা পয়সায় বা বিনিময় ছাড়া দেহ দিলে দেবী আর বিনিময়ে দেহ দিলে সে বেশ্যা?
সেরকমই এক বেশ্যা হল চন্দ্রানী। রূপের ছটায় চাঁদকেও হার মানায় সে। পড়াশোনা বলতে বাংলা অনার্স নিয়ে গ্রাজুয়েশন ঠিকমতন কমপ্লিট করতে পারেনি। আর পাঁচটা মেয়ের মতো তার জীবনে সবই ছিল, শুধু আর্থিকভাবে দুর্বল ছিল তার পরিবার। কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ার সময় তার বাবা মারা গেল তারপর আর পড়াশোনা করার আস্পর্ধা দেখায়নি চন্দ্রানী।
চন্দ্রাণীর বোন ক্লাস এইটে পড়ে। বোনের পড়াশোনাটা অন্তত হোক সেটাই ভেবেছিল সে। মা সেলাই করে টুকটাক ইনকাম করে। কষ্টের সংসার, তবুও কথায় আছে মধ্যবিত্ত না পারে চাইতে না পারে কেড়ে নিতে। চন্দ্রানীর বাবার তো জমা জমতি কিছুই ছিল না সেরকম। একবেলা খাবার জুটলে অন্য বেলা কি খাবে ভাবতে হত তাদেরকে।
কলেজে পড়ার সময় একটা বাদাম খাওয়া প্রেম হয়েছিল ঠিকই কিন্তু সেই প্রেমিকও ছাড়বে ছাড়বে ভাব, কারণ বাদাম খাওয়া প্রেম গুলো সুখের পায়রার মতন হয়। দুঃখের কথা ভাবলেই পালাতে চায় তারা। একসাথে কলেজের ব্রিজের নিচে আড্ডা মারা যায়, হাতে হাত ধরা যায়, চুমুও খাওয়া যায়, কিন্তু দায়িত্ব নেওয়া যায়না।
চন্দ্রানীর প্রেমটাও ভেঙে গিয়েছিল। নানান ছুতোয় চন্দ্রানীর প্রেমিক তাকে বলে দিয়েছিল সে ঠিক প্রেম করার মতন নয়। সব সময় দেখা করতে পারে না, নিজের অসুবিধার কথা শোনায়, এভাবে প্রেম করা যায় নাকি, তাই সম্পর্কটা সেখানেই থামিয়ে দুজনই ইতি ঘোষণা করে দিয়েছিল।
চন্দ্রানীও সেদিন খুব কঠিন বাস্তব বুঝতে পেরে গিয়েছিল, বাড়িতে এসে কারো সাথে কোন কথা না বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়েছিল। সারারাত শুধু বালিশ ভিজেছে। পাশে বোন আর মা শুয়ে থাকায় খুব নিঃশব্দে কেঁদেছিল সে, যাতে কেউ তার দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজটুকুও শুনতে না পায়। এমন কান্না গুলো বড়ই ভয়ানক হয়। আওয়াজ হলেই যদি কেউ টের পেয়ে যায় তাই আওয়াজও করা যায় না আবার বুকের ভেতরে চিৎকার গুলো বাইরে প্রকাশ না হতে পেরে বুকের ভেতরেই দাপাদাপি করে মেরে ফেলতে চায় মানুষ টাকে।
পরদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই স্নান করে নিয়েছিল যাতে সারারাতের ক্লান্তি তার চোখে মুখে প্রকাশ না পায় সবার অলক্ষ্যে সব ধুয়ে ফেলতে চেয়েছিল সে তারপর সাততাড়াতাড়ি বিল্টুকে টিউশন পড়াতে চলে গেছিলো।
বিল্টু চন্দ্রানীদের পাশের বাড়ির এক বাচ্চা ছেলে। তাকে টিউশন পড়াতো চন্দ্রানী। বিল্টুর মা সকালের স্কুলে পড়ায়, আর বাবা বাড়িতেই থাকে। তাই বিল্টুকে সকালে টিউশন পড়ানোর দায়িত্বটা চন্দ্রানীর। মাসে ৫০০ টাকা মাইনে পেতো সে। ৫০০ টাকাও অনেক বেশি চন্দ্রানীর কাছে, তাই বিল্টুর টিউশনটা অনেক বেশি প্রয়োজনীয় ছিল চন্দ্রানী ও তার সংসারের জন্য। বিল্টুর বাবার নজর খারাপ সেটা চন্দ্রানী জানতো আর বুঝেও গেছিল এর মধ্যেই। তবুও সে বিল্টুকে পড়ানো ছাড়তে পারেনি সকালের টিফিন আর ওই ৫০০ টাকার জন্য।
প্রতিদিন বিল্টুর মা স্কুলে যাওয়ার আগে চন্দ্রানীকে বলতো “বিল্টুর দায়িত্ব কিন্তু তোর, আমি বেরোলাম স্কুলে, আমার ছেলের স্কুলের হোমওয়ার্কগুলো দেখেশুনে করিয়ে দিস, আর শোন খাবার টেবিলে লুচি তরকারি ঢাকা রইল তুই নিজেও খেয়ে নিস।”
চন্দ্রানী হাসিমুখে উত্তর দিত, “হ্যাঁ বৌদি তুমি সাবধানে বের হও। আমি বিল্টুকে একদম নিজের মতন করে সব করিয়ে দেবো।” মুখে এ কথা বললেও মনে মনে চন্দ্রানী প্রার্থনা করত বৌদি যেওনা তুমি প্লিজ। প্লিজ যেও না। মনের কথা তো অন্তর্যামীই একমাত্র শুনতে পান তাছাড়া যে কারোর ক্ষমতা নেই মনের কথা শোনার। মনের মধ্যে কত আর্তনাদ কত চিৎকার কত প্রার্থনা যে আড়াল থেকে তা কারোরই নজরে পড়ে না, কারোর কানেও যায় না। চন্দ্রানীর প্রার্থনা কাকুতি মিনতিও বিন্টুর মায়ের কান পর্যন্ত কখনোই পৌঁছায়নি। বিল্টু অনেকটাই ছোট তবুও ছোট ছোট হাত দিয়ে চন্দ্রানীর কান্না মোছাতো কিন্তু সমস্যার সমাধান করতে পারত না।
দিনের পর দিন খারাপ নজার খেলা করে যেত চন্দ্রানীর ভরা যৌবনের ওপর দিয়ে। কখনো দরজার আড়ালে কখনো কোন উছিলায়। নজর দিয়েও যে ছোঁয়া যায় সেটা চন্দ্রানী খুব ভালো মতন উপলব্ধি করতে পেরেছিল বিল্টুর বাবার দয়ায়।
এভাবেই চলছিল চন্দ্রানীর এক একটা দিন। দিনগুলো যেন অভিশপ্ত আর অভিশাপের তাড়নায় সে ছুটে ছুটে বেড়াচ্ছে চারিদিকে। অভিশাপ থেকে মুক্তি নেই চন্দ্রানীর, কারণ মুক্তির কোনো উপায় নেই কোন পথ নেই কোন সমাধান নেই। একদিন নজরের ছোঁওয়া হাত পর্যন্ত নেমে গেল। হঠাৎ বিল্টুর বাবা চন্দ্রানীর হাতটা টেনে ধরল। চন্দ্রানীর সুন্দর দুখানি হাতের ওপর নিজের হিংস্র থাবা দিয়ে আদর করতে চাইল। সেদিন চন্দ্রানী এক ঝটকায় নিজের হাত টেনে নিয়ে বিল্টুদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল ঠিকই কিন্তু পরের দিন আবার যথাসময়ে বিল্টুকে পড়ানোর জন্য উপস্থিত হতে হয়েছিল।
চন্দ্রানী বিল্টুর বাবাকে এড়িয়ে যেত আর মনে মনে প্রার্থনা করত আজ যেন বৌদি না যায় স্কুলে। বিল্টুর বাবাকে সে রূপকথার রাক্ষস ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারত না। অবশেষে একদিন রূপকথার রাক্ষস আক্রমণ করলো চন্দ্রানীর ওপর। সুযোগ বুঝে চন্দ্রানীকে টেনে নিয়ে গেল চিলেকোঠার ঘরে। নোংরা হাত দিয়ে স্পর্শ করলো চন্দ্রাণীর বক্ষ যুগল, স্পর্শ করল চন্দ্রানীর উরু নাভি প্রতিটি চামড়ার রোমকূপ। স্বর্গ খুঁজতে চাইল চন্দ্রানীর দুই পায়ের মাঝে। চন্দ্রানীর মেয়েলি শক্তি বিল্টুর বাবার পুরুষ শক্তির কাছে হার মানছিল বার বার। একদম শেষ মুহূর্তে চন্দ্রানী হাতের সামনে একটা ঝাঁটা পেলো সেই ঝাঁটা দিয়ে আঘাত করলো বিল্টুর বাবার গোপনাঙ্গে। আর এক ঝটকায় বিল্টুর বাবাকে ফেলে দিয়ে সে বেরিয়ে গেল বিল্টুদের বাড়ি থেকে।
তারপরের দিন থেকে সে আর বিল্টুকে পড়াতে যায়নি। বিল্টুর মা বহুবার তাকে কারণ জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু সে বিল্টুর মাকে কিছুই বলে উঠতে পারেনি, শুধু সে যাবে না এটুকু বলেছে। বিল্টুদের বাড়ি থেকে ফিরে এসেই সে বাথরুমে ঢুকেছিল হয়তো ভাবছিল বিল্টুর বাবার নোংরা আঁচড়গুলো সে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলবে কিন্তু মনের মধ্যে যে আঁচড় লেগেছে সেগুলোতে কিভাবে জল লাগাবে সে?
চলবে.....
২য় পর্ব পড়তে এখানে ট্যাপ/ক্লিক করুন
লেখক সংক্ষেপ :
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন