উপন্যাস        :         বেশ্যা
কবি              :         অর্পিতা ঘোষ চক্রবর্তী
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         অক্টোবর ২০২০

পশ্চিমবঙ্গের তরুণ লেখিকা অর্পিতা ঘোষ চক্রবর্তীর “বেশ্যা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২০ইং সালের ৩রা অক্টোবর থেকে লেখা শুরু করে শেষ করেছেন একই সালের ১০ই অক্টোবর।
বেশ্যা || অর্পিতা ঘোষ চক্রবর্তী
বেশ্যা || অর্পিতা ঘোষ চক্রবর্তী

১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

বেশ্যা || অর্পিতা ঘোষ চক্রবর্তী (পর্ব - ২)


চন্দ্রানীর শরীরে যে থাবা বসিয়েছিল নরখাদক বিন্টুর বাবা তা স্নানের পরেও স্বাভাবিক হতে পারলোনা চন্দ্রানী। স্নান সেরে এসে একটা বিছানার চাদর গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল সেদিন। একটা দানাও দাঁতে কাটেনি চন্দ্রানী। রাতে অনেকবার চমকে চমকে উঠেছিল সে। বিল্টুর বাবার নোংরা স্পর্শ যেন ঘুমের মধ্যেও উপলব্ধি করছিল চন্দ্রানী। বারবার মনে হচ্ছিল তার বক্ষ যুগলে কারোর হাত খেলা করছে, তার উরু কেউ স্পর্শ করছে, আর তার উপলব্ধিগুলো যেন বাস্তবে সে বুঝতে পারছিল। তাই রাতে ঘুমের মধ্যেও সে কুঁকরে যাচ্ছিল।

ভোরের দিকে চন্দ্রানী ঘুমের মধ্যে গোঙাতে শুরু করে। গোঙানির শব্দে চন্দ্রানীর মায়ের ঘুম ভেঙ্গে যায়। তিনি চন্দনীর গায়ে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “কি হয়েছে রে তোর? গোঙাচ্ছিস কেন?” মায়ের হাতটা গায়ের ওপর লাগতেই চন্দ্রানী ধরমর করে উঠে বসে পড়ে এবং ভীষণ অস্বস্তিতে বলে ওঠে, “কই কিছু নাতো, কি হবে আমার আবার?” চন্দ্রাণীর মা জিজ্ঞেস করেন, “কোনো বাজে স্বপ্ন দেখছিলি নাকি?” চন্দ্রানী কপালের ঘাম মুছে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ খুব বাজে একটা স্বপ্ন। চন্দ্রানীর মা বলেন, “সকালে উঠেই কুয়োতে গিয়ে বলে দিস, কারন ভোরের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়ে যায়।” চন্দ্রানী শুধুমাত্র “হু” বলে আবার পাশ ফিরে শুয়ে থাকে।

সকালে তার মা যখন ঘুম থেকে ডাকলো তখন প্রায় সাড়ে আটটা বাজে। চন্দ্রানীর গায়ে তখন ভীষণ জ্বর। তার মা মাথায় হাত দিয়ে বলল, “কিরে গা তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে”। চন্দ্রানী উত্তর দিল, “না না, তেমন কিছু না মা, তুমি চিন্তা করোনা। আমার একটুও শরীর খারাপ লাগছে না।”

এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুদিন। অভাবের সংসারে একজনের ইনকাম বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে কতটা কষ্ট সাধ্য তা শুধু যারা ভুক্তভোগী তারা ছাড়া অন্য কারোরই বোঝা সম্ভব নয়। চন্দ্রানীর মা কোনরকম একটু ভাত ফুটিয়ে দুই মেয়ের মুখের সামনে ধরেন। দুই মেয়ে আবার তাদের থেকে অল্প অল্প করে ভাত তুলে দেয় মায়ের পাতে। কথায় আছে অযত্নে যেমন সোনার চাকচিক্য কমে যায়, তেমনি অযত্নে অযত্নে চন্দ্রানীর রূপের জেল্লাও কমতে শুরু করেছিল। দুর্বল ও রোগা হয়ে যাচ্ছিল চন্দ্রানী। চোখের নিচে চিন্তায় কালির ছাপ পড়ে গেছিল।

ঠিক ওরকম কষ্টকর পরিস্থিতিতে ওদের জীবনে আসে তপন নামের এক ব্যক্তি। তপন একজন ব্যবসায়ী। পাড়ার মোড়ে মুদিখানার দোকান আছে তার। চন্দ্রানীর মা তপনের কাছ থেকেই মুদিখানার সমস্ত জিনিসপত্র কিনতেন। দুই ভাই আর বাবাকে নিয়ে তপনদের সংসার। তপনের মা মারা গেছেন কয়েক বছর হল। তপনের বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। তবুও কথায় আছে ছেলেদের নাকি বয়স বাড়ে না। চল্লিশ বছরের তপন চন্দ্রানীর মায়ের কাছে চন্দ্রানীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। চন্দ্রানীর মা তপনকে চন্দ্রানীর যোগ্য ও সুপাত্র মনে করেন। তার কারণ আজকালকার দিনে দেনাপাওনা ছাড়া কোন ছেলেই বা তার মেয়েকে বিয়ে করবে।

চন্দ্রানীর মা চন্দ্রানীকে তপনের প্রস্তাবের কথা জানালে চন্দ্রানী বলে, “মা তপনদা আমার থেকে অনেকটাই বড়।” চন্দ্রানীর মা বলেন, “ছেলেদের বয়স দিয়ে কি হবে? তপনের ভালো ব্যবসা, বাড়িতে কোন ঝামেলা নেই। আর সবচাইতে বড় কথা তপন বলেছে লাল পাড় শাড়ি পরিয়ে মন্দিরে বিয়ে দিলেও হবে। দেখ চন্দ্রানী আমাদের কষ্টের সংসারে এমনিতেই অভাব-অনটন। তার ওপর তোর বোনটাও বড় হচ্ছে৷ তপন আমার জামাই হলে মাথার ওপর একটা সাহারাও হবে।”

সব শুনে চন্দ্রানী আর না করতে পারেনি। চন্দ্রানীর হ্যাঁ শুনে সামনের মাঘ মাসেই বিয়ে ঠিক করে ফেলে চন্দ্রানীর মা। তপনও খুব খুশি, বিয়ের আর মাত্র পনের দিন বাকি। এর মধ্যেই তপনের আসা যাওয়া শুরু হয় চন্দ্রানীদের বাড়িতে। চন্দ্রানী তপনকে মন থেকে মানতে না পারলেও বাধ্য হয় ভালো ব্যবহার করতে। তপনের সাথে চন্দ্রানীকে কোন অংশেই মানায় না। কিন্তু গরিবের পছন্দ-অপছন্দ থাকতে নেই আর হীরের আংটি বাঁকাও ভালো।

বিয়ে ঠিক হবার পর থেকেই চন্দ্রানীদের সংসারের দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেয় তপন। চন্দ্রানীও দেখে তার বোন, মা দুবেলা পেট ভরে খেতে পারছে। বোনটা মাছ খেতে খুব ভালোবাসে। কতদিন পর মাছের ঝোল রান্না হয়েছে তাদের বাড়িতে। দুই মা আর মেয়েতে পেটভরে খাচ্ছে। চন্দ্রানীর মা বারবার, ‘আরো এক পিস মাছ নে’ বলে সাধছে ওদের দুই বোনকে। চন্দ্রানী দুচোখ ভরে সব দেখছে আর উপভোগ করছে মায়ের মুখের তৃপ্তি আর বোনের মুখের খুশিটা। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চন্দ্ৰানী মনে মনে ভাবল ‘আমার একটু ত্যাগে যখন এতকিছু ভালো হচ্ছে, সবাই এত খুশি হচ্ছে, তখন আমার ত্যাগটাই কাম্য।’

প্রিয়জনের মুখের তৃপ্তি, প্রিয়জনের মুখের হাসি-আনন্দ-খুশির আবেগ পৃথিবীর সমস্ত দামি জিনিসের ঊর্ধ্বে। যারা এইসব আবেগগুলো একবার দেখে ফেলেছে একবার উপলব্ধি করে ফেলেছে তারা হয়তো হাসতে হাসতে প্রিয়জনের জন্য নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারবে।

চন্দ্রানী এবারে মন থেকে তপনকে গ্রহণ করতে শুরু করেছিল। তপনের ভালো দিকগুলো চন্দ্রানীর চোখে ধরা পড়ছিল বারবার। তপনের জন্যই তাদের সংসারটা বানের জলে ভেসে যায় নি, তাদেরকে শিয়াল কুকুররা ছিড়ে খায় নি। এমন মানুষকে ভালো না বেসে পারা যায় না। 

মাঘ মাসের নির্ধারিত দিনে তপনের সাথে চন্দ্রানীর বিয়ে সম্পন্ন হল। ফুলশয্যার রাতে চন্দ্রানী তপনকে বিল্টুর বাবার নোংরামোর সমস্ত কথা বলে দেবে ভেবেছিল কিন্তু পরক্ষনেই ভয় পেয়ে গেছিল। চন্দ্রানী ভেবেছিল যদি সেসব কথা শুনে তপন তাকে ভুল বোঝে। তাই আর বলে উঠতে পারেনি। বরং নিজের মন থেকেও সেই সব দিনের কথা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল আর নতুনভাবে সব শুরু করতে চেয়েছিল।

বিয়ের পর চন্দ্রানী খুব মন দিয়ে সংসার করছিল। তপনকে কোন অভিযোগের সুযোগটুকুও দিত না। তপনের জন্য ভালোবাসা, তপনের বাবার প্রতি দায়িত্ব আর তপনের ভাইয়ের প্রতি কর্তব্য পালন করতে চন্দ্রাণীর জুড়ি মেলা ভার। আর তপন চন্দ্রানীর মা বোনের দায়িত্ব নিয়ে ওদের সমস্ত সুবিধা অসুবিধায় পাশে থাকছিল। একদিন রাতের বেলায় বিছানায় শুয়ে চন্দ্রানী তপনকে জিজ্ঞেস করেছিল, “আমার জন্য এতকিছু কেন করছো তুমি?” তখন তপন বলেছিল, “তোমাকে ভালোবাসি তাই। এই কেনোর আর কোন উত্তর নেই চন্দ্রানী।”

ঘরের সাথে সাথে তপনের মুদিখানার ব্যবসাতেও চন্দ্রানী তাকে সাহায্য করত। বেশ বড় ব্যবসা ছিল তপনের। চন্দ্রানী দোকানের হিসাবপত্র দেখায়, তপনের ভাই রুপণের একটু অসুবিধা হয়ে গিয়েছিল। তার কারণ রুপন মাঝেমধ্যে দু এক হাজার টাকা দোকান থেকে সটকে দিত। একদিন চন্দ্রানীর কাছে ধরাও পড়ে যায় সে। চন্দ্রানী তপনকে সব জানালে তপন রুপনকে ধরে মেরেছিল খুব। চন্দ্রানী বাধা দিয়েছিল বটে, কিন্তু সে বাধায় কোনো কাজ হয়নি। সেই থেকেই দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। এভাবে করেই কাটছিল চন্দ্রানীর দিন। মাঝখানে তপনের বাবার মৃত্যু তপনকে খুব কষ্ট দিয়েছিল তবে সে কষ্ট কাটিয়ে উঠেছিল তপন চন্দ্রানীর ভালোবাসায়।

এর মধ্যেই তপনের ভাই এমএ কমপ্লিট করে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ পেয়ে যায়। সে কারণেই তপন তার ভাইয়ের জন্য সম্বন্ধ দেখছিল। ভালোয় ভালোয় ভাইটার বিয়ে দিতে পারলে তপনের দায়িত্ব অনেকখানি কমে যাবে এমন কথা বলেছিল সে চন্দ্রানীকে। চন্দ্রানীও খুশি হয়ে জানিয়েছিল আশেপাশের কতগুলো সুন্দরী মেয়েদের কথা। কিন্তু এর মধ্যেই রুপন ঘটিয়ে ফেলল ভিষন কুরুচিকর এক ঘটনা।

এক রাত্রে তপন দোকান থেকে ফিরতে দেরি করছিল। সেই সুযোগ নিয়ে চন্দ্রানীর ওপর প্রতিশোধ নিতে রুপন ঢুকে পড়েছিল চন্দ্রানীর ঘরে। আসলে চন্দ্রনীর ওপর রুপনের লোভ প্রথম থেকেই ছিল। ঘরে ঢুকেই চন্দ্রানীর মুখ চেপে ধরে বিছানায় ফেলে দিয়েছিল। তারপর গায়ের কাপড় টেনে খুলে ফেলে সেই কাপড় দিয়ে খাটের সাথে বেঁধে চন্দ্রানীর উলঙ্গ শরীরের ভাঁজ গুলো উপভোগ করেছিল। তারপর শরীরের এক একটা ভাঁজে নিজের জিভের লালা দিয়ে তার লাম্পট্যের নাম লিখেছিল। চন্দ্রানী সেদিন নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি রূপনের হাত থেকে। রুপন জোর করে চন্দ্রানীর ভেতরে নিজের পাশবিক বীর্য ফেলেছিল, চন্দ্রানী শুধু গোঙানো ছারা আর কিছুই করতে পারেনি।

রাতে তপন বাড়ি ফিরলে চন্দ্রানী ভেবেছিল সব জানিয়ে দেবে। কিন্তু কিছু ঘটনা সত্যিই হয়ত জানানো সহজ হয়ে ওঠে না। তপন কে সে যেমন বিষয়টা জানাতে পারেনি, তেমন রুপণকেও আটকাতে পারেনি। রুপনের লালসা বেড়েই গেছে প্রতিনিয়ত। রুপন চন্দ্রানীকে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে দিয়েছিল। তাই চন্দ্রানীকে বাধ্য হয়েই রুপনের সাথে শারীরিকভাবে মিলিত হতে হতো।

ওদিকে চন্দ্রানীর বোনটাও যৌবনে পা দিয়েছে, আর রূপনের নজর ওর বোনের দিকেও রয়েছে। মাঝে মাঝেই নাকি রুপন নানান উছিলায় চন্দ্রানীদের বাড়িতেও যায়। চন্দ্রানী একদিন তপনের সামনেই কথার ছলে রুপনকে জিজ্ঞেস করে কেন প্রায়ই সে তার বাপের বাড়ি যায়। রুপন উত্তর দেয়, দরকারে। তপন হো হো করে হেসে উঠে বলে, “তোর আবার কিসের দরকার?” রুপনও খুব ছলনা ভরে হেসে ওঠে। চন্দ্রানী বেগতিক বুঝতে পেরে রুপনকে আগাম শাসিয়ে দেয় যে তার বোনের ক্ষতি হলে সে কিন্তু কাউকে ছেড়ে কথা বলবেনা।

চন্দ্রানী ঘরের মধ্যে থেকেও নিরাপত্তার অভাবে ভুগছিল। কারণ তার বাড়িতেই রয়েছে রুপন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভোগের বস্তু হতে হচ্ছে তাকে। অথচ কাউকেই কিছু বলতে পারছে না সে।

চলবে.....

৩য় পর্ব পড়তে এখানে ট্যাপ/ক্লিক করুন


লেখক সংক্ষেপ

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন