উপন্যাস        :         বেপরোয়া ভালবাসা
লেখিকা        :          মনা হোসাইন
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         

লেখিকা মনা হোসাইনের “বেপরোয়া ভালবাসা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ঠিক কবে নাগাদ লেখা শুরু করেছেন তা এখনাব্দি জানা যায়নি। তবে তা জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
বেপরোয়া ভালবাসা || মনা হোসাইন
বেপরোয়া ভালবাসা || মনা হোসাইন

৩০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

বেপরোয়া ভালবাসা || মনা হোসাইন (পর্ব - ৩১)


আদির অদ্ভুত সম্বোধনে ঘুম ভাঙলো আদিবার।
শালিকা শালিকা বলে একমনে চেঁচিয়ে যাচ্ছে সে...আদিবা ঘুমচোখে তাকাতেই আদিত্য বলল,
-"শালিকা আর কত ঘুমাবেন এবার উঠুন প্লিজ। আমার বিছানাটা আমায় ফেরত দিন।
আদিবা আদির কথা বুঝতে পারল না তাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
-"শালিকা এই যে শালিকা আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন...?
-"আপনি আমায় কিছু বলছেন.?
-"তো আর কাকে বলব? এই ঘরে আর কে আছে?
-" এত সকালে আপনি আমার ঘরে কী করছেন?
-"এটা আপনার রুম না আমার রুম। কী একটা রুমে থাকেন চারদিকে মেয়েলি মেয়েলি ভাব। উফফ এদিকে তাকাই তো তোর কাপড় চোপড় ওদিকে তাকাই তো উফফ আর না বলি গাঁ গুলিয়ে উঠছিল। আর একটু হলে দম বন্ধ হয়ে মা*রা যেতাম . উঠ তাড়াতাড়ি সারারাত ঘুমাতে পারিনি এখন ঘুমাব।
আদিবা প্রথমে আদির কথার মানে বুঝতে পারে নি তবে পরক্ষনেই রাতের সব কথা মনে পড়ল। রাগে শরীর রি রি করে উঠল। রাগী চোখে তাকাল আদির দিকে।আদি তাছিল্যের সুরে বলল,
-'যাক বাবা এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আমার তো ভয় লাগছে।
-"আমি কী আপনাকে বলেছিলাম আমার ঘরে যেতে? নিজেই আমাকে এখানে আটকে রেখে চলে গিয়েছিলেন এখন আবার নির্লজ্জের মত আমার উপড় দোষ চাপাচ্ছেন?
-"উম...শালিকা আমি আপনার হবু বর আই মিন বোনের বর আমার সাথে এভাবে কথা বলা যাবে না। সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে বুঝেছেন শালিকা?
আদিবা উঠে আদির ঠিক সামনে দাঁড়ল।আদিও সরে গেল না।আদিবা রাগে কটমট করে বলল
-"কখন থেকে শুনছি শালিকা শালিকা করে যাচ্ছেন আমি কোন এংগেল থেকে আপনার শালী হই?
-"আপনার বোনকে বিয়ে করলে আপনি আমার কে হবেন? অবশ্য শালীর ওপর নাম "আদি ঘরওয়ালি" আপনি চাইলে ঘরওয়ালি ডাকতে পারি। 
-"আপনি সত্যি সত্যি সাদিয়াকে বিয়ে করবেন?
-"হ্যা...
-"কিন্তু কেন?দুনিয়ায় এত মেয়ে থাকতে সাদিয়া কেন? 
-"কারন সাদিয়া তোর বোন। 
-"আমার জীবন টা শেষ করে শান্তি হয় নি? 
-" আমি কারোর জীবন নষ্ট করি নাকি গড়ে তুলি সেটাই তো দেখবি।
-"সাদিয়া আপনাকে বিয়ে করতে চায় না। 
-"ওর মতামত জানতে চেয়েছে কে?
-"জোর করে বিয়ে করবেন? 
-"নাহ ওর মন জয় করেই করব। যাইহোক তুই এখন আজাইরা প্যাঁচাল বাদ দিয়ে এখান থেকে যা ঘুম পাচ্ছে আমার।
আদিবা কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে আসতে চাইল সাথে সাথে আদি হাত টেনে ধরল,
-"জামা চেঞ্জ করে যা...এভাবে গেলে সবাই ভাব্বে সাদিয়া কে বিয়ে করতে চেয়ে তোর সাথে বাসর করে ফেলেছি...
আদিবার কেন যেন ভাল লাগছে না তাই কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছে না। সে বিছানায় তাকিয়ে দেখল আদি আগেই জামা এনে রেখেছে। জামা টা হাতে নিয়ে সে ওয়াশরুমে চলে গেল। আদিও বিছানায় শুয়ে পড়ল।
আদিবা চেঞ্জ করে এসে দেখল আদিত্য ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে।সেও ধীর পায়ে বাইরে আসল।
রান্না ঘরে যেতে দেখল রান্নাঘরে মা কাকিমনি দুজনেই আছে।তাদের রান্নাঘরে দেখে বেশ অবাক হল আদিবা কারন সকালের খাবার সবসময় আদিবা করে। আদিবা এগিয়ে গিয়ে রাগ নিয়ে অথচ শান্ত গলায় বলল,
-'হটাৎ রান্না করছো..?
আদিবার মা বললেন
-"আজ থেকে আমিই রান্না করব তোর করতে হবে না।
আদিবা তাছিল্যের হাসি হেসে আটার প্যাকেট নিতে নিতে বলল
-"হটাৎ...? 
-"আদিবা তুই সবসময় এত হেয়ালি করিস কেন?
-"হেয়ালি কোথায় করলাম? এতদিন ধরে আমি রান্না করি আজ হটাৎ নিয়ম বদলাল তাই অবাক হয়েছি সে যাইহোক শুনলাম সাদিয়ার বিয়ে..
-"নাহ মানে আদি...
-"আদি বলছিল তাই রাজি হয়েছো..? তাই বলতে চাইছো..? 
-"আদি এতদিন তোকে পছন্দ করত এখন আর করে না তাই সাদিয়াকে বিয়ে করতে চায়।
-"জেদে বিয়ে করতে চাইছে আর তোমরাও রাজি হয়ে গেলে...
আদিবার কথা শেষ হওয়ার আগেই আদির মা এগিয়ে বললেন,
-"এ বাড়িতে আদির কথায় শেষ কথা ও যদি সাদিয়াকে বিয়ে করতে চায় তোর অসুবিধা কোথায়?
আদি কি ছেলে হিসেবে খারাপ?
আদিবা উত্তর দিল না হটাৎ করেই যেন তার মন খারাপ হয়ে গিয়েছে রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে বিছানার নিচ থেকে বক্সটা বের করে রাখল। বক্সের মুখ খুলতেই চোখে পড়ল ২ টো চকলেটের প্যাকেট এক জোড়া নূপূর আর ২ টো মাটির পতুল। পুতুল দুটির নাম রাজা রানী। রাজা রানীকে হাতে নিয়ে বেলকণীতে গিয়ে দাঁড়াল আদিবা।মুহুর্তেই মন ভারী হয়ে উঠল মনে পড়ে গেল পুরোনো দিনের স্মৃতিগুলো।
ফ্লেশব্যাক
আদিবা এবার ক্লাস থ্রিতে, স্কুলে শীতেত ছুটি দিয়েছে আজ, পুরো ১৫ দিনের ছুটি৷ আদিবা ছুটতে ছুটতে বাড়ি ফিরেই নামমাত্র খাবার মুখে দিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াল। দুচোখ খুশিতে চিকচিক করছে মুখে হাসি.. কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মেয়েটার ফুটফুটে মুখটা মলিন হয়ে আসছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল বিকেল গড়য়ে সন্ধ্যা নাহ আদিবা এখনো ঘরে ফিরছে না দেখে আদিবার বাবা এগিয়ে গিয়ে বললেন 
-"আজ হয়ত ওরা আসবে নারে মা ঘরে যা...সবে তো স্কুল ছুটি দিয়েছে কাল পরশু হয়ত আসবে...
-"কিন্তু বাবা ভাইয়া তো বলেছিল যেদিন স্কুল ছুটে হবে সেদিনি আসবে। 
-"ওটা তো এমনি বলেছে। ছুটেতে আসবে সেটাই বলেছে চল ঘরে চল মা..
আদিবা বাবার সাথে ঘরে যেতে যেতেও কয়েকবার রাস্তায় ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল তারপর মন খারাপ করে ঘরে গেল। দেখতে দেখতে রাত গড়াল আদিবা মন ভার করে খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল। গ্রামে রাত নামে তাড়াতাড়ি ৯ টার মধ্যেই চারদিক নিরব হয়ে যায় তারমধ্যে যদি কোয়াশা মোড়া রাত হয় তবে তো আর কথায় নেই।সবাই ঘুমেরে দেশে পাড়ি দিয়েছি হটাৎ দরজায় কটকট শব্দ হল রাত হয়ত ১১ টার কাছাকাছি হবে আদিবার মা গিয়ে দরজা খুলে অবাক হল,
-"ভাইজান ভাবী আপনারা এত রাতে..?
-"আর বলবেন না ভাবী আদি এত জেদি হয়েছে কি আর বলব। বল্লাম আজ স্কুল ছুটি হয়েছে গ্রামের বাড়ি নাহয় কাল যাব। না ছেলের হবে না আজ আসবে মানে আজই আসবে..দেখুন না। 
-"ভালই হয়েছে আসুন ঘরে আসুন। 
সবার সাথে আদিও ঘরে ঢুকল কিন্তু যে মাঝ ঘরে না দাঁড়িয়ে এক দৌড়ে ভিতরের ঘরে গিয়ে ঘুমন্ত আদিবার ঘরে বসল তারপর ব্যাগ থেকে একে একে জিনিস বের করছে গোটা পাঁচেক চকলেট দুটা মাঠির পুতুল আর একজোড়া নূপুর আর একটা ম্যাজিক শিখার বই । বের করে পাশে রেখে আদিবাকে ডাকল আদি।
আদিবা ঘুম থেকে উঠে বিষয় টা টাহর করতে পারল না কিন্তু পরক্ষনেই আদিকে দেখে জড়িয়ে ধরল। আদিও ধরেছে। 
-"ভাইয়া তুমি এসেছো...? আমি জানতাম তুমি আসবে বাবা শুধু শুধু বলল তুমি নাকি আসবে না।
-"কেন আসব না? আমি আমার পরীটাকে কথা দিয়েছি না? আমি আজ না আসলে পরীটা রাগ করবে না বুঝি? আমি কি কথা ফেলতে পারি দেখ তুই যা যা বলে দিয়েছিলি সব এনেছি। জানিস মা টাকা দেয় নি টিফিনের টাকা জমিয়ে কিনেছি নূপুরগুলো সুন্দর না?
বলেই আদিবার পা টেনে নূপুর পরাতে লাগল আদি 
আদিবা খিল খিল করে এসে জবাব দিল,
-"খুব সুন্দর হয়েছে ভাইয়া।
আদি আদিবার মাথা হাত বুলিয়ে বলল
-" আমি তোকে সবসময় এমন হাসিখুশি দেখতে চাই আমি তোর সব কথা রাখব আদিবা। তুই শুধু এই হাসিটুকু আমায় উপহার দিস।
-"আমি তোমার সব কথা রাখব ভাইয়া অনেক ভালবাসব তোমায়...
-"কখনো ছেড়ে যাবি না তো..
আদিবা চকলেট খেতে খেতে জবাব দিল
-"উহু কোনদিন ও না। কথা দাও তুমিও যাবে না..
-"দিলাম কথা যাব না। সারাজীবন তোকে আগলে রাখব।
কথাগুলো মনে পড়তে চোখ ভিজে গেল আদিবার। 
-"আমি তো আমার কথা রেখিছি ভাইয়া। এত মার অপমান,অসম্মানের পরেও তোমায় ভুলি নি তাহলে তুমি কেন তোমার কথা রাখলে না? কেন ছেড়ে চলে গেলে?কেন তুমি থেকে আপনি হয়ে উঠলে? আজ তোমার এতই জেদ তুমি সাদিয়া কে বিয়ের কথা বলতে পারলে..? এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।তুমি বলেছিলে সারাজীবন আমার সাথে থাকবে।সারাজীবন তোমার হয়ে থাকব বলে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে পা রাখিনি যদি কেউ পরীর দিকে নজর দেয়।কোন আত্মীয়র সামনে যাই নি যদি বিয়ের প্রস্তাব দেয় আমি তো আমার সব কথা রেখিছি তুমি কি করে তোমার পরীকে ভুলে গেলে? তোমার কী একবারো পরীটার মনে পড়ে না?
আজ তোমায় ভালবাসি বলতেও আমার বুক কাঁপে কি করে এত বদলে গেলে? আমি যে আমার সেই ভাইয়াটাকে আজও ভুলতে পারিনি। এত কিছুর পরেও মন থেকে আদির নামটা মুছতে পারিনি। তুমি কী আমায় কোনদিনি বুঝবে না? তোমার রাগ আর জেদ নিয়েই থাকবে...তোমার পরীর কাছে আর কখনো ফিরবে না?

চলবে ...

৩২তম পর্ব পড়তে এখানে ট্যাপ/ক্লিক করুন


লেখক সংক্ষেপ : 
তরুণ লেখিকা মনা হোসাইনের মূল নাম গাজী পিংকি হোসেন। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে ছদ্মনাম হিসেবে ‘মনা হোসাইন’ নামটি বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা এই লেখিকা অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন