উপন্যাস        :         সূর্যশিশির
লেখিকা        :          ইলমা বেহরোজ
গ্রন্থ             :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল      :          ০৮ মে, ২০২২ ইং

লেখিকা ইলমা বেহরোজের “সূর্যশিশির” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের মে মাসের ৮ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
সূর্যশিশির || ইলমা বেহরোজ
সূর্যশিশির || ইলমা বেহরোজ

সূর্যশিশির || ইলমা বেহরোজ (পর্ব - ০১)

গগনবিদারী চিৎকারে কেঁপে উঠে রসন ভিলা। সুমনা চিৎকার শুনে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে পা মচকে পড়ে গেলেন। পুনরায় উঠে দাঁড়ালেন। তার কনিষ্ঠ কন্যা রিনি তখনো চিৎকার করছে। তিনি হুড়মুড়িয়ে রিনির কাছে পৌঁছালেন। 
"আম্মা, আপা..." রিনির গলা বুজে এলো। সুমনা জানালা দিয়ে দেখতে পেলেন, রূপা ব্লে'ড দিয়ে ক্রমাগত হাত-পায়ে আ`ঘাত করছে। তিনি শিউরে উঠে বললেন, ''ও রূপা...রূপারে। এমন করিস না। ও রূপা? মা গো। ও রূপা...''
রূপার কোনো ভাবান্তর নেই। তার শুকনো ওষ্ঠদ্বয় বিরতিহীনভাবে বলছে, "আমি অরুনিকা, আমি অরুনিকা, আমি অরুনিকা..."
সুমনার চোখেমুখে মেয়েকে হারানোর তীব্র ভয়। তিনি উৎকন্ঠিত হয়ে রিনিকে বললেন, "তোর বাপরে কল দিয়ে বল তাড়াতাড়ি এসে তালা খুলতে।'' 
রিনি ছুটে নিচ তলায় গেল। 
সুমনা কয়েকবার দরজায় লাথি দিয়ে আবার জানালার কাছে এলেন। মেয়েকে অনুনয় করে বললেন, " ও রূপা? তুই যা চাস তাই হবে। মা আমার, একটু শোন। ও মা...আমি তোকে আর বকব না, মারব না। তুই যা বলবি তাই করব..."
রূপা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। চুলে ঢাকা তার মুখের অর্ধাংশ। চোখ দুটি থেকে যেন র/ক্ত ঝরছে। সে গাঢ় গলায় বলল, ''আমায় ঘর থেকে বেরোতে দিবেন তো আন্টি?''
সুমনা বললেন, ''দেব, দেব মা...দেব। তুমি ব্লে'ডটা রেখে দাও।''
''আমি রূপা? না অরুনিকা?'
''তুমি অরুনিকা।'' সুমনার কণ্ঠে আতঙ্ক।
রূপা হাসল। ব্লে`ডটি পাশে রেখে বলল, "আপনি কাঁদবেন না আন্টি। এই যে দেখুন, আমিতো শুধু চামড়ায় ব্লে/ড চালিয়েছি।''
রূপা দুই হাত - পা সামনে মেলে ধরল। টুপটুপ করে র`ক্ত পড়ছে মেঝেতে। রূপার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে না, সে কোনোরকম যন্ত্রণা অনুভব করছে! দৃশ্যটি দেখে সুমনার মাথা ভনভন করে ওঠল। তিনি দেয়ালে ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। 
বছরখানেক আগে।


ভ্যাপসা গরমে অরুনিকার হাঁসফাঁস লাগছে। সে উপরদিকে মুখ তুলে চেঁচিয়ে বলল, ''তুই নামবি রূপা? আর কতক্ষণ এই কাঠফাটা রোদে দাঁড়িয়ে থাকবো?''
রূপা দুটো আম ছুঁড়ে দিলো। অরুনিকা ওড়নার আঁচল পেতে আম দুটো সংগ্রহ করে দ্বিগুণ জোর গলায় বলল, ''এভাবে চুরি করা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। ধরা পড়লে বেঁধে রেখে দেবে।''
রূপা বলল, "তোর মুখটা বন্ধ রাখ মা। নয়তো সত্যিই ধরা পড়বো।"
অরুনিকা কপালের ঘাম মুছল। গরমের তেজে কোনো পক্ষীও নেই চারপাশে। আছে শুধু সে আর তার উড়নচণ্ডী বান্ধবী। রূপার কথায় এখানে আসাই উচিত হয়নি। কোচিং থেকে বের হয়েছে সেই কোন প্রহরে! এতক্ষণে নিশ্চয়ই বাসার সবাই টের পেয়ে গেছে। অরুনিকা মুখ গুমোট করে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণের মধ্যে রূপা গাছ থেকে নেমে এলো। 
শার্টের হাতা ভাঁজ করতে করতে বলল, ''এমন পেঁচামুখী হয়ে আছিস কেন? হাসলে কী তোর টাকাপয়সা ফুরিয়ে যাবে?''
''কয়টা বাজে খেয়াল আছে? বাসায় গিয়ে এখন কী বলব?'' 
''একটু না হয় বকবে। আমার মা-বাবার মতো তো বুকে পাড়া দিয়ে রাখবে না।''
অরুনিকা সজল নয়নে তাকাল। রূপার মুখটা দেখে মুহূর্তে তার সকল চিন্তা উবে গেল। সে আদুরে গলায় বলল, "আম খেতে কই যাবি চল।''
_
দুজন কলেজের মাঠে শুয়ে আকাশ দেখছে। তারা সদ্য এইচএসসি পাস করেছে। পড়াশোনায় অরুনিকা মেধাবী হলেও রূপা তার উল্টো। রূপা বলল, ''কয়দিন পর এডমিশন। কিছুই তো পরা হয়নি।''
''পড়াশোনাটা একটু কর। আমাদের কিন্তু একসাথে ভার্সিটিতে পড়ার কথা।''
''তুই কোনো নামকরা পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়েই চান্স পাবি। যেটা আমার জন্য রূপকথা।''
''তুই পড় না রূপা। আমার জন্য হলেও পড়।''
''ওই বাসায় পড়াশোনা সম্ভব না। জানিসই তো।''
অরুনিকা চুপসে গেল। রূপা প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, "আম চুরি নিয়ে তো অনেক জ্ঞান দিলি। এখন তো সব আম তোর পেটেই গেল রাক্ষুসী।"
অরুনিকা হাসল। রূপা কাৎ হয়ে শুয়ে বলল, "অরু?"


''বল না।"
''আবিরের সাথে ব্রেকাপ করেছি।'' 
অরুনিকা চট করে উঠে বসল। অবাক হয়ে বলল, "কী? এক সপ্তাহও তো হলো না রিলেশনশিপে গেলি!''
''প্রেমিকগুলো ভীষণ কতৃত্ব ফলায়। ভালো লাগে না এসব।"
''এটাই কারণ? নাকি আমার জন্য?''
''তোর জন্য কেন হবে?''
''তুই জানিস।''
রূপা দমভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল, ''গত চারদিন তোর সাথে এক দন্ডও কথা হয়নি। আমি আমার অবসরটুকু তোর সাথে কাটাতে চাই। অন্য কারো সাথে না। আমি আর কখনো প্রেম করবো না রে অরু।''
''তুইতো আবিরকে ভালোবাসতি।''
''তোর থেকে কম।''
"তবুও..."
কথার মাঝে আটকে দিয়ে রূপা বলল, "তোকে সময় দেইনি বলে কি তুই কাঁদিসনি?"
অরুনিকা আরক্ত হয়ে উঠল। ছয় বছরের বন্ধুত্বে কখনো কথা না বলে দুজন একদিনও কাটায়নি। হুট করে যখন দুইদিনের ছেলের জন্য রূপা ব্যস্ত হয়ে পড়ল, সত্যিই সে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। পড়াশোনায় মন বসেনি, সারাক্ষণ কেঁদেছে। কিন্তু রূপা কী করে এই খবর জানলো? সে বলল, ' তুই কী করে জানলি?"
'আমার মনে হলো, অনুভব করলাম।'
গভীর এক ভালোবাসার চাদরে অরুনিকা ডুবে গেল। সে রূপাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, 'আমরা কখনো প্রেম করব না, বিয়েও করব না।'

 আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি কমেন্ট বক্সে জানান

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে.....


২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা ইলমা বেহরোজ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন