গল্প : অনুভবে
লেখিকা : সারা মেহেক
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২০২১ ইং
লেখিকা সারা মেহেকের “অনুভবে” শিরোনামের এই ছোট গল্পটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য গল্পটি তুলে ধরা হলো। লেখিকা তার এই ছোট গল্পটি লিখেছেন বছর খানেক আগে। তিনি এই গল্প সম্পর্কে তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, “এটা এক বছরেরও বেশি সময় আগে লেখা। পরীক্ষার কারণে অনেকদিন কোনো গল্প পোস্ট করা হয় না বলে পুরোনো গল্প পোস্ট করলাম।”
![]() |
অনুভবে || সারা মেহেক |
অনুভবে || সারা মেহেক
শান বাঁধানো পুকুরপাড়ের ঘাটে বসে আছে মেয়েটি।চারপাশের মৃদু ঝড়ো হাওয়ায় তার মাথার সেই ঘন অবাধ্য চুলগুলো নেচে বেড়াচ্ছে। পরনে তার লাল পারের সাদা শাড়ী।দু হাতে এক গোছা করে লাল সাদা চুড়ি।হাতে পায়ে গাঢ় লাল আলতা মাখা।ঠোটে লাল টকটকে লিপস্টিক। হলদে ফর্সা সে চেহারায় এই লাল টকটকে লিপস্টিক খুব একটা মানায়নি।তবে প্রিয়তম'র আদেশ,তার সামনে এভাবেই সেজেগুজে আসতে হবে।অগত্যা সে প্রিয়তমের মন রাখতেই এত জমকালো আয়োজন মেয়েটার।
অনেকক্ষণ ধরেই মেয়েটা আর ছেলেটা পুকুরপাড়ে বসে আছে। দুজনে চুপচাপ।যেন রাতের নিঃসঙ্গ অভিযাত্রী দুই পাখি তারা।যাদের কথা বলা বারণ।যাদের কাজ হলো নিশুতি রাতটাকে আরো নিস্তব্ধ করে তোলা।আরো গা ছমছমে করা তোলা।অথচ এখন তো রাত নয়,এখন বিকেলবেলা। বেলা গড়িয়ে পরতে খুব বেশি হলেও মাত্র এক ঘণ্টা বাকি।
শেষ বিকেলের সোনালী আলো পুকুরের পানিতে আছড়ে পরে মোহময় এক পরিবেশ গড়ে তুলছে। সে মোহময় পরিবেশে মেয়েটাকে দেখতে মোহনীয় লাগছে।তার হলদে ফর্সা মুখমণ্ডল ক্রমশ সোনালী রং ধারন করছে।কি মায়াবী লাগছে দেখতে! ইশ, শুধু তাকিয়ে থাকতে মন চায়।ছেলেটা মনের এ চাওয়া পূরণ করতেই অপলক তাকিয়ে আছে সেই মোহনীয় নারীর দিকে।কোনো এক ঘোরে চলে যাচ্ছে যেন সে।ক্রমশ মেয়েটার রূপ স্বর্গীয় এক পরী ন্যায় হয়ে যাচ্ছে যেন।হুরপরীর ন্যায় নাকি?প্রশ্নটা করে আনমনেই হেসে উঠল ছেলেটা।অনুভব করল এই পার্থিব হুরপরী তার অতি আপন।তার প্রিয়তমা।তার স্ত্রী।তার জীবনসঙ্গিনী।
মেয়েটা একধ্যানে পুকুরের দিকে তাকিয়ে আছে। মৃদুমন্দ হাওয়ায় পুকুরের পানিতে ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ তুলছে।এ ছোট্ট ঢেউ এর সাথে মেয়েটা তার মনে জেগে উঠা বিরাট এক ঢেউকে তুলনা করছে।এ ঢেউ ভালোবাসার নতুন এক সূচনার ঢেউ।এ ঢেউ প্রিয়তমকে বহুদিন পর কাছে পেয়ে ভালোলাগার এক ঢেউ।এ ঢেউ প্রিয়তমকে মনের কিছু কথা বলার পর প্রতিউত্তরের আশায় থেকে ভালো থাকার এক ঢেউ।আনমনে হেসে উঠলো সে।
হঠাৎ মেয়েটার প্রখর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিলো কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে।তাকে মনমত পর্যবেক্ষণ করে চলছে। প্রথমে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলেও সে বুঝে ফেলল, কে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে চট করে পাশে ফিরে তাকাল।মেয়েটার তাকানোর ফলে ছেলেটা খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।সে যতদ্রুত সম্ভব মাথা সরিয়ে নিল।তা দেখে মেয়েটা নিঃশব্দে হেসে দিল।
বেশ কিছু সময়ের নিরবতা.....
মেয়েটা এবার শাড়ীর কুঁচিগুলো আলতো হাতে ঠিক করতে করতে জিজ্ঞাস করল,
"আচ্ছা?আমি যদি মনের কথা মুখে প্রকাশ না করি তাহলে কি তুমি বুঝে নিতে পারবে?"
ছেলেটা এতক্ষণ হাতের কাছে থাকা ছোট ছোট ইটের টুকরো গুলো এক এক করে পানিতে ছুড়ে মারছিল।এতক্ষণ সর্বোচ্চ গতিতে কাজটা করলেও মেয়েটার প্রশ্নে সে গতি কমিয়ে আনলো।
কিছুক্ষণ পর সে জবাব দিলো,
"হঠাৎ এ প্রশ্ন?"
"এমনি করতে মন চাইলো তাই।"
এরপর কয়েক সেকেন্ডের নিরবতা।মেয়েটা আবারো বলল,
"আমার প্রশ্নের কি জবাব পাব না?"
ছেলেটা নিঃশব্দে হেসে উঠল।
"খুব ইচ্ছা করছে জানতে?"
মেয়েটার অকপট স্বীকারোক্তি,
"হুম।খুব করে জানতে মন চাইছে। "
ছেলেটা অতি সন্তপর্ণে এক নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
"হুম পারব তো।"
"কি করে পারবে?"
"চোখ যে মনের কথা বলে।এটা জানো তুমি?"
"জানি তো।কিন্তু মানি না।"
"আমি কিন্তু মানি।
তোমার চোখ বলে দিতে পারবে তোমার মনে কি চলছে।"
মেয়েটা এবার পাশ ফিরে ছেলেটির দিকে তাকায়।সাথে সাথে প্রশ্ন করে,
"সত্যিই কি তাই?"
ছেলেটিও এবার পাশ ফিরে মুচকি হেসে বলল,
"সত্যিই তাই।"
মেয়েটি এবার অতি আগ্রহে বলল,
"আমি যদি কষ্ট পাই কিন্তু মুখে প্রকাশ না করি তাহলে কি তুমি বুঝে নিবে?আমি যদি রাগ করি তাহলেও কি তুমি বলে দিতে পারবে?"
"অবশ্যই।তোমার চোখের চাহনিই সব বলে দিবে।"
"তাহলে বলো তো,এখন আমার মনে কি চলছে? "
ছেলেটি নিঃশব্দে হেসে বলল,
"এখন তোমার মন চাইছে আমার কাঁধে মাথা রেখে পড়ন্ত বিকেলের এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে।ঠিক বলেছি না?"
মেয়েটি এবার লাজুক হেসে মাথা নিচু করলো।সে তো এটাই চাইছিল এতক্ষণ ধরে।কি জানি কিভাবে তার প্রিয়তম তার মনে চলা এ ইচ্ছাটা জেনে গেল।এতে সে খানিকটা অবাকও হলো বটে।
মেয়েটি তার প্রিয়তম'র সম্মতির অপেক্ষা না করে কাঁধে মাথা রাখল।খানিক বাদে সে জিজ্ঞাস করল,
"তোমার চোখে কি আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পারব আমি?"
"এটা সম্পূর্ণ তোমার উপর নির্ভর করে।চাইলে চেষ্টা করে দেখতে পারো।"
মেয়েটি সাথে সাথে মাথা উঠিয়ে ছেলেটির চোখের দিকে তাকালো।বেশ কিছুক্ষণ খুব মনযোগ সহকারে ছেলেটির চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।নাহ,সে কোনো ভালোবাসা দেখতে পেলো না।কই চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেলো না তো সে।তাহলে কি সে চোখের ভাষা পড়তে পারে না?
মেয়েটি এবার দুঃখী মুখ করে বলল,
"আমি না তোমার মত এমন কিছুই দেখতে পারছি না।তাহলে আমি চোখের ভাষা পড়তে পারিনা।"
মেয়েটার চোখেমুখে বিষাদময় এক ছায়া নেমে এলো।তা দেখে ছেলেটি সাথে সাথে তাকে জড়িয়ে ধরল।মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়ে সে বল ল,
"সব কথা চোখ দিয়ে পড়তে নেই। কিছু কথা হৃদয় দিয়ে পড়তে হয়।অনুভব করতে হয়।তুমি আমাকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারছো না?তোমার অনুভবে আমি আছি না?"
মেয়েটি মুচকি হেসে জবাব দিল,
"আমার হৃদয়ের সবটা জুড়ে তুমি আছো।আমার অনুভবের শুরু থেকে শেষ সবটাই তোমাকে ঘিরে।আমার অনুভবে তুমি আছো।চিরকাল থাকবে।"
"আমার অনুভবেও আছো তুমি।আমরা একে অপরের অনুভবেই বেঁচে থাকবো সারাটা জীবন।আমার অনুভবে তুমি।আমার অনুভবে তুমি।আমার অনুভবে তুমি।আমার অনুভবে তুমি......."
আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত কমেন্টে জানান।
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
সমাপ্ত
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা সারা মেহেকের মূল নাম সারা জাহান মেহেক। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে শর্ট নাম হিসেবে ‘সারা মেহেক’ নামটি বেছে নিয়েছেন। এই লেখিকার ব্যাপারে এর বেশি কিছু এখন অবদি জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন