উপন্যাস       :         তোমায় ঘিরে
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান 

২৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ২৪)

নবনি যাওয়ার পর থেকে আরাফ নিজেকে বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ করে নেয়।আজ ৪ মাস নবনির কোনো খোজ পাওয়া যায় নেই।আরাফ মৃত লাশ এর মতো দিন কাটাচ্ছে।তবুও সে বেচে আছে।হ্যাঁ আরাফ কখনো সুইসাইড করতে চায় নেই।কখনো এই নিকৃষ্ট জীবনকে শেষ করতে চায় নেই।কারন তার মনে দৃঢ় বিশ্বাস নবনি ফিরে আসবে।আরাফ নবনির বলে যাওয়া শেষ কথার উপর ভরসা করে বেচে আছে।আরাফ নবনির ছবি দেখছে।
আরাফঃজানো পাখি।আমি জানি তুমি আসবে।সবাই ধরে নিয়েছে তুমি না ফেরার দেশে হারিয়ে গিয়েছো।কিন্তু আমি জানি তুমি আসবে।তুমি তোমার আরাফ পাখির কাছে অবশ্যই ফিরে আসবে।(আরাফ মলিন হাসলো)
হঠাৎ করে আরাফ দেখলো তার সামনে নবনি দাঁড়িয়ে আছে।
আরাফঃনবনি।😊
নবনিঃআমি এসে পরেছি আরাফ।বলেছিলাম না ফিরে আসবো।দেখুন এসে পরেছি।
আরাফ নবনিকে জড়িয়ে ধরতে নিলে ধরতে পারে না। আরাফ বুঝতে পারে তার হ্যালুশুনেয়েশন হয়েছে।নবনি যাওয়ার পর আরাফ এর সাথে এমনটা প্রায়ই হয়।
আজ দীর্ঘ চার মাস পর আরাফ অফিসে যাবে।নবনি যাওয়ার পর আসাদ খান অসুস্থ হয়ে পরেন।রাজ ছোট বলে ব্যবসাটা ঠিকভাবে বুঝে নিতে পারছে না।তাই আরাফ ব্যবসার দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেয়।নবনির ফেলে যাওয়া ভালোবাসার মানুষগুলোকে আরাফ স্বযত্নে আগলে নেয়।
আরাফ গাড়ি চালাচ্ছে।হঠাৎ সামনে একটা লোক এসে পরে। আরাফ গাড়ি থেকে নেমে লোকটার কাছে যায়।
আরাফঃআপনি ঠিক আছেন?
লোকটাঃজ্বী।ঠিক আছি।
লোকটাকে আরাফ এর খুব অদ্ভুত লাগলো।চোখ এর মনিগুলো ঘন নীল।সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত।চেহারায় অসম্ভব মায়া জড়ানো।দাড়ি গুলো সুন্দর করে সেট করা।দুধের মতো গায়ের রং।যেকোনো মেয়ে প্রেমে পরতে বাধ্য। শরীর থেকে মোহনীয় সুগন্ধি আসছে।সুগন্ধির ঘ্রানে আরাফ এর পরির কথা মনে পরে গেলো।
লোকটাঃআমি মেহরাব শাহরিয়ার ।আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
আরাফঃজ্বী বলেন।
মেহরাবঃগাড়িতে চলুন বলছি।
আরাফ মেহরাব নিয়ে গাড়িতে বসলো।
মেহরাবঃআমি জ্বীন রাজ্যের রাজকুমার।
আরাফ কথাটা শুনে চমকে উঠলো। এ যেন নতুন আশার আলো খুজে পেলো।
আরাফঃআপনি আমাকে নবনির খোঁজ দিতে পারবেন?


মেহরাবঃজ্বী।আমি পরির ভাই।
কথাটা শোনা মাত্র আরাফ এর চোখ রাগে লাল হয়ে গেলো।যেন চোখের আগুন এই সামনে বসে থাকা লোকটাকে ভস্ম করে দিবে।তারপর নিজেকে সংযত করে বললো~
আরাফঃআপনি পরির ভাই!!
মেহরাব ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। 
মেহরাবঃশান্ত হোন আরাফ।আমার পুরো কথাটা শুনুন।পরি নবনিকে আমার জন্যই নিয়ে গিয়েছে।কিন্তু নবনি সেখানে ভালো নেই।তাই আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করতে এসেছি।আপনাকে আমার সাথে জ্বীন রাজ্যে যেতে হবে।তাহলেই আপনি নবনিকে ফিরে পাবেন।
আরাফঃআমি আপনার কথা কেন মানবো।আপনি বা আমাকে কেন সাহায্যে করবেন?
মেহরাবঃকারন আমি যাকে ভালোবাসি সে ভালো নেই।চার মাস যাবত অনেক চেষ্টা করেছি নবনিকে সব সুখ দেয়ার কিন্তু নবনিকে কিছুতেই ভালো রাখতে পারি নাই।নবনির চোখ শুধু আপনাকে খোঁজ করে।আমি নবনিকে খুব ভালোবাসি। তার মায়ায় এতোটাই জড়িয়ে পরি যে  তার চোখে পানি দেখেও তাকে মুক্তি দিতে পারি নাই।কিন্তু আজকে যা জানলাম তারপর নবনিকে নিজের কাছে বন্দী রাখার অধিকারটা আর আমার নেই।তাই আপনাকে নিতে এসেছি।যাতে আপনি নবনিকে নিয়ে আসতে পারেন।
আরাফঃকি জানলেন।
মেহরাবঃসেটাতো নবনি আমাকে বলতে নিষেধ করেছে।
আরাফ এর কথাটা একটুও ভালো লাগে নেই।
আরাফঃআমার থেকে এই ছেলে বেশি আপন হয়ে গেলো।এই ছেলে জানে অথচ আমাকে বলতে নিষেধ করেছে।নবনি আবার প্রেমে পরে গেলো না তো এর।(মনে মনে)
মেহরাবঃজ্বী না। নবনি আমার প্রেমে পরে নেই।তার জগৎটা আজও তোমাকেই ঘিরে আরাফাত চৌধুরি। 
আরাফঃআপনি কি করে জানলেন।আমি কি ভাবছি?
মেহরাবঃকারন আমি পরির মতো ছোট নই।যাকে আপনি নিজের ইচ্ছে মতো নাচাবেন।হা হা হা।
আরাফঃ😒
মেহরাবঃআমি সবই জানি। কিভাবে আমার বোনকে খাটিয়ে ভাগালেন।আর আমি মনের কথা পরতে পারি।পরিও পারতো কিন্তু সে আপনার প্রেমে এমনই হাবুডুবু খাচ্ছিল যে নিজের উপস্থিত বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে।
আরাফঃআমাকে নবনির কাছে কবে নিয়ে যাবেন?
মেহরাবঃআজ রাতে।আর নবনি আমাকে ওই কথাটা বলতে নিষেধ করেছে কারন এটা সে নিজে আপনাকে বলতে চায়।নবনির মতো মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে পেয়েছেন আপনি আসলেই খুব ভাগ্যবান।নবনির প্রতি নামায এর মোনাজাতে কেবল আপনি।
(মেহরাব মলিন হাসলো)
আরাফ এর পরপুরুষের মুখে নবনির প্রশংসা শুনতে এক্টুও ভালো লাগছে না।
আরাফঃআমি জানি আমার বউ কেমন।তা আপনার থেকে শুনতে হবে না।
মেহরাব এর কথাটা খারাপ লাগলো কিন্তু সে কিছু বললো না।
মেহরাবঃরাতে রেডি থেকেন।আমি আসছি বলে মেহরাব হাওয়ার সাথে মিশে গেলো।
রাত ১২ টা।
মেহরাব এখনও আসছে না।আরাফ বসে অপেক্ষা করছে।আরাফ ভাবছে মেহরাবকে বিশ্বাস করা ঠিক হবে কি না।কিন্তু আরাফ এর কাছে আর কোনো পথ নেই।কোনো কিছু না করার চেয়ে এটা করাই ভালো।
আরাফঃমেহরাবতো আমার মনের কথা পরে ফেলে।এতে আমি কিছু ভাবলে সে আগেই টের পেয়ে যাবে।কি করবো যাতে ও আমার অন্তরে না ঝাকতে পারে।আমি শরির বন্ধ করে নেই এতে যদি কাজ হয়।আরাফ আয়াতুল কুরসি পরে বুকে তিনবার ফু দেয়।সাথে জমজমকূপের পানি ও নিয়ে নেয়।
কিছুক্ষন পরই কক্ষে দমকা হাওয়া প্রবেশ করলো।
মেহরাবঃআসসালামু আলাইকুম আরাফ।
আরাফঃওয়ালাইকুম আসসালাম।
মেহরাবঃআমার হাত ধরে চোখ বন্ধ করুন।আর ভুলেও চোখ খুলবেন না।আমাদের অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।আমি বললে তারপরে খুলবেন না হলে আপনি যে স্থানে চোখ খুলবেন সেই স্থানেই রয়ে যাবেন।
আরাফ মেহরাব এর কথা মতো করলো।
মেহরাবঃচোখ খুলেন আরাফ।
আরাফ চোখ খুলে দেখলো সে এক রাজ প্রাসাদে রয়েছে। সামনেই একটি বিশাল সুসজ্জিত বেডরুম।
মেহরাবঃ আরাফ নবনি ভিতরেই আছে।আপনি যান আমি আপনার জন্য খাবার পাঠাচ্ছি।
আরাফঃযা বেটা কাবাব মে হাড্ডি তোর খাবার আমার লাগবে না।আমি আমার বউকে খেয়ে পেট ভরবো।(মনে মনে)
মেহরাব কিছুই শুনতে পারে নেই।সে চলে যায়।আরাফ বুঝতে পারে তার শরীর বন্ধ করাটা কাজে দিয়েছে।আরাফ কক্ষে প্রবেশ করে।আলিশান কারুকার্যময় বিছানায় নবনি শুয়ে আছে।নবনিকে এই রাজ্যের রাজকুমারী মনে হচ্ছে।আরাফ পাশে শুয়ে নবনিকে দেখছে।নবনি আগের থেকে আরো বেশি সুন্দর হয়ে গিয়েছে।চোখের নিচের কালো দাগগুলো নেই।গালগুলো ফুলে টমেটো হয়ে গিয়েছে।


আরাফঃওই মেহরাব কি তোমাকে আমার থেকেও বেশি সুখে রেখেছে?তুমি এত সুন্দর হলে কি করে! আরাফ এর খুব হিংসে হচ্ছে। আরাফ নবনির কোমর চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়। তারপর নবনিকে কোলবালিশের মতো জড়িয়ে ধরে।নবনির ঘুম ভেঙে যায়।
নবনিঃ কি করছেন টা কি!! ঘুমাতেও দিবেন না নাকি?
আরাফঃ এই মেয়ে তুমি এভাবে বলছো কেন?তুমি কি ভয় পাও নেই।এভাবে হুট করে জড়িয়ে ধরায়? আমার জায়গায় যদি অন্য কেউ থাকতো।
আরাফঃসম্ভব না।আমার কক্ষে ছেলের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। মেহরাব। আর ভয় পাওয়ারই বা কি আসে?আমি তো জানি আপনি আসবেন। মেহরাব আমাকে বলেই আনতে গিয়েছিল। আমিই অপেক্ষা করতে করতে শুয়ে পরি।
আরাফঃবেশি মেহরাব মেহরাব করছো না?আমার থেকে বেশি সুন্দর?
নবনিঃসুন্দর শুধু চেহারায় হয় না।আমি তার বাইরের না ভিতরের সৌন্দয্য উপলব্ধি করতে পেরেছে।আমাকে এখানে আনার পর উনি কখনো আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন নেই।উনি চাইলেই আমাকে বিয়ে করে বন্দী করতে পারতেন।কিন্তু তিনি তা করেন নেই।তার ব্যবহার অত্যন্ত নমনীয়।
আরাফঃ তুমি কি ওকে ভালোবেসে ফেলেছো?

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


চলবে ...


২৫তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন