উপন্যাস       :        আম্বরি
লেখিকা        :         সামিয়া খান প্রিয়া
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার “আম্বরি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া Bangla Golpo - Kobiyal
আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া

১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

আম্বরি || সামিয়া খান প্রিয়া (১৪ এবং শেষ পর্ব)

"আমার মাথা ঠিক ছিলনা।বারবার মেহরীকে হারানোর ভয় মাথায় কাজ করছিলো।এজন্য বলেছি এরোন ওকে বিক্রি করে দিয়ে চলে গিয়েছে।"
রাফসান নতমুখে কথা গুলো বলল।প্রচন্ড ঘৃণায় তার দিকে তাঁকিয়ে আছে স্পর্শিয়া।এই ছেলেটির সঙ্গে কোন দুঃখে নিজের বোনের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল কে জানে?
"তোর এই এক মিথ্যার ফল কী হলো দেখলি?মেহরী আ ত্ম হ ত্যা করার চেষ্টা করেছে।হসপিটালের বেডে নির্জীব হয়ে পড়ে আছে।এরোনকে ঠিক ও কতোটা ভালোবাসে।"
"আমি নিজেও তো মেহরীকে..।"

রাফসান কথাটি সম্পূর্ণ করতে পারলো না।এর পূর্বে তাকে থামতে হলো।কেবিনের ভেতর থেকে একজন নার্স বের হয়ে বলল,"পেশেন্ট আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছে।"
"যাচ্ছি।রাফসান তুই ভেতরে যাবিনা।"
শুভ্র রঙা সিলিং পানে তাঁকিয়ে আছে মেহরী।দুইদিনে মুখটা শুকিয়ে গিয়েছে।সেদিন ফ্ল্যাট থেকে বেশ বিধস্ত অবস্থায় ফিরে এসেছিল।রাফসানের ওই কথাটি শুনে তৎক্ষনাৎ সেখান থেকে বের হয়ে এলেও মানসিকভাবে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে।আস্তে করে তাকে ডাকলো স্পর্শিয়া।

"মেহরী।"
"আপু তুমি আমার উপর রাগ করে আছো তাইনা?"
কান্না দমন করে স্পর্শিয়া জবাব দিলো,
"তোর জীবন।যা সিদ্ধান্ত নিবি।আমি কে?"
"এটা রাগের কথা আপু।"
"নাহ তো।এরোন সবকিছু তোর জন্য।"
"আপু।"


"চুপ কর।কয়দিন পর আমার সি-সেকশন এসময় আমার যত্ন নেওয়ার জন্য নাটক করেছিস বুঝলাম তো।"
"শাওন ভাইয়া কোথায়?"
"খাবার আনতে গিয়েছে।"

দুই বোনের মধ্যে খুব সাধারণ কথাবার্তা।কিন্তু এক ধরণের সুপ্ত কষ্ট অনুভব করছে দুজনে।মেহরী উঠে বসে বলল,
"এরোন কোথায়?আমার খবরটা শুনেও কী একবার দেখা করতে আসেনি?"
"সত্যি বলি মেহরী?"
মেহরীর মুখে আ তংক দেখা গেলো।ফিসফিস করে বলল,
"কী হয়েছে আপু?"
"এরোন চলে গিয়েছে।"
"কোথায়?"
"সেটা কেউ জানেনা।ও দেশ ছেড়েছে।সম্ভবত নিজের নানার কাছে আছে।"
মেহরী থমকালো।পানসে রঙের মেঘ তার মুখবিবরে দেখা গেলো।ক্ষণবাদে উচ্চসুরে কেঁদে উঠলো।স্পর্শিয়া শক্ত করে নিজ বোনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
"শান্ত হও।ভালোবাসা সহজ জিনিস নয়।যে চাওয়া মাত্র পেয়ে যাবে।"
"আপু আমি একটুও বিশ্বাস করিনি যে এরোন আমাকে বিক্রি করে দিয়েছিল।"
"তাহলে এমন একটা করতে কেন গিয়েছিলি?"

"জানিনা।যখন ফোন বন্ধ পেলাম তখন সত্যিই মনে করেছিলাম।তাছাড়া মস্তিকের ভেতর কেউ বলছিলো নিজেকে শে ষ করে দিতে।আমার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিলনা।একারণে কাজটা করেছি।তবে এরোন কীভাবে আমাকে রেখে চলে গেলো।সে শুনলো না অবধি যে আমি অসুস্থ।সময়ে সময়ে ঘটনা ভুলে যাই।ঠিক কী হয়েছিল তখন আপু যে ছেলেটা চলে গেলো।আমি কী করেছি ওই সময়টায় যার জন্য রেখে চলে গেলো। তা একটিবারও জানতে পারলাম না।"


"থাম মেহরী।এরকম পাগলামি করলে কেমন চলবে?"
"আপু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে সব শে ষ।"
"নাহ মেহরী।সব শুরু।এরোনকে আমরা খুঁজে বের করবো কেমন?"
মেহরী মন ভুলানো স্বান্ত্বনা নিলো না।হাত পা ছুড়ে পা গলামি করতে লাগলো।অগত্যা নার্স ডেকে তাকে ঘুমের ঔষধ দিতে হলো।সে ঘুমিয়ে পড়লে স্পর্শিয়া কেবিন থেকে বের হয়ে এলো।রাফসান এখনও মাথা নিচু করে বসে আছে।তার উদ্দেশ্যে স্পর্শিয়া শুধালো,
"এরোন  কোথায় রাফসান?আমার মনে হচ্ছে তুই জানিস কোথায় আছে ও।"
"জানিনা।সত্যি বলছি।"
উষ্ণ শ্বাস ফেলে স্পর্শিয়া বলল,
"তোকে আমি একটুও বিশ্বাস করিনা।"

আহত হলো রাফসান।এ জীবনে কখনো যে মেহরীকে পাওয়া হবেনা সেটা মুহুর্তে মুহুর্তে উপলব্ধি হচ্ছে।দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শুধালো,
"কোথায় যাচ্ছিস স্পর্শিয়া?"
"ডক্টরের চেম্বারে।তিনি বললেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।তোর এই কান্ডতে মেহরীর মস্তিস্কে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।"
"সেটা কী?"


(***)
মেহরী তন্দ্রা অবস্থায় অনুভব করছে কেউ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।চোখ খোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে।কিন্তু দু চোখের নেত্রপল্লব গুলো খুলে রাখতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।স্নিগ্ধ এক সুগন্ধ পেলো সে।ধীরে ধীরে চোখ খুললো।দৃষ্টির সামনে সেই চির পরিচিত মুখ।এরোন হাসি মুখে তার দিকে ঝুঁকে আছে।চোখে অনাবিল হাসি তার।মেহরী হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে চাইলে বলল,
"উহু,আমি কোনো মেয়েকে স্পর্শ করতে দেইনা।জানো না মেহরী?"

মেহরী বিরোধ করলো।কপট রাগ দেখাতে ভুললো না।
"আমি অন্যসব মেয়ের মতো হলাম কীভাবে?আপনার কাছে কী ভিন্ন নই?"
"ভেবে দেখতে হবে।"
"কোথায় ছিলেন আপনি?আপু বলল দূরে কোথাও চলে গিয়েছেন।"
"ভুল বলেছে স্পর্শিয়া।আমি তো কাছে ছিলাম।শুধু পথ ভুলে গিয়েছিলাম এতোটুকু।তোমাকে খুঁজেই পাচ্ছিলাম না।"
"এইতো আপনার সাথে ছিলাম আমি।"

কেবিনের জানালা দিয়ে মৃদু বাতাস এসে মেহরীকে স্পর্শ করে গেলো।সে উঠে বসার চেষ্টা করলো।কিন্তু এরোনের মুখটা ক্ষাণিকটা নিচু হয়ে এলো।ফিসফিস করে বলল,
"আমি আবার হারিয়ে যাবো মেহরী।এতো ভালোবাসা ছিল আমার জন্য?কখনো বুঝিনি কেন?"

"কোথাও হারাতে দিলে তো।আপনাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে রাখবো।"
"হুঁ?এরোনকে কেউ নিজের সঙ্গে রাখতে পারেনা।আমি কেমন জানতে চাও?""
মেহরী কান্নামাখা কণ্ঠে বলল,
"হ্যাঁ।"
"তবে আমার সন্ধান করো।আম্বরির মোহে নিজেকে জড়িয়ে নাও।আমি আবার চলে যাচ্ছি মেহরী।"
"এরোন,এরোন।শুনেন।"


ব্যকুলতাভরা সম্বোধনে পুরুষটি নিজেও সম্বোধন করে উঠলো,
"মেহরী,মেহরী।"
এরপর সবটা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে উঠলো।মেহরী ধীরে ধীরে দৃষ্টি খুলে উঠে বসলো।তার মস্তিস্ক ধরতে পেরেছে এরোনের সঙ্গে সাক্ষাতটা তার স্বপ্ন হয়েছে।কিন্তু রেশ এখনও পাচ্ছে সে।প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিলো মেহরী।হসপিটালের ফিনাইলের গন্ধ ব্যতীত কিছুই নাকে প্রবেশ করলো না।মেহরী দুঃখেও হেসে বলল,
"আপনাকে খুঁজে বের করবো এরোন।আমার ভালোবাসার আম্বরি(সুগন্ধ) তে ভিজতেই হবে আপনাকে।"

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


----সমাপ্ত----


লেখক সংক্ষেপ:
লেখিকা সামিয়া খান প্রিয়ার বাস বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। শখের বশে লিখালিখি করলেও ইতোমধ্যে তার বেশ কয়েকটি বই এবং ইবুক প্রকাশিত হয়েছে। যা ইতোমধ্যে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
তরুণ এই লেখিকা সম্পর্কে এর বেশি কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন