লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “বৌপ্রিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি |
২০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ২১)
হঠাৎ পেছন থেকে উচ্ছ্বাস কুসুমকে জড়িয়ে ধরতেই ভরকে গেল কুসুম। থরথর করে কেঁপে উঠল সর্বাঙ্গ তার। হাত থেকে টাওয়াল খসে পরে গেল। ঘাড়ে উচ্ছ্বাসের গরম নিঃশ্বাস অনুভব করল। সঙ্গে অনুভব করলে মৃদু নেশালো এক কন্ঠ,
‘ স-সরি কুসুম। ‘
কুসুমের বুকটা যেন ভেসে গেল। ভালো লাগায় প্রজাপতির ন্যায় উড়ে যেতে চাইল কিশোরী মন। কুসুম তবুও নিজেকে কঠিন রাখার চেষ্টা করে বলল,
‘ আ-আদিক্ষেতা দ-দেখাবেন না। ছ-ছাড়ুন। ‘
উচ্ছ্বাস ছাড়ল না। বরং হাতের বাঁধন আরো একটু শক্ত করল। কুসুমের পেটের উপর রাখা হাত আরো একটু চেপে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজে বলল,
‘ বিশ্বাস করো, অনেক ব্যস্ত ছিলাম। আমি কিন্তু ইচ্ছে করে দেরি করিনি। ট্রাস্ট মি কুসুম। ‘
কুসুমের বুকের ধড়ফড়ানি যেন বেড়েই চললো ক্রমাগত। হৃদপিণ্ডের তালও খুব একটা ভালো নয়। উচ্ছ্বাসের প্রথম এতটা গভীর স্পর্শ কুসুমের সহ্য হচ্ছে না। কুসুম মৃদু স্বরে বলল,
‘ ট্রাস্ট করেছি। ছাড়ুন এবার। ‘
উচ্ছ্বাস কুসুমের ঘাড়ে থুতনি রেখে আয়নায় কুসুমের দিকে তাকাল। চোখের পলক ফেলে জিজ্ঞেস করল,
‘ রাগ ভেঙেছে? নাকি আরো এক্সপ্লেইন করব? ‘
কুসুম উত্তর দিল না। বরং একটু জোড় খাটিয়েই উচ্ছ্বাসের হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে সরে দাঁড়ালো। উচ্ছ্বাস খানিক দূরে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে কুসুমের দিকে চেয়ে আছে। কুসুম মেঝে থেকে টাওয়াল তুলে চুলে বাঁধতে লাগল। বলল,
‘ আমি বোধহয় কারো কাছে টেকেন ফর গ্র্যান্টেড হয়ে গেছিলাম। সমস্যা নেই। প্রথম তো। ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে। যান, শাওয়ার নিয়ে আসুন। হসপিটাল যাবেন না আজ? ‘
‘ হু। ‘
উচ্ছ্বাসের বুঝতে বাকি নেই, এই রাগের বহর কটাদিন অব্দি চলবে। গরম আগ্নেয়গিরি শান্ত হতে সময় তো লাগবেই। লাভা হুট করে গলে যায় না। সময় দিতে হয় তাকে। উচ্ছ্বাস আর ঘাটাল না কুসুমকে। কুসুমের চুল থেকে এক টানে টাওয়াল খুলে শীষ বাজিয়ে বাথরুমে চলে গেল। কুসুম হতভম্ব হয়ে গেল। তার টাওয়াল তারই চুল থেকে খুলে নিয়ে গেল? খারাপ লোক।
কুসুম বিছানা গোছালো। উচ্ছ্বাসের শার্ট প্যান্ট সহ যাবতীয় জরুরী জিনিস বিছানার উপর রেখে নিচে এলো। খালামনি কুসুমকে দেখে এগিয়ে এসে বলেন,
‘ কুসুম পায়েস খাবি? বানিয়েছি আজকে। ‘
কুসুম মৃদু হেসে বলল, ‘ তুমি বানালে অবশ্যই খাব। ‘
খালামনি পায়েস প্লেটে নিয়ে কুসুমকে দিলেন। কুসুম নিজে খেল, খাওয়ার ফাঁকে ক’চামচ তুলে খালামণিকেও খাইয়ে দিল। দুজন মিলে বড্ড হাসাহাসি করছে। যা সিড়ি বেয়ে নিচে নামার সময় উচ্ছ্বাসের কানে এলো। উচ্ছ্বাস মনেমনে কিছুটা তৃপ্তি পেল। কুসুমকে এই বাড়ির বৌ করে আনার সবচেয়ে বেশি ইচ্ছে এবং আগ্রহ ছিল উচ্ছ্বাসের মায়ের। তিনি যেন ছোট থেকেই কুসুমকে একটু বেশিই পছন্দ করতেন। কুসুমের সঙ্গে উচ্ছ্বাসের কখনো ঝগড়া হলে বকার ভাগীদার কুসুম নয় বরং উচ্ছ্বাস নিজে হত। ছোটবেলায় এসব খারাপ লাগলেও, এখন মনে হচ্ছে কুসুম এবং তার মায়ের সম্পর্ক সারাজীবন যেন এমনই থাকে।
সাহেদা রান্নার দিকটা দেখছেন। কুসুম গিয়ে মা’কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। মেয়ের স্পর্শ পেতেই চোখ ছলছল করে উঠল সাহেদার। পেছনে ফিরে মেয়েকে মন ভরে দেখে নিয়ে ভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘ ভালো আছিস? ‘
কুসুম বুঝতে পারল মায়ের ভালো আছিস বলার অর্থ কি? কুসুম মৃদু হেসে বলল, ‘ ঐ বাড়ির সবাই আমাকে খুব ভালো রেখেছে। চিন্তা করো না। ‘
সাহেদা আশ্বস্ত হলেন। কিছুক্ষন কথাবার্তার পর সাহেদা জিজ্ঞেস করলেন,
‘ তোর অনার্স ভর্তি তো কিছুদিনের মধ্যেই। কী করবি ভেবেছিস? পড়াশোনার ব্যাপারে উচ্ছ্বাস কি বলল? ‘
কুসুম ফলের ঝুড়ি থেকে একটা আপেল তুলে সেটায় কামড় বসাল। রয়েসয়ে উত্তর দিল,
‘ খালামনি সেদিন বললেন নর্থ সাউথে পড়ার জন্যে। তারও তাই মত। বাসার পাশে আছে। তার অনেক চেনাজানা মানুষ আছে। সমস্যা হবে না বললেন। তবে এখন ভর্তি হব না। সেখান থেকে ফেরার পর হব। সে কথা বলে রাখবে বলেছে। ‘
সাহেদা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ এখন আবার কোথায় যাবি?’
দেখা গেল কুসুম লজ্জা পেল। মিনমিন করে বলল,
‘ এই মাসের শেষের দিকে কক্সবাজার যাব। সেখান থেকে ফিরে এলে। ‘
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
২২তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন