লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “বৌপ্রিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি |
৩৩তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (৩৪ এবং অন্তিম পর্ব)
কুসুমের জ্ঞান ফেরে ততক্ষণে কুসুমের মা, ভাই, ভাবি কুসুমের পাশে এসে বসে। কুসুম নিজের পরিবারকে দেখে উচ্ছসিত হয়ে উঠে বসার চেষ্টা করল,
‘তুই ঘুমে ছিলি না, বরং অজ্ঞান ছিলি।’
কুসুম ফ্যালফ্যাল চোখে তাকাল ঊষার দিকে। ইয়াহিয়া ঊষার দিকে কিছু একটা ইশারা করল। ঊষা চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করল ইয়াহিয়াকে। ইয়াহিয়া মায়ের দিকে তাকাল।
‘আম্মা, আমরা বাইরে যাই? ঊষা কথা বলুক।’
সাহেদা ছলছল চোখে মেয়ের কপালে হাত রেখে তাপমাত্রা মাপেন। স্বাভাবিক গায়ের তাপমাত্রা। সাহেদা মেয়ের চুলে হাত বুলিয়ে বেরিয়ে যান ঘর ছেড়ে। দরজার বাইরে পারুল দাড়িয়ে। সাহেদা বোনকে দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। ইয়াহিয়াকে অন্য ঘরে যেতে বলে বোনের সঙ্গে একা থাকেন। পারুল ভ্রু কুচকে বোনের দিকে চেয়ে আছেন। সাহেদা বললেন,
‘তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে, আপা। তবুও?’
পারুল কিছু বলার আগে উচ্ছ্বাস ফলের প্লেট নিয়ে দরজার সামনে আসে। দুজনের কথা একটু-একটু শুনে। তারপর নিজেই উত্তর দেয়,
‘কুসুম সুস্থ আছে খালামনি। ওর প্রেশার স্বাভাবিক, ওজন বেবি ক্যারি করার জন্যে ঠিকাছে, তাছাড়া আগামীকাল ওর টেস্ট করানো হবে। এসব খবরের ন্যায় বাকি খবরও আশা করি ভালো আসবে। বাকি রইল, ওর পড়াশোনা। কুসুম পুরো পড়াশোনা কমপ্লিট করবে, এটা আম্মার না, আমার ওয়াদা। আমি অর্ধ শিক্ষিত বউ আমার ঘরে এলাও করব না। ডোন্ট ওরি, খালামনি।’
সাহেদা আর কিইবা বলবেন। বোনের ছেলের মুখে যা যা জানতে চেয়েছেন, সব জেনে ফেলেছেন জিজ্ঞেস করার পূর্বেই। আরো কিছু জিজ্ঞেস করা মানে লজ্জা শরমের জলাঞ্জলি দেওয়া। মেয়ের মা হয়ে মেয়ের প্রেগনেন্ট হওয়ার ব্যাপারে অতটা জিজ্ঞেস করা যায় না, মুখে বাঁধে। তাই সাহেদা তখনের মত চুপ থাকলেন।
উচ্ছ্বাস দরজা খুলে রুমে ঢুকবে, পেছন থেকে শিউলি জানিয়ে দেয়,
কুসুম কি ঊষার এসব বকাঝকা শুনছে? সে তো পেটের উপর হাত রেখে কল্পনায় ভাসছে। সেদিন উচ্ছ্বাস কিছুটা অসাবধান না হলে আজকে এমন একটা মুহুর্ত মোটেও পাওয়া হত না কুসুমের। কুসুমের মেঝেতে নাচতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আপাতত সে মুখ দুঃখী বানিয়ে রেখেছে। ঊষা বকছে, এখন হাসলে বকার মাত্রা দ্বিগুণ হবে। ঊষা কুসুমের খুশি হয়ত কিছুটা বুঝতে পারল। তাই ঊষা ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘এখন থেকে একটু সতর্ক থাকিস, কুসুম। কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না। যা লাগবে, এ বাড়ির মানুষের সঙ্গে শেয়ার করিস। যদি মনে করিস এদের সঙ্গে শেয়ার করা যাচ্ছে না, তাহলে আমাকে কল করিস। আমি সর্বদা তোর পাশে ছায়ার মত আছি।’
কুসুম আবেগপ্লুত হল। কিছুটা এগিয়ে ঊষাকে জড়িয়ে ধরে। ঊষা উপলব্ধি করে কুসুম কাঁপছে। ঊষা কুসুমের মাথায় হাত বুলায়। ভেজা কণ্ঠে বলে, ‘মা হয়ে যাচ্ছিস, কুসুম। ভাগ্যটা কতটা তোর পক্ষে কাজ করল, অনুভব করছিস?’
‘ব্র্যান্ডের পারফিউমের গন্ধেও বমি? কোথায় যাব আমি। কুসুম, শেষ তোমার?’
‘আরো হবে বমি?’
কুসুম মাথা নাড়িয়ে মানা করল। উচ্ছ্বাসকে নিশ্চিন্ত হতে দেখা গেল। কুসুমকে আঁকড়ে ধরে বিছানায় এনে বসাল সে। কুসুম বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে। উচ্ছ্বাস কুসুমের পাশে বসে কুসুমের ঘামে ভেজা হাত নিজের হাতে চেপে ধরে। ধীমে স্বরে বলে,
‘কেন আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কনসিভ করতে গেলে কুসুম? কি হত কটা দিন অপেক্ষা করলে? ততদিনে নিজেও কিছুটা শক্ত হতে। আমিও বাবা হবার জন্যে প্রস্তুত হতাম।’
কুসুম শুকনো গলা লালা দিয়ে ভেজাল। ক্লান্ত হাতে উচ্ছ্বাসের গাল ছুঁয়ে দিল। বলল,
‘আপনি বাবা হবার জন্যে প্রস্তুত না হলেও, আমি মা হবার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম। আচ্ছা ভাবেন তো, ছোট্ট হাত পা আপনি ছুঁয়ে দিচ্ছেন, কোলে নিচ্ছেন, তার নরম গালে চুমু দিচ্ছেন, সে আপনাকে প্রথমবার বাচ্চা কণ্ঠে বাবা বলে ডাকবে, আমাকে মা ডাকবে, আপনি হসপিটাল থেকে এলে সে দৌঁড়ে ঝাঁপিয়ে পরবে আপনার বুকে। আপনি কি কল্পনা করতে পারছেন এসব? আমি করছি। যতবার করছি, আমার কেমন যেন অস্থির লাগছে। বিশ্বাস করেন, আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি, এত এত নিয়ম এক বাচ্চার জন্যে মেনে নিতে পারিনি। বাচ্চাটা আমার কাছে স্বপ্নের মত, ডাক্তার সাহেব। এ স্বপ্নের জন্যে আমি আমার আপনার স্বপ্ন বিসর্জন দিতে বাধ্য হয়েছি।’
উচ্ছ্বাস কল্পনায় এসব দেখছে, অনুভব করতে পারছে। উচ্ছ্বাসের বুকের ভেতর কেমন করছে। সে নিজেকে সামলাতে পারল না। ঝাঁপিয়ে পরে কুসুমকে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে মুখ গুজে দিল। মিনমিন করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল,
স্ত্রীটি পুরুষের কানেকানে বলল,
‘আপনি আমাকে জীবনের সেরা সুখের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন, ডাক্তার সাহেব। এমন পরীর মত মেয়ে আমার, ভাবলেই আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছে। ইশ!’
পুরুষটি স্ত্রীর কানে ঠোঁট রাখল। গাঢ় করে চুমু এঁকে বলল,
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
-- সমাপ্ত --
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন