লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “বৌপ্রিয়া” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি |
৩২তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
বৌপ্রিয়া || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ৩৩)
ঊষার বিদায়ের সময় ঊষার বাবার চোখে এক ফোঁটা জল নামেনি। বরং মেয়েকে বড্ড কঠিন হাতে তুলে দিলেন ইয়াহিয়ার দিকে। ঊষা সব দেখে। চোখের জলে ভেসে যায় মুখ। বিয়ের সময় বাবার এমন কঠোরতা মানতে কষ্ট হচ্ছে তার। যাই হোক, বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে না করে বাবার পছন্দকে অপমান করেছে ঊষা। এটা তো তার প্রাপ্যই ছিল। ঊষার মা মেয়ের হাতে তার বিয়ের বালা পরিয়ে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পরলেন। মা জাতি কখনো রাগ করে থাকতে পারে না। তারা স্রষ্টা কর্তৃক নরম স্বভাব পেয়েই পৃথিবীতে আসে। ঊষা মায়ের কাঁধে মাথা রাখে। চোখের জল আর বাঁধা মানে না। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে ঊষা। কুসুমের চোখেও জল। ঊষা আপার কান্না তার সহ্য হচ্ছে না। ঊষা আপাকে কাদতে দেখলে ছোটবেলা থেকেই কুসুমের কান্না আসত। তারপর দুজন জড়াজড়ি করে কাদতে বসত। কুসুমকে কাদতে দেখে উচ্ছ্বাস একহাতে কুসুমের কাধে হাত রেখে তাকে নিজের দিকে টেনে নিল। বাচ্চাদের বোঝানোর ভঙ্গি করে বলল,
‘বোকাদের মত কাদছ কেন, মেয়ে? ঊষা তোমাদের বাসায় যাচ্ছে, আর কোথাও না।’
কুসুম নাক টেনে বলল, ‘জানিনা কেন কান্না আসছে। অথচ কান্না আসার কথা না আমার। খুশিতে আমার এখনও বুক কাপছে। অনুভব করতে পারছি আমি।’
উচ্ছ্বাসের কৌতুক বোধ হল। সে কিছুটা ঝুঁকে এল কুসুমের দিকে। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,
‘আড়ালে আসো। কান পেতে শুনি, কেমন কাপছে।’
‘ঊষা?’
ধীমে এই সম্বোধন ঊষাকে ভূমিকম্পের মত কাপিয়ে তুলল। নত চেহারায় উত্তর দিল,
ঊষা হ্যাঁবোধক সম্মতি দেয়। ইয়াহিয়া উঠে মেঝেতে দুটো জায়নামাজ বিছায়। দুজন একসঙ্গে নামাজ আদায় করে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে অনেকক্ষন।
ঊষা দোয়া করে চুপ করে বসে আছে বিছানায়। ইয়াহিয়া জায়নামাজ ভাঁজ করে জায়গায় রেখে বিছানায় এসে বসে। গাঢ় চোখে ঊষার দিকে তাকায়। একটু পর মিটমিট করে হেসে বলে,
‘তুমি বোধহয় তোমার ওয়াদার কথা ভুলে গেছ, ঊষা? মনে করিয়ে দেব আমি?’
ঊষার যে লজ্জায় মারা যাচ্ছে। কি করে ওয়াদা পালন করবে সে? ঊষা ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে ফিরে যায়। ইয়াহিয়া এগিয়ে আসে। ঊষাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ঠোঁট বরাবর ঠোঁট এনে ফিসফিস করে বলে,
‘কষ্ট হচ্ছে ওয়াদা পালন করতে? আমি হেল্প করব, বউ?’
‘তোর খালমনিকে কি উত্তর দিবি এখন? সে রাস্তায়। পারছে না উড়ে চলে আসতে। এসেই তোর আর আমার ক্লাস নিবে সে। কি করবি এখন?’
উচ্ছ্বাস গাঢ় চোখে কুসুমের দিকে চেয়ে দেখল। মেয়েটাকে পইপই করে বলে দিয়েছে, একটু সতর্ক থাকতে। সে সবসময়ই সতর্ক ছিল। কিন্তু সেদিনের জ্বর সব উল্টেপাল্টে দিয়েছে। জ্বরের কারণে শরীরে দূর্বলতা থাকায় এসব বিষয়ে মনোযোগ দেবার কথা মনে ছিল না। আর এই বিষয়ের সুযোগ কুসুম ইচ্ছে করেই নিয়েছে। কি করবে এই মেয়েকে নিয়ে উচ্ছ্বাস? সবসময় তাকে জ্বালানোর ধান্দা করে মেয়ে! মেয়েটা তাকে পাগল করে ছেড়ে দেবে একদিন রাস্তায়।
উচ্ছ্বাস কোনরূপ উত্তর দিচ্ছে না দেখে পারুল আর কথা বাড়ালেন না। ছেলের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলা অশোভনীয় দেখায়। তাই পারুল এসব বিষয়ের কথাবার্তার স্থগিত করলেন। সোফা ছেড়ে উঠে কুসুমের পাশে এস বসলেন। কুসুমের চুলে হাত বুলিয়ে নরম গলায় ছেলেকে বললেন,
‘খেয়াল রাখ নিজের বৌ-বাচ্চার। যেমন করেই আসুক, এই বাচ্চা এ বাড়ির প্রথম উত্তরসূরি। তার খেয়াল রাখা আপাতত তোর ডাক্তারি থেকেও গুরুত্বপূর্ন। কুসুমের জ্ঞান ফিরলে, ওর সঙ্গে চেঁচামেচি করবি না। মনে রাখবি, ওর মন খারাপ মানে আমার নাতিপুতির মন খারাপ। ঠিকাছে? তুই কুসুমের পাশে বস। আমি তোর জন্যে চা পাঠাচ্ছি।’
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
৩৪তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন