উপন্যাস       :        তাজমহল দ্বিতীয় খন্ড
লেখিকা        :         প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১লা অক্টোবর, ২০২৫ ইং

লেখিকা প্রিমা ফারনাজ চৌধুরীর “তাজমহল - ২য় খন্ড” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৫ সালের ১লা অক্টোবর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী || দ্বিতীয় খন্ড
তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী || দ্বিতীয় খন্ড


তাজমহল || প্রিমা ফারনাজ চৌধুরী || দ্বিতীয় খন্ড (পর্ব - ৩)

শাইনাকে অনেকক্ষণ ধরে ডাকছেন রওশনআরা।
শাইনার আসতে একটু দেরী হলো। তাজদার সিদ্দিকী তাকে ছাড়ছিলই না। সে রান্নাঘরে আসতেই রওশনআরা বলল,"সারাদিন না খেয়েদেয়ে শুধু ঘুমালে হবে? নিজের শরীরের কি অবস্থা করেছ? দেখে তো মনে হচ্ছে কেউ খেতে দেয়নি।"

শাইনা চুপ করে রইলো। রওশনআরা বলল,"এখানে নাশতা রাখা আছে। কোনটা খাবে নিয়ে খাও।"

শাইনা কিছুক্ষণ চুপচাপ খাবারের দিকে চেয়ে রইলো। একদম খেতে ইচ্ছে করছেনা। কিছু খাবেনা এই কথাও বলতে পারবে না। সে প্লেটে কিছু নাশতা তুলে নিয়ে জোহরা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল,"মেঝ মা দুধ নেই?"

"কি দরকার?"

"কফি।"

"বানিয়ে নাও।"

শাইনা কফি বানানোর জন্য দুধটা জ্বাল দিতে নিল। রওশনআরা বলল,"আগে তুমি খেয়ে নাও। কি আশ্চর্য! কফিটা তিতলি নিয়ে যাবে।"

জোহরা বেগম বলে উঠলেন,"ও নিয়ে যাক। তিতলি অনেকদিন করেছে ভাইয়ের সেবা। এবার বউ করুক।"

শাইনা চুপচাপ কফিটা বানিয়ে নিল। বেরোনোর সময় তাসনুভার মুখোমুখি পড়ে গেল। তাসনুভা তাকে আপাদমস্তক দেখে বলল,

"তোমার স্কিনের বারোটা বেজেছে। যত্ন নাওনা? জগতে কেউ আর মা হয়নি? আশ্চর্য!"

বিরক্ত হয়ে সে রান্নাঘরে প্রবেশ করলো।

শাইনা চুপচাপ নিজের ঘরে চলে এল। তাজদার সিদ্দিকী মনোযোগ দিয়ে বিয়ের ভিডিও দেখে যাচ্ছে পায়ের উপর পা তুলে বসে মুখের কাছে হাত ঠেকিয়ে। যেন খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু দেখছে।

ভিডিওতে দেখাচ্ছে শাইনার হাত ধরে সে টেনে স্টেজে তুলছে। শাইনা তার সামনে কফিটা রাখলো। তারপর নাশতার প্লেট।

তাজদার সিদ্দিকী কিছু বললো না। শাইনা তার পেছনে দাঁড়িয়ে ভিডিও দেখতে দেখতে বলল,

"এইসব কি দেখছেন এত মনোযোগ দিয়ে? ধুর!"

বিরক্ত হয়ে সরে গেল সে।

ল্যাপটপে চলতে থাকা ভিডিওটির দিকে গভীর মনোযোগ রেখে তাজদার ধীরেধীরে বলল,

"দেখছি বউটা বিদায়ের সময় কাঁদছে কিনা। কি আশ্চর্য একফোঁটাও কাঁদলো না? শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার জন্য এতটাই পাগল ছিল যে কান্নাকাটি না করে আগেভাগে গাড়িতে উঠে বসে গেছে। শ্বশুরবাড়িতে আসার জন্য কি পরিমাণ পাগল ছিল ভাবা যায়?"

শাইনা তার দিকে ফিরে তাকালো।
তাজদারও কফির মগ টেনে নিয়ে তাতে চুমুক বসিয়ে তার দিকে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো। ভ্রু নাচাতেই শাইনা সামনে ফিরে গেল। তাজদার বলল,

"তুমি নাকি আমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে বন্যা নামিয়ে দিয়েছে?"

শাইনা বলল,"আপনাকে এইসব বাজে খবর দেয় কে?"

"আমি গোয়েন্দা লাগিয়েছি।"

"ওরা আপনাকে মিথ্যে বলে খুশি করাতে চাইছে।"

"কে বলেছে এইসব কথা শুনে আমি খুশি হয়েছি?"

শাইনা গোমড়ামুখে তার দিকে ফিরে বলল,

"খুশি হননি বলছেন?"

"শাইনা মমতাজ আমার জন্য কাঁদবে আর সেকথা আমি সহজে বিশ্বাস করবো?"

শাইনা আবারও ফিরে গেল। আরও গম্ভীর হয়ে গেল। কেন? সে কাঁদতে পারেনা? সে এত পাষাণ নয় মোটেও। তাজদার সিদ্দিকী তাকে চেনেনা।

সে বেরিয়ে যাচ্ছিল তাজদার তাকে ডেকে বলল,

"নাশতাগুলো নিশ্চয়ই তোমার জন্য এনেছ?"

শাইনা থেমে গেল। তার দিকে ফিরে তাকালো।

"কি করে বুঝলেন?"

"কফির সাথে এইসব খায় কেউ?"

শাইনা বলল,"ভিডিও দেখতে দেখতে এইসব খাবেন। আসি।"

বলেই শাইনা বেরিয়ে যাচ্ছিল তাজদার তাকে তখুনি ডাকলো,"মমতাজ!"

শাইনা দরজার বাইরে চলে গিয়েছে ততক্ষণে। দরজার পাশে দেয়ালের সাথে মুখের একপাশে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,"আবার কি?"

তাজদার চেয়ারে হেলান দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল,"ঢাকায় যাওয়া হয়নি কেন?"

"কারণ আমার ডানা ছেঁটে দেওয়া। ডানা থাকলে কে আমায় আটকাতো? পাখিকে কখনো অন্যের ডানায় ভর করে উড়তে দেখেছেন?"

তাজদার বলল,"আমি ঠিক করে এসেছিলাম এটা নিয়ে রাগ দেখাবো।"

"দেখান। নইলে ব্যাপারটা জমছে না। আমিও ভেবে রেখেছিলাম আপনার সাথে এটা নিয়ে বেশ ঝগড়া করবো।"

"করলে না কেন?"

শাইনা চুপ। তাজদার ঠোঁটের কোণা টেনে হেসে বলল,"মায়া লাগছে?"

"অসুস্থ মানুষের জন্য মায়া লাগাটা অস্বাভাবিক?"

"খুব স্বাভাবিক।"

"আমাকে এই ফাঁদে ফেলার জন্য মহিষের কাছে যাওয়াটা খুব দরকার ছিল?"

তাজদার চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেল। পায়ে চেয়ারটা ঠেলে দিতে দিতে বলল,

"খারাপ মানুষরাই ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। আমি পেরেছি বলতে চাইছো?"

শাইনা তাকে এগোতে দেখে পালিয়ে গেল। তাজদার গর্জে ডাকল,"মমতাজ! জরুরি কথার সময় এটা কেমন কাজ?"

শাইনা বলল,"মানুষ বলবে বরের সাথে সারাক্ষণ ঘরে লেগে বসে থাকে। কাজ আছে। কিছুক্ষণ পর আসছি। আপনি ভিডিও দেখা শেষ করুন।"

শাইনা আর তার আশেপাশে এল না। রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করে সবাই বাড়ির উঠোনে বেরিয়েছে একটুখানি। উঠোনে আগুন জ্বালিয়ে সবাই আগুন পোহাচ্ছ, গল্পগুজব করছে আর ব্যাডমিন্টন খেলছে। তৌসিফ আর তিতলি আগুনে কাঠ বাঁশ এনে দিচ্ছে। রায়হান তিতলিকে সাবধান করছে আগুনের বেশি কাছে না যেতে।

শাইনার মন টিকছিল না বাড়িতে। তাই সেও বের হলো। শাইনা তার মা দাদীকে দেখে হাঁটতে হাঁটতে তাদের বাড়ির দিকে চলে গেল। ভাত কি দিয়ে খেয়েছে এইসব কথা জিগ্যেস করলো সবাই।

তাজদার চেয়ারে বসা, আনিসের পাশাপাশি। শাওন, তিতলি, তৌসিফ আর তাশফিন ব্যাডমিন্টন খেলছে। সেখানে আরও অনেকে যোগ দিয়েছে।

কিছুক্ষণ পর রওশনআরা শাইনাকে ডাকাডাকি করতে লাগলেন। সবার মনোযোগ ওইদিকে চলে গেল। শাইনা দ্রুত চলে এল। বাড়ির বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই রওশনআরা অবাককন্ঠে বলল,

"তুমিও বাইরে বেরিয়ে গেলে? রাত কত হয়েছে খেয়াল আছে? তুমি এখন চাইলেই যখন তখন বাড়ি থেকে বেরোতে পারবে? আশ্চর্য! ও বেরিয়ে যাচ্ছে কেউ দেখেনি?"

তাজদার আনিসের পাশাপাশি বসেছে ঠিক কিন্তু মনোযোগ এদিকে। আনিসও কথাগুলো শুনতে পেয়েছে। কিন্তু এমনভাবে ফোনে মনোযোগ রেখেছে দেখে মনে হচ্ছে ও কিছু শুনতে পায়নি।

শাইনা মন খারাপ করে চুপচাপ ভেতরে চলে যাচ্ছিল। তাজদার তখুনি শাইনাকে ডেকে নিল।

"শাইনা এদিকে আসো।"

শাইনা রওশনআরার দিকে তাকালো। উনি গম্ভীরমুখে বললেন,"কি বলছে দেখে আসো। আর ওকে বলো ঘরে গিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে। পাওয়ারি ঔষধ খাচ্ছে। ঘুম কম হলে ক্ষতি হবে।"

শাইনা মাথা নেড়ে বেরিয়ে গেল। তাজদার বলল,"আগুনের কিছুট দূরে গিয়ে বসো। ভালো লাগবে।"

শাইনাকে তিতলি টেনে নিয়ে গেল। তার সাথে কেউ ব্যাডমিন্টন খেলছে না। শাইনাকে বলল, তুমি একজায়গায় দাঁড়িয়ে শুধু র‍্যাকেট নাড়বে। দৌড়াদৌড়ি করবে না। শাইনা মহাখুশি। বোরিংনেস কেটে গেছে তার। এতদিন জীবনটা বোর হয়ে ছিল। আজ চমৎকার একটা সময় কাটলো। তিতলিকে খাটতে দেখে সে হাসছিল। বেচারিকে শুধু কক কুড়িয়ে নিতে হচ্ছে। তাজদার মাঝেমধ্যে চোখ তুলে দেখছিল আর তখন হাসি থামিয়ে র‍্যাকেট নিয়ে ঘুরে যাচ্ছিল শাইনা।

শাওন, রায়হান, তাশফিন, আর তৌসিফ দুর্দান্ত লেভেলের খেলছে। তারা প্রায় ক্লান্ত। তখুনি তাসনুভা এল সেখানে। তাশফিনের হাত থেকে র‍্যাকেট কেড়ে নিল। রায়হান বসে আছে ক্লান্ত হয়ে। তৌসিফ বলল,"তোর সাথে জমবে না।"

শাওনও কেটে পড়লো। এই মহিলা ভেজাইল্লা। তাসনুভা রাগে, ক্ষোভে ফেটে পড়লো তার সাথে কেউ খেলতে চাইছেনা দেখে। তৌসিফ বোতল থেকে পানি খেতে খেতে বলল,

"একটু জিরোতে দে। সাপের মতো এমন ফুঁসছিস কেন? আশ্চর্য!"

তাসনুভা রায়হানকে বলল,"ভাইয়া আসো।"

রায়হান বলল,"আমি আর পারবো না। তিতলিকে ডাকো।"

তিতলি সাথে সাথে বলল,"না আমি ওর সাথে পারবো না।"

তাসনুভা রাগে দুঃখে চলে যাবে ঠিক করেছে ঠিক তখুনি আনিসকে চোখে পড়লো। সেদিকে ছুটে গেল সে। আনিসের কোলে একটা র‍্যাকেট রেখে দিয়ে বলল,

"আনিস ভাই আসেন খেলি।"

বলেই সে খেলার নির্দিষ্ট জায়গা গিয়ে দাঁড়ালো আনিসের মতামত শোনার চেষ্টা না করেই। আনিস একটু অস্বস্তিতে পড়ে গেল। তাজদার তা দেখে বলল,"তুই যা। আমি দেখছি এদিকে।"

আনিস র‍্যাকেটটা নিয়ে উঠে গেল। তাসনুভা আঙুল দিয়ে কক দেখিয়ে বলল,"ওটা নিয়ে আসুন প্লিজ। আপনি আমার সাথে পারবেন না। দেখুন এরা সবাই হেরে যাবার ভয়ে মাঠেই নামছেনা।"

আনিস বলল,"এখন তো আমারও ভয় করছে।"

তাসনুভা র‍্যাকেট নেড়েনেড়ে সামনের চুল পেছনে ঠেলে দিয়ে বলল,

"স্বাভাবিক।"

আনিস র‍্যাকেটে কক ঠেকিয়ে ছুঁড়ে দিল তাসনুভার দিকে। তাসনুভা ধেয়ে আসা ককটা র‍্যাকেটে ঠেকিয়ে আবার ফেরত দিল।

একটানা কয়েক রাউন্ড এভাবেই চলল। শেষমেশ ককটা বার আনিসের দিকে পড়ল।

তাসনুভা হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,
"বলেছিলাম না?"

আনিস নিচু হয়ে ককটা তুলে নিতে নিতে বলল,
"তুমি আমাকে সিরিয়াস হতে বলছো?"

"প্লিইইজ!"

আনিস আর কিছু না বলে ককটা উড়িয়ে দিল।
তারপর শুরু হলো জমজমাট খেলা।

তাসনুভা এবার নাস্তানাবুদ।

আনিস এত জোরে, এত মনোযোগ দিয়ে খেলছে যে সে দম ফেলতেও পারছে না। শুধু চোখের সামনে ককটার উড়াউড়ি দেখছে। একবার ডানে, একবার বামে, আর সে শুধু পিছু নিচ্ছে হাঁপাতে হাঁপাতে।

শেষমেশ ককটা তার কাছেই পড়ে গেল। তাসনুভা বলল,"আপনি বেশি জোর দিয়ে খেলছেন এইবার। আপনার শক্তি বেশি বলে আপনি এভাবে খেলতে পারেন না।"

"কি আশ্চর্য! তুমি নিজেই তো বলেছ সিরিয়াস হতে।"

আবারও খেলা শুরু হলো। এবার প্রতিটি শর্ট আরও কঠিন। তাসনুভা অল্পতেই হেরে গেল। হেরে গিয়ে রেগে গিয়ে বলল,

"আনিস ভাই আপনি ইচ্ছে করে এমন করছেন। বেশি বেশি করছেন। ইচ্ছে করেই চাপিয়ে চাপিয়ে মারছেন। খেলবো না আমি আর। ধ্যাত!"

পা নাচিয়ে নাচিয়ে সে চলে গেল বাড়ির ভেতরে। আনিসুজ্জামান সিদ্দিকীর কাছে নিজের হার, মেনে নেওয়ার মতো না।

আনিস তাজদারকে বলল,

"আমি বাড়ি যাচ্ছি। ক্লান্ত হয়ে গেছি। তুইও যা। রাত হয়েছে।"

তাজদার মাথা নাড়লো। আনিস, শাওন সবাই চলে গেল। তৌসিফ র‍্যাকেট, নেট সব গুছিয়ে ফেলছিল ঠিক তখুনি তাজদার দাঁড়িয়ে পড়লো। একটা র‍্যাকেট নিয়ে শাইনার দিকে তাকালো। শাইনা ভড়কে গেল। তার সাথে খেলার পরিকল্পনা করছে নাকি? তাজদার র‍্যাকেটটা নিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

"হাই মমতাজ! আজকে তোমাকে গোল খাওয়াই চলো।"

শাইনা র‍্যাকেট হাতে নিয়ে তৌসিফ আর তিতলির দিকে তাকালো। তারা মিটিমিটি হাসছে। তৌসিফ তিতলিকে বলল,"ওই এদিকে আয়। কাজ কর।"

তিতলি তার সাথে চলে গেল।

তাজদার আস্তে করে কক ছুঁড়ে দিল। শাইনা আলতো করে সেটাকে র‍্যাকেটে ঠেকিয়ে দিল। তাজদার ব্যঙ্গ করে তার কক ছোঁড়া দেখিয়ে বলল,

"এভাবে কেউ কক ছুঁড়ে? এটা আবার কেমন খেলা? গায়ে জোর নেই?"

শাইনা বলল,"যাহ! আমি আর খেলবো না।"

"শাটআপ দাঁড়িয়ে থাকো ওখানে। খেলতে হবে।"

শাইনা দাঁড়িয়ে রইলো এক জায়গায়। তাজদার তার দিকে কক ছুঁড়ে দিল আবারও। শাইনা র‍্যাকেট চালালো আগের মতোই। ককটা তাজদারের কাছে এলই না। শাইনার কিছুটা দূরে গিয়ে পড়েছে।

তাজদার শব্দ করে হেসে উঠলো। শাইনা পালাতে পারছেনা। সুস্থ থাকলে সে এতটাও হারতো না। সে অনেক ভালো ব্যাডমিন্টন খেলতে পারে।

তাজদার শেষমেশ এমন জোর মারলো যে ককটা এসে শাইনার চোখ বরাবর পড়লো। সে একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো।

আশেপাশের সবাই ছুটে এল। আশরাফ, আনিস, আফসার সাহেব সবাই বেরিয়ে এসেছে বাইরে। শাইনা একচোখ চেপে ধরেছে। রওশনআরা বেরিয়ে এসে তাজদারকে বলল,

"আহা এখন ওর এসব খেলার সময়? কি করলে এটা? তুমি ওকে বারণ করবে তা না আরও ওর সাথে ব্যাডমিন্টন খেলছো?"

শাইনাকে নিয়ে গেলেন উনি। চোখ ঠান্ডা পানি দেওয়ায় চোখ আরও ফুলে গেছে। তাজদার ঘরে যেতেই দেখলো শাইনা এখনো চোখের উপর হাত চেপে ধরেছে। তাকে দেখে সবাই সরে গেল। দাদীমা বলল,"কাল সকালে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। বেশি কষ্ট হচ্ছে?"

শাইনা বলল,"না, কমে যাবে হয়তো কিছুক্ষণ পর।"

"আচ্ছা বেশি খারাপ লাগলে বলো কিন্তু।"

"আচ্ছা।"

সবাই বেরিয়ে যেতেই তাজদার দরজা বন্ধ করে দিল। শাইনা দুচোখ একসাথে বন্ধ করে রেখে শুয়ে আছে। একচোখে হাত চাপা। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলো তাজদার সিদ্দিকীর মুখটা তার উপর। মুখজুড়ে তপ্ত শ্বাস ছড়িয়ে পড়ছে। সে একটা চোখ খুলে তাকালো। তাজদার কপাল কুঁচকে চেয়ে আছে। শাইনা একচোখ খুলে পুরোপুরি তার দিকে তাকালো।

"কি দেখছেন?"

তাজদার বলল,

"তুমি এতদিন ভালো ছিলে। আমি আজ এলাম। আর আজই তোমাকে পেইন দিলাম। তুমি মনে মনে নিশ্চয়ই আমাকে গালমন্দ করছো। বলছো এই বদলোকটা আসামাত্রই আমাকে আঘাত করে বসেছে। কিন্তু তুমি তো জানো আমার এরকম কোনো ইনটেনশন ছিল না। তুমি তোমাকে হার্ট করতে চাই না। তারপরও করে বসি।"

শাইনা চুপ করে রইলো। তাজদার সিদ্দিকী এটা নিয়ে খুব ভাবছে। শাইনা শুয়ে শুয়ে শুধু দেখলো সে পায়চারি করছে আর গ্লাস থেকে একটু একটু পানি খাচ্ছে।

শাইনা এবার বলে উঠলো,"আপনি কি আসবেন?"

কথাটা বলেই সে দ্রুত বলল,"মানে শুবেন? রাত কত হয়েছে দেখেছেন? ঘুমাবেন কখন?"

তাজদার তার দিকে ফিরলো চট করেই। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,

"আমি আসছি। ওয়েট। এত তাড়া কীসের? বর ছাড়া আর থাকা যাচ্ছে না দেখছি।

শাইনা মুখের কম্বল তুলে দিল। ধুত্তেরি কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেলেছে। এখন এটা নিয়ে মজা করবে। সে কম্বলটা মাথার উপর তুলে দিল একদম। কিছুক্ষণ পরেই কম্বলটা নড়েচড়ে উঠলো। বিস্ময়কর একটা ব্যাপার ঘটলো। শাইনা তাজদার সিদ্দিকীকে আবিষ্কার করলো কম্বলের নিচেই।

ফোনের স্ক্রীনের আলোয় শাইনা তার মুখটা এত কাছে দেখে বিচলিত হলো। তাজদার ভ্রু নাচাতে নাচাতে বলল,"কাছে আসলাম।"

শাইনা দ্রুত দু-হাত দিয়ে মুখচাপা দিল তাজদার সিদ্দিকী এটা বলার আগে,

"ভালোওবাসলাম।"

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


 Follow Now Our Google News



চলবে ...

৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিমা ফারনাজ চৌধুরীর গল্প ও উপন্যাস:

লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা প্রিয়া ফারনাজ চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। কল্পনার ভূবনকে শব্দে রুপ দিতে লেখালেখির জগতে তার পদচারণা শুরু হয়েছে ২০২১ সালের মার্চ মাসে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রিমা পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত আছেন অনলাইনভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং পেশায়। ‘প্রিয় বেগম’ উপন্যাসের মাধ্যমে তার পরিচিতি বেড়েছে। ২০২৪ সালের একুশে বইমেলায় তার প্রথম বই প্রকাশিত হয়েছে যা পাঠকদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। শব্দের জগতে তার পথচলা এখনো চলমান। ভবিষ্যতে আরও পরিপক্ক, আরও বৈচিত্রময় লেখালেখির মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিতে চান তিনি।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন