উপন্যাস       :        অনন্ত প্রেম
লেখিকা        :         আরশি আয়াত
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১১ই জুন, ২০২৪ ইং

লেখিকা আরশি আয়াতের “অনন্ত প্রেম” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ১১ই জুন থেকে লেখা শুরু করেছেন।
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত (পর্ব - ১)
অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত (পর্ব - ১)


অনন্ত প্রেম || আরশি আয়াত (পর্ব - ১)

বড়বোনের বিপত্নীক ভাসুরের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে দিশার।দু'বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় বউ মারা গেছে লোকটার।পরিবারের পরিজনেরা এতদিন বহু চেষ্টা করেছে আবার বিয়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু সে বিয়ের কথা শুনতে নারাজ।হঠাৎ গত পরশু বড়বোন উষার শ্বাশুড়ি দিশার মায়ের কাছে ফোন দিয়ে ওকে চাইলো নিজের বড় ছেলের জন্য।দিশার মা তাৎক্ষণিক জবাব না দিয়ে বললেন,'বেয়াইন,এসব ব্যাপারে তো একা সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না।মেয়ের বাবা আসুক তার সাথে আলোচনা করি তাছাড়া মেয়েও বড় হয়েছে তারও একটা মতামত আছে।'
'তা তো অবশ্যই।আপনারা আলোচনা করে মেয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের পরে জানালেই হবে।'
বড়বোনের শ্বাশুড়ির এমন প্রস্তাবে দিশা যারপরনাই অবাক।উষা ফোন করে জানায় তার ভাসুরের দিশাকেই পছন্দ।বিয়ে করতে হলে ওকেই করবে।
লোকটাকে একবছর আগে প্রথম দেখেছিলো বোনের বিয়েতে।উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মাঝারি গড়নের পুরুষ।বোনের বিয়ের পরও হাতেগোনা দু-একবার দেখা হয়েছিলো।তবে সৌজন্যমূলক কথা ছাড়া বাড়তি কোনো কথা হয়েছিলো বলে মনে পড়ে না ওর।তাহলে পছন্দ হলো কিভাবে?কয়েক দেখায় তার মতো কৃষ্ণলতাকে কেউ পছন্দ করতে পারে?
উষার ভাসুরের নাম সায়েম ভূঁইয়া।বাড়ির বড় ছেলে।পেশায় আর্কিটেক্ট।সমানতালে বাবার ব্যবসাও দেখাশোনা করে।প্রথম বিয়ে হয় বছর তিনেক আগে।বছর না গড়াতেই সড়ক দুর্ঘটনায় মা'রা যায় স্ত্রী।এরপর দু'বছর বিয়েশাদীর ব্যাপারে আগ্রহ ছিলো না তার তবে ছোটো ভাইয়ের বিয়েতে দিশাকে দেখে ভালোই লাগে।এখন বিয়েও করতে চায়।
দিশার গায়ের রঙটা চাপা।উষার মত সুন্দরী নয় সে।এই কারণে ছোটো থেকেই শুনতে হয়েছে বহু কটু কথা।আত্মীয় স্বজন দেখা হলেই ঠাট্টার সুরে বলতো তুই তো বর পাবি না রে দিশা!আর সেই দিশার জন্য এত ভালো সম্বন্ধ আসায় কেউই দ্বিমত করলো না।তবে দিশা একটা বিষয় ভেবে পায় না এম উপযুক্ত ছেলে কেনোই বা ওকে পছন্দ করলো আর কেনোই বা বিয়ে করতে চায়।এই ছেলের জন্য তো সুন্দরী,শিক্ষিতা মেয়ের অভাব হওয়ার কথা না।
ক্লাসের পর দু'টো টিউশনি করিয়ে মাত্রই বাসায় ফিরলো দিশা।প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে।এখন একটু ঘুমাতে পারলে ভালো লাগতো।বাসায় ঢুকেই দেখলো বসার ঘরের সোফায় বসে টিভি দেখছে ওর হবু বর সায়েম।ওকে দেখে বলল,'তোমার ক্লাস তো আরও তিন'ঘন্টা আগেই শেষ।এতক্ষণ কোথায় ছিলে?
হঠাৎ প্রশ্নবাণে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো ও।পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বলল,'টিউশনি ছিলো।'
'ও আচ্ছা।যাও রেডি হয়ে আসো তোমাকে নিয়ে বের হবো।'
দিশা উত্তর না দিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।অবাক লাগছে ভিষণ।নূন্যতম ঘনিষ্ঠতা ছাড়া কেউ কাউকে কিভাবে এমন হুকুম করতে পারে?
হাতমুখ ধুয়ে ঘরে আসতেই ফরিদা বেগম বললেন,'ছেলেটা কতক্ষণ ধরে বসে আছে তোর জন্য।ঝটপট তৈরি হয়ে নে।তোকে নিয়ে বের হবে ও।'
দিশা বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেললো।বলল,'ভালো লাগছে না,মা।আমি এখন কোথাও যাব না।'
ফরিদা বেগম চোখ গরম করে বললেন,'একটা মানুষ এতক্ষণ ধরে বসে আছে তোমার জন্য আর তুমি মুখের ওপর বলছো ভালো লাগছে না,যাবে না।এত বড় হয়েছো তবু ভদ্রতা শেখো নি।'
তিনি রাগে গজগজ করতে করতে মেয়ের আলমারি থেকে জাম কালারের একটা শাড়ি বের করে বললেন,'বেশি কথা বাড়িয়ো না।দ্রুত রেডি হও।'
শাড়িটা বিছানার ওপর রেখে চলে গেলেন ফরিদা বেগম।না চাইতেও দিশা শাড়ি পরে রেডি হলো।
সায়েম দিশাকে নিয়ে শপিং মলে এলো।প্রথমে গেলো শাড়ির দোকানে শাড়ি কিনতে।অনেক শাড়ীর মধ্যে বেছে নিজের পছন্দ মত দুটো শাড়ী কিনলো।দিশাকে একবারের জন্যও জিজ্ঞেস করলো না তার পছন্দ হয়েছে কি না!এমন হলে ওকে আনারই বা কি দরকার ছিলো?ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড বিরক্তি অনুভব করলো ও।
শাড়ী কিনে জুয়েলারির দোকানে গেলো ওরা।এবারও দিশার বা হাতের অনামিকার মাপ দিয়ে নিজের পছন্দ মত আংটি অর্ডার করে দিলো।পুরোটা সময় পাশাপাশি হাঁটা ছাড়া আর কোনো ভূমিকা রইলো না ওর।আশ্চর্য!যার জন্য কিনছে তাকে একবার জিজ্ঞেসও করলো না।
শপিং শেষে মল থেকে বের হবে এমন সময়ে সায়েমের বন্ধু রকির সাথে দেখা হলো।রকিও এসেছে সদ্য বিবাহিত বউ নিয়ে।দুই বন্ধু হ্যান্ডশেক করে কুশল বিনিময় করার পর রকি দিশার দিকে তাকিয়ে বলল,'ভাবি নাকি?'
সায়েম মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল।রকি আবারও বলল,'ভাবির চেহারায় পাতিলের কালি লাগলো কেমনে?'
রকির কথায় হেসে ফেললো সবাই।কেবল দিশাই হাসলো না।অপমানে মুখটা থমথমে হয়ে আছে।যাওয়ার আগে রকি আবারও বলল,'ভাবি মজা করেছিলাম একটু।মনে কষ্ট নিয়েন না।'
দিশা কোনো কথাই বলল না।হনহন করে সামনের দিকে হেঁটে গেলো।সেদিকে তাকিয়ে অসভ্যের মত হেসে রকি আবারও বলল,'কালা হইলেও তেজ আছে তো বউয়ের।'
সায়েমও হাসলো।বলল,'প্রথম প্রথম একটু তেজ থাকেই।পরক্ষণেই রকির বউয়ের দিকে চেয়ে তেলতেলে গলায় প্রসংশা করলো,'ভাবি,আপনাকে গর্জিয়াস লাগছে।'
যদিও এতক্ষণ মেয়েটিকে পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া আর কিছুতে মনযোগ দেয় নি সায়েম।
বিপাশা লাজুক হেসে বলল,'থ্যাংকিউ ভাইয়া।'
রকি বেশ গর্ব করেই বলল,'আমার বউ বলে কথা।আমার বউ সবসময়ই সুন্দরী।কিন্তু ভাই তোর ব্যাপারটা বুঝলাম না! কি দেখে এমন কালি পেত্নী পছন্দ হলো তোর?এরচেয়ে তো আগের বউটাই সুন্দর ছিলো।'
সায়েম হেসে বলল,'ও তুই বুঝবি না।'
'তুই বুঝলেই হলো।আচ্ছা দোস্ত আসি তাইলে।বাসায় আসিস।'
'তুইও আসিস ভাবিকে নিয়ে।
একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দিশা এতক্ষণ ধরে চলা নোংরা কথোপকথনের সবটাই শুনেছে।ঘৃণায় গা রি রি করে উঠছে।এমন একটা কুৎসিত মানসিকতার লোকের ওর সাথে বিয়ে হবে ভাবতেই পারছে না।
বাসায় পৌঁছে দিয়ে যাওয়ার সময় সায়েম বলল,'এখন থেকে আর কোনো টিউশনি করানোর দরকার নেই।'
'কেন?'
'কারণ আমি চাই না আমার বউ বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়াক।টাকা পয়সা বা যা কিছুর প্রয়োজন হয় আমাকে বলবে।'
কথাটা বলেই আর দাঁড়ালো না সায়েম।চোখের পলকে বাইক ছুটিয়ে দৃষ্টির বাইরে চলে গেলো।
বিরক্তিতে সর্বাঙ্গে জ্বালাপোড়া করছে দিশার।এমন একটা ছেলের সাথে বাবা-মা কিভাবে বিয়ে ঠিক করতে পারে।গায়ের রঙ কালো বলেই কি এই অবহেলা?সায়েমের প্রতি বাবা-মায়ের অতিরিক্ত আদিখ্যেতা দেখে দিশা বুঝে নিয়েছে এই বিয়ে ভাঙাটা সম্ভব না।বুক ফেটে কান্না আসে তবু সামলে নেয় নিজেকে।
রাতের খাবারের পর নিজের ঘরে এসে বসতেই বড় ভাইয়ের বউ নার্গিস এসে বলল,'কই গো,ননদিনী!দেখি জামাই কি কিনে দিয়েছে?'
দিশা উঠে গিয়ে আলমারি থেকে শাড়ীর প্যাকেট দু'টো বের করে ভাবির সামনে রাখলো।শাড়ি দু'টো উল্টেপাল্টে দেখে নার্গিস বলল,'বাহ!বেশ সুন্দর।পছন্দ আছে বলতে হবে।আর কি কিনেছে?'
দিশা বিরস মুখে বলল,'আংটির অর্ডার দিয়েছে।'
নার্গিস উচ্ছ্বসিত গলায় বলল,'ননদিনী গো,কপাল করে পেয়েছো এমন ছেলে।'
দিশা মনে মনে আক্ষেপ করে বলল হ্যাঁ গো ভাবি কপাল করেই পেয়েছি।এমন কপাল যেন আর কারো না হয়!
ঘুমাতে যাবার আগে কল এলো সায়েমের নাম্বার থেকে।দু'দিন আগে এঙ্গেজমেন্টের সময় নিয়েছিলো।আজই প্রথম কল এলো।কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সায়েম বলল,'ঘুমিয়ে পড়েছিলে না কি?'
'না।বলুন।'
'কি করছিলে?'
'তেমন কিছু না।'
'ঘুমাবে কখন?'
'একটু পর।'
'তোমার ক্লাস কয়দিন সপ্তাহে?'
'তিনদিন।'
'তাহলে বাকি চারদিন ফ্রী।'
'হ্যাঁ।'
'ভাবছিলাম তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব।বিয়ের আগে নিজেদের মধ্যে জানাশোনাও হয়ে যাবে তাই আজকে একটু আগে বন্ধুরা মিলে প্ল্যান করলাম।রকি ওর বউ,শান্ত আর ওর গার্লফ্রেন্ড আর আমরা দু'জন কক্সবাজার যাব।সেখানে তিনদিন থাকব নিজেদের মত উপভোগ করব।'
দিশা বিষ্মিত স্বরে বলল,'কিন্তু আমাদের তো বিয়ে হয় নি!'
'তো কি হয়েছে?হয় নি,হবে।আর আমাদের বিয়ে তো ঠিক হয়েই আছে।লিসেন,আজকালকার রিলেশনশিপে এসব কমন।আমার ফ্রেন্ড শান্ত আর ওর গার্লফ্রেন্ডও যাচ্ছে।ওরা যেতে পারলে আমরা পারব না কেনো?
'তবুও বিয়ে ছাড়া আমার পক্ষে সম্ভব না।'
'এত ওল্ড স্কুল কেন তুমি?ভার্সিটিতে পড়েছো অথচ জানো না এসব কমন!'
'আমার জন্য কমন না।'
সায়েম বিরক্তির সুর তুলে বলল,'ন্যাকামি করো না তো!তুমি যাচ্ছো মানে যাচ্ছোই।'


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 
লেখক সংক্ষেপ:

তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন