 |
| মাহমুদ সাজেদিনের কবিতা |
পরবর্তী ষ্টেশন || মাহমুদ সাজেদিন
মেট্রোতে ওঠার জন্য দোড়া দৌড়ির কোন প্রয়োজন নেই। একটা মিস করলে পাচ মিনিট পরই পরেরটা পাওয়া যায়। তবু জাফর সাহেব গাড়ি থেকেই নেমে প্রথমে আস্তএ পরে জোরে দৌড় লাগান। সকালে হাটা বাদ দিয়েছেন বহুদিন। এটা তার একটা বিকল্প বলে ভাবেন।
যদিও মেট্রতে উঠে পরের দু ষ্টেশন পর্যন্ত হাপাতে থাকেন, তবে এটা তার কাছে সক্ষমতার একটা সার্টিফিকেট ও।
আগে গাড়ি নিয়ে অফিস যেতেন, এখন বাদ দিয়েছেন। খামাখায় জ্যামে বসে কয়েক ঘন্টা নষ্ট হয়। মেট্রতে সময় বাচে, আরামদায়ক আবার একটু ফিজিক্যাল একটিভিটিও হয়।
আজও একই সময় বের হয়েছেন তবুও উত্তরা উত্তর মেট্র ষ্টেশনে পোছাতে সাতটা পাচপান্ন বেজে গেল। আটান্নতে ট্রেন। মনে হলে পারবেন না।
হঠাত কি মনে করে আবার দৌড় দিলেন। বয়স হয়েছে কিন্তু তিনি বুড়ো হয়ে যান নি।
তাকে দৌড়াতে দেখলে অনেকেই হা করে দাড়িয়ে থাকে, পিছনে হয়ত হাসি তামাসাও করে, জাফর সাহেব তা আমলে নেন না। এই দৌড়টা তার ফিজিকাল ফিটনেসের প্রমান করে। গত বছর রেগুলার হেলথ চেকাপে সবই প্রায় নরমাল, শুধু প্রেসার একটু বেশী। ইটিটি করতে গিয়ে একটু হাপ ধরেছিল। যে দোড়টা দেন, এবার আর ইটিটি করতে সমস্যা হবে না।
দোড়ে এস্কেলিটর পাড় হয়ে দেখলেন ট্রেন্টা দাড়িয়ে। আরেকটু দেরী হলেই দরজা বন্ধ হয়ে যেতো।
ট্রেনে উঠেও হাপাচ্ছিলেন। একজন ভদ্রমহিলা উঠে দাড়িয়ে তাকে বসতে দিলেন। অন্য দিন হলে বসতেন না, আজকে বসলেন।
হৃদয়ের গতি নরমাল হচ্ছে। ট্রেনের ভিতরটা ভাল ঠান্দা। হাতে আধ ঘন্টা সময় আছে, চোখ বন্ধ করে রাখলেন।
মাইকে শোনা যাচ্ছে, ট্রেনটির গন্তব্য মতিঝিল, পরবর্তি ষ্টেশন পল্লবী।
টিনার কথা মনে পড়ছে। ও চলে গেছে তিন বছর হল। টিনার জন্যই গাড়িটা কিনেছিল। রেডিও থেরাপি দিতে মিরপুর ডেল্টায় আস্তে হতো। গাড়িতে অনেক সময় লাগতো। কি রকম ছটফট করতো, অধৈর্য হয়ে যেতো!আহ, তখন যদি মেট্ররেল থাকতো!
চোখের কোনায় একটু পানি জমা হয়েছে। কে যেন কাপড় দিয়ে মুছে দিচ্ছে! খুব পরিচিত গন্ধ।
টিনার।
সেটা কি করে সম্ভব?
জাফর সাহেব চোখ খুলতে চেষ্টা করছেন পারছেন না।
কে যেন মিহি গলায় কথা বলছে:
ট্রেনটির গন্তব্য বনানী কবরস্থান, পরবর্তি ষ্টেশন বনানী মসজিদ।
টিনার গলা সন্দেহ নেই।
খুব ধীরে ধীরে যাচ্ছেন টের পাওয়া যায়।
আপনার পছন্দের কবিতা নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
মাহমুদ সাজেদিন’র কাব্যগ্রন্থ, গল্প ও উপন্যাস
- ঈশ্বর চন্দ্রের বঙ্গদর্শন
- বানুস সিক্রেট
- ডেক্সটাকার্ডিয়া ও ৯৯ টি কবিতা
- বেনিফিট অব ডাউট
লেখক সংক্ষেপ:
মাহমুদ সাজেদিন একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। পেশাগত জীবনে তিনি একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ, এবং পাশাপাশি একজন পরিচিত লেখক হিসেবেও সুপরিচিত। ডাঃ মাহমুদ সাজেদিন বাংলাদেশের চিকিৎসা ও সাহিত্য উভয় জগতেই নিজের অবদান রেখেছেন। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডেন্টাল অনুষদের অর্থোডন্টিকস (দাঁতের ব্রেস ও সারিবদ্ধকরণ বিদ্যা) বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক এবং এফসিপিএস (FCPS) ডিগ্রিধারী ডেন্টাল সার্জন হিসেবে কর্মরত আছেন। শিক্ষকতা ও চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণার সাথেও যুক্ত। চিকিৎসার ব্যস্ততার বাইরে তিনি একজন কবি ও কথাসাহিত্যিক। তিনি মূলত বাংলা ভাষায় কবিতা, গল্প ও উপন্যাস রচনা করেন। ইতোমধ্যে তার লেখা বেশকিছু বই প্রকাশিত হয়েছে যা পাঠকদের কাছে বেশ সমাদৃত।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন