মদ খাওয়ার সময় আমি কোন রিস্ক নেই না || তারাপদ রায়

রম্য                     :          মদ খাওয়ার সময় আমি কোন রিস্ক নেই না
কবি                     :          তারাপদ রায়
কাব্যগ্রন্থ                :          
প্রকাশকাল             :          
রচনাকাল              :          

তারাপদ রায়ের “মদ খাওয়ার সময় আমি কোন রিস্ক নেই না” শিরোনামের এই রম্য রচনাটি একজন মধ্যবিত্ত মাতালের দৃষ্টিভঙ্গিকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে। তবে এ লেখার অবস্থানকাল এখন অবদি জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হবে।
মদ খাওয়ার সময় আমি কোন রিস্ক নেই না || তারাপদ রায়
মদ খাওয়ার সময় আমি কোন রিস্ক নেই না || তারাপদ রায়


মদ খাওয়ার সময় আমি কোন রিস্ক নেই না || তারাপদ রায়


মদ খাওয়ার সময় আমি কোন রিস্ক নিই না।

অফিস থেকে সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে দেখি গিন্নি রান্না করছে।
রান্নাঘর থেকে বাসনের আওয়াজ আসছে।

আমি চুপিচুপি ঘরে ঢুকে পড়লাম।
কালো রঙের আলমারি থেকে বোতল বার করলাম।
নেতাজি ফটো ফ্রেম থেকে আমাকে দেখছেন।
কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ কিচ্ছুটি টের পায় নি।
কারণ আমি কোন রিস্ক নিই না।

সিঙ্কের উপরের তাক থেকে গ্লাস বার করলাম
আর টক করে এক পেগ গিলে ফেললাম।
গ্লাস ধুয়ে ফের তা তাকের উপর রেখে দিলাম
হা, বোতল টাও আলমারি তে রেখে দিলাম।
নেতাজি মুচকি হাসলেন।
রান্নাঘরে উঁকি দিলাম, গিন্নি দেখি আলু কাটছে।
কেউ কিছু টের পায় নি।
কারণ আমি কোন রিস্ক নিই না।

গিন্নি কে জিগেস করলাম: সমীরের মেয়ের বিয়ের কিছু হলো ?
গিন্নি : নাহ, মেয়েটার ভাগ্য টাই খারাপ। এখনো পাত্র দেখছে।

আমি আবার ঘরে গেলাম, আলমারি খুলতে গিয়ে এবার একটু শব্দ হলো।
তেমন কিছু নয় অবশ্যি।
বোতল বের করার সময় অবশ্য কোনো আওয়াজ করিনি।
সিঙ্কের উপরের তাক থেকে গ্লাস নিয়ে চট করে দু পেগ মেরে দিলাম।
বোতল ধুয়ে সাবধানে সিঙ্কের মধ্যে রেখে দিলাম। আর গ্লাস টা আলমারি তে।
এখন পর্যন্ত কেউ কোনো কিছু আঁচ করতে পারে নি
কারণ আমি কোন রিস্ক নিই না।

বাইরে এসে গিন্নিকে : যাই হোক, সমীরের মেয়ের বয়েস ই বা কি!
গিন্নি : কী বলছ !! ৩০ বছর বয়েস হলো, দেখতে আরো বুড়োটে লাগে।
আমি (ভুলেই গেছিলাম সমীরের মেয়ের বয়স ৩০) : তা ঠিক
সুযোগ বুঝে ফের আলমারি থেকে আলু বের করলাম (আলমারিটা আবার জায়গা বদলে ফেলল কি করে রে বাবা),
তাক থেকে বোতল বার করে সিঙ্কের সঙ্গে মিশিয়ে চট করে আর এক পেগ পেটে চালান করলাম।
নেতাজি দেখি জোরে জোরে হাসছেন।
তাক আলুতে রেখে নেতাজীর ছবি খুব ভালো করে ধুয়ে আলমারিতে রেখে দিলাম।
গিন্নি কি করছে দেখি - হ্যা, ও গ্যাসের উপর সিংক চড়াচ্ছে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ কিসসু টের পায় নি,
কারণ আমি কোন রিস্ক নিই না।

আমি গিন্নিকে : তুমি সমীরকে বুড়ো বললে ?
গিন্নি : বকবক কর না তো, বাইরে গিয়ে চুপ করে বসো। এখন তুমি কথা বলবে না।
আমি আলু থেকে ফের বোতল বের করে মজাসে আলমারি তে আরো এক পেগ গিললাম।
সিংক টা ধুয়ে ওটাকে তাকের উপর রেখে দিলাম।
ফটো ফ্রেম থেকে গিন্নি এখনো হেসে চলেছে।
নেতাজি রান্না করছে।
কিন্তু এখনো কেউ কিছু টের পায় নি
কারণ আমি কোন রিস্ক নিই না।

গিন্নিকে হাসতে হাসতে বললাম : তাহলে সমীর পাত্রী দেখছে?
গিন্নি : শোনো, তুমি মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে কোথাও চুপ করে বস তো !
আমি রান্না ঘরে গিয়ে চুপচাপ তাকের উপর বসলাম।
কিন্তু এখন অবধি সমীর কিছু টের পায় নি
কারণ নেতাজি কোন রিস্ক নেন না।

সমীর এখনো রান্না করছে।
আর আমি ? 
আমি ফটো ফ্রেম থেকে গিন্নিকে দেখে এখনো হেসে চলেছি।
কারন আমি কখনো ইয়ে নিই না, 
কি যেন নিই না ......ও হাঁ, আলু নিই না।



লেখক সংক্ষেপ : 
বাংলার প্রসিদ্ধ লেখক তারাপদ রায় ১৯৩৬ সালের ১৭ নভেম্বরে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সেখানে বিন্দুবাসিনি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে ১৯৫১ সালে কলকাতার কলেজে পড়তে যান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শেষ করেন এই লেখক। বাল্যকাল থেকে সাহিত্যচর্চার প্রতি তার ছিলো অঘাদ ঝোক। ১৯৬০ সালে তার প্রথম কবিতার বই 'তোমার প্রতিমা' প্রকাশিত হয়। তিনি জীবদ্দশায় অসংখ্য গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও রম্য রচনা করে গেছেন। তিনি 'নক্ষত্র রায়' ও 'গ্রন্থকীট' ছদ্মনামেও লিখতেন। শতাধিক গ্রন্থের এই রচয়িতা শিরোমণি পুরস্কার ও ১৯৯৫ সালে কথা পুরস্কার এ ভূষিত হয়েছেন। ২০০৭ সালের ২৫ আগষ্ট ৭০ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান তিনি। নিভে যায় তারাপদ রায় নামের নক্ষত্রটি।

কবিয়াল

কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন