উপন্যাস        :         শালুক ফুলের লাজ নাই
কবি              :         রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “শালুক ফুলের লাজ নাই” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ইং সালের ৮ই আগস্ট থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
শালুক ফুলের লাজ নাই || রাজিয়া রহমান
শালুক ফুলের লাজ নাই || রাজিয়া রহমান

১৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

শালুক ফুলের লাজ নাই || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ১৮)

সময় তার নিজের আপন গতিতে কেটে যায়। তেমনি কাটছে ধ্রুব আর শালুকের সময়। শালুক আজ এক সপ্তাহ ধরে বই নিয়ে বসছে। সারাদিন অখন্ড অবসর তার। এই অবসর শালুকের সহ্য হচ্ছে না। দম বন্ধ লাগছে শালুকের। ধ্রুব সকালে রান্না করে বের হয়ে যায়, রাতে ফিরে। ঘন্টায় ঘন্টায় শালুককে কল দিয়ে কি করছে, কি লাগবে জিজ্ঞেস করে। ধ্রুবর এরকম আন্তরিকতা শালুককে আরো বিব্রত করে। কেনো জানি শালুকের মনে হয় ধ্রুব হয়তো শালুককে একটু একটু ভালোবাসে। আবার পরক্ষণেই মনে হয় যে শালুক ভুল ভাবছে। হতেও তো পারে, ধ্রুব এমনিতেই শালুকের কেয়ার করছে। এটা তো ধ্রুবর পুরনো স্বভাব। 

এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে শালুকের মনে পড়লো শালুক একটা কম্পোজিশন পড়তে বসেছে। পড়া বাদ দিয়ে এসব এলোমেলো ভাবনা ভাবছে। ধ্রুব রাতে ফিরলে নিশ্চিত পড়া ধরবে। কেনো জানি শালুকের লজ্জা লজ্জা লাগে ধ্রুবকে ঠিকঠাক পড়া দিতে না পারলে। অথচ আগে এরকম লাগতো না। একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে মন মানসিকতা ও এভাবে বদলে যাবে তা কি শালুক কখনো ভেবেছে? 

ধ্রুব একটা বড় শপে সেলসম্যানের চাকরি নিলো মাসিক ১৪ হাজার টাকা বেতনে। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত। চারটের সময় বের হয়ে টিউশনিতে যায়, সাতটায় টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে ধ্রুবর রাত সাড়ে আটটা বাজে। রাতে এসে রাতের রান্না করে নেয়। শালুক লজ্জিত হয়ে বসে রইলো বিছানার উপর। মেয়ে হয়েও সে কিছুই করতে পারছে না অথচ ধ্রুব সব কাজ করছে। ব্যাপারটা শালুককে যথেষ্ট লজ্জিত করছে। অথচ ধ্রুবর দিকে তাকালে মনে হয় তার কোনো ক্লান্তি নেই। কেমন যেনো স্বতঃস্ফূর্ত থাকে ধ্রুব। আজ রাতে ফেরার সময় শালুকের জন্য ছোট ছোট কতোগুলো হেয়ার ব্যান্ড, ক্লিপ, পাঞ্চক্লিপ, হেয়ার প্যাক ও তেল নিয়ে এলো ধ্রুব।

শালুক আজকে ধ্রুব বাসায় ফেরার আগেই পেঁয়াজ, মরিচ কেটে রেখেছিলো যাতে ধ্রুবর কাজ কিছুটা সহজ হয়। ধ্রুব কিচেনে বাটির মধ্যে এসব কেটে রাখা দেখে মুচকি হাসলো। তারপর শালুকের কাছে এসে বললো, "এসব ছোট খাটো কাজ আমি অনায়াসেই করতে পারি শালুক।আর কখনো তুই এসব করতে যাবি না। বিশেষ করে বাসায় যখন আমি থাকবো না সেই মুহুর্তে ভুল করেও তুই দা, বটি, ছুরি, আগুন এসবের ধারেকাছেও যাবি না। আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না তোকে নিয়ে। খবরদার শালুক, আজকে নিষেধ করে দিয়েছি আমি।"

শালুকের ভীষণ অভিমান হলো। গাল ফুলিয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো, "আমার খুব খারাপ লাগে, আমি মেয়ে হয়েও কিছুই জানি না রান্নার অথচ তুমি ছেলে হয়ে সব কিছু রান্না করছো।" ধ্রুব মাছ তেলে ভাজতে দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে শালুকের পাশে এসে বললো, "সংবিধানে কি লিখা আছে না-কি যে রান্না শুধু মেয়েদের কাজ, এটা শুধু মেয়েরাই করবে? ছেলেদের জন্য কি কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে না-কি? কাজের মধ্যে ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনো ভেদাভেদ নেই। আসলে আমাদের সমাজের সিস্টেম হচ্ছে এরকম। যেহেতু আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা তাই পুরুষেরা মহিলাদের মাথায় এই ধারণা সেট করে দিয়েছে যে ঘরের কাজ, রান্নাবান্না, বাচ্চা সামলানো এসব কাজ নারীর। পুরুষ টাকা উপার্জন করছে যেহেতু সেহেতু নারীদের থাকতে হবে পুরুষের ইচ্ছেমতো। তারা যেভাবে চালাবে নারী সেভাবেই চলবে। অনেক পুরুষ আছে শালুক, যারা শুধু অফিসটাই করে, তারপর বাসায় এসে হম্বিতম্বি শুরু করে দেয়। এক গ্লাস পানি ঢেলে খাবে তাও তার সম্মানে বাঁধে। স্ত্রী রান্না করছে হয়তো সেখান থেকে ডেকে নিয়ে এসে বলবে আমাকে এক গ্লাস পানি দাও। অথচ তার স্ত্রী যে সারাদিন দু-দন্ড বিশ্রাম নিতে পারেনি এটা তার মাথায় নেই। সেই এক পুরনো প্রশ্ন, সে তো সারাদিন বাড়িতেই থাকে, কি কাজ করে? তেমনি এখন নারীরাও আধুনিক হচ্ছে, পুরুষের দাসত্ব তারা মানতে চায় না। কেউ কাউকে স্পেস দিতে চায় না। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর মধুর সম্পর্ক। আমাদের রাসুল মুহাম্মদ (স.) তার স্ত্রীদের সাথে কি সুন্দর ব্যবহার করতেন শালুক, তার সেই আদর্শ যদি আমরা নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারতাম তবে দেশে বিবাহবিচ্ছেদ এতো বেড়ে যেতো না। প্রথম কথা হচ্ছে, দুজনকেই দুজনের সমস্যা, অসুবিধা বুঝতে হবে। একে অন্যের প্রতি সদয় হতে হবে। সে আমার স্ত্রী/স্বামী শুধু এটা না ভেবে যেদিন আমরা ভাবতে পারবো সে আমার অর্ধাঙ্গিনী, আমরা দুই দেহ, এক প্রাণ। তার ব্যথা মানে আমার ব্যথা। তার কষ্ট আমারও কষ্ট সেদিন আর দাম্পত্য জীবনে অশান্তি আসবে না। তাকে অন্য আলাদা কেউ না ভেবে নিজের দেহের অংশ ভাবতে হবে। এই যে এখন তুই আমার দেহের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। তোকে একা বাসায় রেখে যাই আমি, মনটা এখানেই পড়ে থাকে। তুই এখনো অনেক ছোট, সংসার সামলানোর মতো বয়স, জ্ঞান কোনোটাই তোর হয় নি। একা বাসায় কাজ করতে গিয়ে যদি কোনো সমস্যা হয় তবে কে দেখবে তোকে? তোকে এখন এসব কাজ নিয়ে ভাবতে হবে না। একান্তই যদি কাজ করতে ইচ্ছে করে তবে সেটা শুক্রবারে, আমি যখন বাসায় থাকবো। এখন তোর কাজ হচ্ছে পড়াশোনা করা। নয়তো আমি নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাবো শালুক তুই যদি ভালো রেজাল্ট করতে না পারিস। নিজেকে ব্যর্থ মনে হবে।"

শালুক চুপ করে রইলো। ধ্রুব দৌড়ে গেলো রান্নাঘরের দিকে মাছ পুড়ে যাবে বলে। ধ্রুব চলে যেতেই শালুক মুচকি হাসলো। বিবাহ নামক বন্ধনটির এতো শক্তি তা শালুক আগে জানতো না। ধ্রুবর মতো মানুষকেও কেমন আবেগী করে দেয়। যাকে বিয়ের আগে শালুক লৌহ মানব ভাবতো তারও একটা কোমল মন আছে। ভাবলেই চমকে উঠে শালুক। সারা শরীর, মন জুড়ে এক ভালো লাগার আবেশ কাজ করে। 

শালুক নিজের পড়া শেষ করে রাখলো। ধ্রুব মাছ, ভাত, ডাল রান্না করে সব প্লেটে, বাটিতে করে বেড়ে নিয়ে এলো। দুজন মিলে খাওয়া শেষ করে ধ্রুব শালুকের পড়া ধরলো। শালুকের পড়ায় উন্নতি হচ্ছে বুঝতে পেরে ধ্রুবর ভীষণ ভালো লাগলো। পড়া শেষ হতেই ধ্রুব তেল নিয়ে শালুকের চুল বেঁধে দিলো, বেনি করে দিলো দুটো। শালুকের তখন ভীষণ করে বড় চাচী, মেজো চাচীর কথা মনে পড়লো। ঢাকায় আসার পর শালুক একদিনও চুলে চিরুনি লাগায় নি। আগে থেকেই অভ্যাস না থাকায় চুল বাঁধার ব্যাপার, চুলে তেল দেয়ার ব্যাপার শালুকের বিরক্ত লাগে। রাতে শুতে গিয়ে ধ্রুবর মনে হলো বাসায় একটা ফ্রিজ লাগবে, শালুকের জন্য একটা পড়ার টেবিল লাগবে, একটা ড্রেসিং টেবিল লাগবে, একটা ওয়ারড্রব লাগবে। ২২ হাজার টাকা মাসিক ইনকাম যেখানে সেখানে নিজেদের সংসার খরচ বাসা ভাড়া মিলিয়ে হয়ে যায় কোনো মতে। বাকিটা কিভাবে করবে ধ্রুব! শালুকের নিশ্চয় ভীষণ অসুবিধা হয়। একটা ফ্রিজ হলে গরম লাগলে শালুক ঠান্ডা পানি খেতে পারতো। মাছ, মাংস ফ্রিজে রাখতে পারতো। এখন যা আনা হয় তা রাখার জায়গা নেই, চুলায় জ্বাল করে রাখতে হয়। শালুকের জামাকাপড় সব শপিং ব্যাগ এ গুছিয়ে রাখে। শালুক কিছুক্ষণ চুপ করে শুয়ে থেকে ধ্রুবকে বললো, "আপনি দুটো প্যান্ট কিনছেন না কেনো? প্রতিদিন একটা জিন্স প্যান্ট পরেই বাহিরে বের হয়ে যান।"

ধ্রুব হাসলো। প্রতিদিন প্যান্ট পরতে গেলে ধ্রুবর নিজেরও মনে হয় আরেকটা প্যান্ট দরকার। কিন্তু তারপর আর কেনা হয়ে উঠে না। নানাদিক ভেবে নিজের জন্য কিছু কিনতেও খারাপ লাগে। মনে হয় অযথাই টাকা নষ্ট। শালুক কড়া গলায় বললো, "কাল যদি নতুন প্যান্ট ছাড়া বাসায় ফিরেন তবে মনে রাখবেন আমি আপনার এই প্যান্টও কেটে কুচিকুচি করে দিবো। তখন লুঙ্গি পরে বের হবেন আপনি।"

ধ্রুবর ভীষণ ভালো লাগলো তার জন্য  শালুকের এই তৎপরতা দেখে। শালুক ঘুমিয়ে পড়লো খুব দ্রুত। শালুক ঘুমালে ধ্রুব শালুকের একটা হাত টেনে নিজের বুকের উপর চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো, "কবে তোকে বলতে পারবো তুই আমার কেশবতী? আমার বোকা ফুল, আমার ভালোবাসা তুই। যাকে সবসময় সবার কাছ থেকে, বিশেষ করে আদনান ভাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে চেয়েছি। কেউ জানে না, শুধু আমি জানি তোকে কতো যত্নে আদনান ভাইয়ের নাগাল থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। শুধুমাত্র আদনান ভাইয়ের কুনজর তোর উপর পড়বে বলে হল বন্ধ না হওয়া সত্ত্বেও আমি বাড়িতে ছুটে গেছি আদনান ভাই যেদিন দেশে এসেছে তার পরদিনই। আমি তো জানি আদনান ভাইয়ের যে গাছেরও খাবার, তলারও কুড়াবার স্বভাব। সে তো স্কুল লাইফ থেকেই এরকম ছিলো। তোর মনে আছে শালুক, আমি কিন্তু বাড়ি ছেড়েছি আদনান ভাই বিদেশ যাবার দুদিন পর। তা না হলে আমিও বাড়িতেই থাকতাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতাম যাতে করে তোকে চোখে চোখে রাখতে পারি। তুই শুধু আমার শালুক।"

ঘাপটি মেরে ঘুমের ভান করে শুয়ে থেকে শালুক সবটা শুনলো। তারপর শুনতেই শালুকের সারা শরীর যেনো কেঁপে উঠলো কেমন করে। তার মানে, ধ্রুব ভাই তাকে ভালোবাসতো! সেই ছোট বেলা থেকে ধ্রুব ভাই তাকে ভালোবাসে অথচ শালুক বুঝতেও পারে নি? আর ধ্রুব ভাই, সে নিজেও খুব সুন্দর করে লুকিয়ে গেছে এই ব্যাপারটা শালুকের থেকে! শালুকের কেমন উসখুস লাগতে লাগলো। নিজের দুই কানকে অবিশ্বাস হলো কিছু সময়ের জন্য। হয়তো সে ভুল শুনেছে এসব। ধ্রুব টের পেলো শালুক জেগে আছে এবং সবটা শুনে এখন স্থির থাকতে পারছে না। ধ্রুবর কিছুটা লজ্জা লাগলো। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে মৃদু সুরে বললো, "শালুক!"

বোকার মতো শালুক ও হ্যাঁ বলে দিলো।তারপর হ্যাঁ বলেই শালুক বুঝতে পারলো সে ভুল করে ফেলেছে। ধ্রুব এখন জেনে গেছে শালুক যে জেগে আছে। ধ্রুব হেসে বললো, "আমি তোকে ভীষণ ভালোবাসি শালুক। আমার জীবনের প্রথম ও শেষ ভালোবাসা তুই শালুক।কতো কষ্টে নিজের ভালোবাসা, ভালোলাগা, আবেগ সবটা আমি লুকিয়ে রেখেছি তোর কাছ থেকে। আমার ভীষণ কষ্ট হতো লুকিয়ে রাখতে, তবুও উপায় ছিলো না। তুই কোনোভাবে আমাকে প্রত্যাখ্যান করে দিস যদি এই ভয়ে কখনো তোকে বুঝতে দিই নি। বুকের ভেতর ভালোবাসার এক ঘূর্ণিঝড় আমি সযত্নে চাপা দিয়ে রেখেছি।"

শালুক কথা বলতে পারলো না। সব কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে। ধ্রুবও শালুকের হাত ছাড়লো না। দুজন ঘুমিয়ে গেলো। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে শালুক লজ্জায় ধ্রুবর দিকে তাকাতে পারছে না। না চাইতেই মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে শালুকের। কেমন যেনো ভয় ও লাগছে। সে তো ধ্রুবর কাছে বলে দিয়েছিলো সে যে আদনানকে ভালোবাসে। ধ্রুব কি এখন সেটা ধরে রেখেছে মনে? ধ্রুব তাকে বুঝিয়ে বলার পর যে শালুক নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে, এক মুহুর্তের জন্যও তার মনে আদনানের চিন্তা আসে নি, সব অনুভূতি ফিকে হয়ে গেছে তা তো ধ্রুব জানে না। ধ্রুবর একটু মন খারাপ হলেই যে শালুক অস্থির হয়ে যেতো তা কি ধ্রুব জানে?

সকালে উঠেই ধ্রুব রান্না বসিয়ে দেয়। সকালে আর নাশতা বানানোর সময় হয় না প্রতিদিন। বেশিরভাগ সময় ভাত খেয়ে নেয় দুজনেই। আজও ধ্রুব চুলায় রান্না বসিয়ে শালুকের পাশে এসে বসলো। তারপর বললো, "আয়, তোর চুলে হেয়ারপ্যাক লাগিয়ে দিই। চুল বড় হতে হবে তোর।" শালুক মাথানিচু করে বসে রইলো। ধ্রুব আপনাতেই বলতে লাগলো, "শালুক তুই কি জানিস, তুই যে ভীষণ বোকা একটা মেয়ে? কোনটা ভালোবাসা আর কোনটা মোহ তা নিজেই বুঝতে পারিস নি। তুই হয়তো ভয় পাচ্ছিস আমার কাছে আদনান ভাইয়ের ব্যাপারটা বলে দেয়াতে। আমি বলছি বিশ্বাস কর, আমি তো জানি তুই যে আদনান ভাইয়ের প্রেমে পড়িসনি আসলে। তোর মনে আদনান ভাইয়ের জন্য কোনো ভালোবাসা জন্ম নেয়নি। নিজের মনকে তুই পড়তে পারিস নি। আচ্ছা, বল তো। আমরা যখন ক্রিকেট খেলতাম তখন তুই কার দল সাপোর্ট করতি?"

শালুক চুপ করে রইলো। সে তো ধ্রুবদের দলকে সাপোর্ট করতো। ধ্রুব যখন আউট হয়ে যেতো শালুকের মন খারাপ হয়ে যেতো। ইচ্ছে করতো ধ্রুবকে যে আউট করেছে তার মাথা ফাটিয়ে দিতে। ধ্রুব একটু সময় চুপ থেকে বললো, "বাড়িতে ফিরতে দেরি হলে কার জন্য তোর চিন্তা হতো?"

শালুক চুপ করে রইলো। সে ছোট ছিলো তখন। ভালোবাসা বুঝতো না সেভাবে হয়তো কিন্তু তবুও তার মন কেমন আনচান করতো ধ্রুবর জন্য। ধ্রুবর কিছু হলেই শালুকের মনে হতো ধ্রুব না জানি কতো কষ্ট পাচ্ছে। সেদিনও তো ধ্রুব রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর শালুকের মনে হয়েছে তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে ধ্রুবকে না দেখলে।

ধ্রুব রাবার দিয়ে চুল বেঁধে দিয়ে বললো, "ভালোবাসা আর ভালোলাগা ব্যাপারটা তুই বুঝে উঠতে পারিসনি বলেই তো বুঝতে পারিসনি কাকে ভালোবাসিস।তবে তুই না বুঝলেও আমি ঠিকই বুঝেছি আমাকে তুই ভীষণ ভালোবাসিস। চুলে শ্যাম্পু করে নিস একটু পরে গোসল করে। আমি খাবার নিয়ে আসছি।"

ধ্রুব চলে গেলো রান্নাঘরে। লজ্জায় পাকা টমেটোর মতো লাল হয়ে গেলো শালুকের সমস্ত মুখমন্ডল। ধ্রুবর সব কথাই ঠিক। শালুক বোকা বলেই নিজের ভালোবাসা কার জন্য তা বুঝতে পারে নি। খাওয়ার পর ধ্রুব তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে শালুক দেখতে লাগলো হন্তদন্ত হয়ে ধ্রুব বের হয়ে যাচ্ছে বাসা থেকে। নিচে গিয়ে ধ্রুব উপরের দিকে তাকালো। শালুক লজ্জা পেয়ে গেলো আজ। প্রতিদিনই তো এভাবে শালুক দাঁড়ায়, ধ্রুবও তাকায়। তবে আজ কেনো এমন লাগছে? ধ্রুব মুচকি হেসে চলে গেলো। শালুকের সারা শরীর যেনো অবশ হয়ে গেলো ধ্রুবর এই তাকানোতে, এই মুচকি হাসিতে।
শালুক বুঝতে পারছে না আজ কেনো তার এরকম লাগছে। ভালোবাসা কি তবে এরকমই হয়!

চলবে..........

১৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ


কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন