উপন্যাস : শালুক ফুলের লাজ নাই
কবি : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল :
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “শালুক ফুলের লাজ নাই” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ইং সালের ৮ই আগস্ট থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
শালুক ফুলের লাজ নাই || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৪)
ধ্রুব পকেট থেকে একটা মাউথ অর্গান নিয়ে বাজাতে বসলো। নীল রঙের এই মাউথ অর্গান ছিলো ধ্রুবর বাবা-মা থেকে পাওয়া শেষ উপহার। যখনই ধ্রুবর কষ্ট হয় ভীষণ, ধ্রুব এই মাউথ অর্গান বাজায়। মা'ই তো তাকে শিখিয়েছিলো মাউথ অর্গান বাজাতে। মায়ের কথা ভাবতেই ধ্রুবর কেমন বুক চিনচিন করে ব্যথা হয়। মা'য়ের চেহারাও সে প্রায় ভুলতে বসেছে। আজকে দেখে আবারও মনে পড়লো। আচ্ছা, একটা জীবন তপস্যা করলেও কি ধ্রুব আর বাবা-মা কে এক বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারবে?
শালুক রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে শুনতে পেলো ভেতর থেকে একটা খুব সুন্দর সুর ভেসে আসছে। শালুকের বুঝতে দেরি হলো না এটা কিসের সুর, আর কেনো বাজছে। এই বাসার সবাই জানে ধ্রুবর যখন অতিরিক্ত মন খারাপ হয় তখন সে মাউথ অর্গান বাজায়। সেই সময় কেউ-ই তাকে ডিস্টার্ব করে না। মনে মনে এতোক্ষণ ধ্রুবকে যেসব অভিশাপ দিয়েছে তা ফিরিয়ে নিয়ে আল্লাহকে বললো, "আল্লাহ, ধ্রুব ভাইয়ের যাতে কিছু না হয়। ওনার পেট খারাপ যাতে না করে কিছুতেই। এমনিতেই তার মন খারাপ।"
দরজায় নক হতেই ধ্রুব উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। শালুক নাশতার ট্রে বিছানার উপর রেখে বললো, "আপনার নাশতা।"
ধ্রুব এক ঝলক তাকিয়ে বললো, "হাত কেটে গেছে, খাইয়ে দিতে পারলে খাইয়ে দে। নয়তো ট্রে নিয়ে বিদায় হ সামনে থেকে।"
শালুক কিছুক্ষণ ভাবলো কি করবে, তারপর উঠে চলে গেলো। ধ্রুব হাতের দিকে তাকালো। রক্ত হাতেই শুকিয়ে গেছে। ধ্রুব মুচকি হেসে বিড়বিড় করে বললো, "এই হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তার তুলনায় এই রক্ত কিছুই না। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারলে এই সামান্য হাতের কাটাকে কেনো ভয় পাচ্ছি?"
হাসনা বেগম রুমে আসতে আসতে বললেন, "হাত না-কি কেটে ফেলেছিস ধ্রুব? শালুক গিয়ে না বললে তো জানতামই না। কি কান্ড বল তো দেখি?"
ধ্রুব হাসলো। এই একটা মানুষ শুধু তাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসেছে ছোট বেলা থেকে। সবার থেকে ধ্রুব অবহেলা পেয়েছে, এই মানুষটার থেকে পেয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসা।
হাসনা পরোটা ছিড়ে নিয়ে মাংস দিয়ে ধ্রুবর মুখে পুরে দিয়ে বললেন, "ধ্রুব, এভাবে আর কতোদিন বাবা? বাড়ির ছেলে বাড়িতে ফিরে আয় না। কি যে হলো তোর হুট করে। খোকাও আমেরিকা চলে গেলো, তুইও তার এক সপ্তাহ পর চলে গেলি। বাড়িটা কেমন খাঁ খাঁ করে বাবা। জহিরও আসে চট্টগ্রাম থেকে। তোর ফুফু ছেলের জন্য কি যে হাপিত্যেশ করে মরে, অথচ ছেলেটা আসতেই চায় না। আমরা কি ওর পর কেউ? এই বাড়িতে কি ওর মায়ের ভাগ নেই? তবে কেনো ছেলেটা এতো লজ্জা পায় বল তো?"
ধ্রুব খেতে খেতে বললো, "আমি গতরাতে কল দিয়েছিলাম, আমাকে তো বললো আজকে বিকেলের ট্রেনে ভাইয়াও আসবে। তবে কাউকে বলতে নিষেধ করেছে। মনে হয় ফুফুকে সারপ্রাইজ দিবে চাচী। তুমি কিছু বলো না কাউকে।"
হাসনা উৎফুল্ল হলেন শুনে। দুচোখ আনন্দে চকচক করে উঠলো। ধ্রুবকে সবটা খাইয়ে বের হয়ে গেলেন হাসনা। শালুকের বড় চাচী আদিবা পাকা কলা, ডিম, এলোভেরা জেল মিশিয়ে কি একটা হেয়ার প্যাক বানিয়ে শালুককে ডাকছে। শালুক একটা হিজাব নিয়ে হিজাব পিন দিয়ে ভালো করে হিজাব বেঁধে নিচে নামলো। আদিবা চেয়ারে বসলেন, সামনে একটা মোড়া রাখা। শালুকের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো, এক দৌড়ে নিজের রুমে যেতে নিতেই ধ্রুবর সাথে ধাক্কা লাগলো। বিরক্ত হয়ে ধ্রুব বললো, "ষাঁড়ের মতো ছুটছিস কেনো?" নিচ থেকে আদিবা বেগমের ডাক শোনা গেলো আবারও। ধ্রুব জিজ্ঞেস করলো, "বড় চাচী ডাকছে যে কানে যায় না? ওদিকে না গিয়ে রুমের দিকে যাচ্ছিস কেনো?"
শালুক চুপ করে রইলো। কোনোমতে এখন ঝগড়া করা যাবে না। ধ্রুব যদি কোনো মতে জানতে পারে শালুকের চুল নেই তবে আজ শালুকের কপালে শনি আছে। মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়তে লাগলো। আল্লাহকে বললো, "ইউনুস নবীকে তুমি মাছের পেট থেকে উদ্ধার করেছো আল্লাহ, আমাকেও আজকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করো।"
শালুককে চুপ থাকতে দেখে ধ্রুবর সন্দেহ হলো। শালুক তো মৌনব্রত করার মেয়ে নয়। তবে সে চুপ করে আছে কেনো। শালুকের হাত ধরে টেনে ধ্রুব নিচের তলার দিকে নামাতে লাগলো। শালুক গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে লাগলো। আদিবা বেগম শালুকের হিজাব খুলতে যেতেই আরেকটা যুদ্ধ বাঁধলো। শালুক কিছুতেই তার হিজাব খুলতে দিবে না। আদিবা বেগম মেয়ের সাথে না পেরে ধ্রুবর দিকে তাকালেন। ধ্রুব এগিয়ে এসে শালুকের দুই হাত চেপে ধরে বললো, "আপনি ওর হিজাব খোলেন চাচী।" হিজাব সরাতেই আদিবা বেগম চিৎকার করে উঠলেন। ধ্রুব কিছু বুঝতে পারলো না। শালুকের পিছনে গিয়ে ওর চুল দেখে ধ্রুব নিজেও চিৎকার করে উঠলো।
মুহুর্তেই সারা বাড়ি জেনে গেলো শালুকের কোমর সমান চুল শালুক কেটে ফেলেছে।
মাথা নিচু করে শালুক দাঁড়িয়ে আছে। একটা মানুষের চুল নিয়ে সারা বাড়ির সবার এতো মাথা ব্যথা হবে কেনো শালুক এই হিসেব কিছুতেই মিলাতে পারছে না। মুহুর্তেই নিচতলার চেহারা বদলে গেলো যেনো দরবার বসেছে, দাদা দাদী থেকে শুরু করে নয়না আপার পিচ্চি মেয়ে নিধি পর্যন্ত সেই বিচারসভায় হাজির হলো। সবার এক প্রশ্ন, কেনো শালুক চুল কেটে ফেলেছে?
শালুক ভেবে পেলো না কি জবাব দিবে! সে কি বলবে আদনান ভাই ফার্দিকাকে বিয়ে করবে, এই দুঃখে-কষ্টে সে চুল কেটে ফেলেছে? এই কথা শালুক জীবনেও বলতে পারবে না। ধ্রুব অস্থির হয়ে পায়চারি করছে। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। সে কিনা এই বেকুব, গাধা মেয়েটার জন্য হেয়ার ব্যান্ড, গাজরা নিয়ে এসেছিলো! আর এদিকে সে টাক্কু হয়ে বসে আছে?
শালুকের মনে হলো, প্রতিবার পরীক্ষায় ফেইল করার পরেও এরকম দক্ষযজ্ঞ বাঁধেনি, এবার এরা সামান্য চুল নিয়ে যা করছে।
মিনমিন করে শালুক বললো, "লম্বা চুলে গরম বেশি লাগে, তাই আমি কেটে ফেলেছি।"
আদিবা বেগম হুঙ্কার দিয়ে বললেন, "গরম লাগে, তোর একার গরম লাগে এই দুনিয়ায়? আর কারো গরম নেই? তোর এতো গরম লাগলে আমাকে বলতি। আমি তোর চাচাকে বলে তোর ঘরে এসি লাগিয়ে দিতাম। তুই কোন সাহসে চুলে হাত লাগালি?"
শালুকের মেজো চাচী দূরে দাঁড়িয়ে প্যাচপ্যাচ করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, "কতো যত্ন করে তোর চুল এতো বড় করছি আমরা। রাত জেগে ইউটিউবে গতকাল রাতেও একটা হেয়ার স্টাইল শিখেছি। অথচ তুই কিনা সব আশায় পানি ঢেলে দিলি?"
আদনান হাসতে হাসতে বললো, "লজ্জায় কেটে ফেলেছে মা, গিয়ে দেখো কোনো পরীক্ষায় ও আন্ডা পেয়েছে। তাই এই কাজ করেছে।"
ধ্রুব রেগে গেলো আদনানের এই কথা শুনে। হাত মুষ্টি করে নিজেকে সামলালো।
আশা বললো, "শর্ট হেয়ারেও শালুককে কিউট লাগছে আন্টি। ওর জন্য শর্ট হেয়ারই বেস্ট।"
আদনানের বোন আফিফা ধমকে উঠলো আশাকে। চোখ রাঙিয়ে বললো, "তুমি চুপ করো আশা, তুমি এসব বুঝবে না। আমাদের শালুকের চুল আমাদের পরিবারের সবার কাছে একটা ভালোবাসা। তুমি ওসব বুঝবে না।"
হাজার জিজ্ঞাসাবাদের পরেও শালুকের মুখ থেকে কেউ কথা বের করতে পারলো না যখন, তখন শালুকের দাদা ধ্রুবকে বললেন, "তোর উপর দায়িত্ব রইলো এই রহস্য উদঘাটনের।"
আদনান হেসেই যাচ্ছে বারবার শালুকের চুলের এই অবস্থা দেখে। শালুককে এই মুহূর্তে ভীষণ রোগা লাগছে। প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে শালুক যেই কষ্ট পেয়েছে এখন বুঝতে পারছে তার চাইতে হাজার গুণ বেশি কষ্ট তার জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ ভেবে শালুক সিদ্ধান্ত নিলো ধ্রুব ভাইকে সে সত্যি কথা বলে দিবে। তা না হলে ধ্রুব যে সহজে শালুককে নিস্তার দেবে না তা শালুকের চাইতে ভালো আর কে জানে?
সন্ধ্যা হতেই শালুক আজ বই নিয়ে বসে গেলো। আজ পড়া নিয়ে কোনো অবহেলা চলবে না।কেননা আজকে শালুকের সামান্য একটু দোষ পেলেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়বে শালুকের উপর। এক মগ ধূমায়িত কফি নিয়ে ধ্রুব এলো শালুকের রুমে। শালুককে পড়তে দেখে ধ্রুব মনে মনে হাসলো।
বিছানার উপর দুই পা ভাঁজ করে বসে বললো, "নে এবার ঝেড়ে কাঁশ তো শালুক। কোনো হাংকিপাংকি আমার সাথে করবি না।"
শালুক মাথা নিচু করে বললো, "আমি সরি ধ্রুব ভাই। আমার আসলে মাথার ঠিক ছিলো না। প্রচন্ড রাগে আমি এরকম করে ফেলেছি হুট করে।"
ধ্রুব ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "রাগের কারন কি?"
শালুকের দুই চোখ জলে টইটম্বুর হয়ে গেলো মুহূর্তেই। একটু হাওয়া দিলেই কচু পাতার জলের মতো টুপ করে পড়ে যাবে। যন্ত্রণারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো আরো একবার।নেই, নেই, আদনান ভাই আর শালুকের নেই। চিৎকার করে শালুকের এই কথা বলতে ইচ্ছে করলো। তবুও আস্তে করে বললো, "আদনান ভাই আমাকে এভাবে ঠকালো কেনো? আমি কি দোষ করেছি? উনি তো আমাকে ভালোবাসতেন তবে কেনো এখন রূপ পাল্টালেন বলেন?
আমি তো এক বুক আশা নিয়ে আদনান ভাইয়ের দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিলাম। অথচ উনি ফিরে এলেন সাথে হবু বউ নিয়ে। আমার তখন মাথা ঠিক ছিলো না আর। নিজেকে মনে হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায়। কাউকে কিছু বলতে পারি নি আমি। তাই রাগের মাথায় এরকম করে ফেলেছি।"
ধ্রুব যেনো হতভম্ব হয়ে গেলো শালুকের এসব কথা শুনে। মাথার ভেতর আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তার রাগ। নিজেকে সংযত করে অবাক দৃষ্টিতে শালুকের দিকে তাকিয়ে বললো, "আদনান ভাই তোকে কখনো ভালোবাসি বলেছে শালুক?"
শালুক চমকে গেলো এই প্রশ্ন শুনে। আদনান ভাই তো তাকে কখনো এরকম কিছু বলে নি।
মাথা নেড়ে বললো, "না,বলে নি।"
ধ্রুব জিজ্ঞেস করলো, "তোকে কখনো বলেছেন উনি যে তোকে ছাড়া বাঁচবে না, তোকে না পেলে মরে যাবে। সিনেমায় দেখিস না নায়কেরা যেরকম বলে নায়িকাদের?"
শালুক কিছুক্ষণ ভাবলো। আদনান ভাই তাকে বউ বলে ডাকতো ঠিকই তবে এরকম কথা তো কখনো বলেন নি। আবারও মাথা নেড়ে শালুক বললো, "না বলেন নি কখনো।"
ধ্রুব যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। তারপর বললো, "তাহলে তুই কোন দিক থেকে ভেবে নিলি উনি তোকে ভালোবাসেন?" শালুক উত্তর দিতে পারলো না সহসা। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, "তাহলে কেনো উনি আমাকে বউ বলতেন? কেনো বলতেন তার ভবিষ্যৎ বাচ্চার আম্মু। দেশে আসার আগেও তো যখন আমার সাথে কথা হয়েছিলো, আমাকে বলেছিলেন যে আমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। এসব কি পজিটিভ সাইন নয়? ভালো যদি না বাসেন তবে কেনো এসব বলতেন?"
ধ্রুব নিশ্বাস ফেলে বললো, "আদনান ভাই এরকমই। ছোট বেলা থেকেই উনি তোকে এভাবে বলতেন। তোর বয়স কম, আবেগ বেশি। তুই টিন-এজ মেয়ে, এটা ওনার মাথায় রাখা উচিত ছিলো। হয়তো উনি কিছুটা মজা নিতে চেয়েছেন তোর সাথে। কিছু মানুষ থাকে যারা মেয়েদের সাথে এসব মজা নিয়ে আনন্দ পায়। ব্যাপারটা যেভাবেই হোক উনি তোর সাথে এভাবে কথা বলায় তুই ব্যাপারটা অনেক দূর পর্যন্ত ভেবে ফেলেছিস। এখানে আসলে দোষ তোর নয় শালুক। তোর এজটাই এরকম। কেউ একটু ইমোশনাল কথা বললে এই বয়সী মেয়েরা তখন নানারকম স্বপ্ন দেখতে থাকে। এজন্য বিপরীত মানুষটার উচিত এই ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। তার একটু ভুলে এরকম অনেক মেয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলে। তুই আসলে যেটাকে ভালোবাসা ভেবে কষ্ট পাচ্ছিস সেটা কোনো ভালোবাসা নয়। এটাও একটা আবেগ তোর। তোর ব্যাপারটা আসলে হচ্ছে তোর অবচেতন মন আদনান ভাইকে পছন্দ করে, সেই ভালো লাগাকে তুই ভালোবাসা ভেবে বসে আছিস। প্রিয় নায়কের প্রেমের কথা, বিয়ের কথা শুনলে মানুষ যেমন কিছু সময়ের জন্য কষ্ট পায়, তুই ও তাই পাচ্ছিস শুধু। আদনান ভাই তোর শুধুমাত্র পছন্দের একজন মানুষ এর বেশি কিছু না। আদনান ভাইকে যদি তুই সত্যি ভালোবাসতি তবে তার সামনে এভাবে ঠিক থাকতে পারতি না। হার্দিকাকে দেখেও এভাবে চুপ থাকতে পারতি না। ভালোবাসা হলে প্রিয় মানুষের পাশে অন্য কাউকে সহ্য করা যায় না শালুক। এই যে আজ দুদিন হয়ে গেলো, তুই কি একবারও আদনান ভাইকে দেখে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলতে পেরেছিস, তুই তাকে ভীষণ ভালোবাসিস? পারিস নি তো। আমি তোকে বকবো না আজ। কাউকে কিছু বলবো না। আজ তোকে পড়তে হবে না। তুই নিজেই ঠান্ডা মাথায় বসে ভেবে দেখ, এটা তোর সত্যিকার ভালোবাসা না-কি একতরফা ভালো লাগা। আর সারপ্রাইজের কথা বলছিস, এই যে আমাদের জন্য ভাবী নিয়ে এসেছে এটাই তো সারপ্রাইজ!"
ধ্রুব উঠে চলে গেলো শালুকের রুম থেকে। তারপর থেকে শালুক ভাবতে লাগলো। ভেবে দেখলো আসলেই তো ধ্রুব ভাই ঠিক বলেছে। সে তো এভাবে ভেবে দেখেনি। নিজের ভাবনা ভাবতে গিয়ে শালুকের মোটা মাথায় অন্য একটা ভাবনা এলো। ধ্রুব ভাই এসব ব্যাপারে এতো কিছু কিভাবে জানলো? ধ্রুবর রুমে গিয়ে শালুক জিজ্ঞেস করলো, "তুমি এতো কথা কিভাবে জানো ধ্রুব ভাই? তুমিও কি কাউকে ভালোবাসো না-কি?"
ধ্রুব চোখ লাল বড় করে তাকাতেই শালুক ভেংচি দিয়ে বললো, "আমি কিন্তু সব জানি, দেখেছিও। কোন কেশবতীর জন্য যে গিফট এনেছো সব আমি দেখেছি।"
ধ্রুব হেসে উঠে বললো, "ঠিকই জানিস। আমার ও একটা কেশবতী আছে। যাকে আমি ভীষণ রকম ভালোবাসি। এবার ভাগ এখান থেকে।"
চলবে......
৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ :
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন