উপন্যাস        :         বেপরোয়া ভালবাসা
লেখিকা        :          মনা হোসাইন
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         

লেখিকা মনা হোসাইনের “বেপরোয়া ভালবাসা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ঠিক কবে নাগাদ লেখা শুরু করেছেন তা এখনাব্দি জানা যায়নি। তবে তা জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
বেপরোয়া ভালবাসা || মোনা হোসাইন
বেপরোয়া ভালবাসা || মনা হোসাইন

৩২তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

বেপরোয়া ভালবাসা || মনা হোসাইন (পর্ব -৩৩)


সকাল নয়টার কাছাকাছি হবে আদি শাওয়ার নিয়ে রুমে ঢুকে ভ্যাবাচ্যাকা খেল। চুল মুছা বাদ দিয়ে সে হা হয়ে তাকিয়ে আছে কারন আদিবা তার ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে লিপলস্টিক লাগাচ্ছে...
আদিবাকে দেখে আদিত্যে থমকে দাঁড়াল মনে প্রশ্ন জাগল সে কি বাস্তবে আছে নাকি স্বপ্নে..?আদিবার তো তার ঘরে আসার কথা না। এসেছে তো এসেছে আবার সাজগোজ করছে...?আদি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। আদিবার এতটা সাহস কি করে হল? এত সাজগোজেই বা করেছে কেন?
দুধে আলাতা গায়ে লাল টুকটুকে শাড়ি, ঘন পাপড়িতে ঢাকা চোখ কাজল রেখায় অপরুপ মায়া ছড়াচ্ছে। ভেজা চুল পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে আদিবার সৌন্দর্যকে আড়াল করার চেষ্টা করে চলেছে। হাত ভর্তি কাচের চুড়ি রিনিঝিনি আওয়াজ সারা ঘরময় আদিবার অস্তিত্বের প্রমাণ দিচ্ছে। তবে কি এটা সত্যি আদি অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে। মুখে কথা নেই। সে আসলে বুঝার চেষ্টা করছে আদিবা কি সত্যিই তার ঘরে এসেছে নাকি স্বপ্ন দেখছে। আদিত্যর অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে উঠল আদিবা। চুড়ির রিনিঝিনির সাথে সেই হাসির শব্দ অপুর্ব শুনাল।
আদিবা লিপস্টিক টা রেখে কাজল হাতে নিয়ে পরতে পরতে বলল,
-"এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন..?
আদিকে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠল
-"তুই হটাৎ...
কথা শেষ করার আগেই আদিবা জবাব দিল
-"আপনার কাছেই এসেছিলাম। 
-"আমার কাছে.? 
আদিবা আদির দিকে ঘুরে তাকিয়ে মিষ্টি হাসল 
-"আমাকে কেমন লাগছে...?
আদি ভ্রু কুচকাল 
-কেমন লাগছে সেটা পরের বিষয় হটাৎ এমন লাগানোর কারন কী..?
আদিবা আদির দিকে এগিয়ে এসে একদম মুখোমুখি দাঁড়াল। আদিবার চোখে মুখে ভয় কিংবা কোন দ্বিধা নেই। আদিবা কখনো আদির চোখে চোখ রেখে কথা বলেছে বলে আদির মনে পড়ে না। তবে আজ কি করে বলবে..? আদির ধারনা বদলে দিয়ে আদিবা বলে উঠল,
-"আসলে কী বলুন তো আমি তো সাদিয়ার বড় বোন এখন আমার বিয়ের আগে সাদিয়ার বিয়ে হয়ে গেলে লোকে বলবে আমার কোন খুঁত আছে তখন আমার আর বিয়ে হবে না। তাই ভাবছি আপনাদের আগে বিয়েটা করে নিব।
আদিবার কথায় প্রচন্ড রেগে গেল আদি। রাগী চোখে তাকিয়ে বলল,
-"এসবের মানে কী...? কাকে বিয়ে করবি তুই?
-"আহা চাপ নিবেন না আমার বিয়ে নিয়ে আপনাদের ভাবতে হবে না। আমার পাত্র আমি নিজেই যোগাড় করব। গতকাল ম্যাট্রিমনি সাইট থেকে কয়েকজন পাত্র দেখেছি আজ একজনের সাথে মিট করতে যাচ্ছি সেজন্যেই আপনার কাছে এসেছিলাম। আমাকে একটু ড্রপ করে দিন না প্লিজ। 
-"মানে কী কোথায় যাবি তুই..?
-"কেন রেস্টুরেন্টে...এত সাজগোজ করলাম কি এমনি এমনি? একটা ছেলের সাথে কথা হয়েছে বলেছে আজ মিট করতে আগে আমরা কথা বলব তারপর সব ঠিক থাকলে গার্জিয়ান নিয়ে বাসায় আসবে। ওই যে ইংরেজিতে বলে না Blind date...
আদিবার কথা শেষ হওয়ার আগেই চেঁচিয়ে উঠল,
-"আদিবা....!!!
আদিবা কি আদির রাগের কারন বুঝল নাকি বুঝল না সেটা বুঝার উপায় নেই কারন সে ভয় পাওয়ার বদলে গোবেচারা মুখ করে বলল,
-"আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? আচ্ছা আপনার যেতে হবে না আমি একাই যেতে পারব তবুও রাগ করবেন না প্লিজ।
আদিবার কথা শুনে আদির মেজাজ খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে রাগে কটমট করে বলে উঠল,
-"কার অনুমতি নিয়ে এত বড় সিধান্ত নিয়েছিস..?
-"কেন? মা,চাচা,চাচী সবার অনুমতি নিয়েছি তো...
আসলে এখন বিয়ে করাটা জরুরী ছিল না কিন্তু আমি তো পড়াশোনা করিনি তাই আমার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর উপায় নেই তারমধ্যে ছোট বোনের আগে বিয়ে হওয়ায় যদি আমার আর বিয়ে না হয় তাহলে সারাজীবন আপনার আর সাদিয়ার ঘাড়ের উপড় বসে খেতে হবে।আমি সেটা চাই না। যদি চাকরি করতে পারতাম তাহলে এতটা চিন্তা করতাম না এখন চিন্তা করতে হচ্ছে তাই সিধান্ত নিয়েছি আপনাদের বিয়ের আগে মানে এই সপ্তাহেই আমি বিয়ে করব...চাচা চাচী মা সবাই তাতে রাজি।
-"বাহ ভালই জবাব দেওয়া শিখেছিস দেখছি..তারমানে তুই পড়াশোনা করিস নি এই নিয়ে তোর কোন আফসোস নেই তাই তো? 
-"একদমি না। সবাই তো আপনার মত শিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করতে চায় না । তাছাড়া আমি একেবারেই পড়াশোনা করিনি এমন তো না।মাধ্যমিক পাশ করেছি তাও ভাল রেজাল্ট করে আর এদেশের বেশির ভাগ ছেলেই চায় বউ একটু স্বল্প শিক্ষিত হবে কথাবার্তা কম বলবে, সংসারের কাজ করবে, বাচ্চা কাচ্চা মানুষ করবে।সেদিক থেকে আমি একদম ঠিক আছি বাসার সব কাজ পারি, কথাবার্তা কম বলি আর বাচ্চাদের পড়ানোর মত যোগ্যতা তো আমার আছে তাই না? তাই বিয়ে নিয়ে ঝামেলা হওয়ার কথা না। তাছাড়া দেখতে একেবারে খারাপ নই...
-"রুপের অহংকার করছিস.? রুপ থাকলেই বিয়ে হয়ে যায়..?
-"কেন আপনার কি মনে হচ্ছে আমার বিয়ে হবে না? ওহ আপনার তো এমন মনে হবেই আপনার কাছে তো আমাকে বয়স্ক মনে হয়। চিন্তা করবেন না আমি সিধান্ত নিয়েছি একটু বয়স্ক ছেলেকে বিয়ে করব যার কাছে আমাকে ছোট মনে হবে। আমার যে আহামরি বয়স হয়ে গিয়েছে তাত কিন্তু না এখনো বাইশে পা দেইনি। এটাই বিয়ের পারফেক্ট বয়স। এই ধরুন ২৭/২৮ বছরের কোন ছেলেকে বিয়ে করব. এর চেয়ে কম বয়সী ছেলেদের বিয়ে করা উচিত না এরা আসলে প্রেমের জন্য পার্ফেক্ট হলেও বিয়ের জন্য পার্ফেক্ট না। ২৫ এর নিচের ছেলেরা তুলনামূলক রাগী আর জেদি হয়, নিজের ভুল সহজে বুঝতে পারে না। এদের মাঝে কেয়ারিং ব্যাপারটা নেই। মেয়েরা স্মার্ট,বেপরোয়া ছেলেদের সাথে প্রেম করতে চাইলেও বিয়ের সময় চায় কেয়ারিং একটা হজবেন্ড। বেপরোয়া,বদমেজাজি যখন তখন গায়ে হাত তুলবে এমন ছেলেকে বিয়ে করে জীবন নষ্ট করতে চায় না কেউ। তাই ২৫ এর নিচের ছেলেরা লিস্ট থেকে বাদ দিয়েছি। জানেন তো ম্যাট্রিমনিতে নিজের পছন্দমত পাত্র খোঁজা যায়।
-"তুই কি কথাগুলো আমাকে বললি..?
-"নাহ তবে কেউ যদি নিজেকে বেপরোয়া,জেদি,বদমেজাজি যখন তখন গাঁয়ে হাত তুলতে লারে এমন ভাবে তাহলে আমার কি করার আছে?
আদি দাঁতে দাঁত চেপে বলল
-"একটু বেশিই পকপক করছিস না...?
-"একদমি না। আমি শুধু মনের কথাগুলো বল্লাম। 
-" এই বাসায় বাবা মা কাকিয়া ছাড়াও তো তোর অভিবাবক আছে তার কাছে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন মনে হল না?
-"কে বলুন তো..?ওহ আপনার কথা বলছেন? কিন্তু আপনি তো এখন আমার গুরুজন না। আপনি যদি আমার ভাইয়া হতেন তাহলে আপনার কাছ থেকে অবশ্যই অনুমতি নিতাম কিন্তু আপনি তো সেই সম্পর্ক বাদ দিয়েছেন। মুখ ভরে শালিকা শালিকা বলেন। শালিকার জীবনের সিধান্ত নেয়ার অধিকার তো বোন জামাইয়ের নেই তাই না? 
-"আদিবা তুই আমার ধর্য্যের লিমিট জানিস এর বেশি নিতে পারব না। তাই মা*র খাওয়ার আগে সাজগোজ মুছে নিজের ঘরে যা...
-"কিন্তু মারবেন কেন? কি ভুল বলেছি আমি..?
-"তুই আমার চোখের সামনে থেকে বিদায় হ...
আদিবা আর কিছু না বলে হনহন করে হেঁটে দরজার বাইরে গিয়ে দরজা লক করে দিল। আদি রেগে চেঁচয়ে বলে উঠল,
-"দরজা বন্ধ করলি কেন..?
-"আমি বাইরে যাব কিন্তু আপনার যে চরিত্র আপনি ঝামেলা করবেন তাই লাগিয়ে দিলাম..
-"আদিবা আমি তোকে খু*ন করে ফেলব বলে দিলাম আমাকে রাগাস না দরজা খোল...
আদির চেঁচামেচি শুনে সবাই ছুটে আসল আর অবাক হল আদিবার মা এগিয়ে এসে বললেন
-"এসব তুই কি করছিস আদিবা..?
-"মা ভাইয়া যখন আমাকে বাথরুমে আটকে রাখত তখন তো তোমরা কেউ ওকে প্রশ্ন করতে না আজ করছো কেন? এইটুকু সময় আটকে থাকলে কিছু হবে না আমি বের হওয়ার পর খুলে দিও। 
আদি ঘরের ভিতর থেকে আবারো গর্জন করে উঠল,
-"তুই কোথাও যাবি না আদিবা। কি ভেবেছিস তোকে ফিরতে হবে না? তখন কে বাঁচাবে তোকে? আমি এক থেকে তিন গুনব এর মধ্যে দরজা না খোললে দরজা ভাঙব তারপর তোর কি অবস্থা করব জানিস নিশ্চয়..?
আদিবা কিছু না বলে দরজা খোলে দিল।আদি রাগে গজ গজ করতে করতে বাইরে আসল
-"চুপচাপ নিজের ঘরে যা নাহলে পা দুটো ভে*ঙে ঘরে ফে*লে রা*খব.
-"কিন্তু কেন? কি অন্যায় করেছি আমি?"আমার বিয়ে নাহলে আপনাদেরি তো ক্ষতি। সারাজীবন আমার দায়িত্ব নিতে হবে। তাছাড়া আমি তো আপনাদের বিয়েতে আপত্তি জানাই নি আপনি জানাচ্ছেন কেন?
আদি উত্তর দেয়ার আগে আদির বাবা বললেন,
-"আদিবা তো ঠিকি বলেছে আদি তুই সাদিয়াকে বিয়ে করবি। শপিং ও করে ফেলেছিস তাহলে এখন আদিবার সাথে এমন করার মানে কী? 
-"আপত্তি জানাচ্ছি না আমি কিছুই করছি না। যা গাড়িতে যা আমি চেঞ্জ করে আসছি..
-"নাহ লাগবে না আপনার যেতে হবে না...
-"একটু আগেই তো বলছিলি যেন ড্রপ করে দেই এখন আপত্তি করছিস কেন?
-"আপনি ওখানে গেলে ঝামেলা করবেন তাই যেতে হবে না।
-"ঝামেলা করব কেন? নিজেকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবার কোন কারন নেই তোর প্রতি আমার কোন রকম এট্রাকশন নেই তাই তোর বিয়েতে আমার আপত্তি নেই।
-"আলহামদুলিল্লাহ,তবে প্রমিস করুন যাই ঘটে যাক আপনি কোন সিনক্রিয়েট করবেন না।
-"করব না কথা দিলাম।
-"ঠিক আছে আসুন তাহলে আমি যাচ্ছি...
**দুদিনের মেয়ে আমাকে কথা শুনাস শর্ত দিস আজ তো আমি তোকে দেখে নিব (মনে মনে)
আদিবা গাড়িতে যেতে যেতেই আদিত্য আসল। আদি ড্রাইভ করবে তাই সামনে বসেছে আদিবা গিয়ে পিছনে বসতেই আদি চেঁচিয়ে উঠল
-"আমি কি তোর ড্রাইভার..? পিছনে কি? সামনে আয়...
আদিবা কথা না বাড়িয়ে এসে বসল। আদিবার মন আজ বেশ ফুরফুরে মুখ থেকে যেন হাসি সরছেই না তবে আদির মেজাজ যথেষ্ট খারাপ হয়েছে মুখ কালো করে ড্রাইভ করছে মাঝে মাঝে আড় চোখে আদিবাকে দেখছে...
আদিবা হটাৎ বলে উঠল,
-" আমাকে কি খুব সুন্দর লাগছে..?
আদিত্য রাগি চোখে তাকাল।
-"সবসমত রেগে থাকেন কেন? ড্রাইভ বাদ দিয়ে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন তাই তো বললাম।
-"তুই দেখতে খুবি জঘন্য বুঝেছিস? আমি তোকে দেখছি না এমনি তাকিয়েছিলাম। 
-'ওহ তাই নাকি তাহলে মনে হয় আরও একটু লিপস্টিক দিতে হবে বলেই ব্যাগ থেকে লিপস্টিক নিয়ে সাইড মিররে দেখে দেখে লিপস্টিক দিতে শুরু করল। 
রাগে আদির মাথা ফেঁটে যাচ্ছে তাই কোন সংকেত ছাড়াই গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিল হুট করে তাল সামলাতে গিয়ে লিপস্টিক এবড়ো থেপড়ো হয়ে গেল..আদিবা রাগে চোখ বড় বড় করে তাকাল। 
আদির মুখে দুষ্ট হাসি দেখে আরও ক্ষেপে গেল আদিবা। সেও কোন কিছু না বলে মুখ বাড়িয়ে আদির সাদা শার্টে লিপস্টিক মুছে দিল। 
-"কি করলি এটা..? 
-"বেশ করেছি আপনি আমার লিপস্টিক নষ্ট করলেন কেন?
-"মাথা মোটা কোথাকার...এখন তুই যখন তোর ম্যাট্রিমনি বফের সামনে যাবি তোর ঠোঁটের অবস্থা আর আমার শার্টের অবস্থা দেখে বেচারা তো হার্ট এট্যাক করবে।
-"আপনি এটা ইচ্ছে করে করেছেন তাই না..? এ্যা এ্যা....
-"আরে বোকার মত কান্না জুড়েছিস কেন আমি তো এমনি বলেছি। দুনিয়ার মানুষ তোর মত বোকা না...
-"আমার বিয়ে যদি নাহয় আমি গ*লায় দ*ড়ি দিব এ্যা....আমার বিয়ে।
-"নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে বিয়ের জন্য মরে যাচ্ছে একেবারে...
-"মরবই তো আমার বুঝি বিয়ে করতে ইচ্ছে করে না..?
-"কর না কর... একটা কেন একসাথে কয়েকটা করে ফেল...
আদিবা চোখ মুছতে মুছতে বলল।
-"আপনি আমার বিয়েতে কি গিফট করবেন?
প্রশ্নটা করতে দেরি হলেও আদির উত্তর দিতে দেরি হলনা ফটাফট বলে দিল
-"আচাড়ের বয়াম..
-"আচাড়? কিন্তু কেন? আচাড় দিয়ে আমি কি করব?
-"বিয়ে হোক তারপর বুঝবি।
দেখতে দেখতে গাড়ি এসে থামল শহরের নামকরা রেস্টুরেন্টের সামনে। আদিবা নেমেই বলল 
-"শাড়ির কুচি ঠিক করে দিন।
আদি এদিক ওদিক তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করল আদিবা কথাটা কাকে বলেছে।
-"এদিক ওদিক কি দেখেন আপনাকেই বলেছি।শালীর বিয়েতে কিছু দায়িত্ব তো পালন করতেই হবে তাই না।শাড়ি এলোমেলো থাকলে বিয়ে ভেঙে যায় যদি।
-"তাই বলে আমি আদিত্য চৌধুরী এখন কারোর শাড়ির কুচি ঠিক করব?
-"কেন ঠিক করে দিলে কি হাতে ফুসকা পড়বে.? তাড়াতাড়ি ঠিক করুন না হলে কান্না জুড়ব কিন্তু।
-"আজব তো...
-"এ্যা....
-"থাম থাম দিচ্ছি তবুও এমন অদ্ভুত আওয়াজ করিস না। চোখ দিয়ে পানি বের হয়না এটা কেমন কান্না খোদা জানে।
-"বেশি কথা না বলে কুচি ঠিক করুন। 
আদি বাধ্য নিয়ে নিচে বসল। 
-"উফফ হচ্ছে না সুন্দর করে করুন না.. 
-'তবে রে..দাঁড়া
আদি উঠে দাঁড়াতেই আদিবা দৌড় দিল। 
-"আরে ইডিয়েট আস্তে যা। যে ছেলে দেখা করতে এসেছে তোকে এই অবস্থায় দেখলে তো ভাব্বে মেয়ের সাথে নয় ঘোড়ার সাথে মিট করতে এসেছে।
-"চুপ করবেন আপনি..? পাত্রী পক্ষে নিজেই এমন বললে পাত্র পক্ষ কখনো মেয়ে পছন্দ করবে..?
আদিবা আদি কথা বলতে বলতেই একটা ছেলে এগিয়ে এসে বলল,
-"আদিবা তাই না..?
আদিবা তাকিয়ে বলল,
-'হুম মিস্টার সায়ন তাই না?
-"হ্যা আসুন আমি টেবিল বুক করেই রেখেছি।
-"আপনি যান আসছি...
ছেলেটি সামনে সামনে হাঁটছে আদিবা আদি পিছন পিছন। আদিবা ফিসফিস করে আবারও আদিকে সাবধান করল যেন উল্টো পাল্টা কিছু না বলে।
টেবিলে আদি আর সায়ন সামনা সামনি বসেছে আর আদি আদিবার পাশের সিটে..
-"উনাকে তো ঠিক চিনলাম না..
আদি হাত বাড়িয়ে বলল 
-"আদি,নাম শুনেই নিশ্চয় বুঝেছেন ওর কাছের কেউ..সায়ন হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করল 
আদিবা আদির হাত টেনে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল
-'উফ এত ঘুরিয়ে বলতে হয় কেন..? উনি আমার বড় চাচার ছেলে..
-"ওহ আচ্ছা...
-'এবার বলুন আপনার কি জানার আছে..
-"আরে তেমন কিছু না..কি আবার জানার থাকবে।
আদিবার আগে আদি উত্তর দিল 
-"অনেক কিছু জানার আছে। যেমন আদিবার মাথায় গোবর ছাড়া কিছু নেই।ও ভাল করে অ,আ পারে না অতএব ওকে বিয়ে করলে আপনার বাচ্চারা মুর্খ হবে। দ্বিতীয় ও রান্না করতে পারে ঠিকি কিন্তু মুখে দেয়া যায় না। তৃতীয় ও দেখতে একেবারেই ভাল না এখানে আসার আগে তিনঘন্টা ধরে মেকাপ করেছে। ৪র্থ ও সারাদিন এত ঝগড়া করে যে মহল্লার সব কাক উড়ে গিয়েছে।
আদির কথায় আদিবা আর সায়ন দুজনেই অবাক হয়ে আদির তাকাল আদিবা ব্যাপারটা হালকা করার জন্য হাসির অভিনয় করতে করতে বলল,
-"কিছু মনে করবেন না ভাইয়া আপনার সাথে মজা করছেন।
-"উনি কি আমার দুলাভাই হন যে মজা করব? যাইহোক ভাইয়া এই বিয়ে হচ্ছে না।আপনাকে আমার পছন্দ হয়নি।যে ছেলে বিয়ের আগেই মেয়েকে একা রেস্টুরেন্টে ডাকে সে আর যাইহোক চরিত্রবান হতে পারেনা। এই চল বলেই আদিবার হাত ধরল আদি।
-"উফফ ভাইয়া কি করছো তুমি কিন্তু প্রমিস করেছিলে উল্টা পাল্টা কিছু করবে না। 
-"করিনি তো.. উল্টা পাল্টা কিছু করব না বলেই মুখে কথা বলছি. উলটো পাল্টা করার হলে তো তোকে এতক্ষনে কানে কপালে থাপ্পড়িয়ে বাসায় নিয়ে যেতাম..ভদ্র মেয়েরা পাত্রী দেখাতে রেস্টুরেন্টে আসে ? চুপচাপ বাসার রাস্তা মাপ দেরি করা তো দূর পিছন ঘুরে তাকালে এমন মা*রব নিজের নাম ভুলে যাবি...আর তুই তাকিয়ে কি দেখছিস? বের হ এখান থেকে আমার বোনকে রেস্টুরেন্টে ডাকিস সাহস তো কম না। আদিবার কোথায় বিয়ে হবে সেটা ও না আমরা বড়রা ঠিক করব বুঝেছিস..? 

চলবে ...

৩৪তম পর্ব পড়তে এখানে ট্যাপ/ক্লিক করুন


লেখক সংক্ষেপ : 
তরুণ লেখিকা মনা হোসাইনের মূল নাম গাজী পিংকি হোসেন। তিনি লেখালেখির ক্ষেত্রে ছদ্মনাম হিসেবে ‘মনা হোসাইন’ নামটি বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা এই লেখিকা অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন